এই প্রথম এলাম কান চলচ্চিত্র উৎসবে। একটা শর্ট ফিল্মে অভিনয়ের সুবাদে। ছবিটা শর্ট ফিল্ম কর্নারে স্ক্রিনিংয়ের জন্য মনোনীত হয়েছে। দেখলাম, ফেস্টিভাল-বিল্ডিংয়ের সেই বিখ্যাত লাল কার্পেটের বাইরে প্রচুর অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে সকাল থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে। তাদের পরনে ডিজাইনার টাক্সেডো আর ঝলমলে গাউন। কিন্তু, হাতে উঁচিয়ে রেখেছে একটা করে প্ল্যাকার্ড। কোনও প্রতিবাদ করছে কি? সিনেমায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে এখানেও কোনও বিতর্ক চলছে? কাছে গিয়ে দেখি, ও হরি! সে সব কিছু নয়। এরা সকলেই, যেনতেনপ্রকারেণ, যে কোনও একটা স্ক্রিনিংয়ের একটা এক্সট্রা পাস চায়। তা হলেই ওই রেড কার্পেটে হাঁটতে পাবে যে! কোন সিনেমা, কেমন সিনেমা— কিচ্ছু যায়-আসে না। ওদের জীবন-বৃত্তের কেন্দ্র, ব্যাস, ব্যাসার্ধ, বৃত্তফল সবই ওই লাল কার্পেট।
শুধু ওদের কেন, কান উৎসবের চুম্বক আজকাল এই রেড কার্পেট। জুলিয়া রবার্টস খালি পায়ে হাঁটলেন (গত বছর হাই-হিল না-পরার জন্য কয়েক জনকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতিবাদে), ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন বেগুনি লিপস্টিক পরে হাঁটলেন, এই নিয়েই শুধু কথা চলছে। যেন তারকাদের পোশাক, অলংকার, হাঁটার ধরন, দাঁড়াবার পোজ, এইগুলোই একটা ফেস্টিভালের মূল ব্যাপার! ষোলোশো সংস্থা থেকে চার হাজারেরও বেশি সাংবাদিক এসেছেন ইভেন্ট কভার করতে। প্রায় সব্বাই শুধু পাখির বাসার মতো গাউন আর বো-বাঁধা টাক্সেডোর রিভিউ কষতে ব্যস্ত! আরে, এটা তো পৃথিবীর যে কোনও ফেস্টিভাল নয়! লোকে বলে, এটাই বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত, শ্রেষ্ঠ ফিল্মোৎসব। অস্কার নয়, এখানে সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গোল্ডেন পাম’ পাওয়াই গোটা পৃথিবী জুড়ে ফিল্ম-করিয়ে’দের সবচেয়ে মূল্যবান স্বপ্ন! অবশ্য, ভুল বললাম বোধহয়। বাক্যটায় পাস্ট টেন্স ব্যবহার করা উচিত ছিল। কান-ও এখন হলিউডের দিকে যেমন পড়িমরি করে ঝুঁকেছে, তাতে অস্কারের পাল্লাই হয়তো ভারী হবে!
১৯৬০-এ ‘লা দোলচে ভিতা’ ছবির জন্য পরিচালক ফেদেরিকো ফেলিনি আর অভিনেতা মার্চেল্লো মাস্ত্রোইয়ান্নি যে লাল কার্পেটে হাঁটছেন, সেটাতেই ১৭ বছর পর হাঁটছেন এক অস্ট্রিয়ান বডিবিল্ডার! আর্নল্ড শোয়ারজেনেগার। ভারোত্তোলকদের নিয়ে তৈরি, জর্জ বাটলারের প্রায় দু’লাখ ডলার দামের ডকুমেন্টারি ‘পাম্পিং আয়রন’-এর প্রোমোশনে। আর ১৯৯২-এ এলেন মাইকেল ডগলাস আর শ্যারন স্টোন। ‘বেসিক ইন্সটিংক্ট’ সিনেমাটার আনসেন্সর্ড ভার্সন দেখানোর জন্য! ছবিটা খারাপ তা মোটেই বলছি না, কিন্তু কান-এ তার মূল পাবলিসিটি হয়ে দাঁড়াল: যে ৭০ সেকেন্ড কেটে দেওয়া হয়েছে সঙ্গমদৃশ্য থেকে, তা এখানে দেখানো হবে! মার-মার-কাট-কাট ভিড়!