Advertisement
E-Paper

এশিয়ার প্রথম চিড়িয়াখানা

হয়েছিল ব্যারাকপুরে। সারা বিশ্বে তখন সাধারণ দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া পশুশালা মাত্র তিনটে। এমনকী, লন্ডনেরটিও ভবিষ্যতের গর্ভে। উনিশ শতকে লর্ড ওয়েলেসলির তৈরি সেই চিড়িয়াখানা এখন আগাছার জঙ্গলে ঢাকা।হয়েছিল ব্যারাকপুরে। সারা বিশ্বে তখন সাধারণ দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া পশুশালা মাত্র তিনটে। এমনকী, লন্ডনেরটিও ভবিষ্যতের গর্ভে। উনিশ শতকে লর্ড ওয়েলেসলির তৈরি সেই চিড়িয়াখানা এখন আগাছার জঙ্গলে ঢাকা।

অমিতাভ কারকুন

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৭
অতীত: শিল্পী চার্লস ডয়লি-র আঁকা ছবিতে ১৮২০ সালের ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানা। ডান দিকে পশুশালা, অদূরে গথিক স্থাপত্যরীতির পাখিশালা।

অতীত: শিল্পী চার্লস ডয়লি-র আঁকা ছবিতে ১৮২০ সালের ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানা। ডান দিকে পশুশালা, অদূরে গথিক স্থাপত্যরীতির পাখিশালা।

ঘন গাছপালায় পথ ভুল হওয়ার উপক্রম। দিনের বেলাতেও ঝিঁঝিঁ ডাকছে। বিশ্বাস করা মুশকিল, শ্যামবাজার যাওয়ার রাস্তা এখান থেকে মাত্র তিনশো গজ দূরে! সালটা ২০১২। সরকারি অনুমতি নিয়ে লাটসাহেবের খাস বাগানে ঢুকেছি; উদ্দেশ্য, বইয়ে পড়া আর ছবিতে দেখা ‘ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানা’র অবশেষ নিজের চোখে দেখা। গাইড এক বর্ষীয়ান মালীসরকার। জানালেন, ত্রিশ বছর আগে বাগানের এই অংশে কিছু ভাঙা বাড়িঘর দেখেছিলেন, তার পরে আর এ দিকে আসেননি। এক-এক জায়গায় ঘন গাছগাছালি ভেদ করে বেশি দৃষ্টি যায় না। বহু জায়গায় হাঁটতে হচ্ছে আগাছার আস্তরণের ওপর দিয়ে। একটু আগে বাগানের পুরনো ‘প্ল্যান্ট অ্যান্ড সিড হাউস’-এর ভগ্নাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, এখন লক্ষ্য চিড়িয়াখানার বাড়িঘর। এক জায়গায় গাছের ভিড় হঠাৎ পাতলা। চোখ তুলে দেখি, লতাপাতার আবরণে এক ভগ্ন সৌধের অবয়বটুকু কেবল বোঝা যাচ্ছে। ভাল করে দেখে, ১৮৫১ সালে তোলা ফ্রেডরিক ফিবিগ-এর ফোটোগ্রাফের সঙ্গে মিলিয়ে যখন চিনতে পারলাম, আনন্দে হৃৎস্পন্দন বুঝি কিছু ক্ষণের জন্য থেমেই গেল। অপূর্ব গথিক স্থাপত্যে তৈরি এক পাখিশালার ধ্বংসাবশেষ। মূল প্রবেশপথটি এখনও চেনা যায়। ভিতরে ঢুকে বাঁ দিকে একটিমাত্র গ্যালারি এখনও দাঁড়িয়ে, সেখানে দর্শক যাওয়ার পথের দু’ধারে ছোট পাখিদের খাঁচা রাখার জন্য রয়েছে টানা প্ল্যাটফর্ম আর সারিবদ্ধ গথিক জানালা। ছাদ বলে কিছু আর নেই, অসংখ্য গাছের শেকড় ঝুলে থাকায় ভিতরে ঢোকা গেল না। প্রবেশপথের পরে পথের দু’ধারে পরপর গথিক খিলান, বড় পাখিদের রাখার জায়গা। একটু ঘোরাফেরা করতেই পাওয়া গেল গাছপালার ভিড়ে, বড় বেসিন-সহ সুন্দর এক ফোয়ারার অবশেষ। এর কথা একেবারেই জানা ছিল না, এখনও পর্যন্ত কোনও লেখায় উল্লেখও চোখে পড়েনি। লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে থাকা, ভুলে যাওয়া ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানার অবশিষ্টাংশ দেখা হল এ ভাবেই।

১৮০২-১৮০৩ খ্রিস্টাব্দ। তখনও পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে সাধারণ দর্শকদের জন্য চিড়িয়াখানা খোলা হয়েছিল মাত্র তিনটি। প্রথমটি ভিয়েনায় (১৭৬৫), দ্বিতীয়টি মাদ্রিদে (১৭৭৫), তৃতীয়টি প্যারিসে (১৭৯৫)। এমনকী ‘জ়ুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন’ তখনও তৈরি হয়নি (তৈরি হবে ১৮২৬ সালে)। লন্ডন চিড়িয়াখানাও তখনও দূর অস্ত্‌, তার শুরু ১৮২৮ সালে, আর সেখানে সাধারণ দর্শকের ঢুকতে তখনও ৪৩ বছর দেরি। রাজারাজড়াদের চিড়িয়াখানায় প্রজাদের প্রবেশাধিকার নেই। ভাবলে অবাক লাগে, এমন এক সময়ে কলকাতা থেকে ষোলো মাইল উত্তরে, ব্যারাকপুরে খোলা হল ভারতের প্রথম, এশিয়ার প্রথম আর খুব সম্ভবত পৃথিবীর চতুর্থ এই চিড়িয়াখানা, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল। বিশ্বের প্রকৃতি-চর্চার ইতিহাসে বৈপ্লবিক এই কাজটি করেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক উদ্যোগী পুরুষ, ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড রিচার্ড কলি ওয়েলেসলি।

লর্ড ওয়েলেসলি গভর্নর জেনারেল পদে কলকাতায় ছিলেন ১৭৯৮-১৮০৫ পর্যন্ত। তাঁর বেশ কয়েকটি কাজই ছিল সাধারণ মানের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে এবং সেগুলি বাস্তবে পরিণত করতে কোনও বাধাই তিনি মানেননি। একাধিক বার কোম্পানির ডিরেক্টরদের না জানিয়ে, প্রচুর খরচ করে সেই কাজ শেষ করেছেন। ১৮০৩ সালে কলকাতায় বানালেন বিরাট প্রাসাদ— ‘ক্যালকাটা গভর্নমেন্ট হাউস’, আজ যা ‘রাজভবন’। ১৮০০ সাল থেকে ব্যারাকপুরে গঙ্গাতীরে তৈরি করা শুরু করলেন বিলিতি ধাঁচের এক বাহারি উদ্যান— ‘ব্যারাকপুর পার্ক’। তিন বছরের মধ্যেই সেই পার্কের আয়তন গিয়ে দাঁড়াল ১০০৬ বিঘা। সেই পার্ককে এখন আমরা ‘লাটবাগান’ বা ‘মঙ্গল পান্ডে উদ্যান’ নামে জানি। পার্কে আর এক প্রাসাদ তৈরির কাজ যখন চলছে, তখন অস্থায়ী ভাবে থাকার জন্য গঙ্গার তীর ঘেঁষে বানালেন একটি বড় দোতলা বাড়ি। প্রাসাদ আর শেষ হয়নি, ক্রমে ওই দোতলা বাড়িটিই হয়ে উঠল ‘ব্যারাকপুর গভর্নমেন্ট হাউস’, সব গভর্নর জেনারেল আর ভাইসরয়দের প্রিয় ‘কান্ট্রি হাউস’। কিছু দিন আগে পর্যন্তও এই বাড়িতেই ছিল পুলিশ হাসপাতাল। ক্যালকাটা গভর্নমেন্ট হাউস থেকে তাঁর প্রিয় ব্যারাকপুর পার্কের বাড়িতে সহজে যাতায়াতের জন্য ওয়েলেসলি বানিয়ে ফেললেন শ্যামবাজার থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত টানা এক রাস্তা, এখন যার নাম বি টি রোড। ইংরেজ কর্মচারীদের স্থানীয় ভাষা শেখানোর জন্য ১৮০০ সালে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে চালু করলেন ‘ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’।

ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানায় জিরাফ। ১৮৫১ সালে ফ্রেডরিক ফিবিগ-এর তোলা ফোটোগ্রাফ, হাতে রং করা। ছবি সৌজন্য: ব্রিটিশ লাইব্রেরি

লর্ড ওয়েলেসলির মনে হয়েছিল, এশিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে যে সব পশুপাখি পাওয়া যায় তাদের একটি বিজ্ঞানসম্মত, রঙিন ছবিওয়ালা বিস্তারিত বিবরণ তৈরি করা প্রয়োজন, কারণ ইউরোপীয় বিদ্বজ্জনেদের এ বিষয়ে জ্ঞান অসম্পূর্ণ। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। শুরু করলেন এশিয়ার প্রথম প্রকৃতি গবেষণা, ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’ কার্যক্রম। প্রাণী সংগ্রহ শুরু হল। তাদের রাখা হল গার্ডেনরিচে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল এই কার্যক্রম ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তা যখন সম্ভব হল না, ওয়েলেসলি তাঁর প্রকৃতি গবেষণা কার্যক্রম আর সব পশুপাখি নিয়ে এলেন ব্যারাকপুর পার্কে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডাক্তার, বিখ্যাত প্রকৃতিবিদ ফ্রান্সিস বুকাননকে এই গবেষণাকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন। স্থির করলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ উপনিবেশগুলির সামরিক-অসামরিক অফিসগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হবে, পশুপাখির নমুনা সংগ্রহে সব জায়গার মেডিকেল অফিসারদের যেন তাঁরা সাহায্য করেন। সিদ্ধান্ত হল, এই গবেষণা সংক্রান্ত সব চিঠিপত্রের খামের ওপরে লেখা হবে ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’, তা হলেই ডাক মাশুল মকুব। তখনও ‘জ়ুলজিক্যাল গার্ডেন’ বা ‘জ়ু’ শব্দটির প্রচলন হয়নি, পশুপক্ষীশালাকে বলা হত ‘মিনাজেরি’ (Menagerie)। ১৮০৪ সাল পর্যন্ত ব্যারাকপুরে ওই পশুপাখিদের রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়েছিল ২৭৯১ টাকা ৮ আনা ৬ পয়সা। গবেষণার জন্য সংগৃহীত এই সব পশুপাখি নিয়েই শুরু হয়েছিল ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানা। ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া কর্মকাণ্ডের জন্য মাসিক ১০০০ টাকা খরচ ধার্য হয়েছিল। মাসিক খরচ ভাগ করা হয়েছিল এ ভাবে: পশুপাখিদের খাবার ও দেখাশোনার জন্য ৫০০ টাকা, চিত্রশিল্পীর জন্য ১০০ টাকা, লেখকের জন্য ৪০ টাকা, ছবি আঁকার জন্য রং ইত্যাদি ৬০ টাকা, নতুন পশুপাখি সংগ্রহের জন্য খরচ ৩০০ টাকা। দুঃখের বিষয়, ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া-র কাজ খুব একটা এগোয়নি, ১৮০৫ সালে লর্ড ওয়েলেসলি এবং বুকানন ইংল্যান্ডে ফিরে গেলে ব্যারাকপুরে প্রথম প্রকৃতি গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। চিড়িয়াখানাটি কিন্তু থেকে যায় আরও ৭৫ বছর। আজও বিশ্বের ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ চর্চার ইতিহাসে ব্যারাকপুরে স্থাপিত প্রথম প্রকৃতি গবেষণা কার্যক্রমের কথা উল্লেখিত হয়, আলোচনা করা হয় ওই চিড়িয়াখানার কথা। ঘরের কাছের এই অভাবনীয় কর্মকাণ্ডের কথা আমরাই মনে রাখিনি।

সে দিন যে পাখিশালার ধ্বংসাবশেষ দেখেছিলাম, তা ওই ১৮০০ সালে শুরু হওয়া ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানার শেষ চিহ্ন। আজও তা রয়েছে ওই ভাবেই।

১৮২৮ সালে লন্ডন চিড়িয়াখানা স্থাপিত হয়। ‘জ়ুলজিকাল সোসাইটি অব লন্ডন’-এর প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট স্যর টমাস স্ট্যামফোর্ড র‌্যাফেল তার আগে দু’বার ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছিলেন। বোঝাই যায় যে লন্ডন চিড়িয়াখানা স্থাপনের সময় ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হয়েছিল। ভারতে-আসা যে সব বিদেশি ভ্রমণকারী গভর্নর জেনারেল ও ভাইসর‍য়দের অতিথি হয়েছেন, তাঁদের অনেকের লেখাতেই এই চিড়িয়াখানার সপ্রশংস উল্লেখ আছে। মিসেস গ্রাহাম এসেছিলেন ১৮১০ সালে, তাঁর লেখায় পেলিক্যান, সারস, ফ্লেমিংগো, উটপাখি, ক্যাসুয়ারি, জাভার পায়রা, দুটি বাঘ, দুটি ভালুকের বিবরণ পাওয়া যায়। ওই বছরই স্যর স্ট্যামফোর্ড র‌্যাফেল ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানায় প্রথম ‘টেপির’ দেখে বিস্মিত হন। ১৮১৪ সালে লেডি নাজেন্ট দেখেছেন ব্ল্যাক লেপার্ডও।

১৮১৭-১৯’এর মধ্যে লর্ড হেস্টিংসের আমলে তৈরি হয় নতুন এক পাখিশালা, আর ১৮২২ সালে আর একটি পশুশালা। দুটিই ছিল এখনকার ব্যারাকপুর চিড়িয়া মোড় থেকে মাত্র ২০০ ফুট দূরে, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। স্যর চার্লস ডয়লি-র আঁকা, খাঁচায় বাঘ-সিংহ সহ ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানার ওই পাখিশালা ও পশুশালার পেন্টিং পৃথিবীবিখ্যাত। গথিক শৈলীর পাখিশালাটির ছবি তুলেছিলেন ফ্রেডরিক ফিবিগ। বাঘ-সিংহের খাঁচাগুলি ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত ছিল। পাখিশালার এই বাড়িটি ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে ছিল ২০১৩-১৪ পর্যন্তও। পাশে একটি নতুন সরকারি অফিসবাড়ি তৈরি হওয়ার পর সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আজ ব্যারাকপুর চিড়িয়া মোড়ে হেস্টিংসের চিড়িয়াখানার আর কোনও চিহ্ন নেই।

১৮২৩ সালে লর্ড আমহার্স্ট জানাচ্ছেন, চিড়িয়াখানায় রয়েছে তিব্বতি বাইসন, দক্ষিণ আফ্রিকার গাধা, বাঘ, ভালুক, লেপার্ড, লিনক্স, শজারু, ক্যাঙারু, বাঁদর, মাউস ডিয়ার, বিভিন্ন রকমের পাখি। ১৮২৯ সাল নাগাদ ফরাসি প্রকৃতিবিদ ভিক্তর জাকমঁ-এর পর্যবেক্ষণ, লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে খরচ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই প্রাণীর সংখ্যা কমেছে। লর্ড অকল্যান্ড গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ১৮৩৬-এ। তিনি ও তাঁর দুই বোন, এমিলি ও ফ্যানি ইডেন ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানাকে আবার নতুন করে সাজিয়ে তোলেন। সেই সময় ‘গন্ডার পুকুর’-এ ছিল গন্ডার, ‘হরিণ পুকুর’-এর বেড়া-ঘেরা জায়গায় বহু হরিণ, ‘বেয়ার পিট’-এ ভালুক (মাটির উঁচু পাড় দিয়ে ঘেরা সমতল জায়গা, দর্শক উঁচু পাড়ে দাঁড়িয়ে নীচে ভালুক দেখতে পেত), চিতা, শ্লথ ভল্লুক, সাদা বাঁদর, বেবুন, জিরাফ আর দেশ-বিদেশের বহু পাখি।

zoological garden Barrackpore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy