Advertisement
E-Paper

ক্ষুদ্র, কিন্তু তুচ্ছ নই

সুযোগ পেলেই কুটুস কুটুস। কাউকে ছাড়ি না। আমাদের কামড় খাওনি কে? এক্ষুনি এসো, একটা দিচ্ছি কুটুস করে। জেনে হোক বা না-জেনে, তোমরাও তো আমাদের মারো পিষে পিষে। আমরা তোমার ঘরের কুটুম অথবা প্রতিবেশী। কত যেন নাম আমাদের। যেমন ধরো, পিঁপড়ে, পিঁপড়া, পিঁপিড়া, পিপীলি, পিপীলিক, পিপীলিকা। আকার, গায়ের রং, অবস্থান ইত্যাদির বিচারে আমরা কেউ লাল পিঁপড়ে, কেউ কালো, কেউ কাঠপিঁপড়ে, কেউ ডেঁয়ো।

রাজীব কর

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩

সুযোগ পেলেই কুটুস কুটুস। কাউকে ছাড়ি না। আমাদের কামড় খাওনি কে? এক্ষুনি এসো, একটা দিচ্ছি কুটুস করে। জেনে হোক বা না-জেনে, তোমরাও তো আমাদের মারো পিষে পিষে। আমরা তোমার ঘরের কুটুম অথবা প্রতিবেশী। কত যেন নাম আমাদের। যেমন ধরো, পিঁপড়ে, পিঁপড়া, পিঁপিড়া, পিপীলি, পিপীলিক, পিপীলিকা। আকার, গায়ের রং, অবস্থান ইত্যাদির বিচারে আমরা কেউ লাল পিঁপড়ে, কেউ কালো, কেউ কাঠপিঁপড়ে, কেউ ডেঁয়ো। আমরা সবাই কিন্তু কামড়ুটে নই, কেউ কেউ খুব নিরীহ। অনেকেই আবার লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকি। তবে হে মনুষ্যগণ, তোমরাও সবাই খারাপ নও। কেউ কেউ আমাদের কথা ভেবেছ, আমাদের নিয়ে লিখেছ। তোমাদের যিনি সবচেয়ে বড় কবি, সেই রবীন্দ্রনাথ কত ছোটবেলায় আমাদের না-খেতে পাওয়ার কষ্ট বুঝেছিলেন। তাই তো লিখে গেছেন— আমসত্ত্ব দুধে ফেলি তাহাতে কদলী দলি/সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে.../হাপুস হাপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ,/পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।

কবি অমিয় চক্রবর্তীও আমাদের প্রতি খুব দরদি ছিলেন। তিনি লিখেছেন দরদভরা কবিতা— আহা পিঁপড়ে ছোট পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুক/কেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা—/স্তব্ধ শুধু চলায় কথা বলা—/আলোয় গন্ধে ছুঁয়ে তার ওই ভুবন ভরে রাখুক,/আহা পিঁপড়ে ছোট পিঁপড়ে ধুলোর রেণু মাখুক।

নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ ছড়াটা তো অনেকেই পড়েছ। সেখানে মৌমাছি, পাখি আর আমাদের কাজকর্মের কথা বলা হয়েছে। ছোট খোকা বলছে— পিপীলিকা পিপীলিকা/দলবল ছাড়ি একা/কোথা যাও, যাও ভাই বলি।

পিপীলিকা অর্থাত্‌ আমাদের এক জন উত্তরে বলছে— শীতের সঞ্চয় চাই/খাদ্য খুঁজিতেছি তাই/ছয় পায়ে পিলপিল চলি।

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কী লিখেছেন, শুনবে? তিনি লিখেছেন— পিঁপড়ে/ভাঁড়ার ঘরে কী করে?/এটা খায় ওটা খায়/ পিঁপড়েনিকে গান শোনায়।

আমাদের বিষয়ে প্রবাদ, ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ কিছু কম লেখা হয়নি। গিরীন্দ্রশেখর বসু তো বিরাশি বছর আগে একটা আস্ত বই-ই লিখে গেছেন। বইটার নাম ‘লালকালো’। ঘোষদের পুরনো ডোবার এক পারে কালো অন্য পারে লালদের বাস। দু’দলের লড়াই নিয়ে এক দারুণ মজার কাহিনি আছে বইটাতে। তোমাদের গর্বের বাঙালি বিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য আমাদের জীবনযাত্রা নিয়ে নিবিড় গবেষণা করেছেন। ‘বাংলার কীটপতঙ্গ’ বইয়ের প্রথম চারটে অধ্যায়ে তিনি আমাদের কথা লিখেছেন। যেমন, ‘শ্রমিক পিঁপড়ের জন্মরহস্য’, ‘পিঁপড়ের বুদ্ধি’, ‘পিঁপড়ের লড়াই’, ‘ক্ষুদে পিঁপড়ের ব্লিত্‌সক্রিগ’। ‘ব্লিত্‌সক্রিগ’ মানে সমরনীতি বা রণকৌশল। গোপালবাবু পদে পদে আমাদের শ্রম, নিষ্ঠা আর বুদ্ধির প্রশংসা করেছেন।

আমাদের বিষয়ে কত জন কত কিছু লিখেছেন। দেশ-বিদেশে কত গবেষণা হয়েছে। সেই সব গবেষণা থেকে এমন তাজ্জব তথ্য পাওয়া গিয়েছে, যা আমরাও জানতাম না। দু’একটা বলি, শোনো। আমরা পৃথিবীর েতরো কোটি বছরের পুরনো বাসিন্দা। সারা বিশ্বে আমাদের মোট সদস্যসংখ্যা প্রায় দশ হাজার ট্রিলিয়ন। ট্রিলিয়ন মানে জানো তো? এক লক্ষ কোটিতে হয় এক ট্রিলিয়ন। আমরা প্রায় সাড়ে বারো হাজার প্রজাতিতে বিভক্ত। জলের নীচে চোদ্দো দিন বেঁচে থাকতে পারি। সারা দিনে মাত্র কয়েক মিনিট ঘুমোই। আমরা কলোনি বানিয়ে অনেকে মিলেমিশে থাকি। কলোনি ছাড়া একক ভাবে থাকতে পারি না। অবশ্য জানি, তোমরা গুণমান এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের প্রসঙ্গ তুলবে। সে যা হোক, আমরা ছোট বলে হেয় কোরো না। আমরা কিন্তু নানা ভাবে জীবজগতের উপকার করি। জীববৈচিত্র রক্ষায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ক্ষুদ্র হতে পারি কিন্তু তুচ্ছ নই। আমাদের কাছ থেকেও শেখার আছে অনেক কিছু। কি, ছোট মুখে বড় কথা বলে ফেললাম না তো?

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy