পূর্বানুবৃত্তি: দীপঙ্কর জনমেজয়কে জানান, তাঁর পরিবারে যাত্রার চল ছিল। তাঁর বাবা যাত্রায় অভিনয় করতেন, পিসেমশাই ছিলেন বিখ্যাত তারকা অলোককুমার। শুনে দীপঙ্করবাবুকে দিয়ে আকবর বাদশার অভিনয় করাতে আরও উৎসাহ পান জনমেজয়। ততক্ষণে চিৎপুরে পৌঁছে গেছেন দীপঙ্কর। সেখানে যাত্রার পরিবেশে তাঁর জড়তা কাটে, চতুর্দিকে ঝলমলে পোশাকের সমারোহে নিজেকে আকবর বাদশা বলে ভাবতে ইচ্ছে করে। হাঁটতে হাঁটতে চিৎপুর থেকে পৌঁছে যান কলেজ স্ট্রিটে। সন্ধান করেন আকবর বাদশা নিয়ে যাত্রার বই। আলাপ হয় বইবিক্রেতার সঙ্গে। সব মিলিয়ে বেশ মন ভাল হয়ে যায় তাঁর। তিনি কবিরাজি কাটলেট খান। বাড়ির জন্যও নিয়ে আসেন। পরের দিন অবশ্য অফিস কামাইয়ের জন্য মৃদু তিরস্কৃত হন অফিসের বস, অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে। অন্য দিকে জনমেজয় যখন পুরুলিয়া পৌঁছলেন, তখন রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে। আধো ঘুম আধো জাগরণে তাঁর মনে খেলা করে বেড়িয়েছে যাত্রাজীবনের নানা স্বপ্নের কোলাজ।
চোখেমুখে জল দিলেন জনমেজয়। স্টেশন থেকে নেমে স্ট্যান্ডের বাইক বার করলেন, তার পর শহর থেকে কিলোমিটার খানেক রাস্তা পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছলেন যখন, তখন প্রায় শেষরাত। সুধাময়ী জেগেই ছিলেন।
এক ডাকেই দরজা খুলে দিলেন।
বললেন, “কী গো! ভোর হয়ে গেল তো!”
জনমেজয় বললেন, “আবার সকালেই বেরোতে হবে, এ রকম জানলে আজ আসতাম না।”
সুধাময়ী বললেন, “কাল ছুটি না!”
ক্লান্ত জনমেজয় বললেন, “কিসের!”
“আগামী কাল তো রথ।”
“নির্বাচনের মতো দ্রুতগামী রথ আর কিছু হয় না। যা কিছু বলি না কেন, তবু এই রথ চলবেই।”
সুধাময়ী বললেন, “রথ এবং যাত্রা।”
অনেক দুঃখেও হাসলেন জনমেজয়।
সুধাময়ী চটপট ভাত বাড়তে গেলেন, সঙ্গে কলাইয়ের ডাল, পোস্তর বড়া ও শোল মাছের টক।
স্নান সেরে খেতে বসে জনমেজয়বাবু বললেন, “তোমার রান্নাটা অনেক কষ্টের মধ্যেও বড় পাওয়া।”
সুধাময়ী বললেন, “বিষ্ণুপুরের রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা থাকে না!”
জনমেজয় অন্য কথা বললেন, “তোমার হাতের ব্যথা কেমন আছে?”
“অনেকটা কম।”
“পুরুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাব প্লাস্টার কাটাতে। নাকি কোনও নার্সিং হোমে যাবে?”
সুধাময়ী বললেন, “তোমার যা ইচ্ছে।”
এ বার জনমেজয় ফিরলেন রথের কথায়, বললেন, “যে রথটা বকুলগঞ্জে হয়, সেই রথে গরুড়ের প্রতীক থাকে। আটপাড়া থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে আর রথে আরূঢ় থাকেন রাধালাল জিউ, কৃষ্ণরায় জিউ এবং রাধাগোবিন্দ জিউ।”
সুধাময়ী হেসে বললেন, “মাধবগঞ্জের রথে?”
“রাধামদনগোপাল জিউ, মুরলীধর জিউ।”
সুধাময়ী বললেন, “সবটাই তো উল্টোরথে।”
জনমেজয় খেয়ে উঠতে উঠতে চার পাশ খানিকটা ফর্সা হয়ে উঠল।
সুধাময়ী বললেন, “একটু গড়িয়ে নাও।”
“এখন শুলে আর উঠতে পারব না।”
“যেতে হবেই!”
“ট্রেজারি এখন স্ট্রং রুম। যেতে হবেই।”
“তোমার ঘোষসাহেবের কী খবর!”
“সামান্য বেঁচে গেলেন, হঠাৎ নির্বাচনের ঘোষণা হওয়াতে পাট্টার কাজ বন্ধ হয়ে গেল।”
“উনি ইলেকশনে নেই?”
“জানি না। সকালের জন্য তৈরি হতে হবে।”
“বলে আসতে পারতে।”
“মনে হয়েছিল, কিন্তু বলতে পারলাম না।”
জনমেজয় বললেন, “তুমি ‘রক্তে ধোয়া ধান’-এ আমার অভিনয় দেখেছিলে?”
“বা রে! দেখিনি আবার! আজও মনে আছে শেষ দৃশ্যের কথাগুলো।”
“সত্যি!”
“বলব?”
“হ্যাঁ বলো, ওটুকুই তো জীবনের ধন।”
সুধাময়ী বললেন, “পারলাম না— পারলাম না রে ঝুমলি! বুর্জোয়াদের ঔদ্ধত্যের কাছে তোকে বলি দিতে পারলাম না। তোর মর্মভেদী আর্তনাদ আমাকে সব কিছু ভুলিয়ে পুলিশের সামনে পৌঁছে দিলে।”
মুখটা দারুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠল জনমেজয়ের। এই তো তাঁর পুরস্কার! হঠাৎ বললেন, “আমাদের ছেলে এখন ইসরো-য়। আধুনিক গবেষণায় নিজেকে ঋদ্ধ করছে। ও আমাদের গর্ব। কিন্তু আমাদের যাত্রা হয়তো হারিয়ে যাচ্ছে। তবে হারাবে না লড়াই। কিছু তো হয়েছে! কৃষক তো তার অধিকার অনেকটাই পেয়েছে। এখনও বাকি আছে।”
সুধাময়ী বললেন, “আবার যাত্রা করবে!”
“এ বার ঐতিহাসিক পালা। দীপঙ্কর সাহেবও অভিনয় করবেন!”
সুধাময়ী অবাক হয়ে বললেন, “তাই!”
“একদম। একেবারে আকবর বাদশা।”
“পারবেন!”
“ওঁর রক্তে যাত্রা রয়েছে। ওঁর বাবা যাত্রা করতেন, পিসেমশাই তো স্টার ছিলেন।”
“চা করে দেব!”
“দাও তা হলে।”
সুধাময়ী চা করতে গেলে জনমেজয় আয়নার সামনে এলেন। তিনি এখন অঙ্কুশ।
বললেন, “জাস্ট হোল্ড ইয়োর টাং মিস্টার পাকড়াশি। একটা অঙ্কুশকে কয়েদ করে তোমরা কিছুই করতে পারবে না। জানো না, ভারতবর্ষের মাটিতে লক্ষ লক্ষ অঙ্কুশের আবাদ হয়ে আছে।”
সুধাময়ী বললেন, “এখন চা খেয়ে নাও,” তার পর বলে উঠলেন, “তারা মজদুর, তারা মধ্যবিত্ত, তারা ভূমিদাস প্রথার পিঞ্জরমুক্ত নির্যাতিত কিষাণ— যাদের রক্তে ধোয়া ধান।”
অর্জুনকাকা সাত সকালে এসে ডাকল, “জনা, তোর ছেলের চিঠি পোস্টম্যান আমায় দিয়েছিল।”
জনমেজয় বললেন, “কাকা, চা খাবে!”
“না রে, মাঠে যাব। ধান রোয়ার সময় হয়েছে।”
সুধাময়ীও ছুটে এল, ছেলের চিঠি এসেছে শুনে।
ওঁরা পড়তে থাকলেন।
“বাবা ও মা,
আমি ভাল আছি। তোমরা কেমন আছ? আমার একজন সতীর্থের বাবাও এক সময় যাত্রা করতেন। তোমার অভিনয়ও ছেলেবেলায় দেখেছে বাবা। আমার সত্যি গর্ব হচ্ছিল তোমার সন্তান বলে।...”
সুধাময়ী, জনমেজয়ের চোখ ছলছল করে উঠল।
৪
এটাও ঠিক, দীপঙ্করের রোজ অফিস যেতে ভাল লাগে না। মনে হয়, আজ অফিস না গিয়ে ভোলার দোকানে হিঙের কচুরি খাই, গঙ্গার ধারে বসে অকারণে নানা কথা ভাবি। চাকরির পর্বটা বড় দীর্ঘ, এখনও সময়ের হিসাবে হাজার দিনের কিছু কম। খলিসানি থেকে বাগবাজার গঙ্গার পাড়ের কাছে যেতে হলে অটো করতে হয়। একটু বিলাসিতা করে দীপঙ্কর রিকশা নেন অনেক সময়।
পল্লবী অন্য কাউকে ভালবাসে, এটা জানেন দীপঙ্কর। তাই আচমকা বাড়ি ফেরেন না, ফোন করে নেন, যাতে পল্লবী তার প্রেমিককে নিয়ে একটু গুছিয়ে নিতে পারে। পল্লবীর শরীর নিয়ে দীপঙ্করের কোনও আকর্ষণ নেই। মনও কোনও দিন জেগেছিল বলে মনে হয় না। পল্লবী যে দেখতে খারাপ, এমনটা নয়। বরং লোকজন ওকে সেক্সি বলে। কেন যে পল্লবীর প্রতি মন, দেহ কিছুই জাগল না, এই ব্যাখ্যা দীপঙ্করের কাছে নেই। যৌবনে খলিসানি প্রস কোয়ার্টারে গেছেন কয়েক বার বন্ধুদের সঙ্গে। সেখানেও সবাইকে পল্লবীর মতোই লেগেছে; মন, দেহ কিছুই জাগেনি।
চন্দননগর গঙ্গার ঘাট বেশ সাজানো। ও-পারে শ্যামনগর। দুপুরবেলা অনেকে প্রেম করতে আসে। কখনও কখনও, যখন বয়স আর কম ছিল, দীপঙ্কর হুগলির জোড়াঘাটের দিকে চলে যেতেন। বকুলতলার ঘাট, রথতলার ঘাট, রানি রাসমণির ঘাট ইত্যাদি। ও সব ঘাট বেশ প্রাচীন।
দেখতে দেখতে বেলা একটা বেজে গেল। পল্লবীর সাজিয়ে দেওয়া টিফিনবাক্সে একটা ডিম, কলা আর দু’পিস মাখন-পাউরুটি রয়েছে। খিদে-খিদে পাচ্ছে বলে খেয়ে নিলেন।
এর পর কী করা যায়! আবার একটু বাদশাহি চাল দেখাতে ইচ্ছে হল।
একটা রিকশা ডাকলেন দীপঙ্কর, “এই ভাই! জোড়াঘাট যাবে?”
সে খুব তাচ্ছিল্যভরে বলল, “একশো টাকা লাগবে কিন্তু।”
বলেই সে ভেবেছিল, এই ভবঘুরে মানুষটা নিশ্চয়ই রাজি হবে না।
কিন্তু দীপঙ্কর রাজি হলেন, দরদস্তুর করলেন না।
ভারী শরীরটা নিয়ে রিকশায় উঠতে কষ্ট হয়।
এক বার উঠে পড়লে বেশ লাগে। তালডাঙা মোড় পার হয়ে রিকশা খাদিনা মোড়ে এল। ডান দিকে বাঁক নিতে চুঁচুড়া শহরে ঢুকল। চুঁচুড়া শহর ওলন্দাজদের তৈরি। গলিগুলি সঙ্কীর্ণ। অনেকটা উত্তর কলকাতার অলিগলির মতো।
সবুজ-মেরুন মোহনবাগানের পতাকা, পালতোলা নৌকো, এ সব দৃশ্যমান হতে লাগল।
দীপঙ্কররা বরিশালের, পল্লবী চট্টগ্রামের, যদিও ওঁরা কেউই পুব বাংলা দেখেননি। দীপঙ্করের শৈশব কেটেছে মধ্য কলকাতায়। কলকাতার অলিগলি তাঁর বেশ চেনা। সেই চেনা অলিগলিতে এক সময় রাতবিরেতে আসত প্রিজ়ন ভ্যান। আবছায়া কালো-কালো ধোঁয়ায় আবৃত রাস্তাঘাট। দেওয়ালে সব স্লোগান। মিছিলের মুখোমুখি বেয়নেটধারী পুলিশ।
ওই শহর ছেড়ে ওঁরা চলে এলেন চন্দননগরে। খলিসানি কলাবাগানের কাছে সাঁতরাপল্লিতে তখন মানুষজন খুব কম। বেশি ছিল কলাগাছ। দেখতে দেখতে শহর কলকাতার স্মৃতি পুরনো হয়ে এল।
জোড়াঘাটে একটু বসলেন দীপঙ্কর। চওড়া ঘাট, এখানেই বঙ্কিমবাবু একটি বাড়িতে থাকতেন। তা ভাল করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এখানে বসেই তিনি ‘বন্দে মাতরম্’ লিখেছিলেন। পাশেই কালিকানন্দ অবধূতের আবাসগৃহ। এখন যাঁরা থাকেন, দাবি করেন তাঁরা অবধূতেরই পরিবারের। যদিও অবধূত সংসার করেননি। ভৈরবীকে কখনও দেখেননি দীপঙ্কর। কয়েকটি বেড়াল বহু বছর ধরে এইবাড়ির বাসিন্দা।
রিকশা ছেড়ে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই বকুলতলা এলেন দীপঙ্কর। চা আর নিমকি খেলেন। ‘রাধারাণী’তে নিমকি কেনার পর ওরাই জোর করে চা খাওয়াল।
বকুলগাছটা সুগন্ধি বকুলফুলে ছেয়ে রয়েছে। এই সময় উপর্ঝরণ বৃষ্টি শুরু হল, তবে বকুলগাছের ডালপালা এত বিস্তৃত, তেমন ভিজলেন না দীপঙ্কর।
পল্লবী বলল, “পলাশ, এই যে তুমি এসেছ, এই আসা শরীরের ডাকে না মনের ডাকে!”
পলাশ বলল, “অত ভাবি না। তবে মনে হয়, আমার থেকে তুমি অনেকটা সুখ পাও।”
“পাই, দীপঙ্করের কাছে আমার কোনও মূল্য নেই। ও বাড়ি ফেরে ছেলের টানে।”
“দীপঙ্করদা তোমাকে সন্তান তো দিয়েছেন।”
“আজ যে ওঁর খুব সুখ্যাতি করছ!”
“যা সত্যি তা-ই বলছি।”
“ও আমাকে কোনও দিন আদর করেনি, কোনও দিন কোলে তুলে নেয়নি।”
“কেন বলো তো বৌদি! তুমি তো সুন্দরী।”
“জানি না। বরাবরই ও রকম। অফিসে খুব অপমানিত হয় অন্যমনস্ক বলে।”
পলাশ পল্লবীকে কোলে তুলে নেয়। কপালে চুমু দেয়। শাড়িটা নামিয়ে দেয় কোলের কাছে। ব্লাউজ়ের ভিতরে কোনও অন্তর্বাস নেই। স্তনবৃন্ত দুটো স্পষ্ট।
নরম হাতে ব্লাউজ়ের হুক খুলতে থাকে পলাশ।
“এ রকম কত জন বৌদির সঙ্গ তুমি করো!”
“হিসেব করিনি। কেউ ডাকলে যাই, কিছু রোজগার তো হয়।”
“আমি তো তোমাকে টাকাপয়সা দিইনি।”
“দুটো দামি জামা দিয়েছ।”
পল্লবীর ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত এখন।
ধীরে ধীরে পল্লবীকে আদরে আদরে উদ্দীপিত করে পলাশ। মেয়েদের এক-এক জনের শিহরন এক-এক জায়গায়। এটাও জানতে হয়, এটাও এক ধরনের পেশাদারিত্ব।
শাড়িটা পুরোপুরি সরিয়ে নেয় পলাশ। অনাবৃত পল্লবীকে শুধু এক বার দেখে পলাশ। প্রথম দিকে একটা অনুভূতি হত। এখন হয় না। সবটাই যান্ত্রিক।
লেহনক্রিয়ায় পল্লবীর গোপন বিন্দুগুলিকে সিক্ত করতে করতে নিজের জিভেও কেমন অম্লস্বাদ পায় পলাশ। উত্তেজনা ছড়িয়ে যায় পল্লবীর প্রতিটি রোমে। পলাশ কৌশলী রমণকর্মীর মতো আরও, আরও উত্তেজিত করে পল্লবীকে। এ বার বিছানায় কামাগ্নিতে প্রায় উন্মাদিনী হয়ে উঠতে থাকে পল্লবী, তার পর নিথর হয়ে পড়ে।
দেহের দিক থেকে পরিতৃপ্ত হয় পল্লবী।
আস্তে আস্তে শরীরটা বিছানা থেকে তুলে নিয়ে বাথরুমে যায়। শাওয়ার চালিয়ে আর এক বার স্নান করে নেয়।
পলাশকে শাড়ি আর ব্লাউজ় দিতে বললে, পলাশ ছুড়ে দেয়।
বাথরুম থেকে ফিরে এসে পল্লবী পলাশকে জিজ্ঞেস করে, “কিছু খাবে!”
পলাশ বলে, “না। আজ তোমার কাছে কিছু টাকা চাইব।”
“কত?” জানতে চায় পল্লবী।
“পাঁচশো।”
পল্লবী ড্রয়ার খুলে টাকা বার করে। পলাশের হাতে দিয়ে বলে, “তুমি আমায় ভালবাসো?”
“এই তো বাসলাম।”
“এটা তো শরীরে।”
“মন এক বায়বীয় বিষয় এবং খুব জটিল। এই নিয়ে আমি ভাবি না।”
পলাশ আর দাঁড়ায় না।
বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর ক্লান্ত হয়ে দীপঙ্কর বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ঢোকার আগে কেয়া ফুলের গন্ধ ওঁর নাকে এসে ধাক্কা দেয়। একটু চমকে ওঠেন দীপঙ্কর, দেখেন, চিত্রল বর্ণের একটি সাপ তাদের শোওয়ার ঘরের জানলা থেকে সর্পিল গতিতে নেমে দ্রুত সামনের ঝোপের মধ্যে হারিয়ে গেল। দীপঙ্কর ছেলেবেলায় এক বারই কেয়া ফুল দেখেছিলেন। কেয়া গাছ বেশ কাঁটা-কাঁটা, একটা ফুল টেনে নিতেই খানিকটা রক্তাক্ত হতে হয়েছিল।
যাই হোক, দীপঙ্কর টের পান লোডশেডিং হয়েছে, ডোরবেল বাজছে না। দিনের আলো একদম মরে গেছে, তবে বিকেলের গোলাপি আভা রয়েছে।
পল্লবী দরজা খুলে অবাক হয়ে যায়।
বলে, “আজও অফিস যাওনি!”
দীপঙ্কর হেসে বলে, “না।”
কেমন কান্না পায় পল্লবীর। মনে হয় এক অদ্ভুত অন্যমনস্ক, জীবন থেকে সরে থাকা এক মানুষকে সেও ঠকাচ্ছে। কোনও অবিশ্বাসের ছায়া নেই দীপঙ্করের মুখমণ্ডলে।
অনেক কষ্টে আবেগ সংযত করে পল্লবী, বলে, “ভিতরে এসো।”
তখনই আলো আাসে। দীপও স্কুলের পর টিউশন সেরে ফিরে আসে।
ছেলেকে দেখে দীপঙ্কর বলেন, “ইস! তোদের জন্য কিছু আনলে হত।”
পল্লবী বলে, “আর তোমাকে যেতে হবে না, আমি লুচি করছি।”
বাইরে আবার অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। চিত্রল সাপটার সঙ্গে তার দোসরের সঙ্গে দেখা হয়। কেউই খুব ভাল করে লক্ষ না করলে বুঝতে পারবে না যে, ঝিলের চার ধারে জঙ্গলাকীর্ণ ভূমিতে একটি কেয়া গাছ তার কণ্টক নিয়ে গোপনে আত্মপ্রকাশ করেছে। ফুলও এসেছে ঝাঁকে ঝাঁকে। সেই গন্ধে বিমোহিত হয়ে দুই সর্প এবং সর্পিণী লুপ্তপ্রায় নট-নটীর মতো, আষাঢ়ের আকাশের বৃষ্টির গানকে প্রেক্ষাপটে কনসার্টের মতো রেখে প্রণয়কথা নির্মাণ করছে।
ক্রমশ
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)