Advertisement
E-Paper

শেয়ার কিনে, সুদে টাকা খাটাতেন শেক্সপিয়র

আগামী কাল তাঁর মৃত্যুদিন। আর গির্জায় দীক্ষিত হয়েছিলেন ২৬ এপ্রিল। জন্মদিন? কেউ জানে না। দুনিয়া শুধু জানে, ৩৭টা নাটক আর ১৫৪টা সনেট লিখেই তিনি প্রায় ঈশ্বর! স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়এই ভাবেই শুরু হয় জন ম্যাডেন পরিচালিত শেক্সপিয়র ইন লাভ (১৯৯৮) সিনেমা। সিনেমার প্লট একেবারেই হলিউডি রোম্যান্টিক ধাঁচার— ভায়োলা ডি লেসপ্‌স নাম্নী এক সুন্দরী, বিদুষী, ধনী কন্যা আর দরিদ্র কিন্তু উঠতি কবি-নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের গোপন লাগামছাড়া প্রেম।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫২
প্রণয়ী: ‘শেক্সপিয়র ইন লাভ’ ছবির দৃশ্য

প্রণয়ী: ‘শেক্সপিয়র ইন লাভ’ ছবির দৃশ্য

লন্ডন, ১৫৯৩। টেমস নদীর দক্ষিণে একটি এলাকা। বদ্যির চেম্বারে কাউচে আধশোয়া হয়ে নাট্যকার উইলিয়ম শেক্সপিয়র। সাপ্তাহিক কনফেশন-এ এসেছেন তিনি। আমাদের ভাষ্যে মনস্তত্ত্ববিদ-থেরাপিস্টের কাছে। খুব হ্যান্ডসাম উইল। নরম গোঁফ-দাড়ি, ঢেউখেলানো বাদামি চুল। মায়াবী চোখে লেগে আছে স্বপ্ন। সে কী! বইয়ের পাতায় বা পোস্টারে যে শেক্সপিয়রকে দেখা যায়, ঠান্ডা, বিষয়ী চোখে মেপে নিচ্ছেন জগৎটাকে, সেই যে ট্রেডমার্কা চওড়া কপাল এবং টাকওয়ালা, তিনি কই? এই উইলের বয়স তো সবে ঊনত্রিশ, তারুণ্যের দীপ্তিমাখা তাঁর মুখ। কিন্তু বেজায় বিমর্ষ কবি। ‘রাইটার্স ব্লক’ হয়েছে তাঁর। কিছু কাল যাবৎ লেখনী স্তব্ধ। কারণ, প্রেরণাদাত্রী মানসী নেই তাঁর হতভাগ্য জীবনে। শিল্পী পুরুষের চাহিদার হালহকিকত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বুদ্ধিমান থেরাপিস্ট স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। ও, এই ব্যাপার! উপদেশ দেন, এই রোগের একটাই উপশম। চুটিয়ে প্রেম। এক্কেবারে রোম্যান্সে ভরপুর, উষ্ণ, মধুর, যৌন-প্রেম।

এই ভাবেই শুরু হয় জন ম্যাডেন পরিচালিত শেক্সপিয়র ইন লাভ (১৯৯৮) সিনেমা। সিনেমার প্লট একেবারেই হলিউডি রোম্যান্টিক ধাঁচার— ভায়োলা ডি লেসপ্‌স নাম্নী এক সুন্দরী, বিদুষী, ধনী কন্যা আর দরিদ্র কিন্তু উঠতি কবি-নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের গোপন লাগামছাড়া প্রেম। ফিল্মের প্লটে, প্রেমের ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে মনমরা উইল। উদ্দাম প্রেমের জোয়ারে তরতরিয়ে চলে নাট্যকারের মনপবনের নাও, আর লেখা হতে থাকে ‘রোমিয়ো অ্যান্ড জুলিয়েট’। সিনেমায়, রোমিয়ো অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকের অবিস্মরণীয় কিছু মুহূর্ত ও প্রেমের পঙ্‌ক্তি ব্যবহার করে টম স্টপার্ড ও জন ম্যাডেন দর্শককে পরিবেশন করেন চমকদার একটি খেলা: শেক্সপিয়রের প্রেমের অভিজ্ঞতা থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে রোমিয়ো অ্যান্ড জুলিয়েট। না হলে কী করেই বা ওই অপূর্ব কোমল রোম্যান্টিক ভালবাসার অভিব্যক্তি সম্ভব?

যুক্তিটি প্রায় অকাট্য মনে হচ্ছে? আসলে শিল্প যে শিল্পীর জীবনেরই অনুগামী। এই বোধের সূত্র উনিশ শতকে রোম্যান্টিক কবি-সমালোচকদের। এমন কথা শুনলে ষোড়শ বা সপ্তদশ শতকের শিল্পীরা হেসে কুটোপাটি হতেন। নেচার বা প্রকৃতি নিশ্চয়ই বড় প্রেরণা, কিন্তু একই রকম গুরুত্ব আর্ট বা শিল্পের। অর্থাৎ শিল্পীর অনুপ্রেরণা হতেই পারে অন্য একটি শিল্পবস্তু। তা সে কবিতা, নাটক, মহাকাব্য, ছবি বা মূর্তি যা-ই হোক না কেন। তাকে নিজের করে নেওয়ার জন্য লাগে শিক্ষা, লাগে অধ্যবসায়। যেমন হয়েছিল শেক্সপিয়রের ক্ষেত্রে।

২৬ এপ্রিল ১৫৬৪-এ স্ট্র্যাটফোর্ডে জন ও মেরির প্রথম সন্তান উইলিয়াম শেক্সপিয়রকে সম্ভবত গ্রামার স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। গ্রিক না হলেও সেখানে লাতিন পড়া হত। অতএব ইয়‌ং উইল-এর পাঠ্যক্রমে বিখ্যাত হিউম্যানিস্ট স্কলার ইরাসমাস, ওভিডের মেটামরফসিস, সেনেকার ট্র্যাজেডি, প্লটাসের কমেডি নিশ্চিত ছিল। এ ছাড়াও তিনি পড়েছিলেন রোমান ইতিহাসবেত্তা প্লুটার্কের গ্রিক ও রোমানদের ‘লাইভস’। পড়ার পদ্ধতিটা এখনকার মতো নয়। পাঠ্য থেকে শিক্ষণীয় যা কিছু, তাকে অনুবাদ ও অনুকরণের মাধ্যমে আত্মস্থ করা। এটাই হয়ে উঠেছিল কবি-নাট্যকার হিসেবে উইলিয়ামের আসল শিক্ষানবিশির জায়গা। কঠিন কিতাব পড়া ছাড়া ছিল ‘কমনপ্লেস বুক’— এক ধরনের নোটখাতা যাতে টুকে রাখা হত লাগসই বাক্যবন্ধ, যা প্রয়োজনে ঝটিতি ব্যবহার করে ফেলা যেত। সুতরাং অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের চৌকাঠ না ডিঙোলেও শেক্সপিয়র নিজের রসদ সংগ্রহ করে নিতে পেরেছিলেন। ইস্কুল পাশ এবং ১৫৮০-এর শেষ দিকে লন্ডন আসার মধ্যে আট বছরের বড় অ্যান হ্যাথাওয়ের সঙ্গে তড়িঘড়ি বিয়ে, এবং তিন সন্তানের বাবা হয়েছেন শেক্সপিয়র। কিন্তু আর কী কাজকম্ম করেছিলেন তার হদিশ নেই। এর পরেই ভাগ্যান্বেষণে লন্ডন চলে যান উইল।

সেখানে থিয়েটার ব্যবসার রমরমা। প্রবল প্রতাপান্বিত মহারানি এলিজাবেথ নিজে নানা ধরনের ‘পারফরমেন্স’ করতে এবং নাটক দেখতে বড্ড ভালবাসতেন। নিজের সভায় হামেশাই ডেকে পাঠাতেন এই সব অভিনেতাদের, নিজের মনোরঞ্জনের জন্য। কিন্তু সেই সময় আমজনতার জন্য তৈরি হয়েছে পাবলিক থিয়েটার। টেমস নদীর দক্ষিণ পাড়ে, ব্যাঙ্কসাইড অঞ্চলে জমে উঠেছে একটা থিয়েটার পাড়া, অন্যটি নদীর উত্তরে, ভদ্দরলোকের পাড়া থেকে একটু দূরে, শহরের রক্ষণাবেক্ষণকারী কর্তামশাইদের চোখরাঙানির বাইরে, শোরডিচ এলাকায়।

দূরে, কারণ থিয়েটারকে মোটেই ভাল নজরে দেখেন না শহরের কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের বক্তব্য, যত রকমের অজাত-কুজাত-ছোটলোকেরাই দাপিয়ে বেড়ায় এই সব থিয়েটার মহলে। মালিকের পরিচয় না থাকলেই তো নটুয়াগুলোকে দু’ঘা দিয়ে জেলে পুরে দেওয়া যায়। তার উপর আছে বেশ্যাদের আনাগোনা। আর সবচেয়ে বজ্জাতি যেটা: বাচ্চা ছেলেগুলোকে নাটকের নারী চরিত্র সাজায়। সরু গলায় ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলে, মেয়েলি ছলাকলা করে। তার পর তাদের সঙ্গেই কত পিরিতির ঢ‌ং!

ইংল্যান্ডে রেনেসাঁস-এর সময়ে স্টেজে মেয়েদের অভিনয়ে বারণ নিয়ে বেশ একটা মজা আছে ‘শেক্সপিয়র ইন লাভ’ সিনেমায়। নাট্যকলার অনুরাগিণী ভায়োলা ছেলে সেজে রোমিয়ো চরিত্রের অডিশনে এসে উপস্থিত হয়। তার অভিনয় ক্ষমতা ও চেহারা দেখে চমৎকৃত উইল প্রথমে এই ছদ্মবেশী নারীর প্রেমে পড়ে, তার পর জানতে পারে তার পরিচয়। ভায়োলা শুধু অভিনয় করতে চেয়েছিল তার প্রিয় নাট্যকারের চরিত্র হয়ে। কিন্তু ধরা যাক নিজেই নাট্যকার হতে চায় এমন কোনও মেয়ে? মনে পড়ে যায়, ১৯২৮-এ দেওয়া, ‘আ রুম অব ওয়ান্স ওন’ নামের একটি ভাষণে ভার্জিনিয়া উল্‌ফ সৃষ্টি করেছিলেন জুডিথ নামে শেক্সপিয়রের এক কাল্পনিক বোনের কথা। সে উইলের মতোই বুদ্ধিমতী, সৃষ্টিশীল। উইলের মতোই সে কবিতা আর নাটক লিখতে চায়, এবং স্বপ্ন দেখে, দাদার মতোই একটা কেরিয়ার গড়ে নেবে। এক রাতে লন্ডনে পালায় সে। কিন্তু হায়, তার কি সে সুযোগ মিলতে পারে! সে তো অল্পবয়সি একটি মেয়ে; খানিক বিদ্রুপ, ঠাট্টা ইত্যাদির পর নাটকের ম্যানেজার নিক গ্রিনের ‘দয়া’ হয়। তার কিছু মাস বাদে গর্ভবতী হয়ে জুডিথ আত্মহত্যা করে এক রাতে। উল্‌ফ লেখেন ‘কে অনুমান করবে কবির হৃদয়ের তীব্র টানাপড়েন, তার কষ্ট ও রাগ, যখন তাকে দুমড়ে মুচড়ে আটকে ফেলা হয়েছে নারীর শরীরের মধ্যে!’

নিজের নাটকে, বিশেষ করে কমেডিতে শেক্সপিয়র এমন সব প্লট তৈরি করতেন যেখানে মেয়ে চরিত্ররা (যারা আদতে বাচ্চা ছেলে) আবার পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। যেমন ‘অ্যাজ ইউ লাইক ইট’ নাটকে রোজালিন্ড চরিত্রটি প্রায় পুরোটা সময় অল্পবয়সি ছেলে হয়েই কাটায়, নাম নেয় গ্যানিমিড, দেবতা জুপিটারের প্রেমিক। এই ছদ্মবেশেই সে নায়ক অরল্যান্ডোর সঙ্গে নিপুণ ভাবে প্রেম করে। সাধে রেগে যেতেন পিউরিটানরা? আরে এ তো আদতে পুরুষ আর কচি ছেলের লটঘট! কোনও রাখঢাকের বালাই নেই।

তবে তাঁদের সাবধানবাণী দর্শকের ভিড় আটকাতে অক্ষম। অনেক মাথা খাটিয়ে বানানো হয়েছে মনোরঞ্জনের এই নতুন স্থাপত্য। লোকজন তখন দেবতা, হুরি-পরি যেমন মানে, তেমনই শয়তান, ডাইনি, ডেভিলেও বিশ্বাস রাখে। তাই রঙ্গমঞ্চটি স্বর্গ, মর্ত, পাতাল— এই তিন ভাগে বিভক্ত। স্টেজের তিন দিক ঘিরে দর্শকের আসন; উপর মহলের কর্তাবাবু অর্থাৎ আর্ল, ডিউক, বড়লোক জ্ঞানী-গুণীদের জন্য দামি সিট। আর নিচু তলার, খেটে খাওয়া মানুষজন, যারা স্টেজ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে, সেই ‘গ্রাউন্ডলিং’-দের জন্য এক পেনি দামের টিকিট।

এ হেন থিয়েটার জগতে এসে পড়লেন স্ট্র্যাটফোর্ডের ছেলে। কারা যেন চাউর করেছিল, প্রথম দিকে থিয়েটারে বড়লোক সাহেবসুবোদের ঘোড়ার দেখভাল করতেন উইল। সেটা মনে হয় গালগপ্পো। আসলে আমাদের স্বভাবটাই ও রকম। যে নাট্যকার এমন অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনি বানায়, তাঁর নিজের জীবনটা পানসে হলে কি মানায়?

তখন প্রতি সপ্তাহে দর্শকদের মনোরঞ্জনের চাহিদা মেটাতে করতে হয় প্রায় তিন-চারটে নাটক। সবই চটজলদি পাবলিক খাবে কি না, সেই চিন্তা মাথায় রেখে। অনেকে মিলে একটাই নাটক লেখা, যাকে বলে ‘কোলাবরেশন’, তা-ও হত হামেশাই। হয়তো সেই কাজেই হাত মকশো করতেন উইল। সেখানে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত নাট্যকারদের কমতি নেই। আছেন জন লিলি, জর্জ পিল, টমাস ন্যাশ, রবার্ট গ্রিন এবং সেই সময়ে শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে খ্যাতির তুঙ্গে যিনি—শেক্সপিয়রের সমসাময়িক ক্রিস্টোফার মার্লো। এক ‘ইউনিভার্সিটি উইট’ রবার্ট গ্রিন, বেজায় খাপ্পা হয়েছিলেন শেক্সপিয়রের ওপর। গাল দিয়েছিলেন, ‘আমাদের ধার করা পালকে সজ্জিত কাক’ বলে। অথচ দু-তিন বছরের মধ্যেই ষষ্ঠ হেনরিকে নিয়ে তিনটে নাটক ও খান তিনেক কমেডি লিখে ফেলেছেন শেক্সপিয়র। সবগুলোই হাউসফুল। আর শিক্ষা ও প্রতিভা সত্ত্বেও পয়সাকড়ির মুখ দেখেননি ইউনিভার্সিটি উইট-দের অনেকেই। কেবল স্টেজের ম্যানেজার, শেয়ার হোল্ডার আর রিচার্ড বারবেজ-এর মতো কিছু তারকা অভিনেতাই মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করেন। আর লেখকদের প্যামফ্লেট ছাপাতে হয়। রোগে ভুগে মরতে হয়।

চোখের সামনে নাট্যকার-লেখকদের এই দৈন্যদশা দেখেছিলেন বলেই কি শেক্সপিয়র ১৫৯৯-এ নিজে ‘লর্ড চেম্বারলেন্স মেন’ বলে নট্ট কোম্পানিতে শেয়ার কিনতে শুরু করেছিলেন? যাতে নিজের পরিশ্রমের মূল্য থেকে কেউ বঞ্চিত না করতে পারে তাঁকে? গ্লোব থিয়েটার, যেখানে অভিনীত হত তাঁর অধিকাংশ নাটক, সেখানেও হিসেবি ছিলেন উইল। টাকাপয়সার ব্যাপারে সাবধানী শেক্সপিয়র কোন ব্যবসায় লগ্নি করতে হয় তা বিলক্ষণ বুঝতেন। তাই নিজের গাঁ-ঘর স্ট্র্যাটফোর্ডে জমিজমা আর কটেজ কিনে তাড়াতাড়ি অবসর গ্রহণ করেছিলেন? শোনা যায়, শেক্সপিয়র নাকি সুদে টাকা ধার দিতেন, আর কিঞ্চিৎ মামলাবাজও ছিলেন।

তবু আমরা তো বিশ্বাস করতে চাই, শেক্সপিয়র তাঁর শেষ নাটক ‘দ্য টেম্পেস্ট’-এর সেই রাজা প্রস্পেরো, প্রকৃতিকে এবং দ্বীপের বাসিন্দাদের যে আপন জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। তাই প্রস্পেরোর বিদায়বাণী ‘লেট ইয়োর ইন্ডালজেন্সেস সেট মি ফ্রি’-কেই আমরা দর্শকদের উদ্দেশে শেক্সপিয়রের টা টা বলে ভাবতে ভালবাসি।

শেক্সপিয়র সব মিলিয়ে সাঁইত্রিশটা নাটক লিখেছিলেন। কী নেই তাতে? যমজ চরিত্র নিয়ে মশকরা, মুখরা নারীকে বশ করা, গাধার মুখোশ পরা গেঁয়ো লোকের সঙ্গে পরিদের রানির প্রেম, বীভৎস খুন, ধর্ষণের পর জিভ এবং হাত কেটে ফেলা, মহাযুদ্ধ, রাজদ্রোহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ইডিপাস কমপ্লেক্সে ভুগে মা’র প্রতি বিষোদ্গার, বাবাকে নৃশংস ভাবে অন্ধ করে দেওয়া, গর্ভবতী স্ত্রীকে পরপুরুষের সঙ্গে লিপ্ত বলে সন্দেহ, কী না আছে তাতে! এই নাটকের সব চরিত্র— নায়ক, নায়িকা, ভিলেন— সবাইকেই তো তিনিই সৃষ্টি করেছিলেন। তার মানে, এই চরিত্রদের বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে তাদের মতো করে ভাবা বা ব্যবহার করা কল্পনা করতে হয়েছিল তাঁকে!

এই নিয়েই চমৎকার লিখেছেন আর্জেন্টিনার লেখক হোর্হে লুই বোর্হেস। ‘ইতিহাসে আছে যে মৃত্যুর কিছু আগে বা পরে শেক্সপিয়র নিজেকে ঈশ্বরের সন্নিকটে দেখতে পেলেন। এবং বললেন ‘আমি, যে এত মানুষ হয়েছি, এখন, হয়তো বা বৃথাই, শুধু এক জন হতে চাই। আমি হতে চাই’। তখন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে দিয়ে ভেসে এল ঈশ্বরের বাণী ‘হে আমার শেক্সপিয়র, আমিও কোনও একক ব্যক্তি নই। আমি পৃথিবীটাকে স্বপ্ন দেখেছি, ঠিক যেমন তুমি স্বপ্ন দেখেছ নিজের কাজের মধ্যে। আমার স্বপ্নের অনেক ফর্মের মধ্যে তুমিও আছ। আমারই মতো যে আদতে অনেক, কিন্তু কেউ নয়’। ‘এভরিথিং অ্যান্ড নাথিং’—সেই কাহিনির নাম দিয়েছিলেন বোর্হেস।

William Shakespeare English poet Birth Anniversary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy