E-Paper

রং

ডিসেম্বরের সকালেও রাইমার নাকের নীচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিল সে দিন। পার্থ ওর হেঁটে আসার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল কি না, খেয়াল করেনি রাইমা।

শ্রেষ্ঠা বসু

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৩১
ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।

ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।

অত সুন্দর শাড়িটা শেষমেশ আভাদিকে দিয়ে দিলে?”

“হুম। কী হবে শুধু শুধু পুরনো জিনিসে আলমারি বোঝাই করে!”

পার্থর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি এখনও রাইমার মুখে নিবদ্ধ। কথা ঘোরায় রাইমা, “তা ছাড়া একই শাড়ি আমার বার বার পরতে ভাল লাগে না, জানোই তো।”

“শাড়িটা তোমার খুব প্রিয় বলেছিলে তো, তাই বলছিলাম, রাখতেই পারতে।”

“সব প্রিয় জিনিস সারা জীবন আঁকড়ে ধরে রাখতে নেই পার্থ, ওতে পিছুটান বাড়ে।”

এর পর আর কথা বাড়ায়নি পার্থ। এক ক্লায়েন্টের ফোন আসায় তড়িঘড়ি উঠে ব্যালকনিতে চলে গিয়েছিল।

মাস ছয়েক আগে পর্যন্তও পার্থ সল্টলেকের একটা প্রাইভেট সেক্টরে সেল্‌স এগজ়িকিউটিভ পদে চাকরি করত। রাতে ফিরে আর কথা বলার মতোও শক্তি থাকত না শরীরে। রাইমা কখনও সেই নিয়ে ঝগড়া-অশান্তি করেনি। কিন্তু একটা চাপা অভিমান ওর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকত সব সময়। অনেক দিন ধরেই চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিল পার্থ। কিন্তু বিকল্প রাস্তা খুঁজে না পাওয়া অবধি যেচে অনিশ্চয়তার খাদে ঝাঁপ দিতে চায়নি।

অনেক ভেবে ফ্রিল্যান্সিং করাটাই লাভজনক মনে হয়েছিল। রাইমারও প্রত্যক্ষ সায় ছিল এতে। এখন সারা দিন বাড়িতে বসেই কাজ। সদ্যোজাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লোগো, পোস্টার, কাস্টোমাইজ়ড ইনভিটেশন কার্ড, ছোটখাটো রেস্তরাঁ কিংবা ক্লাউড কিচেনের মেনু কার্ড ডিজ়াইন— এটাই এখন পার্থর প্রফেশন। ইদানীং ঘন ঘন অর্ডার আসছে।

রাইমার বেশ সুবিধেই হয়েছে এখন। কাকভোরে উঠে পার্থর জন্য খাবার বানাতে হয় না। সময়মতো সব জিনিস হাতের কাছে এগিয়ে দিতে হয় না। আগে পার্থ সপ্তাহে এক দিনই বাজারে যেতে পারত। এখন বাজার থেকে তরতাজা আনাজপাতি, মাছ দিনের দিন কিনে আনতে পারে। কোনও কোনও দিন রাইমার কথামতো সন্ধের দিকেও বাজারে যায় পার্থ। চিকেন পকোড়ার জন্য বাপিদাকে বলে ছোট ছোট পিস করে মাংস কাটিয়ে আনে। রাইমার রান্নার হাত দুর্দান্ত। ধোঁয়া-ওঠা গরম চায়ের সঙ্গে মুচমুচে চিকেন পকোড়ায় সন্ধেগুলো জমে যায়।

রাইমার স্কুলটা বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় খুব সুবিধে। সকালে স্নান সেরে, পুজো করে, রান্নাবান্নার পাট চুকিয়ে বাড়ি থেকে বেরনো যায়। মাইনেটা আশানুরূপ না হলেও পুষিয়ে গেছে। গাড়িভাড়া বাবদ আলাদা কোনও খরচ থাকে না। দিনের বেশ অনেকটা সময় বাচ্চাদের মধ্যে কেটে যায়।

পার্থ কোনও দিনই ওর কোনও ব্যাপারে অতিরিক্ত খবরদারি করে না। এই বিষয়টাই সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দেয় রাইমাকে। কিন্তু আজ পার্থর এই অযাচিত কৌতূহল প্রকাশে ও কিছুটা বিরক্তই হয়েছে। যদি তলিয়ে দেখা যায় তা হলে বিরক্তির আসল কারণ অবশ্য আলাদা। নিজের এত পছন্দের শাড়িটা রাইমা কেন আভাদিকে দিয়ে দিল, সেটার কি কোনও যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা ও দিতে পারত?

পার্থর জন্য ব্ল্যাক কফি বানাতে গিয়ে রাইমার স্মৃতিপটে ভেসে উঠল সেই পৌষালি দিনটার কথা। ফেসবুকের আলাপচারিতা ক্রমশ প্রেমে পরিণত হওয়ার পরেও মুখোমুখি দেখা করার জন্য ওরা দু’জনেই বেশ খানিকটা সময় নিয়েছিল। দিনটা ছিল বুধবার। মঙ্গলে উষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা— কথাটা যেন অমোঘ বাণীর মতো সত্য হয়ে উঠেছিল ওদের জীবনে। একটা আলতা রঙের শিফন শাড়ির সঙ্গে মানানসই হালকা প্রসাধনে পরিপাটি করে সেজে স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছিল রাইমা। ঘড়িতে তখন সকাল দশটা ছুঁই-ছুঁই। পার্থ ট্রেন থেকে নেমে রাইমাকে ফোন করতেই ও-প্রান্ত থেকে অনুরোধের সুরে রাইমা বলেছিল, “এই তো অটোতে আছি। জাস্ট পাঁচটা মিনিট ওয়েট করো প্লিজ়।”

পার্থ ওর স্বাভাবিক শান্ত ভঙ্গিতে আশ্বাস দিয়েছিল, “কোনও অসুবিধে নেই, রাই। তুমি সাবধানে এসো। আমি ফুট-ওভারব্রিজে দাঁড়াচ্ছি।”

ফুট-ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে নতুন শহরতলির নির্যাস নিচ্ছিল পার্থ। অচেনা স্টেশন, অচেনা মানুষজন, অচেনা… সত্যিই কি ততটা অচেনা লাগছে, যতটা ভেবে এসেছিল? অদূরেই একটা লম্বা ব্রিজ আড়াআড়ি ভাবে কেটে দিয়েছে ঝকঝকে আকাশটাকে। স্টেশনের পশ্চিম দিকে ব্যস্ত টিকিট কাউন্টার। ওদিক থেকেই কি আসবে রাই? পশ্চিমি ঝঞ্ঝার মতো?

স্টেশনে ঢোকার আগে থেকেই বুকের ভিতরে অজস্র ডানা ঝাপটানোর শব্দ টের পাচ্ছিল রাইমা। শাড়ির কুচি সামলে পার্থর মুখোমুখি হতেই পৃথিবীর আহ্নিক গতি যেন থেমে গিয়েছিল। একটা পিচ কালারের শার্ট ইন করে পরা, লম্বা মেদহীন চেহারা। চোখে রিমলেস চশমা। মুখের অভিব্যক্তিতে কোথাও অপেক্ষার ক্লান্তি কিংবা বিরক্তির চিহ্ন নেই। ছবিতে যতটা মনে হয়েছিল, পার্থ তার চেয়েও অনেক বেশি সুদর্শন। এত স্নিগ্ধ পুরুষ আগে কখনও দেখেছে রাইমা?

ডিসেম্বরের সকালেও রাইমার নাকের নীচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিল সে দিন। পার্থ ওর হেঁটে আসার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল কি না, খেয়াল করেনি রাইমা। কী যে শব্দ হচ্ছিল বুকের বাঁ দিকটায়! অথচ পরে যখনই প্রসঙ্গটা উঠেছে তখনই পার্থ বলেছে, “মনে হচ্ছিল তোমার সঙ্গে আমার আগেও বহু বার দেখা হয়েছে। গত জন্মে, ঠিক ওখানেই।”

এ সব কথা শুনলে রাইমার গালে লালচে রং ধরে। তবু বার বার শুনতে চায় পার্থর মুখে ওর প্রতি এমন গভীর অনুভূতির কথা। পার্থও বোঝে রাইমাকে। তাই তো অতটা অবাক হয়ে গিয়েছিল আজ। যে শাড়িটাকে রাইমা এত দিন প্রাণ ধরে আঁকড়ে রেখেছে, অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখেনি কখনও, মাত্র বার কয়েকই পরেছে যাতে বহু ব্যবহারে জীর্ণ না হয়ে যায়, সেটা আজ চিরকালের জন্য অন্য কাউকে দিয়ে দিল?

না, শুধু এই শাড়িটাই নয়, নিজের আরও কয়েকটা রংচটা কুর্তি, সালোয়ার, পার্থর দুটো পুরনো টি-শার্ট— সব একটা প্যাকেটে ভরে দিয়ে দিল আভাদিকে। এর আগেও দিয়েছে। বাড়ি যাওয়ার আগে আজ আভাদি আবার বলছিল, “বাচ্চাদের ক’খান জামাকাপড় থাকলি ভাল হত গো বৌদি। আমার পাশের ঘরেই যে বৌটা থাকে, ওর বাচ্চাগুনো খুব ছোট। আমাকে কবে থিকে বলে রেকেছে জামার কতা। বচ্ছর-বচ্ছর পরানোর মতো নুতুন জামা ওরা কোত্থেকে পাবে বলো দিকি? তোমাদের মতো বড় মনের মানুষরাই তো ভরসা।”

রাইমা এ সব কথার উত্তর দেয় না আজকাল। মনের চোরা কষ্ট মনেই মনেই সামলে নেয়। শাশুড়ি-ননদের নিত্যদিনের খোঁটা সহ্য করতে না পেরে পার্থর সঙ্গে এই ভাড়াবাড়িতে এসে উঠেছিল। সেও বছর তিনেক আগের কথা। এখন আভাদিও সেই একই কথা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলে। বাচ্চাদের জামা কোত্থেকে পাবে ও? বাচ্চাই বা কোত্থেকে পাবে? ও কোনও দিন মা হতে পারবে না, এটা জেনেই ওকে বিয়েটা করেছিল পার্থ। বাড়িতে জানায়নি ইচ্ছে করেই। জানালে কোন মা-বাবা রাজি হয় এমন বিয়েতে? আর তো কোনও খুঁত ছিল না রাইমার। শ্বশুরবাড়ির সকলে এক দেখাতেই পছন্দ করে নিয়েছিল ওকে। পার্থর বাবা রাইমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, “দেখো শোভা, কেমন মানিয়েছে ওদের দু’জনকে! আমাদের ঘরে লক্ষ্মী এল।”

চোখদুটো জলে ভরে গিয়েছিল রাইমার। এত ভালবাসাও ওর প্রাপ্য ছিল!

আকাশ আলো করে গোল চাঁদ উঠেছে। কাল দোলপূর্ণিমা। এ রকম একটা দিনেই প্রথম বার ঘনিষ্ঠ হয়েছিল ওরা। রাইমা সঙ্কোচ করছিল। নাহ্, নারীসুলভ সঙ্কোচ নয়। কোনও দিন মা হতে না পারার যন্ত্রণাটা থেকে ও বেরোতে পারছিল না। পার্থ জোর করেনি। রাইমাই বলেছিল, “জোর করো, পার্থ। না হলে আমি কখনও সহজ হতে পারব না।”

রাইমা ঠিকই বলেছিল সে দিন। পার্থই আস্তে আস্তে ওর সমস্ত জড়তা কাটিয়ে ওকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়েছে। পার্থ ওকে সব দিয়েছে। তার বদলে ও কী দিতে পারল পার্থকে?

দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদটাকে একমনে দেখছে রাইমা। সকালের কথাগুলো মাথায় ঘাই মারতেই মনটা অস্থির হয়ে উঠল আবার। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে সবে মোবাইলটা নিয়ে বসেছিল। নিউজ় ফিড স্ক্রোল করতে করতে হঠাৎই চোখ আটকে গিয়েছিল একটা পোস্টে। রাইমা আর শুভঙ্করের এক কমন ফ্রেন্ডের পোস্ট।

বাবা হয়েছে শুভঙ্কর! বুকের বাঁ দিকটা হঠাৎ অবশ হয়ে এসেছিল রাইমার।

অনেক বছর আগের কথা। তবুও সেই স্মৃতি আজও ফিকে হয়নি। সবে দিন দুয়েক আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে রাইমা। সকালে অফিস যাওয়ার সময় শুভঙ্কর যেমন ফোন করত, সেই সময়েই করেছিল সে দিনও। রাইমা ফোনটা রিসিভ করতেই ঝড়ের বেগে বলতে শুরু করেছিল শুভঙ্কর, “একটা কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে রে। তোর অপারেশনের খবরটা বাড়িতে জানাজানি হওয়ার পর মা একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেছে। জানিসই তো, আমি বংশের একমাত্র ছেলে। তুই চাকরি পেয়ে তার পর বিয়ে করবি এটা তাও বা ম্যানেজ করতে পেরেছিলাম, কিন্তু এটা জানার পর তো…” একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেছিল, “ঠাম্মার বয়স হয়েছে। নাতি-নাতনির মুখ দেখবে বলে… আর আমি ঠাম্মাকে কতটা ভালবাসি সেটাও তো তুই জানিস। সিচুয়েশন এখন আউট অব কন্ট্রোল।”

গোটা কয়েক ওভারিয়ান সিস্ট আর একটা টিউমার ওদের এত দিনের যত্নে লালিত স্বপ্নগুলোকে চুরমার করে দিয়েছিল! অনেক ভেবে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছিল রাইমা।

“তোর জায়গাটা অন্য কাউকে দেওয়া সম্ভব!” মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল রাইমার।

কথাটা এত বছর পর আবার নতুন করে কানের কাছে প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে। সে দিন সম্পর্কটা শেষ করে দেওয়ার পর নিজের কাছে রাইমা প্রতিজ্ঞা করেছিল, এর পর যদি কেউ ওর সবটা জেনেও সারা জীবন এক সঙ্গে পথ চলার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, তবেই সম্পর্কে জড়াবে, না হলে নয়।

তার পরও এই এতগুলো বছর ধরে শুভঙ্করের দেওয়া আলতারঙা শাড়িটা নিজের কাছে খুব যত্নে রেখেছিল রাইমা। শুভঙ্কর নিজের চাকরির প্রথম মাইনের টাকা দিয়ে ওকে কিনে দিয়েছিল শাড়িটা। ঠিক লাল নয়, আলতার মতো রং— কথাটা শুভঙ্করই বলেছিল। রং নিয়ে ওর মারাত্মক অবসেশন ছিল বরাবরই। এই রংটায় যে ওকে দারুণ মানায় সেটা শুধু শুভঙ্কর কেন, অনেকেই বলেছে। পরে পার্থর মুখ থেকেও এই একই কথা শুনে রাইমার বিশ্বাসে যেন সিলমোহর পড়েছিল।

প্রথম দেখা করার দিন একটা নিরিবিলি রেস্তরাঁয় বসে, স্টাফদের চোখ বাঁচিয়ে পূর্ণদৃষ্টিতে পার্থর চোখের দিকে তাকিয়েছিল রাইমা। উল্টো দিকের চেয়ারে বসে পার্থ যে নিবিষ্ট হয়ে ওকেই দেখছে, সেটা বুঝতে পেরে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিয়েছিল তখনই। কোনও ভণিতা না করে পার্থ বলেছিল, “শাড়িটা সুন্দর কি না জানি না, কিন্তু তোমার গায়ে খুব সুন্দর মানিয়েছে।”

বাড়ি ফিরে আয়নার সামনে সে দিন নিজেকে নতুন করে দেখেছিল রাইমা।

রাতে ডিনার সেরেও পার্থ ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকে ইদানীং। সেই সময়টায় টুকটাক বই পড়ার অভ্যেস রাইমার। আজ সন্ধেবেলা বুকশেলফ ঘেঁটে বহু পুরনো একটা কবিতার বই বার করেছে। বালিশে হেলান দিয়ে বইটা খুলতে না খুলতেই ঘরের আলো নিবিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে বসল পার্থ।

“কী হল? লাইট অফ করলে যে!” অবাক হয়ে পিঠ টান করল রাইমা।

“আজ আর কাজে বসব না। ঘুম পাচ্ছে।”

“তাই বলে আমাকে জিজ্ঞেস না করে… বইটা দু’-চার পাতা পড়ে তার পর না-হয় ঘুমোতাম।”

“এক বই আর কত বার পড়বে? রাখো এ বার।”

“তোমার কী অসুবিধে হচ্ছে তাতে?” রাইমা এ বার সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করল।

একটু চুপ করে থেকে পার্থ বলল, “শাড়িটা শুভঙ্কর দিয়েছিল, না? আর এই বইটাও তো…”

মুহূর্তে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল রাইমার সারা শরীরে। তার মুখে কথা জোগাল না। পার্থ জানত!

বেডসাইড সুইচ বোর্ডটা পার্থর দিকে। আলো জ্বালাতে গিয়েও জ্বালাল না পার্থ। বরং মাথার কাছের জানলার পর্দাটা সরিয়ে দিল ভাল করে। পূর্ণিমার দুধসাদা জ্যোৎস্না হুড়মুড়িয়ে আছাড় খেয়ে পড়ল ওদের বিছানার উপর। রাইমা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর কাঁধে হাত রাখল পার্থ। তার পর গলার স্বর নামিয়ে বলল, “পুরনো স্মৃতি বুকের মধ্যে আঁকড়ে রেখে আর কত দিন কষ্ট পাবে, বলো?”

“তুমি শাড়িটার ব্যাপারে সব জানতে? বলোনি তো আগে!” রাইমার গলা কাঁপছে।

“হয়তো সব জানি না। কিন্তু বুঝি। ভালবাসলে বোঝা যায়। আমি তোমায় জোর করছি না রাই, তবে তুমি চাইলে ওই রঙের একটা শাড়ি আমি…”

রাইমা আচমকা তীব্র অভিযোগে ফেটে পড়ে, “জোর করতে পারো না? এ রকম কেন তুমি? কেন? কেন? কেন?”

“জোর করলে কি তুমি খুশি হতে? বরং রাগে-ক্ষোভে-ঘৃণায় আমাকে…”

পার্থকে থামিয়ে দিল রাইমা। তার পর কানের কাছে মুখ এনে বলল, “আর ওই রং নয় পার্থ, এই দোলপূর্ণিমায় তুমি আমায় নতুন রঙে রাঙিয়ে দাও।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Short Story Short story

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy