ঈশ্বরের শরবত!
ওড়িশার এক জনপ্রিয় পানীয়কে এ নামেই চেনেন সেখানকার মানুষ। কারণ ওই পানীয় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহকে ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়। যদিও ঈশ্বরের পানীয় একা তাঁর ভোগ্য নয়, এর স্বাদ নিতে পারেন সাধারণেও।
নাম টঙ্কা তোরানি। ভাতকে জারিয়ে নিয়ে তৈরি করা এই পানীয় পুরীর জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ হিসাবে যেমন খাওয়া হয়, তেমনই পুরীর রথযাত্রার সময়ে ভক্তরাও এটি পান করেন। এ ছাড়া নানা উৎসব, অনুষ্ঠান এমনকি, নববর্ষেও টঙ্কা তোরানি পান করার চল রয়েছে ওড়িশায়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ওড়িশার মানুষ বাড়িতেও বানিয়ে নেন ওই পানীয়।
শরবত বললে সাধারণত যা বোঝায় টঙ্কা তোরানি কিন্তু একেবারেই তেমন নয়। মিষ্টির নামগন্ধ নেই। কারণ, এই শরবতে চিনি পড়ে না। বরং এর স্বাদ কিছুটা টক আর কিছুটা ঝালও। প্রতিটি চুমুকে নাকে এসে লাগে নানারকম সতেজ সুগন্ধ। যা মিষ্টির অভাব বোধই হতে দেয় না।

যদিও ঈশ্বরের পানীয় একা তাঁর ভোগ্য নয়, এর স্বাদ নিতে পারেন সাধারণেও। ছবি: ফার্স্ট টাইমার কুক।
ঈশ্বরের পানীয় যখন তার স্বাদ অমৃতের মতো হবে তা অনুমেয়। কিন্তু টঙ্কা তোরানির জনপ্রিয়তা শুধু স্বাদে নয়। জগন্নাথ মন্দিরের ওই মহাপ্রসাদ গুণেও অমৃতসমান। হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন পদ্ধতিতে তৈরি ওই শরবত একদিকে শরীরকে গরল বা টক্সিনমুক্ত করে, আবার গরমে শীতলও রাখে।
শোনা যায়, দশম শতাব্দীতে অর্থাৎ ৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি কোনও এক সময়ে এই পানীয় প্রথম বানানো হয়েছিল। আর তা বানানো হয়েছিল জগন্নাথ দেবের ভোগ হিসাবে দেওয়ার জন্যই। ছাপান্ন ভোগে দেওয়া ভাত ভিজিয়ে রেখে তা থেকে তৈরি করা হত শরবত। আজও জগন্নাথের মন্দিরে সেই ভাবেই তৈরি হয় টঙ্কা তোরানি। যদিও মন্দিরের বাইরে সাধারণ ভাবে তৈরি ভাত দিয়েও ওই পানীয় তৈরি করা হয়।
যেহেতু জারণ করে তৈরি, তাই এই পানীয়ে থাকে ভরপুর প্রোবায়োটিক। যা পেটের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ ছাড়া ওই শরবতে পড়া বাকি উপাদানগুলিও হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে বানাবেন?
উপকরণ:
১ কাপ ভাত
৩ টেবিল চামচ দই
দেড় গাট মাপের আমআদা
৮-১০টি লেবু পাতা
১৪-১৫ টি কারিপাতা
৪-৫টি কাঁচালঙ্কা
৫-৬ টি আড়াআড়ি কেটে নেওয়া লেবুর চাকতি
অর্ধেক লেবু
১/২ টেবিল চামচ ভাজা জিরে গুঁড়ো
স্বাদমতো নুন
প্রয়োজনমতো জল

টঙ্কা তোরানির জনপ্রিয়তা শুধু স্বাদে নয়, জগন্নাথ মন্দিরের ওই মহাপ্রসাদ গুণেও অমৃতসমান। ছবি: ফার্স্ট টাইমার কুক।
প্রণালী: একটি পরিষ্কার মাটির পাত্রে বা যেকোনও পাত্রে ভাত জলে ভিজিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন অন্তত ২০ ঘণ্টা। যথাসময়ে ঢাকনা খুলে পরিষ্কার হাতে জলের সঙ্গে ভাত ভাল ভাবে চটকে নিয়ে তারপরে জল ছেঁকে নিন। তৈরি হয়ে গেল তোরানি।
হামানদিস্তায় আমআদা, লঙ্কা, ৫-৬টি লেবু পাতা, কারিপাতা দিয়ে ভাল ভাবে ছেঁচে নিন।
এবার তোরানির মধ্যে প্রথমে মেশান দই। ভাল ভাবে গুলিয়ে নিয়ে তার মধ্যে দিন ছেঁচে নেওয়া মশলা, অর্ধেক লেবুর রস, ভাজা জিরে গুঁড়ো, লেবুর চাকতিগুলো এবং বাকি লেবুর পাতা।
পরিষ্কার হাতে তোরানির মধ্যে দেওয়া সমস্ত উপকরণ চেপে দিন। তাতে সুগন্ধ আরও বেশি মিশবে পানীয়ে। প্রয়োজন মতো জল দিন। তার পরে মাটির ভাঁড়ে পরিবেশন করুন।