Advertisement
০২ মে ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৩৫
Bengali Story

হাওয়ার আড়ালে

এক দিন সকালের কথা। প্রতিদিনের মতো স্নান সেরে বেরোতেই কস্তুরী অবাক হল। স্নানে যাওয়ার আগেই দেখেছে, পুবমুখো জানলাটা দিয়ে ঝলকে ঝলকে রোদ এসে সোফার এক দিক আলোকিত করে রেখেছে।

ছবি: পিয়ালী বালা।

ছবি: পিয়ালী বালা।

অজিতেশ নাগ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৫১
Share: Save:

হিয়ান্তিকাও যে কখন উঠে এসেছিল, কস্তুরী খেয়াল করেনি। ওদের সঙ্গে বসল সে-ও।

হঠাৎই কস্তুরী খেয়াল করল, মিশুকের হাতে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট। ও জিজ্ঞেস করল, “এটা কী তিতি?”

নিঃশব্দে প্যাকেটটা খুলে সামনে এগিয়ে ধরল মিশুক। তাতে এক ঝলক উঁকি দিয়েই মুখ ফিরিয়ে নিল কস্তুরী। কিছু দেখার নেই আর। প্যাকেটের ভিতরে সব্যর তিনটে আংটি, হাতের বালা আর মোবাইলটা। রোদ লেগে এক কোণে ঝিকমিক করে উঠল এক কুচি হিরে।

কস্তুরী মিশুকের দিকে জলের বোতল এগিয়ে দিল। খাওয়ার বদলে এক আঁজলা জল চোখে-মুখে ছিটিয়ে দিল সে। ভিজল বুকের কাছটা খানিক। গঙ্গার দিক থেকে ধেয়ে এল ঠান্ডা বাতাস। সামান্য কেঁপে উঠল মিশুক। কস্তুরী নিজের গায়ের স্টোলটায় জড়িয়ে নিল মিশুককে। ডানাভাঙা পাখির মতো ওর বুকের কাছে লেপ্টে থাকল মিশুক।

এর পর কেটে গেছে পাক্কা চোদ্দো দিন। এই ক’দিনে এক বারও দেখা হয়নি মিশুকের সঙ্গে। তবে ফোনে কথা হয়েছে। সব্যর ঘটনাটায় মিশুকের বেশ কিছু শুটিং শিডিউল পিছিয়ে গিয়েছিল। তাই এখন চরম ব্যস্ততা। তবে কথাবার্তায় মনে হয়েছে পুরনো তিতি-তে ফিরতে এখনও মিশুকের বেশ খানিকটা সময় লাগবে। ট্রমা কাটতে এখনও মাসখানেক যাবে মনে হচ্ছে। তবে জ্ঞানত এই চোদ্দো দিনে এক বারও সব্যকে নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি কস্তুরী।

এই চোদ্দো দিনের মধ্যে আট দিন হল কস্তুরীও ট্রান্সফার হয়ে চলে এসেছে কিড স্ট্রিটের অফিসে। পুরনো স্টাফ বলতে তেমন কেউ নেই। একমাত্র অরিত্র সেন নামের ছেলেটা ছাড়া। আর বাকিরা একদম ফ্রেশ, তবে এক্সপিরিয়েন্সড। এই অফিস একদম হাল ফ্যাশনের, ঝকঝকে। বিভাস দত্ত এসেছিল প্রথম তিন দিন, তবে তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন রুংটাজি। শেষ খবর, দত্তবাবু ভুবনশ্বরে চলে গেছেন। এই অফিসে আবার প্রতি শুক্রবার ছুটি, রবিবার অফিস। সে দিন রুংটাজি আসেন। এক দিন মজা করে বলেছিলেন, “ভালই তো হল। ইচ অ্যান্ড এভরি ফ্রাইডে মুভি দেখতে চলে যাবেন মিসেস রায়। ওপেনিং ডে ওপেনিং শো।”

অদ্রিজার ফোন এসেছিল এর মধ্যে। ওর মুখেই শোনা, তমালিকা সমেত মোট ছ’জনকে চিঠি ধরিয়েছে কোম্পানি। তমালিকা নাকি খুব কাঁদছিল। খুব করে নাকি রিকোয়েস্ট করেছিল আরও যদি দুটো মাস এক্সটেনশন দেওয়া যায়। তাতে রুংটাজি রাজি হয়েছেন, আর সবাইকে কম্পেনসেশনও দিয়েছেন বেশ ভাল করে।

কস্তুরীর খুব ইচ্ছে করছিল কয়েকটা দিন মালবাজারে কাটিয়ে আসে। কিন্তু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দু’জনকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না। আর ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। চন্দনের ভরসায় তো আর ছেড়ে যাওয়া যায় না। তবে মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। জামাইয়ের ব্যাপারে মা কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে দিয়ে কস্তুরী বলেছে, “নতুন অফিস, একটু সেটলড হয়েই চলে আসব। থাকব বেশ ক’দিন। তোমরা ভাল আছ তো?”

এর মধ্যে চার বার মেহুলির ফোন পেয়েছে সে। এখনও সে তার কাঙ্ক্ষিত পিসি, পিসেমশাইকে খুঁজে বার করতে পারেনি। তবে তাতে সে খুব একটা দুঃখিত মনে হল না। বরং উচ্ছ্বসিত গলায় আজ, অথবা কাল, কিংবা পরশু কী দারুণ দারুণ সব জায়গায় ঘুরে এসেছে, তারই বর্ণনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মেহুলির ‘বাবি’ ভদ্রলোকটির সঙ্গে কথা হয়েছে এক বার। মেয়ের ফেরা নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে বলছিলেন বার বার। ফোন ছাড়ার আগে এক বার শুধু কুড়ি সেকেন্ডের মতো চুপ করেছিলেন। হয়তো কস্তুরীর কাছ থেকে কিছু শুনতে চাইছিলেন, কস্তুরী চুপ ছিল। তবে শেষ সংবাদ অনুযায়ী ওরা ফিরে আসছে খুব দ্রুত।

আকিঞ্চনের সঙ্গে দেখা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না, ক্লাবের ছেলেরাই এসে নিয়মিত দেখা করে আপডেট দিয়ে যেত। যদিও নতুন কিছু তো নেই শোনার। ছেলেগুলো এমনিতে ভাল। রাতবিরেতে দরকার হলে যেন ওদের ডাকা হয়, বলে যেত প্রতি বার। এমনকি বাজার-হাট, মুদি বা অন্য কিছু লাগবে কি না, তা-ও জেনে যেত নিয়মিত। আকিঞ্চনের সঙ্গে এক বার দেখা করতে চায় কি না কস্তুরী, তাও জানতে চাইত ওরা।

পরশুর আগের দিন শুক্রবার ছিল। সে দিন কী মনে করে ক্লাবের দুটো ছেলেকে নিয়ে আলিপুরে গিয়েছিল কস্তুরী। ছেলেগুলোর মুখেই শুনেছিল, আলিপুর থেকে সব বন্দিদের নাকি বারুইপুরে শিফট করিয়ে দেওয়া হবে। তার মানে সামনের মাস থেকে আলিপুর জেলে আর কেউ থাকবে না। তা ছাড়া আকিঞ্চনের কাছে একদম না যাওয়াটা স্থানীয় মানুষজনের কাছে ভুল বার্তা দিতে পারে, এই ভেবেও কিছুটা গিয়েছিল। ওরাই বলে দিয়েছিল, সকালে দেখা করার সময় সওয়া দশটা। তার মানে সাড়ে ন’টা থেকে দশটার মধ্যে নাম লেখাতে হবে।

স্বাভাবিক ভাবেই আকিঞ্চনের চেহারা বেশ খারাপ হয়েছে। তবে মুখটা ক্লিন শেভড থাকায় মন্দ লাগছে না। চুল ছোট করে ছাঁটা। ভালর মধ্যে এই ক’মাসে ভুঁড়ি কমে গেছে অনেকটাই। ফলে বেশ কম বয়স লাগছে। তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না কস্তুরীর। তার দেখা করতে আসাটা নিয়মমাফিক মাত্র। আর আফটার অল মেহুলি আকিঞ্চনেরও মেয়ে। তাই তাকে মেয়ের আপডেট দেওয়াটা তার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে মনে হয়েছে কস্তুরীর।

আকিঞ্চন কস্তুরীকে দেখে সামান্য হেসেছিল। বড় বিষণ্ণ সেই হাসি। ‘কেমন আছ,’ জিজ্ঞেস করেছিল আকিঞ্চন। তার উত্তরে মেহুলির খবরটা দিয়ে দিয়েছিল কস্তুরী। ভেবেছিল খবরটা পেয়ে বেশ লাফিয়ে উঠবে, রেগে যাবে। কিন্তু কিছুই হল না। যেন আজ বৃষ্টি নামবে এমন খবর পেয়েছে সে। আকিঞ্চনের দৃষ্টি উদাস হয়েছিল। আচমকা একটা খারাপ লাগায় আক্রান্ত হয়েছিল কস্তুরী। সে আবিষ্কার করেছিল, আকিঞ্চনের জন্য তার মন খারাপ হচ্ছে। কত দিন, কত সপ্তাহ, কত মাস এই ভাবে থেকে যাবে আকিঞ্চন! ক্লাবের ছেলেরা অবশ্য কানে কানে বলেছিল, ঘুষ দিলে জেলের মধ্যেই সামান্য আরাম আমদানি করা যায়। ওদের কথা বিশ্বাস করেনি কস্তুরী। আর সে রকম বন্দোবস্ত থাকলেও কস্তুরী কোনও দিনই রাজি হবে না। অন্যায় অন্যায়ই, সে যে-ই করুক।

কস্তুরী নিজেকে সামলেছিল। আকিঞ্চনকে দেখে দুর্বল হয়ে পড়াটা তার সাময়িক দুর্বলতা। নিজেকে বুঝিয়েছিল, হয়তো এত দিন এক সঙ্গে, কষ্টে, আনন্দে, উল্লাসে, অপমানে এক ছাদের নীচে থাকার ফল। এটা মানুষের জন্য শুধু নয়। ঘরে একটা কুকুর পুষলেও তার প্রতি মায়া বাড়ে, পোষ্য মারা গেলে অনেকে গলা ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদে, দেখেছে সে। এ-ও তাই, এক রকম। দু’জনের মাঝখানে লোহার খাঁচার শিক ধরে রাখা আকিঞ্চনের আঙুলগুলো এক বার ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে প্রবল হতেই কস্তুরী বাইরে বেরিয়ে এসেছিল।

সে দিন জেল থেকে বাড়ি ফিরে কেতকীবালার কাছে অনেক ক্ষণ বসেছিল কস্তুরী। জানিয়েছিল তাঁর ছেলে কেমন আছে। তার সঙ্গে সে দিনের খারাপ ব্যবহারের জন্য সে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল কেতকীবালার কাছে। এই প্রথম কেতকীবালা কস্তুরীর দুই গালে দুটো হাত রেখেছিলেন। বার বার গালে হাত বুলোচ্ছিলেন, কখনও মাথায়, কখনও হাতে। আশ্চর্য হয়েছিল কস্তুরী। তার পরই নিজের দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে কেঁদে উঠেছিলেন কেতকীবালা। শাশুড়িমাকে দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছিল কস্তুরী, নিজের মেয়ের মতোই। নিজের চেয়ার ছেড়ে কখন শ্যামলেন্দুও উঠে এসে বসেছিল কস্তুরীর পাশে। কস্তুরীর হাসি পেয়েছিল। এই দুটো বাচ্চাকে ছেড়ে সে যাবে কোথায়? উপায় নেই, কোনও উপায় নেই।

এক দিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে চোখ গিয়েছিল হরিপদবাবুর বাড়িটার দিকে। কোথায় বাড়ি! তার জায়গায় রাশি রাশি ইটের স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার মানে বাড়িটা রাতারাতি ভেঙে ফেলেছে। হয়তো বা দু’-এক দিন আগে থেকেই। কস্তুরী খেয়াল করেনি। কস্তুরী ভূতপূর্ব বাড়িটার সামনে সামান্য দাঁড়িয়েছিল। দেখেছিল পাঁচিল ঘেঁষে ইটের স্তূপ। আর এক জায়গায় খুলে ফেলা জানলা-দরজাগুলো ডাঁই করে দাঁড় করানো। কস্তুরীর হাসি পেয়েছিল। তার মানে তার ভাবনাটাই ঠিক। এ বার এখানে ফ্ল্যাট উঠবে। প্রোমোটারের একশো ভাগ লাভ। আজকাল তো মাস ছয়েকের মধ্যে পাঁচ-ছ’তলা দাঁড়িয়ে যায়। তার মানে বছরখানেকের মধ্যে মানুষজন আসতে শুরু করবে, আবার নতুন জনজীবন শুরু হয়ে যাবে এই জায়গাটায়। বাঃ। ভাল! হরিপদবাবুর ভাষায় ‘গুড নিউজ়’।

এক দিন সকালের কথা। প্রতিদিনের মতো স্নান সেরে বেরোতেই কস্তুরী অবাক হল। স্নানে যাওয়ার আগেই দেখেছে, পুবমুখো জানলাটা দিয়ে ঝলকে ঝলকে রোদ এসে সোফার এক দিক আলোকিত করে রেখেছে। কিন্তু বাথরুম থেকে বেরোতেই দেখল রোদ পালিয়েছে। শুধু তাই নয়, একটা অন্ধকার ছেয়ে রয়েছে জানলার কাছ বরাবর।

বাইরে উঁকি দিয়েই চমকে উঠল। বাপ রে! কী মেঘ করেছে! বৃষ্টি নামবে নাকি? আজ মাসের ন’তারিখ। আজকের মধ্যে জিএসটি আর-ওয়ান সাবমিট না করে দিলে কাল রবিবার। সোমবার লাস্ট ডেট। লাস্ট ডেটের জন্য অপেক্ষা করে না কস্তুরী। লাস্ট ডেটে সার্ভারের উপর খুব চাপ বাড়ে। তখন জিএসটি পোর্টাল আর নড়তেই চায় না। আগে অনেক বার ভুগে আর বিভাস দত্তর বকুনি খেয়ে শিখেছে সে। তাই শুধু জিএসটি নয়, স্টাফ টিডিএস, প্রফেশনাল ট্যাক্স, ইএসআই, পিএফ সব কিছুই সে লাস্ট ডেটের দু’দিন আগে জমা করে দেয়। অতএব বৃষ্টি নামুক অথবা ঝড় উঠুক, আজ তাকে অফিস যেতেই হবে।

কস্তুরী তড়িঘড়ি ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নাকেমুখে গুঁজে ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগল। একটা চিন্তা কাল রাত থেকেই সুড়সুড় করছিল, এখন আবার জেগে উঠল। কিছুতেই চিন্তাটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। মিশুকের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে পরশু সকালে। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পেয়েছে পরশু দিনই, রাত এগারোটা পাঁচে। বার বার মোবাইল খুলে চেক করেছে সে। নাহ, কোনও সাড়াশব্দ নেই। কাল ভোর থেকে আজ ভোর অবধি মোট আঠারোটা মেসেজ করেছে সে। কোনও রিপ্লাই আসেনি। প্রথম সাতটা পড়ে নিয়েছে মিশুক, পরেরগুলো আনসিন। কী হল? শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হতেই পারে, তাই বলে শটের ব্রেকে ব্রেকে মোবাইল চেক করবে না, রিপ্লাই দেবে না, এটা নেক্সট টু ইম্পসিবল।

কখনও কাজে লাগতে পারে ভেবে, মিশুক তাকে বাড়ির দুটো মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছিল। একটা আরতি দেবীর, আর একটা মিহিরার। কাল রাতে বাধ্য হয়ে মিহিরাকে ফোন করে জানতে পেরেছে, এই ক’দিন দিদিয়া রোজকার মতোই বাড়ি এসেছে, ঘুমিয়েছে, খেয়েছে, ফের বেরিয়ে গেছে। শুধু কাল রাত আড়াইটে নাগাদ বাড়ি ফিরেছে। বলেছে শুট ছিল। কস্তুরী জিজ্ঞেস করেছিল, “বিহেভিয়ার ঠিক ছিল?”

এই প্রশ্নে সামান্য থমকেছিল মিহিরা। বলেছিল, “ঠিক বলেছ আন্টি। দিদিয়া খুব গম্ভীর ছিল। অন্য দিন আমরা এক সঙ্গে ডিনার করি। দিদিয়ার লেট নাইট হলেও মা জেগে থাকে। দিদিয়া গল্প করতে করতেই ডিনার সারে। কিন্তু কাল রাতে একটা কথাও বলেনি। আজ বোধহয় বেলার দিকে কলটাইম। একটু আগেও ঘুমোচ্ছিল। এইমাত্র উঠে টয়লেটে গেল।”

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Story Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE