দিনবদলের সঙ্গে রুচিতেও বদল কম আসেনি। মাল্টিপ্লেক্সে-শপিং মলে বেয়াক্কেলে চড়া দামের কন্টিনেন্টালও হাসিমুখে খেয়ে নিচ্ছে শুক্তো-বাটিচচ্চড়ি দিয়ে ভাত মেখে খাওয়া বাঙালি। এখনকার ছেলেমেয়েরা একঘেয়ে বাঙালি রান্নাতেও নতুনত্ব চায়। তাই বলে বাড়িতেই যে চিনা-জাপানি বা তাই রান্না রাঁধতে হবে, তা নয়। সাধারণ বাঙালি বাড়ির রান্নাকেও একটু ‘ফিউশন’ টাচ দেওয়াই যায়। চেনা রান্নাই মশলা ও উপকরণের হেরফেরে নতুন স্বাদে বদলে দেওয়া রন্ধনশিল্পী সব্যসাচী গড়াইয়ের কাছে জলভাত। ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলির মা-ঠাকুমাদের প্রাচীন রেসিপি খুঁজে বার করে তাতে বাঙালি ছোঁয়া দিয়েছেন অবলীলায়। বাঙালি রান্নার সঙ্গে ভিন্দেশি কুইজ়িনের মিলমিশে নতুন রান্না শেখাচ্ছেন সব্যসাচী। এ বার পুজোয় বাঙালির অতি প্রিয় মটন কষা, ছানার ডালনা রাঁধতে পারেন অন্য ভাবে।
পুরভরা মটন চপের রেজ়ালা
উপকরণ
৪০০ গ্রাম মটন একটু বড় বড় করে পিস করা
১ চামচ আদা-রসুন বাটা১ চামচ কাশ্মিরী লঙ্কার গুঁড়ো
১ চামচ হলুদগুঁড়ো
১ চামচ গরমমশলা
১ চামচ লেবুর রস
নুন স্বাদমতো
পুরের জন্য
২টি সেদ্ধ ডিম
নুন ও গোলমরিচ
পুর ভরা মটন চপের রেজ়ালা। ছবি সূত্র: রন্ধনশিল্পী সব্যসাচী গড়াই।
গ্রেভির জন্য
২ চামচ ঘি বা সাদা তেল
১টি মাঝারি মাপের পেঁয়াজ
১ চামচ আদাবাটা
আধ চামচ রসুনবাটা
আধ কাপ টকদই
৫-৬টি কাজুবাদাম
আধ কাপ দুধ বা ক্রিম
৪-৫টি ছোট এলাচ
১ ইঞ্চি দারচিনির স্টিক
৬-৮টি গোটা গোলমরিচ
১টি তেজপাতা
১ চামচ চিনি
২ ফোঁটা কেওড়ার জল
২ ফোঁটা গোলাপজল
আধ চামচ জায়ফলের গুঁড়ো
প্রণালী
মাংসের টুকরোগুলি ভাল করে পরিষ্কার করে তাতে নুন, গোলমরিচ, লেবুর রস মাখিয়ে এক ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। সারা রাত ফ্রিজে রেখে দিতে পারলে ভাল হয়। রান্নার শুরুতে সেদ্ধ ডিমে নুন ও মরিচ মাখিয়ে সেগুলি অর্ধেক করে কেটে নিন। চাইলে একটি ডিমকে চার ভাগও করতে পারেন। এই ডিমের টুকরোগুলি মাংসের ভিতর পুরতে হবে। কাজেই মাংসের টুকরোর মাপের উপর নির্ভর করবে ডিম ঠিক কী ভাবে কাটবেন।
এ বার মাংসের টুকরোগুলি হাত দিয়ে একটু টেনে তার ভিতরে সেদ্ধ ডিম ভরুন। হালকা কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে স্টাফ করে চপের মতো করে গড়ুন। অথবা টুথপিক ব্যবহার করতে পারেন। এর পর কড়াইতে তেল বা ঘি গরম করে ডিম ভরা মাংসের চপগুলি এ পিঠ ও পিঠ ভাল করে ভেজে নিন। তার পর চপগুলি অভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ১৫-২০ মিনিট রোস্ট করতে হবে।
মাংস যত ক্ষণ রোস্ট হচ্ছে, তত ক্ষণ ঝোল বানিয়ে নিতে পারেন। তার জন্য কড়াইতে তেল বা ঘি দিয়ে তেজপাতা ও গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিন। আঁচ কমিয়ে নাড়তে থাকুন। সুন্দর গন্ধ বার হলে তাতে আদা-পেঁয়াজ ও রসুন বাটা দিন। সমস্ত গুঁড়োমশলা ও জায়ফলের গুঁড়ো দিয়ে মিনিট পাঁচেক নাড়ুন। মশলা কষে তেল ছাড়লে তাতে কাজুবাদাম বাটা দিন। নুন ও মিষ্টি স্বাদমতো দিতে হবে। মশলা কষে গেলে গোলমরিচের গুঁড়ো ও সামান্য দুধ বা ক্রিম মেশান। ঝোল ঘন হবে। পরিবেশনের সময়ে প্লেটে মাংসের চপগুলি রেখে তার উপরে অল্প অল্প করে গ্রেভি ঢালুন। এমন ভাবে ঢালতে হবে, যাতে চপগুলি খুলে না যায়। দেখতে ভাল লাগার জন্য উপর থেকে ধনেপাতা, ভাজা পেঁয়াজ ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
মাশরুমের পুর ভরা ছানার ডালনা
উপকরণ
পুরের জন্য
রাইস পেপার শিট
মাশরুম ছোট ছোট টুকরো করে কাটা
কাঁচালঙ্কা কুচি
পেঁয়াজ-টম্যাটো বাটা
এক কাপ ছানা বা পনির ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নেওয়া
মাশরুমের পুর ভরা ছানার ডালনা। ছবি সূত্র: রন্ধনশিল্পী সব্যসাচী গড়াই।
গ্রেভিরজন্য
২ চামচ সর্ষের তেল বা ঘি
১টি তেজপাতা
১ চামচ গোটা জিরে
১ চামচ আদাবাটা
১ চামচ হলুদগুঁড়ো
আধ চামচ লঙ্কার গুঁড়ো
১ চামচ ধনেগুঁড়ো
২ চামচ টকদই
১ চামমচ চিনি
নুন স্বাদমতো
প্রণালী
সবচেয়ে আগে পুর বানিয়ে নিন। রাইস পেপারগুলি ঠান্ডা জলে ভাল করে ধুয়ে নিন। এ বার কড়াইতে তেল বা ঘি গরম করে তাতে মাশরুম, কয়েকটি পনিরের টুকরো, কড়াইশুঁটি (না-ও নিতে পারেন) ভাল করে ভেজে নিন। এতে পেঁয়াজ, টম্যাটোবাটা ও গুঁড়োমশলা দিয়ে ভাল করে নেড়েচেড়ে নিন। স্বাদমতো নুন ও মিষ্টি দিতে হবে। পুর শুকনো হবে, কাজেই আঁচ কমিয়ে মশলা তৈরি করবেন। এর পর মশলাটি কড়া থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। তার পর রাইস পেপার শিটে ভরে রোল করে নিন। রোলের দুই প্রাপ্ত ভাল করে মুড়ে নিতে হবে, যাতে পুর বেরিয়ে না যায়। এ বার রোলগুলিকে মাঝখান থেকে কেটে নিন।
পুর তৈরি হয়ে গেলে কড়াইতে আবার তেল বা ঘি দিন। তাতে তেজপাতা, জিরে ফোড়ন দিয়ে একে একে দিয়ে দিন আদাবাটা, হলুদগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, ধনেপাতা ও চিনি। আাঁচ কমিয়ে নাড়াচাড়া করুন। এতে টম্যাটো বাটা ও দই দিয়ে কষাতে থাকুন যত ক্ষণ না তেল ছাড়ে। এর পর বাকি পনিরের টুকরোগুলি দিয়ে ২-৩ মিনিট রান্না করুন। অল্প জল দিয়ে ঢেকে দিন। ঝোল ঘন হয়ে ফুটে উঠলে অল্প মাখন দিয়ে নামিয়ে নিন। পরিবেশনের সময়ে পুর ভরা রাইস পেপারগুলি রেখে তার উপর ঝোলটা অল্প অল্প করে দিন। সাজানোর জন্য কাজু, কিশমিশ ও ধনেপাতা ছড়িয়ে দিতে পারেন।