মোটা কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে রাস্তা। ঋষাণ উড়ালপুলে উঠে গাড়ির গতিবেগ কমাল। এমনিতেই সকাল থেকে মনটা খিচখিচ করছে, তার উপর এ রকম ওয়েদার। গতকাল থেকে একটা ডিপ্রেশন চলছে। শহরেও, মনের ভিতরেও। ওই ফোনটা আসার পর থেকে বাবাও কেমন থম মেরে গেছে। আজ সকাল থেকে উঠে ঋষাণ ভেবেছিল, গত রাতের সমস্ত কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলবে। কিন্তু তা তো হয়ইনি, বরং উল্টে মনের উপর চাপ বেড়েছে।
এখান থেকে লেক টাউন গাড়িতে ঘণ্টাখানেকের উপর লাগে। বাবা আসতে চায়নি। ঋষাণ জোর করেনি। জোর করার তো আর জায়গা নেই। ছোট থেকে যে ভিতের উপর তাদের সম্পর্কের ইমারতটা মজবুত হতে পারত, সেই ভিতটাই যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তার উপর ভিত্তি করে যুক্তি সাজানো মানে তাসের ঘরের মতো। আর তা ছাড়া, জোর করবেই বা কেন ঋষাণ! সে নিজে কম কষ্ট পেয়েছিল?
গতকাল রাতে যখন ব্যাগ গোছানো হচ্ছিল, তখনই ফোনটা এসেছিল। তার আগে বাবা ভীষণ উত্তেজিত ছিল। বাবাকে দেখলে ঋষাণের এখনও মনে হয়, লোকটা এত এনার্জি পায় কোথা থেকে! যার ভিতরটা গুঁড়িয়ে গেছে, সমুদ্রের ঝড়ের মুখে জাহাজ ভাঙার মতো চুরমার হয়ে গেছে, তার এত উৎসাহ, এত প্রাণশক্তি আসে কী করে! ঋষাণ অফিসের মেলগুলো চেক করছিল খাটে বসে। বাবা ঢাউস একটা ব্যাগ নিয়ে এসে বলেছিল, “বুঝলি, এটাতেই মোটামুটি সব লাগেজ এঁটে যাবে। বেঙ্গালুরুতে শীত পড়েছে, বলল বুবু। শীতের জিনিসপত্র নিয়েছি বেশি। তা ছাড়া, গরমে আসব যখন, বাদবাকি জিনিস নিয়ে যাব।”
ঋষাণ ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “ট্রলি নিতে পারতে বাবা। এই ব্যাগ বওয়া খুব মুশকিল।”
বাবা অমায়িক হেসে বলেছিল, “আভি তো ম্যাঁয় জওয়ান হুঁ, মেরে জান!”
ঋষাণ হেসেছিল উত্তরে।
ঋষাণের এই চাকরিটা পাওয়ার খবরে বাবার চেয়ে বেশি আনন্দ আর কারও হয়নি। সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছিল, বাবা এই শহরটা ছেড়ে যাওয়ার খবরে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। বরং ভীষণ আনন্দে পরবর্তী কর্মসূচি চটজলদি গুছিয়ে নিচ্ছিল। যেন মনে হচ্ছিল, বাবা কিছুতেই দেরি করতে চাইছে না। কিংবা এমন একটা খবরের জন্য বাবা কত দিন অপেক্ষা করে ছিল! এমন একটা খবর যেন মিথ্যে না হয়ে যায়!
ঋষাণের এই চাকরিটার পিছনে বাবার অবদান কম নেই। শুধু চাকরি? এই যে জীবনটা এগিয়ে নিয়ে চলেছে বা কাটাচ্ছে ও, তার পিছনে বাবার অবদান নেই? ঋষাণের জীবনে বাবা হল জল। জলই জীবন। চার দিকে তিন ভাগ জলের মতো শুধু বাবাকেই দেখতে পায়! আর এক ভাগ স্থল? মা? জোরে ব্রেক কষল ঋষাণ। আর একটু হলেই সামনে রেলিংটায় ধাক্কা খেত। আজ এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না। এত কুয়াশা চার দিকে। সামনের রাস্তা সহজে দেখা বা অনুমান করা না গেলে হোঁচট খেতে হয়। এ তো নতুন কথা নয়। প্রথম ধাক্কা খাওয়ার দিনটা স্পষ্ট মনে আছে ওর।
কাল রাতে ফোনটা ধরেছিল বাবা। ফোনটা ধরার পর থেকেই বাবার মুখের মানচিত্র পাল্টাতে শুরু করেছিল। ঋষাণ বুঝতে পারছিল, আবার একটা কুয়াশার চাদর আবছা করতে চলেছে ওদের জীবন। তার পর বাবা ওকে ফোনটা হাতে দিয়ে অন্য ঘরে চলে গিয়েছিল। ঋষাণ ফোন ধরেছিল। ও প্রান্ত থেকে ভাঙা, খসখসে গলাটা শুনে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠেছিল। মা কাঁদছে কেন হঠাৎ! নতুন কোনও প্লট? ঋষাণ ওই পরিস্থিতিতেও ভেবেছিল এই কথাটা! কারণ ছিল অনেক। তবু ঋষাণ গলায় জোর এনে বলেছিল, “এনি প্রবলেম? কী হয়েছে?”
মা ও দিক থেকে নাক টেনে বলেছিল, “ঋষু, আমি খুব অসুস্থ। বুবু বলছিল তুমি… তোমরা বেঙ্গালুরু চলে যাচ্ছ? আমি এখানে একা… মানে, তোমরা ছাড়া আমার কে আছে ঋষু?”
ঋষাণের হাসি পেয়েছিল। কথারা অযুত-নিযুত গতিতে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। মনে হচ্ছিল, এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। তবু ঋষাণ মাথা ঠান্ডা রেখেছিল। বাবা বলে, বিপদে আর কষ্টে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। কথা এক বার বেরিয়ে গেলে আর ফেরত আসে না। তাই ঋষাণ চুপ করে ছিল।
বরাবরের মতো মা অধৈর্য হয়ে বলেছিল, “জানি ঋষু, আমার প্রতি তোমাদের অনেক রাগ, অভিযোগ। তবু বলব, যাওয়ার আগে এক বার আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? এক বার দেখা করলে না? পরশু তোমাদের ফ্লাইট, আর আজ আমি জানতে পারছি? তাও অন্যের কাছ থেকে? হাউ ইরেসপনসিবল ইউ আর! আফটার অল আমি তোমার মা!”
দপ করে মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল ঋষাণের। আফটার অল তুমি আমার মা! সেটাই কি আশ্চর্যের নয়! বলতে গিয়েও সামলে নিয়েছিল ঋষাণ। আস্তে আস্তে বলেছিল, “কাল সকালে এক বার যাব। দেখা করে আসব। এখন রাখি। প্রচুর কাজ। যাওয়ার আগে সব গোছাতে হবে।”
উত্তরের অপেক্ষা করেনি ঋষাণ। ফোনটা কেটে দিয়েছিল। চুপচাপ বসে ছিল আরও আধ ঘণ্টা। বাবা এসে বসেছিল পাশে। ঋষাণের পিঠে হাত রেখে বলেছিল, “এত চিন্তা করিস না। আমি আছি তো!”
ঋষাণ সরাসরি তাকিয়েছিল বাবার দিকে, ভিতরে ভিতরে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া মানুষটা ওর জন্যই চিরকাল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে এল এতটা জীবন! কেন এতটা সহ্য করবে মানুষ? ঋষাণ বলল, “কেন তুমি বোঝাওনি মাকে?”
বাবা অন্য দিকে তাকিয়েছিল, “বোঝানোর মতো পরিস্থিতি থাকলে মানুষ বোঝায়। যখন নিজেকে বোঝানোর প্রয়োজন হয়, তখন অপর পক্ষকে বোঝানো যায় না।”
ঋষাণ মাথার রগদুটো চেপে ধরেছিল, “তা হলে এখন কেন বোঝাচ্ছ না যে, আর সম্ভব নয়। আমরা আমাদের মতো ভাল আছি!”
বাবা এ বার মুখ তুলে তাকিয়েছিল ওর দিকে, “একটা সময়ের পর মানুষকে আর বোঝানো যায় না। একটা দূরত্বের পর যেমন আর মুখোমুখি হওয়া যায় না, ঠিক তেমন। দেখ তোর-আমার জীবন আমরা নিজেদের মতো চালাব, নাকি ফেলে দেব, সে নিয়ে কাউকে কৈফিয়ত দেওয়ার দরকার তো নেই! তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ না হলে আমরা কি সত্যিই তোয়াক্কা করি?”
ঋষাণ খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। বাবা সত্যিই তোয়াক্কা করে না? নাকি নিজেই নিজেকে এ সব বলে ঠেকিয়ে রাখে চিরকাল? আরও কিছু ক্ষণ পর বাবা উঠে যাওয়ার আগে বলেছিল, “চল, খেতে চল। ঠান্ডা হয়ে গেল সব!”
ঋষাণ উঠে দাঁড়িয়েছিল, “তুমি যাবে কাল আমার সঙ্গে?”
বাবা ঘুরে দাঁড়িয়ে সোজাসুজি তাকিয়ে বলেছিল, “না!”
ঋষাণ জানে, এর পর আর কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। চুপচাপ খেয়ে নিয়েছিল দু’জন। খাবার টেবিলে বাবা আর একটাও কথা বলেনি। কী নির্বিকার ভঙ্গিতে রুটি ছিঁড়ছিল, একটু একটু করে চামচ দিয়ে ডাল খাচ্ছিল। যেন কিচ্ছু হয়নি! অথচ অদ্ভুত রকমের চুপচাপ। ঋষাণ তার তেইশ বছরের জীবনে বাবার এই রূপ কমই দেখেছে। বাবা যখন খুব রেগে যায়, কষ্ট পায়, বিরক্ত হয় তখন হইহই করা মানুষটা এ রকম থম মেরে যায়। ঋষাণের ভয় করে। তিন ভাগ জল যদি মরুভূমি হয়ে যায়!
সে দিনও এ রকম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল বাবা।
রাতে শোয়ার সময় অজস্র স্মৃতি হুড়মুড়িয়ে এসেছিল ঘুমের পর্দা সরিয়ে। বাবা সে দিন অফিস থেকে ফিরেছিল তাড়াতাড়ি। ঋষাণদের বাইরে খেতে যাওয়ার কথা ছিল। মা সন্ধে থেকে গুম মেরে বসেছিল। বাবা আসার পর মা ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বাবাকে। ঋষাণ ছিল ডাইনিং-এ। কী একটা সিনেমা চলছিল বাচ্চাদের। ঋষাণের মনেও নেই। আসলে কেন কে জানে, ঋষাণের সে দিন টেনশন হচ্ছিল ভীষণ। মনে হচ্ছিল, ভয়ঙ্কর কিছু হতে চলেছে। টিভিতে চলন্ত ছবিগুলো অসহ্য লাগছিল ওর।
বাবা মায়ের ঘর থেকে বেরিয়েছিল আরও খানিকটা সময় পরে। ফর্সা মুখটা লাল টকটকে। বাবা ঋষাণকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। ওরা চেনা রেস্তরাঁয় বসে পছন্দের খাবার খেয়েছিল। অদ্ভুত ভাবে ঋষাণের সব খাবার বিস্বাদ লাগছিল। বাবা ছিল নির্বিকার। মা সে দিন ওদের সঙ্গে আসেনি।
ঘটনাটা ঘটেছিল তারও দু’দিন পর। মা ওকে ডেকে বলেছিল, “ঋষু, আমি তোমাদের সঙ্গে কাল থেকে আর থাকব না।”
অবিশ্বাসের চোখে ঋষাণ মায়ের দিকে তাকিয়েছিল। ভাবছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে অসম্ভব কথাটা মা কেন বলছে! মা ওর দিকে তাকাচ্ছিল না, একটু থেমে থেমে বলেছিল, “আসলে ঋষু, তোমার বাবা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। ঠিক যেমন ঋতুর সঙ্গে তোমার কাট্টি হয়ে গেছে বলে তোমরা আর পাশাপাশি বসো না, ঠিক তেমনই আমরা আর এক সঙ্গে থাকব না।”
ঋষাণের ওইটুকু মাথায় কিছুতেই অঙ্কটা ঢুকছিল না। বড়রাও এ রকম কাট্টি করে? মা আরও গুছিয়ে নিচ্ছিল নিজেকে, “দেখো তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতেই পারি। কিন্তু তুমি যে স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষ, তাতে আমার সঙ্গে থাকলে তোমার অসুবিধে হবে।”
তার পরেই শুরু হয়েছিল ঋষাণের জেদ ও কান্না। মা আর কোনও কথা বলেনি। তবে ভবিষ্যৎটা পাল্টেও যায়নি। মা চলে গিয়েছিল আরও এক সপ্তাহ পর।
ঋষাণ আস্তে আস্তে বড় হয়ে গিয়েছিল তার পর। বাবা ওকে সাহায্য করেছিল। সকাল থেকে উঠে স্কুলের জন্য রেডি করানো, টিফিন দেওয়া, অফিস থেকে ফেরার পথে স্কুলের ক্রেশ থেকে আনা, হোমওয়ার্ক করানো, রাতে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো— বাবা সমস্ত দিনলিপিতে মা হয়ে উঠেছিল অনায়াসে। ব্যালকনিতে গিয়ে মাঝরাতে সিগারেট খাওয়ার সময় শুধু বাবাকে অচেনা লাগত।
প্রথম প্রথম মায়ের উপর রাগ, কান্না, জেদ হত খুব। তার পর বাবা যে কী ভাবে বন্ধুর মতো পাশাপাশি কাঁধ মিলিয়ে চলতে শেখাল, আজও ভাবলে অবাক হয় ঋষাণ। হয়তো কোনও জন্মদিনের পার্টিতে গেল, সেখানে সব মায়েরা বন্ধুদের খাইয়ে দিচ্ছে। ঋষাণ চুপ করে দেখত। কেউ হয়তো বলত, “এসো ঋষাণ, আমি খাইয়ে দিই!” ঋষাণের চোখ ফেটে জল আসত। গলার কাছে দলা পাকাত কান্না।
আর ঠিক তখনই বাবাকে দেখত প্লেটে করে খাবার এনে শান্ত গলায় বলত, “আয়, খাইয়ে দিই। ফিশ ফ্রাই খাবি তো?”
ঋষাণের তখন বাবার গলা জড়িয়ে ধরেকাঁদতে ইচ্ছে করত। বলতে ইচ্ছে করত, ‘তুমি আমার আলাদিন!’
বড় হতে হতে জেনে গিয়েছিল, মা অন্য লোকের সঙ্গে থাকে। মাসে এক দিন মায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা থাকত। বাবা সে দিন ঋষাণকে পৌঁছে দিয়ে শপিং মলের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করত।
এক দিন ঋষাণ কিছুতেই যেতে চাইছে না। বাবা কারণ জিজ্ঞেস করাতে ঋষাণ বলেছিল, “কেন আমাকে ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে অন্য লোকের সঙ্গে যাবে মা? বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, তুমি জানো? আমি কিছুতেই যাব না!”
সে দিন থমকে গিয়েছিল বাবা। প্রথমে কোনও কথা বলেনি। অনেক ক্ষণ পর ওকে পাশাপাশি নিয়ে বসেছিল। ওর হাত ধরে বলেছিল, “মা তোর কথা ভেবেই হয়তো নিয়ে যায়নি। তুই এখানে হয়তো ওখানকার চেয়ে ভাল থাকবি। আর লোকে কী বলল, তাতে কি জীবন থেমে থাকবে? আরও একটা কথা, মায়ের সম্বন্ধে কখনও কোনও অসম্মানজনক কথা আর বলিস না। এতে নিজেকেই ছোট করা হয়। আফটার অল মা তো!”
ঋষাণ কথাটা লুফে নিয়েছিল, “আফটার অল মা বলেই কি আমার জন্য ওই লোকটার সঙ্গে সম্পর্কটা স্যাক্রিফাইস করতে পারত না?”
বাবা আর কোনও কথা বলেনি। শেষ দুটো-তিনটে বছর আর জোরও করেনি মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ঋষাণ নিজেও দেখা করেছে কম। দু’বছর আগে, মা যে মানুষটার জন্য ওদের দিকে ফিরেও তাকায়নি, সেই মানুষটা ছেড়ে চলে গেছে মাকে। বুবুই বলেছিল। বুবু বাবা ও মায়ের কমন ফ্রেন্ড। বাবা, ও, কেউ যায়নি দেখা করতে। এবং তার পর থেকেই বাবা যেন মনপ্রাণ থেকে চাইত কিছু থেকে পালাতে। এই শহর থেকে? কেন? ভয় পেত, আবার যদি মা আমাদের সঙ্গেই থাকতে চায়?
লেক টাউনের এই ফ্ল্যাটে ঋষাণ প্রথম এল। উপরে উঠে এসে দেখল, মা যেন অনেকটা বুড়ো হয়ে গেছে। বেশ কিছু ক্ষণ বিভিন্ন কথার পর মা বলল, “আমি এখানে একা ঋষাণ। তোমাকে কি বেঙ্গালুরুর চাকরিটা নিতেই হবে? তুমি তো জানো না, আমি সিওপিডি-র পেশেন্ট।”
ঋষাণ বলল, “আমি তো যাব বলে সব ঠিক করেই ফেলেছি। এখন তো আর উপায় নেই।”
ওর মা উসখুস করছে দেখে ঋষাণ বলল, “বাবাকেও নিয়ে যাচ্ছি। সারা জীবন লড়াই করে যাওয়া মানুষটাকে আর একা রেখে যাব না। ফোন নম্বর তো রয়েছেই। খুব দরকার হলে ফোন কোরো।”
আর দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করেনি ঋষাণ। ওর মা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল ওর দিকে। ঋষাণ জানে, আর খানিক ক্ষণ থাকলেই ও গোলমাল করে ফেলত।
আরও অবাক হয়েছিল নীচে এসে। কুয়াশার চাদর তখনও জড়িয়ে রেখেছে চার পাশ। বাবা কখন যেন নীরবে এসে দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশার আড়ালে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত কাঁধ দুটো। কিন্তু ঋষাণ জানে, কুয়াশার আড়ালে থাকা মানুষটা আজও বলবে, ‘চিন্তা করিস না। আমি তো আছি!’
ঋষাণ বাবার দিকে এগোল। শুধোবে, ‘আজও কেন এসেছ তুমি? আমাকে কি বড় হতে দেবে না?’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)