Advertisement
E-Paper

লাউ-চিংড়ির রূপবদল, ভেটকি পাতুরিতে ‘ফিউশন’, বছর শুরুর নতুন রান্না শেখালেন রন্ধনশিল্পী

বাঙালির পরিচিত লাউ-চিংড়ি বদলে গেল লাউপাতা মোড়া চিংড়ি ভাপায়। ভেটকির পাতুরিতে ‘ফিউশন টাচ’। ভিন্‌দেশ থেকে ধার করা রেসিপি নয়, বাংলার সাবেক রান্নাকেই উপকরণের অদলবদল ও পরিবেশনের মুনশিয়ানায় নতুন রূপ দিলেন রন্ধনশিল্পী।

পিনাকী রায়

পিনাকী রায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৪৫
Poila Baishakh special Bengali dishes curated by Chef

নতুন রূপে বাঙালি রান্না, শেখালেন রন্ধনশিল্পী। নিজস্ব চিত্র।

দিনবদলের সঙ্গে রুচিতে কত না বদল এসেছে। মাল্টিপ্লেক্সে-শপিং মলে বেয়াক্কেলে চড়া দামের কন্টিনেন্টালও হাসিমুখে খেয়ে নিচ্ছে শুক্তো-বাটিচচ্চড়ি দিয়ে ভাত মেখে খাওয়া বাঙালি। তবে সারা বছরের অভ্যাস এক, আর বর্ষবরণের দিনটি আর এক।

বৈশাখের প্রথম দিনে চিনা-জাপানি-তাইয়ের লালসা এড়িয়ে বাঙালি তার শিকড়েই ফিরে যেতে পছন্দ করে। থালা সাজিয়ে বাটি চাপা গরম ভাত আর তার চারপাশে থরে থরে সাজানো ব্যঞ্জন সহযোগে ভূরিভোজটি না সারলে বর্ষবরণের আনন্দই বৃথা। তেতো জাতীয় পদ দিয়ে খাওয়া শুরু, আর শেষ পাতে চাটনি-মিষ্টি। তবে ইদানীং বাঙালি ‘ফিউশন’ খাবারে মজেছে। সেই চেনা রান্নাই এ দিক-ও দিক করে, হাতের গুণে আর পরিবেশনের মুনশিয়ানায় সেজে উঠছে নানা ভাবে।

বাঙালির জীবনে বিপ্লব যদি কোথাও ঘটে থাকে, তবে তা রান্নাঘরে। একটা সময়ে বাড়ির গৃহিণীরাই ছিলেন তাবড় রন্ধনশিল্পী। চেনা রান্নাই মশলা ও উপকরণের হেরফেরে নতুন স্বাদে বদলে দেওয়া ছিল তাঁদের কাছে জলভাত। চিংড়িরই কত রকম রান্না, পাবদা, বোয়াল, লইট্যা, চিতলের রকমারি রান্নার তালিকা বানাতে গেলে তা আর শেষ হবে না। অথচ এখন সিলেবাসের বাইরের মেনু হলেই তার গালভরা নাম ‘ফিউশন টাচ’। বাঙালি অনেক আগেই দেখিয়ে দিয়েছে রান্নায় বিপ্লব ঘটানো কাকে বলে। চিংড়ি মাছের রসলাস, ডুমুর দিয়ে কুচো চিংড়ির ঘণ্ট, রুই মাছের মাথা দিয়ে মাসকলাইয়ের ডাল, ঠাকুরবাড়ির রান্নায় মানকচুর জিলিপি, দইয়ের মালপোয়া, চালতা দিয়ে মুগডাল বা আম শোল-সহ অনেক রান্নাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঙালির পাত থেকে বহু ব্যঞ্জন এক সময় হারিয়ে যাবে অনুমান করেই চেনা রান্নারই ভোলবদলের চেষ্টা করছি আমরা। ধরুন না, লাউ চিংড়ির ঘণ্ট, বাঙালি বাড়িতে প্রায়ই রান্না হয়। এই পদটিকেই একটু অন্য ভাবে রেঁধে ও পরিবেশনের ধরন বদলে দিয়েছি মাত্র। তাতেই এর কদর বেড়ে গিয়েছে বহু গুণে। পয়লা বৈশাখে বাঙালির ফিউশন রান্না কিন্তু ভিন্‌দেশের স্বাদ ধার করে হয়নি, বরং বাংলা তার নিজস্ব সহজাত রন্ধনকৌশলকেই খানিক অদলবদল করে যুগধর্মী করে তুলেছে মাত্র।

লাউ ঘণ্টের অন্য রূপ।

লাউ ঘণ্টের অন্য রূপ। নিজস্ব চিত্র।

লাউ ঘণ্টের সঙ্গে লাউপাতায় বাগদা ভাপা

লাউ-চিংড়িরই নতুন সংস্করণ। লাউপাতায় বাগদা চিংড়ির ভাপা মুড়ে দেওয়া হয়েছে আর তার সঙ্গেই গরম ভাতের উপর সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে মুগডাল ভাজা দিয়ে রাঁধা লাউয়ের ঘণ্ট। উপরে মচমচে করে ভাজা চিংড়িটি সাজিয়ে দিলেই হল।

উপকরণ

চিংড়ি ভাপার জন্য

১০টি বাগদা চিংড়ি

২ চা-চামচ সর্ষে বাটা

আধ কাপের মতো নারকেল কোরা

তেল ২ চা -চামচ

নুন, মিষ্টি স্বাদমতো

৩-৪টি লাউপাতা

চিংড়ি ভাজা

২টি বাগদা চিংড়ি

১ চামচের মতো ময়দা

ভাজার জন্য তেল

লাউ ঘণ্টের জন্য

গোটা লাউ কুচি করে কাটা

আধ কাপের মতো মুগ ডাল

নুন, চিনি স্বাদমতো

১ চা-চামচ হলুদ গুঁড়ো

১ চামচ আদাবাটা

১ চামচ কাঁচালঙ্কা বাটা

২টি তেজপাতা

আধ চামচ গোটা জিরে

২টি শুকনো লঙ্কা

১ চা-চামচ সর্ষের তেল

১ চামচ ঘি

ডালের বড়ি

প্রন অয়েল বানিয়ে নিন

১০টা চিংড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে তার মাথাগুলি ধুয়ে নিতে হবে
২ চামচ তেল
১ চামচ আদাবাটা
১ চামচ রসুনবাটা

১ চামচ কাশ্মিরী লঙ্কার গুঁড়ো

নারকেলের দুধের সস্‌

২০০ মিলিলিটারের মতো নারকেলের দুধ

কুচোনো আদা

কুচোনো রসুন

৫টি লেবুপাতা

ধনেপাতা

লাউপাতায় বাগদা ভাপা।

লাউপাতায় বাগদা ভাপা। নিজস্ব চিত্র।

প্রণালী

লাউপাতা ধুয়ে নিয়ে রাখুন। অর্ধেক চিংড়ি নিয়ে তার সঙ্গে সর্ষেবাটা, নারকেল কোরা ও বাকি সব উপকরণ মিশিয়ে নিয়ে, উপরে কাঁচা তেল ছড়িয়ে লাউপাতায় ভাল করে মুড়ে নিন। ১০ মিনিট কম আঁচে ভাপে রান্না করে নিন। ভাজা মুগডাল দিয়ে লাউ ঘণ্ট বানিয়ে নিন। উপরে ছড়িয়ে দিন বড়িভাজা। এ বার প্রন অয়েলের উপকরণগুলি মিশিয়ে কম আঁচে ৪৫ মিনিট রান্না করতে হবে, যত ক্ষণ না লালচে খয়েরি রঙের তেল তৈরি হয়। নারকেলের দুধের সস্‌ও তৈরি করে নিতে হবে একই ভাবে। এ বার নারকেলের দুধের সঙ্গে প্রন অয়েল ২:১ অনুপাতে মিশিয়ে নিলেই রেস্তরাঁর মতো স্বাদ চলে আসবে।

পরিবেশনের জন্য থালায় গোবিন্দভোগ চালের ভাত নিয়ে তার উপরে বড়িভাজা দেওয়া লাউ ঘণ্ট রাখুন। এর উপরে ময়দা দিয়ে কুড়মুড়ে করে ভাজা চিংড়িটি রেখে, পাশে রাখুন লাউপাতায় মোড়া বাগদা ভাপা। এ বার চারপাশ দিয়ে প্রন অয়েল ও নারকেলের দুধের সস্‌ ছড়িয়ে দিন গোল করে। উপরে ধনেপাতা ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

বাঙালির রসনায় ওঠাপড়া তো থাকবেই। আটপৌরে রান্নার পাশাপাশি ভোজবাড়ির রান্নাতেও বাঙালির অভিনবত্ব চোখে পড়ার মতোই। মাছের নানা পদ যদি হয়, তা হলে তো কথাই নেই। ভেটকি মাছের পাতুরি বাঙালি হেঁশেলের খুবই পরিচিত একটি রান্না। একেই একটু অন্য ভাবে করার চেষ্টা করেছি।

ভাপা পোড়া ভেটকি

উপকরণ

মাছ ভাপার জন্য

১০০ গ্রাম ভেটকি মাছ

দু’চা-চামচ কাসুন্দি

১ চামচ কাঁচা আম বাটা

২ চামচ তেল

১ চামচ নারকেলের দুধ

কলাপাতা

নুন ও চিনি স্বাদমতো

আম-কাঁচালঙ্কার চাটনি

৩০০ গ্রামের মতো কাঁচা আম

৫-১০টি কাঁচা লঙ্কা

১০ গ্রামের মতো ভেজানো কিশমিশ

৩০০ গ্রাম চিনি

২ চামচ নুন

৫০ গ্রাম আদাবাটা

ভাপা পোড়া ভেটকি।

ভাপা পোড়া ভেটকি। —নিজস্ব চিত্র।

শিশোপাতার পকোড়ার জন্য

শিশোপাতা

ছোলার ময়দা

শিশিতো লঙ্কা (কোরিয়ার এক ধরনের লঙ্কা)

প্রণালী

ভেটকি মাছ কাসুন্দি, আম বাটা, নারকেলের ক্রিম, নুন, সর্ষের তেল ও সামান্য চিনি দিয়ে ম্যারিনেট করে নিন। এ বার মাছের টুকরো কলাপাতায় মুড়িয়ে ৫ মিনিট ধরে ভাপে সেদ্ধ করুন। ৭৫ শতাংশ রান্না হয়ে এলে সেখানে চারকোল দিয়ে ভাল করে গ্রিল করতে হবে। সোনালি রং ধরলে পাতা সরিয়ে নিন। মাছ ভাপা বার করে তার উপরে লঙ্কা ও নুন ছড়িয়ে রাখুন। এ বার শিশোপাতার পকোড়া ভেজে নিন। কেবলমাত্র পাতার এক পিঠেই ময়দা মাখিয়ে ভাজবেন। এই শিশোপাতা অনেকটা বাংলার পুদিনা বা তুলসীর মতো হয়। ভেষজ উদ্ভিদ, যা খুবই উপকারী। পরিবেশনের জন্য থালায় প্রথমে আম-কাঁচালঙ্কার চাটনি গোল করে ছড়িয়ে দিন। তার উপরে পাতার পকোড়া রাখুন। চাটনিতে পাতাটি আটকে থাকবে। এ বার তার উপরে মাছ ভাপা রেখে উপরে লঙ্কা ছড়িয়ে দিন। চারপাশে নারকেলের ছোট ছোট টুকরো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

Chef Special Bengali Recipes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy