Advertisement
E-Paper

প্রেসিডেন্টের বস্ত্রহরণ

রোজ নদীতে সাঁতার কাটেন জন কুইন্সি অ্যাডাম্স। তাঁর সেই পোশাকের ওপর চেপে বসে পড়লেন অ্যান রয়্যাল। হোয়াইট হাউসের বাসিন্দার একটি সাক্ষাৎকার তাঁর চাই। চিরশ্রী মজুমদাররোজ নদীতে সাঁতার কাটেন জন কুইন্সি অ্যাডাম্স। তাঁর সেই পোশাকের ওপর চেপে বসে পড়লেন অ্যান রয়্যাল। হোয়াইট হাউসের বাসিন্দার একটি সাক্ষাৎকার তাঁর চাই। চিরশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০০:০০

১৮২০-র দশকের ওয়াশিংটন ডিসি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তখন জন কুইন্সি অ্যাডামস। তাঁর দফতরে এক দিন এলেন এক মধ্যবয়স্কা। বিধবা, ভাগ্যান্বেষী। আশ্চর্য আবদার তাঁর। খোদ রাষ্ট্রপতির একখানা সাক্ষাৎকার চান। প্রেসিডেন্ট তো সটান না করে দিলেন। তাঁর অফিসের লোকজন আরও এক ধাপ এগিয়ে, ধমক দিয়ে বুড়িকে সিধে রাস্তা দেখিয়ে দিলেন।

কিন্তু অ্যান রয়্যাল তো দমবার পাত্রী নন। তিনি জাত সাংবাদিক। কী করে, কোন ফাঁকফোকর দিয়ে, প্রেসিডেন্টের খাস চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকবেন, তল্লাশ করতে লাগলেন। আর এমন কষে হোমওয়ার্ক করার ফল পেয়েও গেলেন শিগগির।

বড় মানুষদের বিচিত্র সব শখ-আহ্লাদ থাকে। আর জন কুইন্সি তো বিরাট মানুষ। তাঁর শিরায় ঘন নীল রক্ত। আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস-এর যোগ্য সন্তান, তার ওপর এমন দুঁদে রাষ্ট্রপুরুষ। তবে তাঁর একটা বিচিত্র অভ্যাসের খবর উড়ত রাজধানীর গলি থেকে রাজপথে। হোয়াইট হাউসের ঠিক পিছন দিয়ে বয়ে গেছে পোটোম্যাক নদী। প্রতি দিন কাকডাকা ভোরে সেখানে নাইতে নামেন মিস্টার প্রেসিডেন্ট। একেবারে বিবস্ত্র, গায়ে সুতোটিও থাকে না।

সে দিনও ভোর পাঁচটায় জলে নেমেছেন প্রেসিডেন্ট। অকুস্থলে হাজির হলেন অ্যান। প্রেসিডেন্ট যেখানে জামাকাপড় ছেড়েছেন, সেখানে গিয়ে ডাঁই করা সব পোশাকের ওপর ধপ করে বসে পড়লেন। প্রেসিডেন্ট বাস্তবিকই জলে পড়লেন। উদোম গা। এ দিকে কনকনে ঠান্ডা জল। উঠে আসারও জো রাখেননি মহিলা। প্রেসিডেন্ট বিস্তর সাধাসাধি করলেন, তবু গোঁ ছাড়েন না অ্যান। শেষে কথা দিতে হল, প্রেসিডেন্ট সাক্ষাৎকার দেবেন তাঁকে। প্রতিশ্রুতি পেয়ে অ্যান কাপড়গুলো মাটিতে রেখে, উঠে পিছন ঘুরে দাঁড়ালেন। প্রেসিডেন্টকে পোশাক পরতে দিলেন নির্বিঘ্নে।

তার পরের ঘটনা? ইতিহাস। অ্যান রয়্যাল হলেন ইতিহাসের প্রথম মহিলা যিনি প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার পেলেন। অ্যানের বুদ্ধিতে জন কুইন্সি অ্যাডামস সে দিন এমন চমৎকৃত হয়েছিলেন, বাড়িতে নেমন্তন্ন করলেন তাঁকে। গিন্নির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। তার পর লিখলেন সেই লম্বা চিঠিটি।

তাতেই সব মুশকিল আসান হল অ্যান নিউপোর্ট রয়্যাল-এর। মহা দুর্ভাগা তিনি। পেনসিলভানিয়ায় কষ্ট করে বড় হয়েছেন। তার পর মেজর উইলিয়াম রয়্যালের সঙ্গে বিয়েটা হতে একটু সুখের মুখ দেখেছিলেন। বাদ সাধল ভাগ্য। বছর পনেরো ঘর করার পর, ১৮১৩-য় মেজর মারা গেলেন। যেটুকু সম্পত্তি ছিল বেচেবুচে জীবন ধারণ করতে গেলেন বিধবা, বাধা দিল মেজরের পরিবার। নোটিস আনল, মেজর নাকি অ্যানকে কোনও দিন আইনত বিয়েই করেননি। মেজরের জমিজমা টাকাপয়সাও তাই অ্যানের নয়। সাত বছর মামলা চলার পর কোর্ট রায় দিল অ্যানের বিরুদ্ধেই। কপর্দকশূন্য অবস্থায় অ্যানকে রাস্তায় বেরতে হল। তার পর ঘুরতে ঘুরতে রাজধানী এবং রাজামশাই।

সব ভাল যার শেষ ভাল। মিস্টার প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে দিলেন কংগ্রেসে— এই মহিলাকে তাঁর হকের পয়সা ফেরত দেওয়া হোক। সেই মামলা নিষ্পত্তি হল না ঠিকই, কিন্তু ভাগ্য ফিরল অ্যানের। প্রেসিডেন্টের ইন্টারভিউ নিয়ে তিনি তখন বিখ্যাত মানুষ। পুরোদস্তুর সাংবাদিক হতে কোনও বাধাই রইল না আর। সংবাদমাধ্যমে তখন পুরুষদেরই জয়জয়কার। তার মধ্যেই ‘পল প্রাই’ বলে এক খবরকাগজ খুলে জাঁকিয়ে বসলেন তিনি। এক দিন যে মহিলা খোদ প্রেসিডেন্টের জামাকাপড় লুকিয়েছিলেন, তাঁর কাজ হল দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের মুখোশ খুলে খুলে শুধানো, তোর কাপড় কোথা?

John Quincy Adams Anne Royall জন কুইন্সি অ্যাডামস অ্যান রয়্যাল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy