Advertisement
১১ মে ২০২৪
Romila Thapar

সরকার থাকেনি, আমার বইগুলি থেকে গিয়েছে

বলছেন রোমিলা থাপার। কেন তাঁর বিরুদ্ধেই গত কয়েক দশক ধরে হিন্দুত্ববাদের বিষোদ্গার? কী এমন থাকে তাঁর লেখা বইয়ে? শিক্ষক হিসেবেই বা কেমন তিনি? ছেলেবেলায় সই নিতে গিয়ে কেন তাঁকে খেতে হয় গান্ধীজির বকুনি?

Picture of Romila Thapar.

রোমিলা থাপার।

কণাদ সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১১
Share: Save:

জন ডব্লিউ ক্লুগে পুরস্কারকে বলা হয় ‘মানবিক বিদ্যার নোবেল’। যে সমস্ত মানবিক বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় না, সেগুলির সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরস্কার হিসেবে নোবেল পুরস্কারের সমান অর্থমূল্যের ক্লুগে পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ২০০৩ সালে। বিগত দু’দশকে এই পুরস্কারের মোট তেরো জন প্রাপকের মধ্যে এক জনই ভারতীয়। ২০০৮ সালে আইরিশ ইতিহাসবিদ পিটার ব্রাউনের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে এই পুরস্কার পান রোমিলা থাপার।

সমাজতত্ত্ববিদ এম এন শ্রীনিবাস ১৯৭৬ সালে নৃতাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম সর্বোচ্চ খেতাব হাক্সলি স্মারক পদক পেয়েছেন। ১৯৯৯ সালে অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল জয় করেছেন। এই দু’টি ঘটনা ছাড়া স্বাধীন ভারতের কোনও নাগরিক বৌদ্ধিক চর্চার ক্ষেত্রে এত বড় আন্তর্জাতিক সম্মান আনতে পারেননি। ভারত সরকারও থাপারকে দু’বার, ১৯৯২ ও ২০০৫ সালে, ‘পদ্মভূষণ’-এর জন্য মনোনীত করে, যদিও থাপার জ্ঞানচর্চার জগতের বাইরে কোনও খেতাব না নেওয়ার আদর্শগত সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।

ইতিহাসচর্চার জগতে এতটা সম্মানিত থাপার এ দেশের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বৃত্তের কাছে অন্যতম বিতর্কিত চরিত্রও বটে। ২০০৩-২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান জ্ঞানচর্চা-প্রতিষ্ঠান ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’ তাঁকে বিশেষ ভাবে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিলে একটি ২০০০ স্বাক্ষর সম্বলিত অনলাইন পিটিশন এ ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, এবং বলে থাপার ‘মার্ক্সবাদী ও হিন্দুবিদ্বেষী’, যিনি ভারতের যে কোনও ইতিহাস ছিল তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন! রোমিলা থাপারের বিরুদ্ধে আক্রোশ কি আর আজকের?

সে দিনও দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে নবতিপর থাপারের বক্তৃতা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র বলেন, “রোমিলা থাপারের মতো ব্যক্তিরা মিথ্যা ইতিহাস লেখেন, ভুয়ো তথ্য দিয়ে হিন্দুদের গণহত্যার পক্ষে যুক্তি দেন। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্যও হল বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা প্রচার।”

থাপার তাঁর বক্তৃতায় অবশ্য হিন্দুবিদ্বেষ নয়, তুলে ধরেন হিন্দু-মুসলমান সহাবস্থানের ইতিহাস, প্রশ্ন তোলেন ইতিহাসের সাম্প্রদায়িক বিকৃতি নিয়ে। থাপার-বিদ্বেষীরা যে আদৌ তাঁর লেখা পড়ে বা বক্তৃতা শুনে ঘৃণার রাজনীতিতে হাত পাকাবেন, তা মনে করা অবশ্য দুরাশা।

কিন্তু কেন থাপারই হয়ে উঠলেন বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারের অন্যতম লক্ষ্য? থাপারের ইতিহাসচর্চার ধরনই বা আসলে কেমন? তাঁর লেখায় সত্যিই কি রয়েছে হিন্দুবিরোধী মনোভাব বা ঔপনিবেশিক প্রভাব, কিংবা ভারতের নিজস্ব ইতিহাসবোধকে অস্বীকার করার প্রবণতা? থাপারের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে কতটাই বা যোগ বামপন্থী রাজনীতির? থাপার-বিদ্বেষীরা যে নিদান দেন, তাঁর লেখার বদলে রমেশচন্দ্র মজুমদার-যদুনাথ সরকার পড়তে, ইতিহাসচর্চার জগতে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটা? ইতিহাসের জগতে কোন অবদানই বা বিশ্ববন্দিত করেছে তাঁকে? আর এত বিতর্কের মাঝে দাঁড়ানো মানুষটিই বা কেমন? অন্তত তাঁর থেকে প্রায় ছয় দশকের ছোট, এক সাধারণ ইতিহাস-অনুসন্ধিৎসু ছাত্রের অভিজ্ঞতায়?

অক্লান্ত শিক্ষক

আমরা তখন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে শুরু করেছি ভারতীয় ইতিহাসে স্নাতকোত্তরের পাঠ। প্রতি বুধবার সেখানে কোনও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ-গবেষক আসেন বক্তৃতা দিতে। তেমনই এক দিন বিশিষ্ট শিল্প ইতিহাসবিদ এবা কখের বক্তৃতায় শ্রোতাদের মধ্যে উপস্থিত আশি ছুঁই-ছুঁই অধ্যাপক থাপার! জাহাঙ্গিরের আমলে মানচিত্র শিল্পের বিকাশ নিয়ে আলোচনায় তুলে ধরা কিছু ছবিতে দেখা যায় জাহাঙ্গির দাঁড়িয়ে পৃথিবীর উপর, যা আবার রয়েছে একটি মাছের পিঠে। পৃথিবীর উপর সম্রাটের দাঁড়ানো না-হয় তাঁর একাধিপত্যের প্রতীক, কিন্তু এই মাছটির তাৎপর্য কী? প্রশ্নোত্তরের সময় বক্তাকে প্রশ্ন করলাম, বক্তা নিজেও কিছুটা ধন্দে, ঠিক সেই সময় রোমিলা মনে করিয়ে দিলেন পুরাণে বর্ণিত মৎস্য অবতারের কাহিনি। বুঝিয়ে দিলেন, মোগল আমলের ইন্দো-ইসলামীয় সংস্কৃতিকে বুঝতে গেলেও যে প্রাচীন ভারতীয় উপাদানগুলিকে ভুললে চলবে না।

এই সেই রোমিলা থাপার। যাঁকে নিয়ে বহু বিতর্কের কথা শুনেছি আকৈশোর, আবার কলেজ জীবনে যাঁর লেখা পড়ে ইতিহাসকে দেখতে শিখেছি নতুন ভাবে, এই সেন্টার ফর হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ়-এর অন্যতম স্থপতি যিনি! মহাভারত সম্পর্কে গবেষণায় নিজের আগ্রহ ও সেই সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন জানাতে চাই, কিন্তু গলা শুকিয়ে কাঠ। তিনি অবশ্য হাসিমুখেই কথা বললেন, পরামর্শ দিলেন মহাভারতের আগে ভাল করে পুরাণ পড়তে, আর জানালেন ভয়ের কিছু নেই।

ভয়ের যে কিছু নেই, তার পরিচয় বার বার পেয়েছি তার পরে। যে কোনও প্রশ্ন বা সমস্যা নিয়ে একটা ফোন করে হাজির হওয়া গেছে তাঁর মহারানি বাগের বাড়িতে। আধ ঘণ্টা সময় দেবেন বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে শুনেছেন গবেষণার খুঁটিনাটি। আবার প্রতিটি আলোচনায় ধরিয়ে দিয়েছেন নতুন প্রশ্নের সূত্র। এতটা প্রশ্রয় পাওয়ার কারণ কি আমি তাঁর ছাত্রের ছাত্র, অর্থাৎ ‘গ্র্যান্ডস্টুডেন্ট’ বলে? আমার গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক কুণাল চক্রবর্তীর বলা শব্দবন্ধটা তাঁকে শোনানোয় প্রথমে মজা পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু তার পরেই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, “শুধু গ্র্যান্ডস্টুডেন্ট কেন? আমি কিন্তু এখনও ডিপার্টমেন্টের অংশ।” ‘প্রফেসর ইমেরিটাস’ তাঁর কাছে নিছক একটা সাম্মানিক শব্দবন্ধ নয়, শিক্ষকতা যে তাঁর অবসরহীন ব্রত, এবং এই ব্রতে নব্বই পেরিয়েও যে তিনি অক্লান্ত, এর সাক্ষ্য দেবে আমাদের এক দশকপরের ছাত্রছাত্রীরাও।

দেশপ্রেমিক শিক্ষক

আমরা যারা আমাদের পারিপার্শ্বিকে ইংল্যান্ড-আমেরিকাকে স্থায়ী ঠিকানা করার ইঁদুর-দৌড় দেখে অভ্যস্ত, তাদের বিস্মিত হওয়া স্বাভাবিক যে, ইতিহাসের জগতে সর্বোচ্চ সম্মানজয়ী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডি মার্গারেট হল ও সেন্ট অ্যান্টনি’জ় কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ় এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর সাম্মানিক সদস্যপদ পাওয়া থাপার তাঁর বৌদ্ধিক জীবনের বেশির ভাগটাই কেন অতিবাহিত করলেন দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে? এর উত্তর নিহিত আছে থাপারের গভীর দেশপ্রেমে।

সেনা পরিবারের সন্তান রোমিলা। বাবা লেফটেন্যান্ট জেনারেল দয়ারাম থাপার ১৯৫১ সালে ভারতীয় সেনার চিকিৎসা পরিষেবার সর্বোচ্চ পদাধিকারী হন, কাকা প্রাণনাথ থাপার ছিলেন ভারতীয় স্থলসেনার চতুর্থ সর্বাধিনায়ক। দাদা বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রমেশ থাপার (ও তাঁর স্ত্রী রাজ) এক সময় ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকলেও জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে না পারা ইন্দিরার থেকে দূরে সরিয়ে আনে তাঁদের। রোমিলার চিন্তাজগতে সামরিক জাতীয়তাবাদ ও বামপন্থাকে ছাপিয়েও এক ভিন্নতর দেশপ্রেমের ছাপ অবশ্য স্পষ্ট— সেই দেশপ্রেমের ভিত্তি এক স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের স্বপ্ন।

স্বাধীনতার ১৯৪৭ সাল ছিল কিশোরী রোমিলার কাছে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ। তাঁর মনে এখনও স্পষ্ট কৈশোর-স্মৃতির মধ্যে রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর অটোগ্রাফ নিতে যাওয়ার কথা, যখন গান্ধীজি হালকা ধমক দিয়ে তাঁকে বলেছিলেন সিল্কের কুর্তি না পরে খাদি পরতে। এই ধমকের মধ্যে ছিল স্ব-নির্ভরতার পাঠ। পরবর্তী কালে শিক্ষাবিদ রোমিলা ভারতীয় ইতিহাসচর্চাকেও করতে চেয়েছিলেন স্ব-নির্ভর। মনে পড়ে, দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যখন এক গ্রামীণ কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেব, রোমিলা বলেছিলেন, জীবনের একটা সময় অন্তত গ্রামে না কাটালে ভারতবর্ষের অনেকটাই অজানা থেকে যায়, শুনিয়েছিলেন হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চাকরিজীবন শুরুর অভিজ্ঞতা। তবে কুরুক্ষেত্র বা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা (সতীশ চন্দ্র, বিপান চন্দ্র ও সর্বপল্লী গোপাল) ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় আধুনিক গবেষণামুখী পদ্ধতিকে বলবৎ করার কাঠামো গড়েন, ঔপনিবেশিক ইতিহাস-রচনার মূলে কুঠারাঘাত করে স্বাধীন, স্বনির্ভর জ্ঞানচর্চার লক্ষ্যে।

সম্রাট অশোক

ঔপনিবেশিক ইতিহাস-লেখকরা প্রাক্‌-ঔপনিবেশিক ভারতীয় সমাজকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন একটি স্থাণু, ধর্মকেন্দ্রিক, রাজনীতিবোধহীন, ইতিহাসবোধহীন সমাজ হিসেবে। ভারতীয় শাসকরা সবাই-ই তাঁদের কাছে ছিলেন স্বৈরতান্ত্রিক ও ধর্মান্ধ। জেমস মিলের যুগবিভাজনে প্রাচীন ও মধ্যযুগের নাম ছিল যথাক্রমে ‘হিন্দু যুগ’ ও ‘মুসলিম যুগ’, যদিও ব্রিটিশ আমলকে মিল ‘খ্রিস্টান যুগ’ বলেননি। এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত অবশ্যই যে ধর্মকেন্দ্রিক ভারতীয়রা বাস্তববোধহীন, পরলোকবাদী। তাই শাসনভার ব্রিটিশদের হাতেই সুরক্ষিত। তা ছাড়া ভারতীয় শাসকরা ধর্মীয় অনুশাসনে আবদ্ধ, তাই হিন্দু ও মুসলিম এই দুই গোষ্ঠীর পরস্পরবিরোধী স্বার্থ সুরক্ষিত শুধুমাত্র ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ব্রিটিশের হাতেই। প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রজাহিতৈষী রাজারাও কোনও না কোনও ধর্মীয় আদর্শের দ্বারা চালিত ছিলেন। যেমন, ভিনসেন্ট স্মিথ মৌর্য সম্রাট অশোককে দেখিয়েছিলেন এক জন অহিংস বৌদ্ধ রাজা হিসাবে, যে অশোকের নামাঙ্কিত চক্র ও স্তম্ভ স্বাধীন ভারতের জাতীয় প্রতীক। রোমিলা তাঁর পিএইচ ডি সন্দর্ভ ‘অশোক অ্যান্ড দ্য ডিক্লাইন অব দ্য মৌর্যস’-এ অশোককে এক জন নিপুণ কূটনীতিক হিসাবে তুলে ধরলেন। অশোকের লেখগুলির বিশ্লেষণ করে দেখান, অশোকের শাসননীতি ‘ধম্ম’ বৌদ্ধধর্মের অন্ধ অনুকরণ নয়, সব ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এক নৈতিক অনুশাসন। মৌর্য সাম্রাজ্যের মতো সুবিশাল সাম্রাজ্য শুধু সেনাবাহিনী আর গুপ্তচর বাহিনী দিয়ে শাসন করা যেত না। তার জন্য সর্বজনগ্রাহ্য একটি নৈতিক আদর্শের প্রয়োজন ছিল, যা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে সামাজিক-রাজনৈতিক ঐক্যসূত্রে বাঁধবে। এই আদর্শই ছিল অশোকের ‘ধম্ম’, যার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর প্রধান চোদ্দোটি শিলালেখ, সাতটি প্রধান স্তম্ভলেখ ও দু’টি কলিঙ্গ লেখতে। প্রাচীন ভারতেরও যে রাজনৈতিক ইতিহাস আছে, ঔপনিবেশিক ইতিহাসবিদদের মতবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রথম তা তুলে ধরেছিলেন কাশীপ্রসাদ জয়সোয়াল, কে এ নীলকান্ত শাস্ত্রী, রমেশচন্দ্র মজুমদার এবং হেমচন্দ্র রায়চৌধুরীর মতো জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা।

কিন্তু ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত এই ইতিহাসবিদরা ঔপনিবেশিক জ্ঞানতত্ত্বের কাঠামো থেকে বেরোতে পারেননি। তাই জয়সোয়াল ইউরোপীয় গণতন্ত্রের উত্তর খুঁজেছেন প্রাচীন ভারতীয় গণ-সঙ্ঘে, ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদকে প্রশ্ন করার বদলে রমেশচন্দ্র প্রাচীন ভারতীয় উপনিবেশ খুঁজেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। মিল-প্রভাবিত যদুনাথ সরকারের কাছে ব্রিটিশ শাসন ছিল এক দৈব আশীর্বাদ। তাঁদের অবদান অমূল্য, কিন্তু গত ছয়-সাত দশকে ভারতীয় ইতিহাসচর্চা ঔপনিবেশিক কাঠামোর বাইরে বেরিয়ে স্ব-নির্ভরতার পথে যে যাত্রা করেছে, সেখানে সম্রাট অশোককে এই ভাবে তুলে ধরা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। অশোকের লেখ দেখিয়েছিল বহু ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে আদর্শগত ঐক্যের ভিত্তিতে শাসনের এক বিকল্প পথ। অশোকই তো অঞ্চলভেদে লিপি ও ভাষার ভিন্নতাকে মর্যাদা দিয়েছেন, ঘোষণা করেছেন নিজের ধর্মমতের মর্যাদারক্ষার উপায় ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা।

মজা অন্যত্র। মৌর্য ইতিহাস চর্চায় এই বইটি প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে স্বীকৃত হলেও নিজের প্রথম গবেষণার ফসলকে নতুন তথ্যের আলোয় সংশোধন করতে এগিয়ে এসেছেন রোমিলা নিজেই। ‘মৌর্যস রিভিজ়িটেড’ বইটিতে তুলে ধরেছেন বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শাসনপদ্ধতির বিভিন্নতার বাস্তবতা। দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে যখন মন্তব্য করতে শোনা যায়, ইতিহাসবিদরা মৌর্য-গুপ্ত-চোল ইত্যাদিদের বদলে মোগলদের উপর অযাচিত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং অভিযোগের আঙুল ওঠে সারা জীবন প্রাচীন ভারতের ইতিহাস লেখা রোমিলার দিকে, তখন স্পষ্ট হয়ে যায় এই প্রচারের আড়ালে ইতিহাস চর্চা সম্পর্কে ধারণার একান্ত অভাব।

Picture of Romila Thapar.

ব্যতিক্রমী: ১৯৮৮ সালের একটি আলোকচিত্রে ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার।

ইতিহাসের বহু স্বর

বিগত সাত দশকে ভারতীয় ইতিহাস চর্চার যে পদ্ধতিগত ঔপনিবেশিকতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা, তার অন্যতম পুরোধা দামোদর ধর্মানন্দ কোশাম্বী এবং তাঁর অনুসারী ‘ভারতীয় মার্ক্সবাদী ইতিহাসবিদরা’। কিন্তু এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রথমেই খেয়াল করা দরকার যে ভারতীয় মার্ক্সবাদী ইতিহাসবিদরা অধিকাংশই কিন্তু ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে কার্ল মার্ক্সের সিদ্ধান্তগুলি পুরোপুরি গ্রহণ করেননি। মার্ক্স তাঁর সাংবাদিক জীবনে ভারত সম্পর্কে কয়েকটি প্রবন্ধে অনেকটা ঔপনিবেশিক পণ্ডিতদের মতোই ভারতকে একটি পরিবর্তনহীন, স্থাণু, স্বৈরাচারসর্বস্ব, ইতিহাসবিহীন ব্যবস্থা (যার পোশাকি নাম ‘এশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা’)-র অংশ হিসাবে দেখেন। ভারতের মার্ক্সবাদী ইতিহাসবিদরা মার্ক্সের সিদ্ধান্ত নয়, গ্রহণ করেন তাঁর পদ্ধতিকে, যেখানে ইতিহাসকে শুধু রাজারাজড়া ও যুদ্ধবিগ্রহের বিবরণ হিসাবে না দেখে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের নিরিখে দেখা হয়। পাশাপাশি, বিশ শতকের মাঝামাঝি ফ্রান্সে ‘অ্যানালস’ গোষ্ঠীর ইতিহাসবিদরা আমূল বদলে দেন ইতিহাস চর্চার জগৎ। সরকারি নথিপত্রের পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান, নৃতাত্ত্বিক গবেষণা, বৈজ্ঞানিক তথ্য, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র বা ডায়েরি— সব কিছুই যে হতে পারে ইতিহাসের উপাদান, আর ইতিহাস লেখা যেতে পারে সমাজ থেকে সংস্কৃতি, পরিবেশ থেকে আবেগ সব কিছুর, দেখান তাঁরা। কোশাম্বী ভারততত্ত্ব-চর্চায় যে ‘সম্মিলিত পদ্ধতি’-র প্রয়োগের কথা বলেন, তার উপর মার্ক্সবাদের পাশাপাশি এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবও ছিল যথেষ্ট।

কিন্তু রোমিলার ইতিহাস-বীক্ষা অনেকটাই আলাদা। মার্ক্সবাদী ব্যাখ্যা তাই খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যভাগে উত্তর ভারতে নগরায়ণ ও মহাজনপদের উদ্ভবকে সরাসরি লৌহপ্রযুক্তির ফলশ্রুতি বলে মনে করলেও, রোমিলার ‘ফ্রম লিনিয়েজ টু স্টেট’ বইতে প্রযুক্তি, কৌমব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থায় জটিল বিবর্তনের বহুবিধ কারণের একটিমাত্র। গুপ্ত যুগ যখন জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদদের কাছে ‘ধ্রুপদী যুগ’ ও মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে সামন্ততান্ত্রিক অবক্ষয়ের সূচনাপর্ব, রোমিলা এই বহুমাত্রিক কালপর্বকে চিহ্নিত করেছেন ‘যুগসন্ধির চৌকাঠ’ হিসেবে। ইতিহাসের উপাদানের বিশ্লেষণে সংস্কৃতি আর তার বহুমুখিনতা বার বার গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর লেখায়। ‘সোমনাথ: মেনি ভয়েসেস অব আ হিস্ট্রি’ গ্রন্থে যেমন তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, গজনীর সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণ ও সোমনাথ মন্দির ধ্বংসের সুপরিচিত ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে মামুদ এবং তাঁর পরবর্তী কালের তুর্কি শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত লেখকদের রচনার উপর, যাঁদের কাছে এটা বিধর্মীদের উপর ইসলামের জয়যাত্রার একটা নিদর্শন। কিন্তু গুজরাত অঞ্চলের শৈবদের চোখে এই ঘটনার অভিঘাত কেমন? অথবা একই এলাকার জৈনরাই বা এ ব্যাপারে কী বলেন? এই ঘটনার কী অভিঘাত পরবর্তী কালের লোকপরম্পরায়? একমাত্রিক ইতিহাস-রচনার বদলে রোমিলা তুলে ধরেছেন ইতিহাসের বহু স্বর।

আবার প্রায় একই কাহিনি ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতের বিভিন্নতায় কী ভাবে বদলে গেছে বেদ থেকে মহাভারতে, কালিদাসের নাটকে বা আধুনিক সাহিত্যে, কেমন করে বদলেছে নারীর চরিত্রায়ণ, সাহিত্য ও সমাজের সম্পর্কের এই ঐতিহাসিক বিবর্তনের আলোচনা উঠে এসেছে ‘শকুন্তলা’-য়।

ঐতিহাসিক পরম্পরা

হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী তাঁর বিখ্যাত ‘পলিটিক্যাল হিস্ট্রি অব এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া’ শুরুই করেছিলেন এই আক্ষেপোক্তি দিয়ে যে, কোনও থুকিডিডিস বা ট্যাসিটাস প্রাচীন ভারতের ইতিহাস লিখে যাননি। রমেশচন্দ্র মজুমদারও মন্তব্য করেছিলেন দ্বাদশ শতকে কলহণ কাশ্মীরের আঞ্চলিক ইতিহাস ‘রাজতরঙ্গিণী’ লেখার আগে ইতিহাস পদবাচ্য কোনও গ্রন্থ রচিত হয়নি প্রাচীন ভারতে। পরলোকবাদী প্রাচীন ভারতীয়দের ইতিহাসচেতনা ছিল না এই বদ্ধমূল ধারণা এক রকম মেনেই নিয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী, মার্ক্সবাদী, এমনকি উত্তর-ঔপনিবেশিকতাবাদীদের অধিকাংশ। এফ ই পার্জিটর, উপেন্দ্রনাথ ঘোষাল বা বিশ্বম্ভর শরণ পাঠকের মতো যে লেখকেরা প্রাচীন ভারতে ইতিহাসচেতনার উপস্থিতির অস্তিত্ব নির্দেশ করেছেন, তাঁরাও কোনও বিকল্প তাত্ত্বিক কাঠামো দিতে পারেননি।

‘কালচারাল পাস্টস’ বইয়ে সঙ্কলিত কয়েকটি প্রবন্ধে এই বিষয়ে আলোচনার সলতে পাকিয়ে অবশেষে ‘দ্য পাস্ট বিফোর আস’ বইতে রোমিলা প্রশ্ন তোলেন ইউরোপ-কেন্দ্রিক ইতিহাসবীক্ষার একদেশদর্শিতা নিয়ে। দেখালেন ইউরোপের ধাঁচে ‘হিস্ট্রি’ লেখাই অতীতচেতনার একমাত্র মাধ্যম নয়। প্রত্যেক সংস্কৃতির এক বা একাধিক উপায় থাকতে পারে অতীতকে সংরক্ষণ ও পরিবেশনের। রোমিলা এদের বলেছেন ‘ঐতিহাসিক পরম্পরা’। প্রাচীন যুগে উত্তর ভারতেই এ রকম বহু পরম্পরার অস্তিত্ব প্রাচীন ভারতীয়দের ইতিহাস-সচেতনতারই সাক্ষ্য দেয়, যদিও এগুলির উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি ‘হিস্ট্রি’-র থেকে আলাদা। বৈদিক, ইতিহাস-পুরাণ, বৌদ্ধ, জৈন পরম্পরায় অন্তর্নিহিত ইতিহাসচেতনা থেকে শুরু করে রাজকীয় লেখ, ঐতিহাসিক নাটক, জীবনীসাহিত্য ও আঞ্চলিক ইতিহাস লেখার ধারার আলোচনা করেন রোমিলা।

‘মহাভারত’ ও ‘রামায়ণ’-কে ‘ইতিহাস-পুরাণ’ নামক ঐতিহাসিক পরম্পরার অংশ হিসাবে দেখার নতুন দিগন্ত খুলে দেন রোমিলা। রামায়ণ যদিও ভারতীয় পরম্পরায় কাব্য হিসাবেই পরিচিত, বৌদ্ধ ‘দসরথ জাতক’, বাল্মীকির ‘রামায়ণ’ ও ‘জৈনপউমচরিঅ’-তে রামের কাহিনির ভিন্ন ভিন্ন কথন যে কৌম সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা, কৃষিসভ্যতা ও অরণ্যজীবনের মধ্যে সম্পর্কের ঐতিহাসিক বিবর্তনের সাক্ষ্য দেয়, রোমিলা তা দেখান। ‘মহাভারত’-পরম্পরার মূলে কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা থাকার সম্ভাবনা অনেক পণ্ডিত স্বীকার করলেও, সহস্রাধিক বছর ধরে গড়ে ওঠা এই গ্রন্থকে কোনও নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কালপর্বের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা ছিল একটা বড় সমস্যা। ঐতিহাসিক উপাদানগুলির প্রতিতুলনায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক তথ্যের বিশ্লেষণে রোমিলা দেখান যে ‘মহাভারত’-এর মূল আখ্যানভাগের, যার জন্ম সম্ভবত ‘সূত’ নামক চারণকবিদের মৌখিক পরম্পরায়, পটভূমি সুপ্রাচীন— পরবর্তী বৈদিক যুগের প্রথম দিকের কুরু-পাঞ্চাল জনপদের লিপিপূর্ববর্তী, মুদ্রাপূর্ববর্তী কৌমসমাজ।

অন্য দিকে ‘মহাভারত’-এর ব্রাহ্মণায়ন-প্রক্রিয়ায় সংযোজিত নির্দেশমূলক অংশগুলির পরিপ্রেক্ষিতে রয়েছে মৌর্য-পরবর্তী যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থা, মুদ্রা অর্থনীতি, পৌরাণিক ভাগবত-বৈষ্ণবধর্ম। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘মহাভারত’ পাঠের সম্ভাবনা দেখিয়ে রোমিলা খুলে দেন নতুন গবেষণার পথ, যে পথ ধরে এগোতে পেরেছি আমাদের মতো পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকেরা। রোমিলা থাপারের গবেষণা ঔপনিবেশীয় বা ধ্রুপদী মার্ক্সীয় ইতিহাসচর্চার অনুসারী নয়, বরং ইউরোপ-কেন্দ্রিক ঔপনিবেশিক ইতিহাসব্যাখ্যার বদলের অন্যতম স্তম্ভ। রোমিলার নামে অপপ্রচারের মূল কান্ডারি তারাই, যারা তাঁর ইতিহাসচর্চার ধরন সম্পর্কে আদৌ পরিচিত নয়।

জনপরিসরের বুদ্ধিজীবী

২০০৪ সাল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট দিচ্ছে গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রবাদপ্রতিম দুই লেখিকাকে। এক জন রোমিলা, অন্য জন সে সময় পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত উপন্যাসগুলির রচয়িতা হ্যারি পটার-স্রষ্টা জে কে রাওলিং। সৌজন্যবশত রাওলিং রোমিলাকে অভিনন্দন জানিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন যে, রোমিলার কোনও বই-ই তাঁর পড়া হয়নি। রোমিলা তৎক্ষণাৎ জবাব দেন, “খুবই স্বস্তির কথা। কারণ আমারও আপনার একটাও বই পড়া হয়নি।” এই সপ্রতিভ আত্মবিশ্বাস যেমন এক দিকে রোমিলাকে দিয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা, অন্য দিকে তাঁকে প্রায়শই করে তুলেছে আক্রমণের লক্ষ্য। না হলে যে ইতিহাসবিদ প্রাচীন ভারতের ইতিহাসচর্চাকে ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত করার অন্যতম পথিকৃৎ, তিনি কেন হবেন ঠিক তার বিপরীত প্রচারের শিকার? খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় সহস্রাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষীদের পরিযাণ, বৈদিক যুগের খাদ্যতালিকায় গোমাংসের উপস্থিতির উল্লেখ, বর্ণজাতি-ব্যবস্থার সমালোচনা— যে সমস্ত অভিমতের জন্য রোমিলা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরাগভাজন, সে সব তথ্য তো প্রাচীন ভারত বিষয়ক অধিকাংশ ইতিহাস বইয়েই পাওয়া যায়।

তা হলে ইতিহাসবিদ এবং গবেষক রোমিলার বৈশিষ্ট্য কী? সম্ভবত ‘জনপরিসরের বুদ্ধিজীবী’ বা ‘পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল’ হিসেবে তাঁর অবস্থান। রোমিলা নিজেই মনে করিয়ে দেন, পেশাদার গবেষকরা সাধারণত লেখেন সেই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে, জনসাধারণের জন্য নয়। কিন্তু ‘জনপরিসরের বুদ্ধিজীবী’-র ব্যতিক্রমী দক্ষতা থাকে গবেষণার বিষয়কে সর্বজনবোধ্য ভাবে তুলে ধরার।

কালজয়ী গবেষণাগ্রন্থের পাশাপাশি রোমিলা লিখতে পারেন ‘পেঙ্গুইন হিস্ট্রি অব আর্লি ইন্ডিয়া’-র মতো পাঠ্যপুস্তক, দেখান পাঠ্যপুস্তকও মৌর্য-কুষাণ-গুপ্ত ইত্যাদি রাজবংশের বিবরণের গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে হয়ে উঠতে পারে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার আলোচনা। ‘পাস্ট অ্যাজ় প্রেজ়েন্ট’-এর মতো বইতে তুলে ধরেন ইতিহাস (এবং ইতিহাস-বিকৃতি) কী ভাবে হয়ে ওঠে বর্তমান রাজনীতির উপজীব্য। ‘সিন্ডিকেটেড হিন্দুইজ়ম’-এ হিন্দুধর্মের বহুত্ববাদী স্বরূপ তুলে ধরে তিনি দেখান হিন্দুধর্মকে একরৈখিক রূপ দেওয়ার সাম্প্রতিক চেষ্টার অসারতা। বন্ধু বিপান চন্দ্রের অনুরোধে এক সময় ইতিহাসচর্চার জটিল গতিপ্রকৃতিকে ছাত্রপাঠ্য স্কুলের বইয়ের উপযুক্ত করে তুলে ধরতেও রাজি হন তিনি। এই দক্ষতাই রোমিলার আবেদন ও জনপ্রিয়তার কারণ, আবার এই কারণেই রোমিলার লেখাকে ঘিরে এত বিতর্ক।

শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদদের লেখা সহজবোধ্য বই থাকলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইতিহাসবিকৃতি ঘটানো সহজ নয়। রোমিলার লেখা পাঠ্যবইকে আটকানোর চেষ্টা শুধু সাম্প্রতিক কালে হয়েছে তা নয়, মোরারজি দেশাইয়ের সরকার থাকাকালীন সংসদে মুরলীমনোহর জোশী শুরু করেছিলেন এই বিতর্ক। রোমিলা জানান, “তিন বছরব্যাপী বিতর্কের পর সেই সরকার থাকেনি, বইগুলো অবশ্য থেকে গিয়েছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Romila Thapar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE