Advertisement
E-Paper

ইতি তোমার বাঘু

ইস্কুলে বিজ্ঞানের ক্লাসটা বেশ জমে উঠেছে। শর্মিষ্ঠা আন্টি খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। গত বুধবার টিফিনের পরের পিরিয়ডে শর্মিষ্ঠা আন্টি ক্লাসে ঢুকতেই ছাত্রীরা উঠে দাঁড়ালে আন্টি বললেন, ‘বসো’।

স্বামী শিবপ্রদানন্দ

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৫ ০০:১১

ইস্কুলে বিজ্ঞানের ক্লাসটা বেশ জমে উঠেছে। শর্মিষ্ঠা আন্টি খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। গত বুধবার টিফিনের পরের পিরিয়ডে শর্মিষ্ঠা আন্টি ক্লাসে ঢুকতেই ছাত্রীরা উঠে দাঁড়ালে আন্টি বললেন, ‘বসো’। ক্লাস ফোর ‘এ’ সেকশনের মেয়েরা পড়াশোনায় বেশ ভাল। তাই সবাই ওদের খুব ভালবাসেন। ‘আজকে তোমাদের জন্য একটা জব্বর খবর আছে।’ শর্মিষ্ঠা আন্টি কথাটা বলামাত্র ছাত্রীদের চোখে প্রশ্ন ঝিলিক দিয়ে উঠল। আন্টি ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলেন, ‘তোমরা হয়তো শুনে থাকবে, অনেক পশুপাখির জীবন এখন বিপন্ন। পৃথিবীতে অনেক পশুর সংখ্যা কমে আসছে। যেমন বাঘ।’ তার পর বলতে থাকলেন, ‘এক দিকে চোরাশিকারির হামলা, অন্য দিকে জঙ্গল আর যত্নের অভাবে বাঘের সংখ্যা তেমন ভাবে বাড়ছে না। তাই এ বিষয়টা সবাইকে জানাতে তোমাদের একটা প্রোজেক্ট করতে হবে। তার নাম ‘সেভ দ্য টাইগার।’ হৃদি ভাবছিল, বাঘকে কী ভাবে বাঁচানো যাবে? বাঘের মুখের কাছে খাবার ধরে দেওয়া যাবে না। অসুখ-বিসুখ করলে ওষুধ দেওয়াও ঝকমারি। তা হলে সমস্যাটা তো থেকেই গেল। অবশ্য দিদিমণির কথায় তার চিন্তার ঘোরটা কেটে গেল। হৃদি আর তার বন্ধুদের বনে-জঙ্গলে যেতে হবে না। চার্ট, ছবি আর সম্ভব হলে মডেলের সাহায্যে বিষয়টাকে ইস্কুলের বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে তুলে ধরতে হবে।

বাঘ বাঁচানোর প্রকল্পের চিন্তা নিয়ে হৃদির গোটা সন্ধেটা কেটে গেল। দিন চারেক আগে হাতি নিয়ে একটা মজার স্বপ্ন দেখেছিল সে। বনু, মানে হৃদির ছোট বোন দ্যুতি ক্লাস ওয়ানে পড়ে। গোটা দিন বনু দস্যিপনা করে। আর সন্ধে হলেই চোখ ঢুলুঢুলু। তার পর তো গভীর ঘুম। প্রতিদিন তাকে ঘুম থেকে তুলে রাতের খাবার খাওয়ানো একটা কষ্টকর ব্যাপার। হৃদির মা সুজাতা অনেক চেষ্টা করে তাকে ঘুম থেকে তোলে। তার পর বাবা চিরন্তনের কোলে চেপে প্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় সে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে। হৃদির এ সব দৃশ্য গা-সওয়া হয়ে গেছে। এক দিন স্বপ্নে হৃদি দেখেছিল, মা, বাবা, এমনকী সেও দ্যুতিকে ঘুম থেকে তুলতে পারছে না। ও মা, শেষে তাদের ফ্ল্যাটে একটা হাতি এসে হাজির। সেও দ্যুতিকে তার শুঁড় দিয়ে অনেক ঠেলাঠেলি করে বিফল হল। দ্যুতির ঘুম সে দিন কিছুতেই ভাঙানো গেল না। অবশেষে লজ্জায় কাঁচুমাচু মুখ করে হাতিটা যখন তাদের ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখনই হৃদির ঘুমটা ভেঙে গেল।

রান্নাঘর থেকে কখন যে মা হৃদির পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, হৃদি তা টের পায়নি। পিঠে আলতো ঠেলা দিয়ে সুজাতা জিজ্ঞাসা করল, ‘কী রে, পড়ছিস না! আনমনে ভাবছিসটা কী?’ হৃদি অস্ফুট স্বরে বলল ‘টাইগার’। সুজাতা মাথামুন্ডু কিছু বুঝতে না পেরে আঁচল দিয়ে হাসি চাপা দিয়ে রান্না ঘরে ফিরে গেল। বাড়ির ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠল হঠাৎ। অন্য দিন হৃদিই আগে ফোন ধরে। আজ তেমন ইচ্ছে হল না। তাকে এখন বাঘে পেয়ে বসেছে। সুজাতা ফোন ধরে দু’একটা কথার পর হঠাৎ খুব হাসতে শুরু করল। হৃদি অনুমান করতে চেষ্টা করল মা কেন হাসছে, কিন্তু কাজটা সহজ নয়। তাই মা ফোন রাখতেই জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি হাসলে কেন মা?’ সুজাতা বলল, ‘তোর বাবার বন্ধু, মানে শুভেন্দুকাকু, তার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, সে বড় হয়ে বিয়ে করবে কি না। তার উত্তরে ছেলে পিন্টু নাকি বলেছে, সে অত বকুনি খেতে পারবে না।’ হৃদি স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাইল, ‘শুভেন্দুকাকুকে কাকিমা খুব বকুনি দেয় বুঝি! কই, তুমি তো বাবাকে বকা দাও না?’ সুজাতা উত্তর খুঁজে পেল না। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডোর বেলটা বেজে উঠল। হৃদি টের পেল, বাবা এসেছে অফিস থেকে। অন্য দিন সে দরজা খুলে দেয়। আজ তেমন হল না। বাঘের চিন্তা আঠার মতো তার গায়ে সেঁটে রয়েছে। বিপন্ন বাঘ কেমন করে বাঁচবে পৃথিবীতে? তার ক্লাসের বন্ধুরা কতটা সফল হবে এই কাজে। চিন্তা গভীর হতেই তারও চোখের পাতা ভারী হয়ে এল। টেবিলে মাথা রেখে ভাবনার পাখনা মেলে দিল হৃদি।

হৃদির হঠাৎ চোখে পড়ল, টেবিলের এক পাশে রাখা আছে একটা ‘বার্থডে ইনভিটেশন কার্ড’। তাড়াতাড়ি সেটা খুলে হৃদি যা দেখল তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ। একটা বাঘ হৃদিকে তার বার্থডে পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। আবার কার্ডের শেষে আন্তরিকতা দেখিয়ে লিখেছে, ‘ইতি তোমার বাঘু’। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হৃদি সঙ্গে সঙ্গে সেজেগুজে রওনা হল। বনুকে সঙ্গে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তাকে ঘুম থেকে তোলা কঠিন কাজ। তাই একাই রাস্তায় যেতে যেতে ভাবছিল, বাঘুর জন্য কী গিফ্ট কেনা যায়। হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয়ে গেল বকুলদির সঙ্গে। বকুলদি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছ হৃদি?’ হৃদি বলল, ‘বাঘু তার বার্থডে পার্টিতে নেমন্তন্ন করেছে। সেখানেই যাচ্ছি।’ বকুলদি তার হাত টেনে ধরে তাকে বাধা দিলেন। বেশ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বকুলদি বললেন ‘যেয়ো না, বাঘের বার্থডে পার্টিতে যে যাচ্ছে, তাকেই বাঘ খেয়ে ফেলছে।’ হৃদি বলল, ‘না না, আমাকে যেতেই হবে।’ বকুলদি শুনে হৃদির হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিলেন। হৃদির শরীরটা কেঁপে উঠল যেন। চিরন্তন তাকে ঠেলা দিয়ে ডাকছে। বাবা হৃদিকে বলছে, ‘দুই বোনে ঘুমের প্রতিযোগিতা লাগিয়েছে যেন!’ হৃদি পড়ার চেয়ার-টেবিল ছেড়ে উঠল বটে, তবে তার মনটা খচখচ করতে লাগল। আপন মনে বিড়বিড় করে বলল, ‘ইস! বাঘুর বার্থডে পার্টিটা মিস হয়ে গেল!’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy