Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

রামনবমীতে দোল খেলেন রঘুনাথ

তাঁর পায়ে আবির দিয়ে উৎসবে মাতেন ভক্তেরা। তাঁর আবির্ভাব দিবসে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার রীতি নেই এই বঙ্গে। বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্যতাঁর পায়ে আবির দিয়ে উৎসবে মাতেন ভক্তেরা। তাঁর আবির্ভাব দিবসে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার রীতি নেই এই বঙ্গে। বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

তিলকধারী: বড়গোস্বামী বাড়িতে রামচন্দ্রের বিগ্রহ

তিলকধারী: বড়গোস্বামী বাড়িতে রামচন্দ্রের বিগ্রহ

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৯
Share: Save:

রামনবমী শুধু অস্ত্র হাতে মিছিলের দিন নয়। অন্তত এই বঙ্গে। নদিয়ার শান্তিপুর ও বেশ কয়েকটি জায়গায় রামনবমীতে দোল খেলেন রামচন্দ্র। বাংলায় রামচন্দ্র রঘুনাথ। কপালে তাঁর রসকলি। এখানে তিনি শুধুই রাবণবধকারী মহাবীর নন, বরং পদ্মাসনে আসীন প্রজাবৎসল রাজা, শান্তির দেবতা। বাংলার বেশির ভাগ জায়গায় পূজিত রামচন্দ্রের মূর্তির হাতে থাকে না তির-ধনুক। তাই হয়তো রামনবমীতে বাঙালি হিন্দু কোনও দিনও অস্ত্র নাচায়নি। মাথায় বাঁধেনি কাপড়ের গেরুয়া পট্টি। তিলক কাটেনি কপালে।

Advertisement

বৈষ্ণব সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান শান্তিপুরের বেশ কিছু পরিবারে রামচন্দ্রের দারুমূর্তি নিত্য পুজো পায়। তার মধ্যে অন্যতম বড়গোস্বামী বাড়ি। অদ্বৈতাচার্যের উত্তরপুরুষ মথুরেশ গোস্বামীর উত্তরপুরুষদের আমলে শুরু হয় রামনবমী উদ্‌যাপন। এই পরিবারের সত্যনারায়ণ গোস্বামী জানালেন, তাঁদের বাড়ির রঘুনাথ আসলে ছিলেন শান্তিপুরের অতুলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গৃহদেবতা। কোনও এক সময়ে রঘুনাথ বড়গোস্বামী বাড়িতে স্থানান্তরিত হন।

রামনবমীতে বড়গোস্বামী বাড়িতে হয় বিশেষ পুজো। বসে মেলাও। এই দিন ভক্তেরা রঘুবীরের পায়ে আবির দেয়। হয়তো সেই জন্য এখানে লোকজনের মুখে ‘রামনবমী’ বলে কোনও উৎসবের নামও শুনবেন না। তাঁরা বলেন, ‘রামচন্দ্রের দোল’। এ দিন অভিষেক ও পুজোর পরে বড়গোস্বামী বাড়িতে রঘুবীরের ভোগে থাকে ভাত, শাকভাজা, মোচার ঘণ্ট, পুষ্পান্ন, ছানার ডালনা, পায়েস, মিষ্টি— একাধিক নিরামিষ পদ।

বড় গোস্বামীবাড়ি ছাড়াও শান্তিপুরের মধ্যমগোস্বামী বাড়ি, সূত্রাগড়ে মোদক সম্প্রদায়ের রামমন্দিরে, গোপালপুর সাহাবাড়িতে হরিপুরে, সব জায়গাতেই বৈষ্ণব রীতি মেনে হয় রামচন্দ্রের পুজো। হরিপুরে পুজোর চেয়েও বেশি নজর কাড়ে বিসর্জন।

Advertisement

শান্তিপুরের বাইরে নদিয়ার শিবনিবাস, বর্ধমানের অম্বিকা-কালনা, হুগলির শ্রীরামপুর, চব্বিশ পরগনার ভাটপাড়া, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর এবং কলকাতার কাছে চন্দননগর, চুঁচুড়া, গুপ্তিপাড়া, খড়দহে রামনবমীর ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। হাওড়ার রামরাজাতলায় রামসীতার সুবিশাল মাটির মূর্তি দেখতে আজও বহু মানুষ ভিড় করেন রামনবমীর দিন। বাংলায় রামচন্দ্রের আরাধনা তাই শক্তি প্রদর্শন নয়, বাঙালির আন্তরিকতার আয়নাতেই রামচন্দ্রকে দর্শন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.