Advertisement
E-Paper

সুরের ওপর গান লেখার আশ্চর্য গুণ

কখনও গান লিখছেন আলি আকবরের সুরে, কখনও বা উত্তমকুমারের জন্য। উস্তাদ সরোদ কোলে তুলে নিয়ে, চোখ বন্ধ করে বাজিয়ে চলেছেন রাগালাপ। একটু থেমে পুলককে বললেন, ‘‘এ রাগ আমারই তৈরি করা। লিখুন এই রাগেই।’’ কিন্তু গান লিখবেন কী!

আবীর মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৩০
Share
Save

সে বার উস্তাদ আলি আকবর খান এসেছেন কলকাতায়। উঠেছেন হিন্দুস্থান মার্টে নিজের চেনা মহল্লায়। হৈমন্তী শুক্লা ফোন করলেন গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমন ডাকের মানে জানতেন পুলকবাবু। খাতা-পেন নিয়ে হাজির হলেন। তখন বাংলা গানের জগতে হৈমন্তী ঝলমলে নাম। এক দিকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় পুলকবাবুরই কাহিনি ও গান নিয়ে তৈরি ছবি ‘রাগ-অনুরাগ’-এ ‘কী গান শোনাব বলো/ ওগো সুচরিতা’ গানে সরগম গাওয়াচ্ছেন, আবার বিকাশ রায় ডাকছেন অ্যান্ডারসন ক্লাবে জল-নাটিকা ‘সমুদ্র মন্থন’-এ গাইতে। উস্তাদজির কাছে আসা অবশ্য পুজোর গান নিয়ে।

উস্তাদ সরোদ কোলে তুলে নিয়ে, চোখ বন্ধ করে বাজিয়ে চলেছেন রাগালাপ। একটু থেমে পুলককে বললেন, ‘‘এ রাগ আমারই তৈরি করা। লিখুন এই রাগেই।’’ কিন্তু গান লিখবেন কী! বাজনার সঙ্গে গুনগুন করে খানসাহেব যে কী গাইছেন, পুলকবাবু ও হৈমন্তীদেবী কিছুই বুঝতে পারছেন না। তারই মধ্যে সুরের চলন, বাঁক ধরে পুলক খসখস করে খাতায় লিখলেন গানের শুরুটা। গানের খাতায় চোখ যেতেই চমকে উঠলেন হৈমন্তী। উস্তাদ আলি আকবরের সুরে লেখা হয়ে গেল চিরদিনের বাংলা গান— ‘স্মৃতিই শুধু থাকে/ স্মৃতিই শুধু থাকে।’ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিনের স্মৃতিতে লিখেছেন, ‘আমাকে কমপ্লিমেন্ট দিল হৈমন্তী, সত্যি পুলকদা, সুরের ওপর গান লেখার আশ্চর্য গুণটা আপনার আছে। এই ভাবেই পর পর বেশ কয়েকটি গান সে বার লিখেছিলাম আলি আকবরের সুরে।’’

অন্য এক দিন। দিন নয়, রাত। রাত-পার্টি জমে উঠেছে উত্তমকুমারের বাড়িতে। উপলক্ষ ‘শঙ্খবেলা’ ছবির কাজ-শেষ। উত্তমের পার্টি মানেই মজলিশি আড্ডা। খানাপিনা। ‘শঙ্খবেলা’-র টিমের সদস্যরা আছেন, মহানায়কের কাছের লোকরাও। হারমোনিয়াম সরে যাচ্ছে ‘উদয়ের পথে’-র অভিনেতা রাধামোহন ভট্টাচার্যের দিকে। রাত গড়াতে ঠুংরি, গজল। এক সময় উত্তম নিজেই হারমোনিয়াম ধরলেন।

শুরুতে রবিঠাকুরের গান, তার পর ‘শঙ্খবেলা’র গান। লতা আর মান্নার সেই চিরদিনের ডুয়েট। ‘কে প্রথম কাছে এসেছি/ কে প্রথম চেয়ে দেখেছি।’ তারিফে জমে উঠল মজলিশ। হারমোনিয়ামের বেলো বন্ধ করতে করতে অননুকরণীয় ভঙ্গিতে হাসছেন উত্তম। হঠাৎ বললেন, ‘‘পুলকমামা দারুণ লিখেছে গান। কিন্তু নিজেই সর্বনাশ করেছে। আমার গলার সঙ্গে মান্না দে’র গলা মিলবে না। গানটা ফ্লপ হবে। দোষ কিন্তু আমার নয়, পুলকমামার।’’

উত্তমের কথা শেষ হতেই যেন তাল কেটে গেল পার্টির। সকলে তাকিয়ে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। পুলকবাবু তখন কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না! পরে লিখেছেন, ‘‘যেন কোনও খুনের বিচার হচ্ছে এমন অবস্থা। কালুদা এক ফাঁকে কানে কানে বললেন, যা খুশি বলুক, শুনবেন না। গান হিট করবেই।’’

সে গান যে আজও হিট, বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘শঙ্খবেলা’ মুক্তি পাওয়ার পরে ভুল ভেঙেছিল মহানায়কের! নিজে পুলকবাবুর কাছ থেকে মান্না দে’র বোম্বের বাড়ির ফোন নম্বর চেয়ে নিয়েছিলেন। নিজের ছবি ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’তে গাইয়েছিলেন। পুলকবাবুকে বলেছিলেন, ‘‘উনি বড্ড আড়িতে গান করেন। লিপ দিতে সুবিধা হয়!’’

Pulak Bandyopadhyay bengali lyricist music composer lyricist পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}