Advertisement
E-Paper

ন্যায়শাস্ত্র পড়া হত হরি ঘোষের গোয়ালে

পড়াতেন রঘুনাথ শিরোমণি। মধ্যযুগের নবদ্বীপে।তিনি দুধের ব্যবসা করতেন না। হরি ঘোষ মধ্যযুগের নবদ্বীপে এক গ্রাম্য জমিদার মাত্র। রঘুনাথ সেই গ্রামেরই দরিদ্র এক ব্রাহ্মণসন্তান। জন্মের পরই বাবা মারা যান, বিধবা মা লোকের বাড়িতে ধান ভেঙে কোনও ক্রমে দিন গুজরান করেন। সেই সব লোকেদেরই এক জন পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌম।

অশ্বঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০৩

তিনি দুধের ব্যবসা করতেন না। হরি ঘোষ মধ্যযুগের নবদ্বীপে এক গ্রাম্য জমিদার মাত্র। রঘুনাথ সেই গ্রামেরই দরিদ্র এক ব্রাহ্মণসন্তান। জন্মের পরই বাবা মারা যান, বিধবা মা লোকের বাড়িতে ধান ভেঙে কোনও ক্রমে দিন গুজরান করেন। সেই সব লোকেদেরই এক জন পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌম। নবদ্বীপের নিমাই ওরফে শ্রীচৈতন্য থেকে তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, স্মৃতিশাস্ত্রের রঘুনন্দন, অনেক বিখ্যাত লোকই তাঁর ছাত্র। বিধবা সার্বভৌম মশাইয়ের পায়ে কেঁদে পড়লেন, তাঁর একমাত্র ছেলেটিকেও পড়াতে হবে।

কিন্তু ছেলেটি শৈশবেই এঁচড়ে পাকা। সার্বভৌম তাকে অক্ষরজ্ঞান শেখাতে গেলে প্রশ্ন, ‘ক-এর পরে খ কেন?’ ‘অন্তঃস্থ আর বর্গীয় দুটো জ কেন হল?’ অক্ষর চিনতে চিনতেই ব্যাকরণ পড়া হয়ে গেল তার। সবাই পুঁথি মুখস্থ করে, আর অকালপক্ব ছোকরা পুঁথি পড়তে পড়তেই মন্তব্য করে, ‘এখানে যুক্তিটাই ভুল।’ এক দিন সার্বভৌমের লেখা পুঁথির দোষও ধরে দিল সে।

শিক্ষকের আর সহ্য হল না। সার্বভৌম বললেন, ‘বাপু রঘুনাথ, তুমি মিথিলায় যাও।’ মিথিলা তখন ন্যায়শাস্ত্রের অন্যতম কেন্দ্র। পক্ষধর মিশ্র সেখানকার নামকরা পণ্ডিত।

ইতিমধ্যে ষষ্ঠীর রাতে পড়তে পড়তে রঘুনাথের চোখে একটি পোকা কামড়ায়। চিকিৎসাবিদ্যা তখন এত উন্নত নয়, পোকার কামড়ে রঘুনাথের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পক্ষধর মিশ্রের বাড়ি গেলে তিনি সেই নষ্ট চোখের কথা তুলে ঠাট্টা করলেন, ‘ইন্দ্রের সহস্র চোখ, আমার দুটি। শিবের তিনটি চোখ, আর ওখানে ওই একচোখোটি কে?’ রঘুনাথ বিন্দুমাত্র না দমে উত্তর দিলেন, ‘যিনি অন্ধকে দেখতে শেখান, পণ্ডিতকে জ্ঞানের আলো দেখান, তিনিই আমার শিক্ষক হতে পারেন। অন্য কেউ নন।’ পক্ষধর রঘুনাথকে শিষ্য করে নিলেন। ক্রমে রঘুনাথ পক্ষধরেরও ভুল ধরলেন, মিথিলার বিদ্বৎসমাজ নবদ্বীপের ছেলের জয় মেনে নিল।

রঘুনাথ ফিরে এলেন গ্রামে। কিন্তু শুধু ন্যায়চর্চায় পেট ভরবে না। টোল খুলতে হবে। গরিব ব্রাহ্মণের সেই পয়সা কোথায়? জমিদার হরি ঘোষ বললেন, ‘ঠিক আছে, আমার গোয়ালটাকে এখন কাজে লাগাও।’

ক্রমে ছাত্রসংখ্যা বাড়ল। মিথিলার গঙ্গেশ উপাধ্যায়ের বিখ্যাত পুঁথি ‘তত্ত্বচিন্তামণি’-র ওপর রঘুনাথ শিরোমণির টীকা তখন অবশ্যপাঠ্য। মিথিলা নয়, নবদ্বীপই হয়ে উঠল ন্যায়চর্চার কেন্দ্র। গ্রামের বহু দূর থেকে শোনা যায় রঘুনাথের টোলের কলরব। কেউ পড়ছে, কেউ বা শিক্ষকের এক চোখ খারাপ থাকার সুযোগ নিয়ে পড়ার নামে খেলে বেড়াচ্ছে। পড়াই হোক আর খেলা, সকলে সকলের মতো উপভোগে ব্যস্ত।

সেই ঘটনার স্মৃতিতেই প্রবাদ— হরি ঘোষের গোয়াল। বাঙালি জানত, ন্যায়শাস্ত্রে নবদ্বীপের খ্যাতি ছড়িয়েছিল ওই গোয়াল থেকেই।

Chaitanya Mahaprabhu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy