রাত পেরোলে নতুন দিন। বেলা দুপুরে আদালতে হাজিরা। কাল রায়দান। তার ঢের আগেই যে তিনি হেরে বসে আছেন, জানেন সুকুমার দত্ত। আগামী কাল মামলার রায় যাতে তাঁর বিপক্ষে যায়, ছকু মস্তান তা নিশ্চিত করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। কী কুক্ষণে যে একটা বাড়ি করবেন ভেবেছিলেন! কেন যে সে-কথা নরেশকে বলতে গেলেন! মনের অশান্তি আজও শরীরকেও নাজেহাল করতে শুরু করল, যেমন রোজই করে। সুকুমার শুয়ে পড়লেন ঠিকই, কিন্তু ঘুম সহজে এল না।
নরেশের গল্প
নরেশ সান্যাল সম্পর্কে সুকুমারের এক মাত্র ভাগ্নে। সুকুমার-কৃষ্ণার বাড়ি, সুকৃষ্ণা ভবন থেকে কিছুটা দূরে সে স্ত্রী-কন্যা’সহ থাকে। এখনকার সরকারের আগে, তখনকার সরকারের আমলে নরেশ সক্রিয় রাজনীতি করত। সেই সুবাদে আজ থেকে বছর পনেরো আগে, শহরের উপকণ্ঠে বিশাল তিনতলা বাড়ি করতে পেরেছিল সে। এখনকার আমলে সেই বাড়ির একতলার দোকানঘরগুলো ভাড়া দিয়ে তার দিন চলে। বছর দুই আগে এক দিন সন্ধেয়, সস্ত্রীক নরেশ এসেছিল তার সুকুমারমামার বাড়ি, মেয়ে নবনীতাকে নিয়ে। কথায় কথায় কৃষ্ণার মুখ ফস্কে বেরিয়ে যায়, তাঁরা একটা বাড়ি করবেন বলে জমি খুঁজছেন। নরেশ নিজেও এক কালে জমি-বাড়ির কারবার কম করেনি। ফেলে আসা সময়ের স্মৃতিতে টগবগে মেজাজে সে ফস করে বলেছিল, “আমাদের ও দিকে পেলে নেবে তো মামা? এত দিনের চেনা এই পাড়া ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে থাকতে পারবে?”
“থাকব কেন রে,” কৃষ্ণা বলেছিলেন, “ভাল ভাড়াটে পেলে ভাড়া বসিয়ে দেব। আমরা দু’জন এই বাড়িতেই ভাল আছি।”
সুকুমার আমতা আমতা করে সম্মতি দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ, ঠিক আছে... তোদের ও দিকটা তো এখন ভালই ডেভলপড, ভাল দামে পেলে নেব না কেন।”
নরেশ ঢোলা, মেটালিক, রং-ওঠা হাতঘড়ি ঝাঁকিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বলেছিল, “তা হলে ক’টা দিন আমাকে সময় দাও মামা। একটা-দুটো ভাল জমির খোঁজ আমাদের ও-দিকে এখনও আছে। টাকাপয়সার কী রেট চলছে, কত চাইছে, সে সব জেনে আমি তোমাকে জানাচ্ছি।”
কথা রেখেছিল নরেশ। এক-দু’সপ্তাহের মাথায় নিয়ে এসেছিল জমির খোঁজ। সুকুমার-কৃষ্ণা এক দিন টোটোয় চেপে গিয়ে দেখে এলেন। নিরিবিলি, শান্ত পাড়ার মধ্যে এক ফালি ফাঁকা ঘাসজমি। নিচু পাঁচিল দিয়ে চার ধার ঘেরা। এক দিকের পাঁচিলের মাঝে জং-ধরা লোহার গেট। গেট খুলে ভিতরে ঢুকলে, উঠোন জুড়ে ঘাসের জঙ্গল। ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারছে লাল, কালো, শ্যাওলারঙা, ভাঙাচোরা ইট। আধভাঙা কাচের বোতল। প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে উড়ে আসা, মুখ-বাঁধা পলিথিন থলে। একটা বোর্ডে এক কালে লেখা ছিল, ‘এখানে নোংরা ফেলিবেন না’। ঝড়বৃষ্টিতে সাবধানবাণী লেখা সেই বোর্ড কোমর ভেঙে হেটমুণ্ড দাঁড়িয়ে।
দেখা গেল, সুকুমার-কৃষ্ণার সাধ ও সাধ্য মিলে গেল। নরেশের চেনা এক ডাক্তারবাবু এই জমির মালিক। এই শহরের নানা জায়গায় তাঁর একাধিক জমি, বাড়ি আছে। এটি অনেক দিন এ ভাবে পড়ে আছে বলে বিক্রি করছেন। সাবধানী সুকুমার বেচা-কেনার কাগজপত্র সমস্তই আইনজীবীকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিলেন। ক্রেতা-বিক্রেতার মতের মিল হল। জং-ধরা পুরনো লোহার গেট রং মেখে হৃতযৌবন ফিরে পেল। তাতে ঝকঝকে নতুন তালা মেরে ডাক্তারবাবু তার চাবি তুলে দিলেন কৃষ্ণার হাতে।
জমি হাতে আসায় বাড়ি করার তোড়জোড় শুরু হল। কৃষ্ণা বললেন, “নরেশকেই বলো না, ওদের ও দিকে ভাল প্রোমোটারের খোঁজ দিতে। জমিটা ভাল দামে ও-ই তো খুঁজে এনে দিল।”
নরেশ মাঝে মাঝেই মামার বাড়িতে এলেও নিজের ভাগ্নেকে ইদানীং খুব ভরসা করেন না সুকুমারবাবু। ছোটবেলায় সমবয়সি বাচ্চাদের তুলনায় খুবই বুদ্ধিমান আর চটপটে ছিল নরেশ। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া নম্বর পেয়ে কলেজে পড়তে গিয়ে রাজনীতির চক্করে পড়েই তার সম্ভাবনাময় কেরিয়ারের বারোটা বেজে গেল। পরবর্তী কালে সেই নরেশের প্রতিপত্তির নেপথ্যের রাজনৈতিক অসদুপায়ের কথা সুকুমার ভাল করেই জানেন। ভাগ্নেকে অতিরিক্ত ভরসা করতে তাই তাঁর মন চায় না।
ছকু মস্তানের গল্প
প্রোমোটারের খোঁজও শেষমেশ নরেশই এনে দিয়েছিল। তার পাড়ার বন্ধু, উজ্জ্বলের সঙ্গে সুকুমারের আলাপ করিয়ে দিয়ে বলেছিল, “এ দিকে অনেক বাড়ি উজ্জ্বলের কোম্পানিই করেছে মামা। উজ্জ্বল ভাই, এই মামা আমার একমাত্র মামা। ঠিকঠাক মাল দিস, ঠিকঠাক দাম লাগাস কিন্তু!” কথাবার্তা এই পর্যন্ত গড়ানোর পরেই এক দিন দিনদুপুরে বিনা মেঘে বজ্রপাতটা হল!
উজ্জ্বলকে জায়গাটা দেখাবেন, তার আগে নিজে এক বার দেখে আসবেন বলে সে দিন সকালবেলা ভাগ্নের পাড়ায় গিয়েছিলেন সুকুমার। বড় রাস্তায় টোটো থেকে নেমে গলিতে ঢুকে মিনিট দশেক হাঁটলেই রাস্তার পাশে, রাস্তা থেকে একটু ঢালু জায়গায় জমিটা। অভ্যেসমতো প্যান্টের পকেট থেকে লোহার গেটের তালার চাবি বার করেছেন। চাবি তালায় ঢোকাতে গিয়ে চমকে থমকে গেলেন সুকুমার। এর মধ্যেই আগেরটা বদলে নতুন তালা লাগাল কে? কার কাছে এর চাবি?
“প্রপার্টিতে দেখছি নতুন তালা। তুই পাল্টেছিস?” ওখানে দাঁড়িয়েই প্রথম ফোনটা নরেশকেই করেছিলেন সুকুমার।
অতঃপর অকুস্থলে নরেশের ভয়ার্ত, অতি দ্রুত আগমন এবং বিস্তর ফোনাফুনি, দৌড়োদৌড়ির পর দাঁতে দাঁত ঘষে ঘোষণা, “এ সবই ছকুর কীর্তি!”
দিন ফুরনোর আগে সুকুমার যা জানলেন, তা এই রকম— এখনকার সরকারের আগে, তখনকার সরকারের আমলে নরেশ ছিল উঁচুতলার কর্মী। ছকু ছিল অধস্তন। পাড়াসূত্রে চেনা, পার্টির দাদা ‘নরেশদা’র খিদমত খেটে দিন কাটত ছকুর। তার পর হাওয়ার দিকবদল হচ্ছে আঁচ করতে পেরে এক দিন ছকু রং পাল্টায়। ক’দিন পর সেই রংই যখন ক্ষমতায় এল, ছকু দিন দিন মাচা বেয়ে ফনফনিয়ে ওঠা কুমড়োডাঁটার মতো সতেজ আর সুপুষ্ট হয়ে উঠল। তার নরেশদা রয়ে গেল সেই তিমিরেই। এক দিন দেখা গেল, পাড়ার চায়ের দোকানে নরেশ আর ছকু কী কারণে কে জানে, একে অপরকে মুখে এই মারিতং কী সেই মারিতং। যারা সেই খিস্তিখেউড় শুনল না, তারা ভাগ্যবান। যারা শুনল, সকলেই লজ্জায় কানে আঙুল দিল।
সেই থেকে ছকুর ভীষণ রাগ নরেশদার উপর। নরেশদার মামা তাদেরই পাড়ায় জমি কিনে বাড়ি তুলছে খবর পেয়ে তাই চোখ চকচক করে উঠেছে ছকুর। যে ছকুর মাথায় পা রেখে নরেশদা এক দিন নরেশদা হয়েছিল, তাকেই কিনা সামান্য কথায়, সবার সামনে, বাপ-মা তুলে খিস্তি করা! সে-ও বুঝিয়ে দেবে, কত ধানে কত চাল।
খোঁজ করে ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ছকুর অফিসে সুকুমার গেলেন যে দিন, ছকু খুব খাতিরযত্ন করে বসাল তাঁকে। এক গাল হেসে বলল, “মামা, আমি ছন্দক কুমার, সবাই ডাকে ছকু বলে।”
গরম কাল, অনেকটা পথ রোদে তেতে এসেছেন সুকুমার। তাঁর জন্য এল শরবত, মিষ্টি। ছকু তার পর তেতো মুখ করে বলল, সুকুমারের জমি আর তাঁর নেই, কারণ জমিটা ছকুর খুব দরকার। জমির মালিক ডাক্তারবাবুর সঙ্গে তার অনেক আগেই কথা হয়ে গেছিল। পরে নেহাত ভুল বোঝাবুঝি হয়ে ডাক্তার জমিটা সুকুমারকে দিয়ে ফেলেছেন। ছকু জানতে পেরে কালবিলম্ব করেনি। ডাক্তারবাবুকে টাকাপয়সা মিটিয়ে কাগজপত্র তৈরি করেই এনেছে।
ছকুর এয়ার কন্ডিশনড অফিসের ভিতরের নরম আলোয় তার দেওয়া সেই কাগজপত্রের তাড়া বার বার উল্টে দেখেও কোনও ভুল খুঁজে না পেয়ে সুকুমার বাড়ি ফিরে গেছিলেন। কাগজের শেষ পাতায় ডাক্তারবাবুর সইটাই তাঁর বুকে বেজেছিল। বাড়ি ফিরেই তাই ডাক্তারকে ফোন করেছিলেন। আমতা আমতা করে নয়, স্পষ্টই বলেছিলেন ডাক্তারবাবু, “ওই জমিটার উপর ছকুর নজর তো ছিলই। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি সুকুমারবাবু, ছকু লোক ভাল নয়। আপনাকে ও যা দেখিয়েছে, তার সবটাই জাল। এমনকি, আমার সইটাও, কারণ এ রকম কোনও কাগজে আমি সই করিনি। আই অ্যাম ভেরি সরি সুকুমারবাবু, কিন্তু আমি একই জমি আপনাকে বিক্রি করার পর আবার ওকে বেচব কেন, আপনিই বলুন।”
উজ্জ্বলের গল্প
ছকু দেখা গেল, সত্যিই লোক ভাল নয়। সুকুমার-কৃষ্ণাকে সে সম্মান করে, দেখা হলেই প্রণাম করে। কিন্তু জমির ব্যাপারে সে অনড়, এ জমি তারই। হাসিমুখো এই শয়তানটিকে থানা-পুলিশ-প্রশাসন কেউই নড়াতে পারল না দেখে শেষে আদালতের দ্বারস্থ হলেন সুকুমার। ছকুর জমা দেওয়া কাগজ যে জাল, বছর গড়িয়ে যেতেও তা প্রমাণ করা গেল না। ইতিমধ্যে নরেশের বন্ধু উজ্জ্বলকে এক দিন নিজের অফিসে ডেকে দাবড়ানি দিয়ে অনেক কম টাকায় একটা তিনতলা বাড়ির রফা করে ফেলল ছকু।
“নরেশের মামার জন্য খুব বাড়ি বানানো হচ্ছিল, না আমার উজ্জ্বল চাঁদমামা? এ বার আমার জন্য বানাবে। এক মাসের মধ্যে!”
ঠিকমতো কাজ শেষ না হলে উজ্জ্বলের প্রোমোটারি বন্ধ করে দিতে ছকুর যে এক সেকেন্ড লাগবে, কয়েক সেকেন্ডেই সে কথা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ছকু। সুকুমারের দায়ের করা মোকদ্দমার নিষ্পত্তি কবে হবে, কারও জানা নেই। কিন্তু হলে রায় যাবে ছকুর পক্ষেই, ছকু জানে। সে তাই বাড়ি করবে ওই জমিতেই। জমির মালিক ডাক্তারবাবু যাতে আদালতে বেগড়বাই না করেন, তার জন্য তাঁকে ভয় দেখানোটা কঠিন ছিল না। তাড়া খাওয়া হরিণের মতো দ্রুততায় উজ্জ্বলও বড়সড় দোতলা বাড়ি তুলে দিল। সেখানে থাকতেও শুরু করে দিল ছকু।
অনেক দিন পর একটা কাজে ও দিকে গেছিলেন সুকুমার। নরেশ ইদানীং সহজে তাঁর ফোন তোলে না। ছকুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নাকি লাভ নেই, তাই ক্ষমা সে চাইবে না, গোঁ ধরে বসে আছে নরেশও। নরেশের পাড়ায় এসেও তাই তার বাড়ির দিকে যাননি সুকুমার। কাজ সেরে ফিরেই আসছিলেন। আসার পথে তাঁর জমিতে ছকুর বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে খেয়াল করলেন, প্রাসাদোপম বাড়িটার তিন তলার কাজও শুরু হয়ে গেছে। বাড়ির ঠিক সামনে রাস্তায় একটা চায়ের গুমটি দোকান হয়েছে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে উজ্জ্বল।
চোখাচোখি হয়ে গেছে, তাই সুকুমারকে ডাকল উজ্জ্বল। কেমন আছেন, এ দিকে কেন জাতীয় প্রশ্নোত্তর শেষ হলে চায়ে চুমুক দিয়ে বাড়িটার দিকে দেখিয়ে উজ্জ্বল বলল, “জোর-জবরদস্তি করে বাড়িটা করাল। এখন আবার তিন তলা তুলতে চায়। এই একটা কাজে আমার যে কত লোকসান হয়ে গেল মামা, আপনাকে কী বলব!”
সুকুমারের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। তাঁর আর নরেশের জন্যই উজ্জ্বলের এই হেনস্থা ও ক্ষতি। নিজেকে সামলে হাতজোড় করে তিনি বললেন, “আমার জন্যই তোমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল উজ্জ্বল। পারলে আমাকে ক্ষমা কোরো।”
উজ্জ্বল সুকুমারের হাত ধরে নামিয়ে আনে। সান্ত্বনা দেয়, “ছি ছি সুকুমারমামা, কী বলছেন! নরেশের সঙ্গে ছকুর শত্রুতা কি আজকের! তার মাঝে না জেনে ঢুকে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি তো হয়েছে আপনার। আসলে ছকু বরাবরই এ রকম। লোক ভাল নয়। কিন্তু চিন্তা করবেন না মামা, কেস আপনি জিতবেনই। এখানে এক দিন আপনারই বাড়ি হবে।”
সুকুমার সে দিন উজ্জ্বলকে বলতে গিয়েও বলতে পারেননি, কেস জিতবেন, সেই আশা তাঁর আর নেই। তাঁদের নিজের বাড়ির জানলায় এর মধ্যে দু’-তিন দিন রাতদুপুরে ঢিল পড়েছে। তাঁর উকিলের বাড়িতে বেনামি হুমকি চিঠি গেছে। সুকুমার এক দিন সন্ধেবেলা বাজার থেকে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ঠিক নেতাজি মোড়ের কাছে তিনটে বাইকে তিনটে ছেলে এসে তাঁকে এমন ঠেলা মেরে পালাল যে, সাইকেল সমেত সুকুমার পড়ে গেলেন রাস্তার পাশের ড্রেনে। দুশ্চিন্তায়, দুর্ভাবনায় মলিন কৃষ্ণা সব জেনেও তাঁর ঠাকুরকে ধন্যবাদ দিলেন কারণ, এমন সাংঘাতিক দুর্ঘটনার পরেও কপালে একটা সেলাই পড়া ছাড়া অন্য কিছু যে সুকুমারের হল না, সে যদি দেবানুগ্রহ না হয়, তবে আর কী?
সুকুমারের গল্প
রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়েছিল। ফলে উঠতেও খানিক বেলা হয়েছে। পরিণতি অজানা নয়, তাও তা জানতে কোর্টে যেতে হবে। স্নান হয়ে গেছে। বোবা একটা বিষণ্ণতা বাড়িময়, তাকে পাত্তা না দিয়ে খেতে বসেছেন সুকুমারবাবু। কৃষ্ণা গরম ভাত বেড়ে দিচ্ছে থালায়। তখনই ফোনটা এল।
নরেশ। যাকে আজ ফোন করলে তিন দিন পর উত্তর আসে, আজ মামলার শেষ দিনে সে নিজে ফোন করছে কেন?
সুকুমারবাবু বাঁ হাতে ফোনটা রিসিভ করতেই উত্তেজিত গলায় নরেশ বলল, “খবর শুনেছ মামা? আজ সকালে একটা হালকা ভূমিকম্প হয়েছে, খবরে দেখলে? দেখোনি? না না, আমরা ঠিক আছি, কেউ তো কিছু বুঝতেই পারেনি। কিন্তু একটু আগে খবর পেয়েছি, ওই দুলুনিতেই নাকি, ছকুর বাড়িটা পড়ে গেছে। ব্যাটা ছকবাজ উজ্জ্বলকে চাপ দিয়ে তিন তলা তুলছিল। বাড়ি হেলে পড়ে আলমারি আর দেওয়ালের মাঝে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে মরে গেছে। উজ্জ্বল তো বলছিল, বাড়িটা নাকি খুব তাড়াহুড়ো করে, একেবারে মানে, যেমনতেমন করে বানাতে হয়েছে... আমি তো নবর মাকে তাই বলছি, হবে না? আরে বাবা, একেই বলে ধর্মের কল! হ্যালো সুকুমারমামা, শুনতে পাচ্ছ? হ্যালো...”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)