Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩

নরবধ অপেরা

সব মরণ নয় সমান। সিরিয়ায় মুন্ডু কাটার ফতোয়ায় দুনিয়া চিড়বিড়িয়ে অস্থির, ওদিকে শিশিরের শব্দের মতো চুপচাপ শুভ নববর্ষের সূচনা হল সৌদি আরবে একসঙ্গে জনা পঞ্চাশ লোকের গণজবাই দিয়ে। এদের মধ্যে জনা চারেককে মারা হল গুলি করে, বাকিদের স্রেফ মুন্ডু কেটে খাল্লাস।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

সব মরণ নয় সমান। সিরিয়ায় মুন্ডু কাটার ফতোয়ায় দুনিয়া চিড়বিড়িয়ে অস্থির, ওদিকে শিশিরের শব্দের মতো চুপচাপ শুভ নববর্ষের সূচনা হল সৌদি আরবে একসঙ্গে জনা পঞ্চাশ লোকের গণজবাই দিয়ে। এদের মধ্যে জনা চারেককে মারা হল গুলি করে, বাকিদের স্রেফ মুন্ডু কেটে খাল্লাস। খতমের লিস্টিতে এক দিকে যেমন রয়েছেন ‘সন্ত্রাসবাদী’রা, অন্যদিকে আছেন জনপ্রিয় শিয়া নেতা আল-নিমর, যিনি আর কিছু না, স্রেফ সংখ্যালঘু শিয়াদের সমানাধিকার চেয়েছিলেন। না, আইসিসের কাণ্ড না, রীতিমত সৌদি আদালতের নির্দেশেই এই মুন্ডু কাটার কারবার।

Advertisement

আঁতকে ওঠার কিছু নেই, ও দেশে ক্ষতিকর লোকেদের ধরে প্রকাশ্যে মুন্ডু কেটে নেওয়াই দস্তুর। এই পবিত্র কাজের জন্য দেশের রাজধানীতে রয়েছে এক নির্দিষ্ট চক, যেখানে রীতিমত ঢাকঢোল পিটিয়ে নরবলি চলে। রাজদ্রোহী দুষ্টু লোকেদের মাথা কেটে নেওয়া হয়, ফিনকি দিয়ে রক্তটক্ত ছোটে, আর চারদিকে লোকজন জমিয়ে দেখে এই নরবধ অপেরা। এ অবশ্য নেহাতই লঘু শাস্তি। কঠিনতম শাস্তিগুলি বরাদ্দ আছে দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্য। বিবাহিত কোনো মহিলা পরপুরুষের সঙ্গে পাপকার্যে লিপ্ত হলে তার একমাত্র শাস্তি হল ধীরেসুস্থে অনুতাপ করতে করতে পটল তোলা। অনুতাপ করতে সুবিধে হবে বলে পাপী ও অপরাধী মহিলাকে প্রথমে মাটিতে আধখানা পুঁতে দেওয়া হয়, বেঁধে দেওয়া হয় হাত। আর তার পর চারদিক থেকে ঘিরে ধরে প্রাজ্ঞ জনতা একটা একটা করে পাথর ছুড়ে মারে। মেয়েটা ছটফট করে, হাউমাউ করে, নাক ফট করে ফেটে যায়, চোখ গেলে যায়, ফাটা মাথার ফাঁক দিয়ে গলগলিয়ে বেরিয়ে আসে ঘিলু। এ সব দেখে এক আধটা লোক ভিরমি খায় না তা নয়, কিন্তু সে তো পাঁঠাবলি দেখেও হয়।

না, আকাশ থেকে পড়ার কিছু নেই, প্রাগৈতিহাসিক গপ্পও না, এই গত বছরই পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ডের একটি আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যদিও পাকেচক্রে আর কার্যকর হয়নি। আমরা আইসিসের মুন্ডুকাটার ভিডিয়ো দেখে আঁতকে উঠি, ইরানে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়ায় ইউরোপ আমেরিকা কেঁপে যায়, কিন্তু সৌদির ব্যাপারে আমাদের চোখে কেউ জ্ঞানাঞ্জনশলাকা দেয়নি, কারণ ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ পশ্চিমি ভদ্রলোকেরা ‘ও-সব ওদের ঘরোয়া ব্যাপার’ বলে পাশ কাটিয়ে যান, যেমন ন্যাংটো ভিখিরি বালককে পাশ কাটায় ভদ্রলোক। কারণ এ সব সৎকর্ম ‘বন্ধু সরকার’-এর অ্যাকাউন্টে।

কে না জানে, নিজের ছোটমামা ঘুষ নিলে পাপ হয় না, বাড়ির ছেলে রাস্তায় তাড়ি খেয়ে মাতলামো করলে দোষ তালগাছের, আর তৈলমর্দনকারী বন্ধুরা কখনও খারাপ হতে পারে না। তারা কক্ষনও ধর্মীয় ফতোয়া দেয় না, দিলেও মানুষ খুন করে না, করলেও তাতে রক্ত পড়ে না, পড়লেও তার রং কদাচ লাল নয়। নৃশংসতা তখনই নৃশংসতা যখন তা শত্তুরে করে। সব মরণ নয় সমান।

Advertisement

bsaikat@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.