Advertisement
E-Paper

আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক একটি রোগ এসেছে নিয়ানডারথালদের থেকে! প্রমাণ মিলল জিন-গবেষণায়

হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে যে একাধিক প্রাচীন মানব প্রজাতির যৌনমিলন ঘটেছিল, ২০১৩ সালে তা প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই প্রাচীন কাল থেকে প্রাচীন জিন বয়ে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৯:০২
আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের রোগে প্রাচীন জিনের হদিস!

আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের রোগে প্রাচীন জিনের হদিস! —ফাইল চিত্র।

সময়টা আজ থেকে প্রায় দুই কি তিন লক্ষ বছর আগে। পৃথিবীর বুকে তখন চলছে মধ্যপ্রস্তর যুগ। সেই সময় পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত নিয়ানডারথালেরা, মানুষের প্রাচীন পূর্বপ্রজাতি। একইসঙ্গে হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের আবির্ভাবও তখন হয়ে গিয়েছিল। এই দুই মানবপ্রজাতির যৌনমিলনের একাধিক প্রমাণ অতীতেও পেয়েছেন বিজ্ঞানী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। শুধু নিয়ানডারথালদের সঙ্গে নয়, হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে একাধিক প্রাচীন মানব প্রজাতির মিলন ঘটেছে। বিজ্ঞানীরা আগেও আন্দাজ করেছিলেন, প্রাচীন এই সমস্ত জিন এখনকার বহু রোগের উৎস হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেল, আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের একটি মারাত্মক রোগ এসেছে নিয়ানডারথালদের জিন থেকে। প্রাচীন এবং আধুনিক মাথার বহু খুলি ঘেঁটে এই তত্ত্বে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

কী এই মস্তিষ্কের রোগ

বর্তমান সময়ে মস্তিষ্কের গুরুতর একটি রোগে আক্রান্ত হন অনেকে। তার নাম চিয়ারি ম্যালফর্মেশন। এই রোগে আক্রান্ত মানুষের মাথার খুলির আকারের সঙ্গে তাদের মস্তিষ্ক বা ঘিলুর আকার মেলে না। মস্তিষ্কের নীচের অংশ বেড়ে গিয়ে মেরুদণ্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মাথার খুলির পিছন দিকে স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট আকারের অক্সিপিটাল হাড় তৈরি হয়। মাথা ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা এবং আরও অনেক গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে এই রোগে। পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে এক জন চিয়ারি ম্যালফর্মেশনে আক্রান্ত হন।

চিয়ারি ম্যালফর্মেশনে আক্রান্ত মানুষের মাথার গড়ন।

চিয়ারি ম্যালফর্মেশনে আক্রান্ত মানুষের মাথার গড়ন। ছবি: সংগৃহীত।

প্রাচীন মানবের যৌনমিলন

মানুষের পূর্বপুরুষের এমন অনেক প্রাচীন প্রজাতি রয়েছে, যাদের মাথার খুলির আকার আমাদের চেয়ে আলাদা। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় প্রথম দাবি করা হয়েছিল, চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের মূলে রয়েছে এই সমস্ত প্রাচীন মানব প্রজাতির জিন। হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে যে এই ধরনের প্রজাতির যৌনমিলন ঘটেছিল, তা প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই থেকে প্রাচীন জিন বয়ে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তবে এগুলি এত দিন অধিকাংশই ছিল অনুমানের পর্যায়ে।

কী ভাবে এগোল গবেষণা

ফিলিপিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্টিয়োআর্কিয়োলজিস্ট কিম্বারলি প্লম্পের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি এই ধারণাটি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের মতে, এই আন্তঃপ্রজননের উত্তরাধিকার বর্তমানে অনেক জীবিত মানুষের জিনেও শনাক্ত করা যায়। গবেষকদের ওই দলটি মোট ১০৩টি মাথার খুলি নিয়ে কাজ করেছেন। তাতে চিয়ারি ম্যালফর্মেশনে আক্রান্তদের খুলি যেমন ছিল, সুস্থ মানুষের খুলিও ছিল। এর পাশাপাশি প্রাচীন প্রজাতির আটটি জীবাশ্ম খুলিও পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছিল। জীবাশ্ম খুলিতে ছিল নিয়ানডারথাল, হোমো ইরেকটাস, হোমো হেইডেলবারজেনসিসের মতো প্রাচীন মানব প্রজাতির নমুনা।

প্রাচীন মানব প্রজাতি নিয়ানডারথাল।

প্রাচীন মানব প্রজাতি নিয়ানডারথাল। ছবি: সংগৃহীত।

উৎস নিয়ানডারথাল

রোগাক্রান্ত মানুষের খুলিগুলি আকারে ছিল ভিন্ন ভিন্ন। যে অংশে মস্তিষ্কের সঙ্গে মেরুদণ্ডের সংযোগ ঘটে, সে অংশের আকারও আলাদা ছিল। তবে এই ধরনের মাথার খুলির আকারের সঙ্গে একমাত্র একটি প্রাচীন প্রজাতির খুলির মিলই পাওয়া গিয়েছে। সেটা হল নিয়ানডারথাল। গবেষকেরা জানিয়েছেন, হোমো ইরেকটাস, হোমো হেইডেলবারজেনসিসের মাথার খুলির সঙ্গে বর্তমান সুস্থ মানুষের মাথার খুলির অনেক মিল পাওয়া গিয়েছে। এর থেকেই বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, নিয়ানডালথালদের থেকেই আধুনিক মানুষের জিনে চিয়ারি ম্যালফর্মেশন নামক রোগটি প্রবেশ করেছে। অন্য কোনও প্রাচীন মানব প্রজাতির থেকে নয়। এতে ২০১৩ সালের গবেষণার দাবি আরও স্পষ্ট ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল। পাশাপাশি, হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে নিয়ানডারথালের মিলন, প্রজনন এবং জিনগত বিনিময়ে আরও গভীর ভাবে আলোকপাত করল এই গবেষণা।

স্থান-কাল নির্বিশেষে?

সাম্প্রতিক গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনাগুলি নিয়ে আরও কাজ করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। বয়স এবং সময় নির্বিশেষে আধুনিক মানুষ এবং প্রাচীন মানবের মাথার খুলিগুলি আমাদের বলে দিতে পারে চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের সঙ্গে নিয়ানডারথালদের কী সম্পর্ক ছিল। তারাও এই রোগে ভুগত কি না। আজকের মানুষের মতো একই সমস্যা তাদের মাথাতেও হত কি না। বিশ্বের আলাদা আলাদা প্রান্তের মানুষের সঙ্গেও এই নমুনা মিলিয়ে দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। আমরা জানি, আফ্রিকার জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে নিয়ানডারথালদের ডিএনএ কম। তুলনায় নিয়ানডারথাল ডিএনএ বেশি পাওয়া যায় ইউরোপ এবং এশিয়ায়। চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের ক্ষেত্রেও সেই তত্ত্ব মিলে যায় কি না, পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

চিকিৎসায় লাভ

বিজ্ঞানীদের ধারণা, রোগের উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গেলে আগামী দিনে এই রোগের সঙ্গে মোকাবিলা আরও সহজ হবে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য এই রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। অনেকেই আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই রোগকে সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল এবং বিলুপ্ত করে দেওয়া সম্ভব। তবে গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। ফলে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘এই তথ্য আমাদের চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের কারণ জানতে এবং এই রোগকে আরও বিশদে বুঝতে সাহায্য করে। পরবর্তী সময়ে এই রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাতেও এই তথ্যগুলি কাজে লাগবে পারে।’’

Homosapien Neanderthal Human Brain Brain Diseases
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy