Advertisement
E-Paper

পাখিরা মনেই রাখে না

পাখি বলল, গাছ তুমি ভজাইদারোগাকে চেনো? গাছ বলল, না। পাখি বলল, তোমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়, এই আত্রাই নদীর তীরে তুমি যে ভাবে শিকড় গেড়ে বসে পড়েছ তাতে তোমার পক্ষে আমার মতো পাখা মেলে ওড়া বা দেশ-বিদেশের খবর রাখাও অসম্ভব। তা সেই ভজাইদারোগাও তোমার মতো বড় মনের একজন।

পিন্টু পোহান

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০০:০৩

পাখি বলল, গাছ তুমি ভজাইদারোগাকে চেনো? গাছ বলল, না।

পাখি বলল, তোমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়, এই আত্রাই নদীর তীরে তুমি যে ভাবে শিকড় গেড়ে বসে পড়েছ তাতে তোমার পক্ষে আমার মতো পাখা মেলে ওড়া বা দেশ-বিদেশের খবর রাখাও অসম্ভব। তা সেই ভজাইদারোগাও তোমার মতো বড় মনের একজন। আজ যেমন তোমার শাখায়-শাখায় সাতরাজ্যের পাখি এসে আশ্রয় নিয়েছে, তেমনই ভজাইদারোগার বাগানবাড়িতে খাঁচায়-খাঁচায় সাতরাজ্যের পাখির আশ্রয়। তার পর যা বলছিলাম, আমাকে এই বোল্লা থেকে পাখিমারারা খাঁচায় ভরে নিয়ে গেল কলকাতায়। না দিয়েছে জল, না দিয়েছে দানা। ভাবলাম, কলকাতার বাজারে হয়তো আমার ছাল ছাড়িয়ে বিক্রি করবে বলেই দানাপানি দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। কিন্তু দেখলাম এই পাখিমারাদের একটা স্ট্যাটাস আছে। যত সব সেলেব্রিটিদের সঙ্গে এদের কাজ কারবার। পাখিমারারাই আমাকে ভজাইদারোগার কাছে বিক্রি করে দিল। তোমার এই শাখায়-শাখায় যেমন সাতরাজ্যের পাখিদের জন্য টুসটুসে ফলের এলাহি আয়োজন, ভজাইদারোগার বাগানবাড়িতেও তেমন। কেনার পরেই আমাকে একটা নতুন খাঁচায় ভরে ঝুলিয়ে দিল। তার পর এল কাবলে ছোলা, বেলডাঙার পাকা লঙ্কা, আত্রাই নদীর থেকেও স্বচ্ছ কাচের মতো জল। দিনগুলো বেশ কাটছিল। তার পর আমার বয়স হয়ে গেল। রূপ গেল। ভজাইদারোগা আর তার বাগানবাড়িতে আমাকে রাখতে চাইল না। আমাকে ইংলিশবাজারের এক কসাইয়ের কাছে বেচে দিল। তা সেই কসাইয়েরও বয়স হয়েছে। সব ঠিকঠাক মনেও রাখে না। অনেক কিছুই ভুলে যায়। এই যেমন জবাই করার জন্য একটা পাখি বের করে খাঁচাটা আবার বন্ধ করে দেওয়ার কথা! বুঝলে গাছ, তা সেই কসাই খাঁচাটা খোলা রেখেই একটা পাখি বের করে জবাই করছে দেখে আমি ফুড়ুৎ! তার পর উড়তে উড়তে এই তোমার কাছে আশ্রয় নিলাম।

সত্যি বলছি গাছ, এ দিকের বালুরঘাট থেকে বাংলাদেশ আর ও দিকের বেহালা থেকে বহরমপুর সব জায়গায় গেছি আমি; তোমার মতো এত মহান আর উদার আর এক জনও চোখে পড়ল না।

গাছ বলল, সত্যি?

পাখি বলল, সত্যি। তুমি দেখে নিয়ো এক দিন তোমার নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে। সাতরাজ্যের পাখির আশ্রয়দাতা তুমি। দু’বেলা খাবারের জোগানও দিয়ে চলেছ। অবশ্য এত যে তোমার কৃতিত্ব তার জন্য পাখিদেরও অবদান কম নয়। তুমি নিশ্চয়ই জানো এ সব জায়গায় কী ভাবে গাছ জন্ম নেয়। পাখিরা ফল খেয়ে বিষ্ঠার সঙ্গে বীজ ত্যাগ করে আর সেই বীজ থেকেই...।

পাখির কথা শুনে গাছ হাসল এ বার। বলল, আমার জন্ম ইতিহাস জানা নেই। শুধু জানি বীজ থেকে যখন আমি সবে মাথা তুলেছি একটা পাখি এসে আমাকে ঠুকরে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। দুটো পাথরের মাঝখানে এমন ভাবে আমি মাথাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম যে বারবার আমাকে শেষ করে দিতে চেয়েও পাখিটা শেষ করে দিতে পারেনি। আমার চোখের সামনেই পাখিদের আক্রমণে সবেমাত্র অঙ্কুর বের হওয়া ভাইবোনদের শেষ হয়ে যেতে দেখলাম।

তখন আমি খুবই ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতাম। সবেমাত্র চোখ মেলে দেখা এই পৃথিবীতে বন্ধু বলতে কেউ নেই। আক্রমণ করার জন্য সবাই প্রস্তুত। তার পর নিজের প্রচেষ্টায় মাটি থেকে জীবনরস শোষণ করে শিরদাঁড়াটা শক্ত করে ভাবলাম এখন আমি পারি পাথরের আড়াল থেকে মাথা তুলে পৃথিবীর মুখোমুখি দাঁড়াতে। আর যেই পাথরের আড়াল থেকে মাথা তুলে দাঁড়ালাম আবার এল পাখির দল। তারা আমার নরম কাণ্ডটাই ছিঁড়ে নিয়ে গেল। আমি ভেঙে পড়িনি তবুও কিন্তু যত বার আমি মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছি তত বারই এসেছে পাখির দল। কখনও আমার মাথাটা ছিঁড়ে দিয়ে গিয়েছে। কখনও বা আমার খাবার তৈরির সবুজ ঘরগুলোকে নষ্ট করেছে। আজ আমি বড় হয়ে গেছি। এখন আমি না চাইলেও তোমরা আমাকে বন্ধু বলে আঁকড়ে ধরছ। আমার ডালে বাসা বাঁধছ। আমার ফল খেয়ে জীবন ধারণ করছ। আবেগে গদগদ হয়ে বলছ আমার নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে। তোমার কি কিছুই মনে নেই পাখি?
কী ভাবে তোমরা আমাকে শেষ করতে এসেছিলে?

বুদ্ধিমান পাখি হেসে বলল, এমা, এত বড় হয়েছ আর এটাই জানো না পাখিরা যে কিছুই মনে রাখে না। গাছও হাসল কিন্তু আর কোনও কথাই বলল না।

Anandamela Rabibasariya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy