Advertisement
E-Paper

ভগবানকে নিয়ে ইয়ার্কি?

ভগবানকে নিয়ে ইয়ার্কি একদম না। ক’দিন আগেই অবিশ্বাসের জন্য মারিয়া শারাপোভাকে আমরা উচিত শিক্ষা দিয়েছি। সাহস কম না, বলে ‘সচিন তেন্ডুলকরটা আবার কে?’ খেলার নামে তো অশ্বডিম্ব, শুধু ফ্যাশনেই অন্ধকার, নিজেকে ভাবেটা কী? দিয়েছি ধুইয়ে।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০০:০৩

ভগবানকে নিয়ে ইয়ার্কি একদম না। ক’দিন আগেই অবিশ্বাসের জন্য মারিয়া শারাপোভাকে আমরা উচিত শিক্ষা দিয়েছি। সাহস কম না, বলে ‘সচিন তেন্ডুলকরটা আবার কে?’ খেলার নামে তো অশ্বডিম্ব, শুধু ফ্যাশনেই অন্ধকার, নিজেকে ভাবেটা কী? দিয়েছি ধুইয়ে। আমরা নিজেরা অবশ্য কবাডির সুপারস্টার কিংবা বিশ্ব রাগবির মহাতারকার নাম বলতে পারব না, যদিও হাতে-গোনা যে ক’টা দেশ ক্রিকেট খেলে তার চেয়ে অনেক বেশি দেশ খেলে রাগবি। কিন্তু তাতে কী। কথা সিম্পল, ভাবাবেগ সবার আগে। সেখানে আঘাত করলেই হাত ভেঙে দেব। টুইটারে দল বেঁধে ভার্চুয়াল থাপ্পড় লাগিয়ে, আর বিশ্বময় ‘মারিয়া শারাপোভাটা আবার কে’ বলে প্রচারাভিযান চালিয়ে মেয়েটাকে চোখের-জলে-নাকের-জলে করে ছেড়েছি। এ তোর ফ্যাশন র‌্যাম্প না, টেনিস কোর্টে শখের বল পেটানো না, কাদের সঙ্গে লাগতে এসেছিস দেখ এক বার। অবশ্য পাপের পুরো শাস্তিটা হয়নি, নাগালে না পাওয়ায় হাতটা ভাঙা যায়নি। স্লাইট ঘোল খাইয়েই দুধের সাধ পাওয়াতে হয়েছে।

এ বার অবশ্য সেই সমস্যা নেই। ভিলেন তন্ময় ভট্ট হাতের নাগালেই। রাশিয়ান-টাশিয়ান না, একদম খাঁটি দেশি ছেলে। দিয়েছি পুলিশ কেস ঠুকে, টিভি চ্যানেলে জনতার আদালত, হাতে-হাতে নগদ কর্মফল, এ বার চামড়াটা স্রেফ তুলে নিয়ে ডুগডুগি বাজানোর অপেক্ষা। যতই ইনোসেন্ট মুখ করে থাক, ব্যাটা ঘরের শত্রু বিভীষণ। সচিনের নাম না জানলেই মহা-অপরাধ হয়, আর সব জেনেবুঝেও ইয়ার্কি মারলে যে সিধে গণ-আদালত, সেটা বিলক্ষণ জানে।

তার ওপর আবার শুধু সচিন না, সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরকে নিয়ে ছ্যাবলামো। ক্রিকেট আমাদের জননী জন্মভূমিশ্চ, বলিউড আমাদের স্বর্গাদপি গরীয়সী, আমরা কথা বলার আগে লতার গানে হিন্দি শিখি, হাঁটা শেখার আগে সচিনের ফুটওয়ার্ক প্র‌্যাকটিস করি, এ-সব নিয়ে কটুকাটব্য? নিঃসন্দেহে ব্যাটার একই সঙ্গে ডবল ফাঁসি হওয়া উচিত, এক বার মিডিয়া ট্রায়ালে, আর একবার জেলে। ভারতরত্নের অপমান বলে না, ও তো রাম-শ্যামও পায়, এমনকী ভীমসেন যোশী না কে একটা অ্যা-অ্যা করে গান করে, সেও পেয়েছে। কথা হল, এঁরা ভগবান, এক জন বলিউডের সরস্বতী, আর এক জন ক্রিকেটের কাত্তিক। খুবই জাগ্রত। যদিও এক জন দ্বিতীয় ইনিংসে প্রচুর ধেড়িয়েছেন, আর অন্য জন প্রচণ্ড সুরেলা গলায় আর সম্পূর্ণ বিনা মডিউলেশনে গাদা গাদা ফিল্মি গান গেয়ে বিখ্যাত, কিন্তু তাতে কী।

মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে ভাবাবেগ সবার আগে। সেকুলারিজমের মূল কথাই হল, আমাদের ভগবানই সকলের ভগবান। না মানতে পারলে বাথরুমে গিয়ে বসে থাক, পাকিস্তানে গিয়ে গরু চরা, রাজনীতিকদের নিয়ে প্রবন্ধ লেখ, ফিল্মস্টারদের নিয়ে গসিপ কর, যা ইচ্ছে কর, স্বাধীন দেশে সবার বাক্‌স্বাধীনতা আছে, কেউ কিচ্ছু বলবে না। কিন্তু প্রাণের মায়া থাকলে ভগবানকে নিয়ে ইয়ার্কি? একদম না।

bsaikat@gmail.com

Saikat Bandhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy