Advertisement
E-Paper

একটা ভয় কষ্ট [লজ্জা]

আমার বান্ধবীর হ্যান্ডসাম দাদার বিয়ে। তিনি সে জমানায় লম্বা-চওড়া ইঞ্জিনিয়র, তায় হেভি চাকরি, বিদেশ যাব-যাব। বোধহয় আরও অনেক এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিও ছিল। ও হ্যাঁ, রংটাও বেশ ফর্সার দিকে। যাকে বলে পারফেক্ট হিরের আংটি। কোথাও বাঁকাচোরা নয়। এ হেন দাদার বিয়েতে আমরা কলেজ-গ্রুপ বাড়িতে সন্ধে-পারমিশন নিয়ে বউভাতের দিন গেলাম।

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৪:০০

আমার বান্ধবীর হ্যান্ডসাম দাদার বিয়ে। তিনি সে জমানায় লম্বা-চওড়া ইঞ্জিনিয়র, তায় হেভি চাকরি, বিদেশ যাব-যাব। বোধহয় আরও অনেক এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিও ছিল। ও হ্যাঁ, রংটাও বেশ ফর্সার দিকে। যাকে বলে পারফেক্ট হিরের আংটি। কোথাও বাঁকাচোরা নয়। এ হেন দাদার বিয়েতে আমরা কলেজ-গ্রুপ বাড়িতে সন্ধে-পারমিশন নিয়ে বউভাতের দিন গেলাম।

গোলাপি বেনারসি পরা এক জন শ্যামলা মেয়ে বউ সেজে বসে রয়েছে। ভারী মিষ্টি। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রচণ্ড হইহই। দাদারা-দিদিরা বলতে লাগল, কী কী মিস করেছি। আমি আসলে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলাম ওদের পরিবারের সঙ্গে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে তখন খুব কোল্ড ড্রিংক খাচ্ছি, হঠাৎ কানে এল, ‘দ্যাখো ছোড়দি, সান্ত্বনা দিয়ো না। ও রকম ছেলে আমাদের। চোখ ফেরানো যায় না। আর দাদা কিনা এক বার ভাবলও না, কেবল গুণবতী মেয়ে দেখে অমন একটা কালো মেয়েকে গলায় ঝুলিয়ে দিল বুবানের। বুবান তো কোনও দোষ করেনি। ও তো বড়দের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিল। তাই বলে ওর বাবা হয়ে দাদা এমন একটা মেয়ে বাছল?’ মাসিমার ফোঁপানোর শব্দ শুনতে পেলাম। আমি দৌড়ে গিয়ে বুবানদার বউকে আরও এক বার দেখে এলাম। বেশ মিষ্টি দেখতে। কোথাও কোনও ঝামেলা নেই। হ্যাঁ, রংটা শ্যামলা। তাতে তো মনে হয় রূপটা আরও খুলেছে।

বুঝলাম মেয়ের শ্যামলা রং নিয়ে বাড়িতে বেশ হইচই চলছে। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করায় বলল, কী করব বল। বড়রা এ রকমই। বাবা-মা দেখতে গিয়েছিল। মা বোধ হয় একটু আপত্তি করেছিল। কিন্তু বাবার বউদিকে খুব পছন্দ হয়েছে বলে আর কিছু বলেনি। সন্ধে বাড়তেই লোকজনের মধ্যে এই গুঞ্জনটা খুব চালাচালি হতে লাগল। অমন কাত্তিক ঠাকুরের কী করে এমন বউ হল! অনেকে বলল, নিশ্চয়ই মেয়ের বাবা পায়ে পড়েছে। কেউ বলল, দেখো বাবা লভ-টভ নয়তো? শুনে এক জন বলল, ধ্যাৎ, বুবান দেখেশুনে এ রকম মেয়ে বিয়ে করবে?

বউভাতের দিন বুবানদার বউয়ের কন্যাযাত্রী আসার পর বুবানদার জন্য দরদ সবার একেবারে উথলে উঠল। সবচেয়ে বড় ঘটনাটা ঘটালেন বড়পিসি। বুবানদার মা তখন চোখে জল নিয়ে বুবানদার বউয়ের পাশে বসে রয়েছে। আমি অন্য পাশে। গিফ্ট রাখছিলাম। বড়পিসি হঠাৎ এক ঘর লোকের মাঝখানে বললেন, ‘বলি, বেয়ান, কোন স্টুডিয়োতে ছবি তুলিয়েছিলেন? ফটোয় তো বোঝা যায়নি মেয়ে এত কালো? আর আমার ভাই-ভাজবউকে ভাল মানুষটি পেয়ে এমন মেয়েকে গলায় ঝুলিয়ে দিলেন তো? কত ছলাকলাই জানেন আপনারা!’ আমি হাঁইহাঁই করে উঠলাম, ‘পিসি, কী যা-তা বলছ?’ আমায় থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তুই থাম দিকিনি বাপু। দু-চার লাইন কলেজ পড়ে তোরা বেশি বুঝে গিয়েছিস? কী ভুল বলেছি আমি? হক কথা বলতে কাউকে ডরাই না।’

বুবানদার বউ পাথর। বুবানদার বউয়ের মা থতমত। দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। দু’এক বার কান্নাচাপা গলায় বললেন, ‘কী বলছেন আপনি। আমরা এ রকম কেন...’ বড়পিসির গলার দাপটে তখন সবাই জড়ো হয়েছে। বুবানদার বউয়ের মা অসহায় ভাবে চার দিকে তাকাচ্ছেন। যেন চোরের দায়ে ধরা পড়েছেন। আমি কিচ্ছু বলতে পারলাম না। কেবল, সেই কান্না, অপমান, লজ্জার ঘরটায় অন্যায়-পক্ষের হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy