E-Paper

অসুস্থ হলেও বিশ্রাম নেই

সুমিতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১৩
ছবি: বৈশালী সরকার।

ছবি: বৈশালী সরকার।

আমার ডায়েরি? ছড়িয়ে আছে আমার স্কুলে, রাস্তায়, আর অজস্র ফর্মে, মাঝরাত পেরনো মোবাইলে। আর আমার পরিবারে। এ রোজনামচার তো শেষ নেই। নিত্যনতুন লিখেই চলেছি।

কোনও দিন হয়তো সকালে উঠে দেখলাম, আমায় একদিনে ১০০টা ফর্মের ডেটা এন্ট্রি-র লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। কোনও দিন আবার বলা হচ্ছে, ৩০০টা করতে হবে। হুগলি জেলার বৈঁচি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজটা করছি। সারাদিন ঘুরে বাড়িতে বাড়িতে ফর্ম বিলি করা, পূরণ করা, ফর্ম সংগ্রহ করার পরে রাতে মোবাইল খুলে বসতে হচ্ছে। কারণ, মাথার উপর টার্গেট পূরণের খাঁড়া।

আমি হুগলির একটি হাইস্কুলে পড়াই। বয়স ৪৭। জেলারই বৈঁচি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজটা করছি।

ভোর ভোর উঠেই ডেটা এন্ট্রি যতটা পারছি করছি। ১১টা নাগাদ মুখে কিছু দিয়ে বেরিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। বাড়ি ফিরছি চারটে নাগাদ। মুখে দু’মুঠো গুঁজেই, তথ্য আপলোড করছি, মধ্যরাত পেরিয়েও। তার পর তো ফোনে গুচ্ছের ফোন ভোটারদের। সার্ভার ঠিক থাকলে এই ১০০ বা ৩০০ ডেটা এন্ট্রি করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু সার্ভার ঠিক থাকলে তো! একটু কাজ করার পরেই সার্ভার ডাউন। লগ আউট হয়ে যাচ্ছে। আবার সার্ভার ঠিক হওয়ার অপেক্ষা। ঠিক হলে আবার নতুন করে লগ ইন। তখন আবার ওটিপি চাইছে। সেই ওটিপি অনেক সময় আসতে দেরি হয়। গালে হাত দিয়ে বসে থাকছি। তা-ও এক রাতে ১০০টার উপর ডেটা এন্ট্রি করেছি।

বিএলওদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রশ্ন করেছিলাম, এই ভাবে টার্গেট দিয়ে দিচ্ছেন। পরিকাঠামো নেই কেন? আমাকে বলা হল, ‘পান্ডুয়ার বিডিও অফিসে চলে আসুন। ওখানে বসে ডেটা এন্ট্রি করবেন।’ সেখানে গিয়েও কোনও সুবিধা হল না। ওখানেও তো সার্ভারের সমস্যা। উল্টে সারাদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ হল না। এ দিকে, ‘টার্গেট’ দেওয়া হয়েছে, ২৯ নভেম্বরের মধ্যে সব ফর্ম পূরণ করে ‘ডেটা এন্ট্রি’র কাজ শেষ করতে হবে। এখনও পর্যন্ত ৫১৯টি করতে পেরেছি। এত কম সময়ের মধ্যে ১৩০০ ডেটা এন্ট্রি কী ভাবে শেষ করব? দুশ্চিন্তার চোটে ব্লাডশুগার এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে।

নিয়ম হল, ১২০০-র বেশি ফর্ম যাঁদের দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের এক জন অতিরিক্ত বিএলও দেওয়া হবে। আমাকেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা অনেক পরে। কিন্তু উনি ফর্মে সই করতে পারবেন না। এমনকি, ডেটা এন্ট্রি করার সময়ে আমার ওটিপিও ওঁকে দিতে পারব না। ফলে কী সুবিধা হচ্ছে বলতে পারেন?

কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কিন্তু অসুস্থ হলেও বিশ্রাম নেওয়ার অবকাশ কোথায়? শুধু ডেটা এন্ট্রির কাজ বাকি, তাই নয়, এখনও ঘুরে ঘুরে পূরণ করা, ফর্ম সংগ্রহ করার কাজও তো অনেকটা বাকি।

কবে এই কাজ শেষ করে ক্লাসঘরে পুরোপুরি ফিরতে পারব?

তখন সুস্থ থাকব তো?

অনুলিখন: আর্যভট্ট খান

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal SIR BLO

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy