Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চিংকি

খ্যাঁদা নাক আর খুদে চোখ দেখে বাঙালি তেড়ে আওয়াজ দেয়। বলে, এই নর্থ-ইস্টগুলো পিকুলিয়ার, পোকাখেকো। সেই বাঙালি, পরশু নববর্ষের ক্যামেরায় যে নিজেকে বলবে উদার, অসাম্প্রদায়িক। শমীককুমার ঘোষখ্যাঁদা নাক আর খুদে চোখ দেখে বাঙালি তেড়ে আওয়াজ দেয়। বলে, এই নর্থ-ইস্টগুলো পিকুলিয়ার, পোকাখেকো। সেই বাঙালি, পরশু নববর্ষের ক্যামেরায় যে নিজেকে বলবে উদার, অসাম্প্রদায়িক।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১০
Share: Save:

মিজোরামের থেগা নদী-তীরের লঙ্গটলাই থেকে কলকাতায় কমার্স। ২০ বছরের দু’চোখ উত্তেজনায় ভরা। পু লালবিয়াক জুয়ালা। শহরের নামজাদা কলেজের চাকমা ছাত্রর সঙ্গে মেট্রো-আলাপ।

একটু কথা বলা যাবে...? (প্রশ্নটা করেছিলাম ইংরেজিতেই। কথাবার্তাও, সকলের সঙ্গেই, হয়েছে ইংরেজিতে। এখানে সেগুলো বাংলা করে দিলাম)।

অবাক-তাকানো। যেচে কোনও বাঙালি কথা বলেনি দু’বছরের কলকাতা-জীবনে।

‘আপনারা তো শুধু তাকান, আমরা যেন সব জোকার।’

গোল্ডেন স্পাইক্ড চুল, দু’কানে স্টাড, হাতে গাদা গাদা ব্যান্ড, বড় ফ্রেমের ডার্ক শেডের চশমা, লো-রাইজ বুলেট-শট ডেনিম, ফ্লুরোসেন্ট গ্রিন ফ্লোটার্স।

‘বাঙালি বন্ধু হয়নি। জানেন, চেষ্টা করেছিলাম। বাঙালি মেয়েদের খুব ভাল লাগে। ভেবেছিলাম, বাঙালি প্রেমিকা হবে, তার কাছে বাংলা শিখব...’

কলকাতা ভাল লাগে না?

হালকা হাসি। চোখ বন্ধ হয়ে যায় হাসির রেশে।

‘কে জানে। কলকাতায় এসে নতুন কী পেলাম জানেন? সব সময় পেছনে-লাগা। সবার কাছ থেকে টোন-টিটকিরি-টিপ্পনী। জীবনে কখনও এ রকম ব্যবহার পাইনি। খুব অসুবিধে হত। প্রথম দিকে ভাবতাম, কিছু গন্ডগোল আছে নাকি আমার মধ্যে! অচেনা লোক ইয়ার্কি মারছে, ফিচকে হাসছে, আড় চোখে তাকাচ্ছে! প্যান্টের চেন-ফেন খোলা নয় তো? এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি খেলাটায়।’ মিজো-ব্যবসায়ীর ছোট ছেলে উদাসী।

ও জানে না, আসলে এই খেলাটায় কোনও যুক্তি-নিয়ম নেই। আব্বুলিশ থুড়ি-থুক্কির বালাই নেই। অনর্গল ধাপ্পা, ভরপুর খিল্লি আর দেদার ঠাট্টা এই খেলার জিয়নকাঠি। আমাদের, মানে বাঙালিদের, এ এক প্রিয় গেম। আমরা-ওরা। ওদের রেটে আওয়াজ দাও, ছোট করো। যেখানে পারো, যখন পারো, যাকে পারো, যে দিকে পারো, কারণে-অকারণে হেয় করো, দুয়ো দাও। অন্যকে নিয়ে মশকরার নিরাপদ উল্লাস তারিয়ে চাটো।

আমরা হাঁটতে হাঁটতে কৃষ্ণাঙ্গ দেখতে পেলে বলি, ‘কালুয়া!’ পঞ্জাবিদের বলি, ‘বাঁধাকপি!’ এই মজারু-খেলায় ওই ‘ন্যাপচা’রাও তাই সলিড খোরাক! মোটামুটি ভাবে সব্বারই ধারণা, ‘ওরা’ তো জানে কেবল সেক্স-গিটার-নেশা আর নেশা-গিটার-সেক্স। তাই ওদের দেখলেই মাথায় রাগ চড়ে যায়। ব্যাটারা এখানে কেন? উড়ে এসে জুড়ে বসেছে! বঙ্গ-সংস্কৃতির গোড়ায় পাশ্চাত্য-গ্যামাক্সিন মাখাচ্ছে! কোত্থেকে সব জোটে আমাদের ভাল-ভাষার শহরে।

নামগুলো অবধি উচ্চারণ করা যায় না। বাংলা, ইংরিজি, হিন্দি মিশিয়ে কী যে ছাই বলে, ব্রহ্মাই বোঝেন। সোনার চাঁদ, সোনার টুকরোরা সংরক্ষণের ডিঙায় ভেসে চলে আসে কলকাতায়। এই ইউনিভার্সিটি, ওই কলেজে সাঁটিয়ে ঢুকে হইহই কেতবাজির হুইসিল আর বেলেল্লাপনার সিগারেট ফোঁকে। আমাদের ভরভরন্ত গেরস্তপাড়ায় ভাড়া চায় বাড়ি। আর তার পর, আমাদের সহনশীল ভদ্র স্বভাবের বশে, যেই ওদের এন্ট্রি দিয়ে দিই, তক্ষুনি এক ঘরে বেঁটে-বেঁটে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে সেঁধিয়ে যায় ছি ছি ছো ছো। শুনেছি ওদের দেশে কুকুর শুয়োর পোকামাকড় গেলে বোকার দল ওয়াক থু। যা-নয়-তাই নোংরামি করে সবাই মিলে। ম্যাগো! কী অনাসৃষ্টি!

মুশকিল হল, আমরা এত উদার, এত অসাম্প্রদায়িক, মারধর তো করতে পারি না। কানের গোড়ায় তো আর কষিয়ে দেওয়া যায় না দু-চাট্টি! অতএব সুযোগ পেলেই খেউড়-টিটকিরি দিয়ে পাতলা করো ব্যাটাদের। বাঙালির টি-টোয়েন্টি টিটকিরি গেম-এর এই এপিসোডের নাম, ‘অপারেশন চিংকি!’

পাড়ার মোড়, পানের দোকান, স্টেশন রোড, তরকার দোকান, মেট্রোর কামরা, অটোর লাইন, সিনেমা হল, শপিং মল, বাসের সিট, মাছের বাজার যেখানে চিংকি দেখবে, ঝপাং পেছনে লাগবে, ধুইয়ে দেবে রসিক আওয়াজে। ‘চিংকি! চিংংংং কিইইইই!!’

আমি নিজে বড় হয়েছি চিনে-পাড়ার খুব কাছে। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে জুতো, টেরিটিবাজারের জলখাবার, চিনে পাড়ার রেস্তরাঁর বাইরে চিনে দেখার শুরু স্কুল-জীবন থেকেই। (চিনা থেকেই ‘চিংকি’-র জন্ম। আমাদের দুর্দান্ত সচেতন জানকারির বিশ্বে, নাক খ্যাঁদা ও চোখ ছোট মানেই চিনে। আর চিনে মানেই: চিনেম্যান চ্যাংচুং আরশোলা খায়)।

রকবাজির আদি-দিনে বন্ধুদের সঙ্গে কাঙাল-মাফিক দর্শন করতাম ছোট ছোট প্যান্ট বা মিনিস্কার্ট পরা চিনে সুন্দরীদের। তারা মোপেড বা এম-এইট্টি (তখনও ‘স্কুটি’ আসেনি) চালাত আমাদের কচি-বুকের ওপর দিয়ে। ঝড়। ঝক্কাস। কী ফিগার! কী ফরসা! মনীষা কৈরালার থেকেও। হাত-পাগুলোয় একটাও লোম নেই। পুরো মাখন। চাপা সরু চোখ। পাশ থেকে গোল গোল বড় চোখের জুলজুল বন্ধু অস্ফুটে বলে, সাদা পরোটা মাইরি। বারো ক্লাসের আর এক সহপাঠীর ফোড়ন, সাদা রসগোল্লা বল্ রে।

তখনও চিনে-পাড়ার রেস্তরাঁ ধরা যায়নি মধ্যবিত্ত পকেটমানি দিয়ে। পাড়ার ফুট-দোকান। রোল-চাউমিন-মোগলাই পরোটা-আলুর চপ-ঘুগনি-শিঙাড়া-কচুরি। আমাদের মতোই, সেই দোকানে দল বেঁধে চৈনিক বাহিনীও। আমরা সাইকেলে। সমবয়সি তারা বাইকে। আমরা সঙ্গিনীবিহীন। দেখতাম, চিংকি-সুন্দরীরা চিনে-বন্ধুদের কাঁধে হাত আর হাসির হাওয়া দিচ্ছে। সঙ্গিন অবস্থা আমাদের। দাঁত বের করত দোকানি, ‘কী চুংচুং বাবারা, চাউমিন খাবে নাকি? তা সঙ্গেই তো আছে চাউমিনি-রা। খেলেই হয়।’ তারা হাসত। না-বুঝে। আর আমরা? আরও জোরে হাসতাম। সেটা অবশ্য হিংসের হাসি। ওরা কেন গালর্ফ্রেন্ড পাচ্ছে? খুব চাইতাম, ওই সুন্দরীরা একা একা আসুক রোল খেতে। উঠতি বয়সে ফ্যান্টাসির পাশবালিশ ছিল ফরসা পায়ের মোপেড চালানো চিংকি হিরোইনরাই।

হয়তো সেই আকর্ষণ থেকেই ফেলে আসা পাড়ার এক বন্ধু সিকিমের মেয়ে সোনিয়াকে বিয়ে করে ফেলল। বললে, চিন না হোক, সিকিমই সই। আমরা রসিকতার সময়েও ওই থিয়োরি মেনেই চলি। চিন না জাপান, সিকিম না ভুটান, মেঘালয় না মণিপুর, নাগাল্যান্ড না অরুণাচল প্রদেশ, কী আসে যায়? ওদের ভালনাম: নর্থ-ইস্ট। ওরা কী করে? গিটার বাজায়, ড্রাগ খায়। ওরা ঠিক মানুষ নয়। বখে যাওয়া ভিনগ্রহী।

বাইপাসের ধারে অম্বুজা কমপ্লেক্স। সান্ধ্য পাব-এ দেখা হল ডেভিড কম আর হেজেল ডিয়েংডোহ-র সঙ্গে। যুগলে মেঘালয়ের জোয়াই আর শিলং থেকে পড়াশোনা করতে এখানে। দক্ষিণ কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ। আশেপাশের পাড়ায় বাড়ি ভাড়া পেতে জান কয়লা। লিভ-ইন করার কথা বলে ফেলায় সব দোর সজোরে বন্ধ।

‘আরে, আমাদের বাবা-মায়েদের সমস্যা নেই লিভ-ইনে। সব দায় আর লজ্জা দেখি আপনাদের।’

তার পরে আলাদা ভাড়া থাকা। দুই চিংকির আলাদা সংসার।

‘হাজার শর্ত। রাত করে ফেরা যাবে না, বাড়িতে শুয়োরের মাংস অর্থাৎ পর্ক রান্না করা বা খাওয়া যাবে না। আমরা এক সঙ্গে নিরামিষ-রাতও কাটাতে পারি না। গিটার বাজানোতেও কড়া শাসন। আর আমি ছোট থেকে গান ছাড়া থাকিনি এক দিনও’, চিকচিক করে ডেভিডের ছোট ছোট চোখ।

হেজেল বলেন, ‘রাস্তাঘাটে নোংরা আওয়াজ শুনে বোর হয়ে গেছি। মাথা থেকে পায়ের পাতা চোখ-বোলানোটাও এখন গা-সওয়া। লেখাপড়া শেষ করেই বাড়ি ফিরব। আমরা নিজেদের জায়গাতেই ভাল থাকি। কখনও তো আপনারা জানতে চান না আমরা কী ভাবে বেঁচে আছি। ‘ব্লু পপি’তে মোমো খেতে গেলে রেলা বাড়ে। আর অসমের মেখলা বা খাসি সারং পরলে বেশ অরিজিনাল, নতুন ফ্যাশন। ব্যস। আমাদের খোলা মনে মেনে নেওয়ার মানসিকতাই নেই আপনাদের।’

ডেভিড বলেন, ‘কলকাতা নাকি ভারতের কালচারাল ক্যাপিটাল? তা কথায় কথায় এত কালচার শক লাগে কেন দাদা আপনাদের? আমরা কি ভারতীয় নই, আমাদের পরিচয় শুধু চিংকি?’

কী যে বলে ছোকরা! আরে আমরা বাঙালি জাতি। মাড়ওয়ারিদের মাওড়া, বিহারিদের খোট্টা বলি আজীবন। আমরা জানি পাঁইয়ারা বোকার ডিম, খোট্টারা গবেট, মাওড়ারা চশমখোর। এবং এ জিনিস আমরা শুধু অ-বাঙালিদের মধ্যেও তো আটকে রাখিনি! পাশের মানুষকে বাঙাল-ঘটি বলে ঠেস দিয়েছি নিরন্তর। আর কোথাকার কোন ন্যাপচা! তাদের চিংকি বলব না! সম্মান বিয়োতে হবে! আরে তা-ও যদি হতিস ভাইচুং ভুটিয়া বা লালম পুইয়া। ওরা তরে গেল ফুটবলের বরাতজোরে। নইলে ছাড় পেত নাকি?

ছাড় পেয়ে হাঁপ ছাড়তে, কলেজ ছেড়ে দেবে ভাবছে নাগাল্যান্ডের মেয়ে: কাশ আয়ে।

‘অস্বস্তি হয়। কী যে অপরাধ বুঝি না। চেহারা, নাম, নাকি নিজেদের মতো করে বাঁচার ইচ্ছে। কলেজে বাঙালি-অবাঙালি বন্ধুদের থেকে হাই-হ্যালো কম শুনি, চিংকি বেশি। গান-টান গাইতাম, থিয়েটার করতাম আগে। এখন গুটিয়ে গেছি। নিজের কমিউনিটির মধ্যে থাকি। সেখানে অন্তত আমি আমার মতো। একটু শ্বাস ফেলতে পারি। ফেসবুকেও কোনও বাঙালি বন্ধু নেই। হস্টেলেও। উলটে শুনি আমরাই নাকি কুয়োর ব্যাং। মিশতে জানি না।’

মজার ঘটনা শোনায় কাশ। ‘হর্নবিল ফেস্টিভ্যালের (নাগাল্যান্ডে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত জাঁকজমকওয়ালা সংস্কৃতি উৎসব) আগে হঠাৎ আমার কথা মনে পড়ল কলেজের ক’জন সহপাঠীর। তার আগে কথাও বলেনি। এখন আবদার, কোহিমায় থাকার জায়গা খুঁজে দিতে হবে। দরকার না পড়লে আমরা অচ্ছুৎ। বিদেশের কৃষ্ণাঙ্গদের থেকেও নর্থ-ইস্ট’এর মানুষদের খারাপ ভাবে ট্রিট করে কলকাতা। অবশ্য শুধু কলকাতা কেন, পুরো মেনল্যান্ড ইন্ডিয়া।’

সেইটা অবশ্য বাঙালির, বা বাঙালির শহর কলকাতার ডিফেন্সে বলতেই হবে। শুধু ভারত নয়, ইউরোপ-আমেরিকাতেও, চিনা, জাপানি, থাই, কোরীয়, বার্মিজ— সব্বার বিশেষণ এক সুতোয়। মঙ্গোলীয় চেহারা মানেই চিংক্।

তা হলে? সব পাখি ইয়ে খায় আর মাছরাঙার দোষ হয়! অন্যরা আওয়াজ দিয়ে ফাটিয়ে দেবে, আর আমরা হঠাৎ বাঙালি হয়েছি বলে কোল বাড়িয়ে বলব এসো, দাড়ি ওপড়াও! চিংকিদের হঠাৎ আপন করে নিলে কেলো তো! ‘বক্রা-গেম’এর দি এন্ড। সে কি হতে দেওয়া যায়?

অতএব মৈরাংথেম লেইমা-কে একটু মেপে নেওয়া যাক। মণিপুরের বিশাল ঘর-বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় এয়ার হোস্টেস। পেয়িং গেস্ট। বাড়িওয়ালা ব্রাহ্মণ। ভাড়া দিতে রাজি হয়েছেন বাজার-দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকায়। কোনও বন্ধু আসতে পারবে না বাড়িতে। মদ্যপান, পার্টি নিষিদ্ধ। নিজের ইচ্ছেমত জামাকাপড় পরা যায় না। বেয়ারব্যাক, স্প্যাগেটি নাকচ বাড়িওয়ালির নাক সিঁটকোনোয়। ‘পরাধীনতা মেনে নিয়েছি কারণ এয়ারপোর্ট থেকে বাড়িটা ভীষণ কাছে। মেনে নিতে হচ্ছে পাড়ার ছেলেদের ছোঁকছোঁক। টোন-টিটকিরি। বাড়িওয়ালার ছেলেরও স্পেশাল দৃষ্টি এবং ইঙ্গিত চলেছে। আমাকে চেঁচিয়ে যখন-তখন ‘সেক্সি চিংকি’ বলাই যায়, এটা তার ধারণা। প্রতিবাদ করে লাভ হয়নি।’

বাড়িওয়ালা বলেছেন, মৈরাংথেমেরই দোষ। ওদের সব মেয়েই এ রকম। বাঙালি ছেলেদের মাথা খায় ওই খোলামেলা জামাকাপড় পরে। বশ করে।

মৈরাংথেম মানছেন। ‘বটেই তো। আমারই দোষ। আমাকে আমার মতো থাকতে দেবেন না একটা সভ্য দেশে। সেটা আমারই দোষ তো। এ বার শুনুন। ছেলেটিকে বললাম, আমাকে যদি এতই পছন্দ তো বিয়ে করো। বাবা-মাকে বলো। তা হলে আমিও ভেবে দেখব। তাতে ছেলেটি নাক কুঁচকেছে। বলেছে, মেইতেই জাতির চিংকির সঙ্গে বাঙালি ব্রাহ্মণের বিয়ে কোনও বাবা-মা মেনে নেয়? আর তা ছাড়া, সে বিয়ে করতে চায় কে বললে? বন্ধুদের কাছে শুনেছে, উত্তর-পুবের মেয়েরা বিছানায় ভাল কিতকিত খেলে। তাই একটু চেখে দেখতে চায়, বিনি পয়সায়।’

লুচি দিয়ে বয়েল্ড পর্ক খেতে ভালবাসেন অরুণাচলের টোডু টোডু। কলকাতায় দশ বছর ধরে একটি সংস্থার ম্যানেজার। পরিষ্কার বাংলা বলেন। সকালে বাংলা খবরের কাগজ পড়েন। সন্ধেয় বাগবাজারের চায়ের দোকানে মশগুল আড্ডায় অরুণাচলে চিনের প্রভাব নিয়ে তর্ক করেন। ছেলে সাউথ পয়েন্টে পড়ে। বউ রবীন্দ্রসংগীত গান।

‘যদি আমাকে চিংকি বলেন, আমি বলব জেলে যাবেন। জানেন কেন্দ্রীয় সরকারি কানুন? সহনাগরিকদের অপমানের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের জন্য কড়া আইন হয়েছে। আমাদের সাত রাজ্যের উপজাতিদের কাউকে যদি চিংকি বলেন, খুল্লমখুল্লা, শিডিউল কাস্ট অ্যান্ড শিডিউল ট্রাইব (প্রিভেনশন অব অ্যাট্রোসিটিস) আইনের (২০১২-র সংশোধনী) আওতায় আপনার জরিমানা বা পাঁচ বছর অবধি জেল হতে পারে।’ হা হা করে হাসলেন টোডু।

তা আইন-কানুন থাকুক না আদালতের ঘরে। আপত্তি নেই তো কারও।

নিদো টানিয়া-রা তো দিব্যি মারা যায় রাস্তাঘাটে।

sameekkumarghosh@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE