Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গরু বাঁচাও, মোষ মারো

ভাবলে আশ্চর্য লাগে, এই একবিংশ শতকেও অনেকেই গরু ও মোষের তফাত জানেন না। এর মূল কারণ অশিক্ষা ও অজ্ঞানতা। নইলে সাধারণ জ্ঞান বই থেকেই জানা যায়, গরু পুজো করলে পুণ্য হয়, মোষ পুজোয় দেশদ্রোহ।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০০:০৬
Share: Save:

ভাবলে আশ্চর্য লাগে, এই একবিংশ শতকেও অনেকেই গরু ও মোষের তফাত জানেন না। এর মূল কারণ অশিক্ষা ও অজ্ঞানতা। নইলে সাধারণ জ্ঞান বই থেকেই জানা যায়, গরু পুজো করলে পুণ্য হয়, মোষ পুজোয় দেশদ্রোহ। মোষ বধ করলে দুর্গা হয়, গরু খেলে পাকিস্তানি, যে জন্য উর্দুতে রান্নাঘরের নাম পাক-শালা আর ভারতের বর্ডারের নাম পাক-প্রণালী। ভূগোল বইতে আছে, পাক-প্রণালী দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত, যেখানে সেই সত্যযুগ থেকেই দেশদ্রোহী ঠেকাতে বানর সেনারা পাহারা দিত, ইদানীং দেশের ভিতরেও সব জায়গায় তাদের দেখা যায়। ইতিহাস না পড়ার কারণে অনেকে এতে অবাক হয়ে ভাবেন, দেশদ্রোহীরা বোধহয় শুধু দেশের বাইরে থাকে, কিন্তু কথাটা সত্যি না। অনেক দিন ধরেই বর্ডারের ভিতরে অনুপ্রবেশকারী দেশবিরোধীরা ঘাঁটি গেড়েছে। দেশের অশিক্ষা, অজ্ঞানতা এবং দুর্দশার মূল কারণ এরাই। এদেরই প্রভাবে জীবনবিজ্ঞানে মন্ত্র-তন্ত্রের বদলে এখন পরি-পাক-তন্ত্র (যা গণতন্ত্রের চেয়েও খারাপ), আর ভূগোলে পূর্বস্থলীর বদলে পাক-স্থলী পড়ানো হয়। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, দেশের কিছু প্রতিভাবান মানুষও এই চক্রান্তে শামিল। এর অনেক উদাহরণ আছে। বিংশ শতাব্দীর একজন জনপ্রিয় লেখিকা লীলা মজুমদার, দেশের গর্ব শান্তিনিকেতনের নিন্দে করে একটি বই লিখেছেন, যার নাম পাক-দণ্ডী। এমনকি হকিতে পাকিস্তানের কাছে সাত গোল খাবার পর, সেই আনন্দে ভারতবর্ষে একটি সুপারহিট সিনেমাও হয়েছিল, যার নাম সাত-পাকে-বাঁধা। সিনেমা অনেকেই দেখেন, কিন্তু ফিল্ম স্টাডিজ পড়েন না বলে জানেন না, ইউরোপের দেশদ্রোহীরা সিনেমাটিকে অনেক প্রাইজ দেয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়লে জানা যায়, বিদেশি দেশদ্রোহীরা অনেক দিন ধরেই ভারতের সর্বনাশ করার চেষ্টা করছে। ভারতে যথেষ্ট পরিমাণ গায়ক এবং খেলোয়াড় থাকলেও এদের কেউ কেউ এখানে এসে গজল গাইবার, কেউ ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়। সাম্প্রতিক কালে এক জন টেনিস প্লেয়ারও সহিষ্ণুতার অভাব নিয়ে গায়ে পড়ে অনেক নিন্দে করেছেন। এঁদের বোঝা দরকার, বিদেশি মাত্রেই ভারতের শত্রু না। বিদেশীদের আমরা আপন করে নিতে জানি। এক জন ইরানি অভিনেত্রী দেশের মহান নেতার যাচ্ছেতাই নিন্দেমন্দ করেছিলেন, ক্ষমা চাইতেই সব ভুলে তাঁকে লোকসভায় সিরিয়াল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নিন্দে করা মাত্রই দেশদ্রোহ এবং ভুল স্বীকার করে আমাদের পক্ষে চলে এলেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া আমাদের জাতীয় ধর্ম। সংস্কৃত পড়লে জানা যায়, একেই সহিষ্ণুতা এবং এর অভাবকেই দেশদ্রোহিতা বলা হয়। সমস্যা হল, দেশব্যাপী অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার কারণে বেশির ভাগ লোকই এ সব কথা জানে না। দেশদ্রোহিতা হচ্ছে, না বুঝেই অনেক ছেলে অপ্সরা ছেড়ে অসুর পুজো করে, মেয়েরা পাকিস্তানি ক্রিকেটারে ফিদা, পিচ খুঁড়ে দিলেও অনেকে দেশদ্রোহীদের ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে চায়। সর্ব স্তরে ‘উচিত শিক্ষা’র প্রচলনই এ সব আটকানোর একমাত্র উপায়।

bsaikat@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE