Advertisement
E-Paper

মদ হজম করার ক্ষমতা মানুষ পেয়েছে শিম্পাঞ্জি বা গরিলাদের কাছ থেকেই! বলছে গবেষণা

আমেরিকার ডর্টমাউথ কলেজ এবং স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাঁদের গবেষণার ফল ‘বায়োসায়েন্স’ নামে একটি জার্নালে প্রকাশ করেছেন। শিম্পাঞ্জিদের এই গাছের নীচে পড়ে থাকা গেঁজে যাওয়া ফল কুড়িয়ে খাওয়ার প্রবণতাকে বোঝাতে একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন তাঁরা। তা হল— ‘স্ক্রাম্পিং’।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ২০:১২
শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বোনোবো, ওরাংওটাং ও মানুষ নিয়ে গঠিত পরিবারের নাম ‘গ্রেট এপ’।

শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বোনোবো, ওরাংওটাং ও মানুষ নিয়ে গঠিত পরিবারের নাম ‘গ্রেট এপ’। ছবি: সংগৃহীত।

বিয়ার বা হুইস্কি মনুষ্য সভ্যতার ফসল হতে পারে। কিন্তু শিম্পাঞ্জি বা গরিলারাও এক অর্থে ‘পানরসিক’ ছিল! গাছের নীচে পড়ে থাকা পচা বা গেঁজে যাওয়া ফল খেয়েই সুরার স্বাদ মেটাত তারা। সম্ভবত তার সূত্র ধরেই মদ হজম করতে শিখেছে মানুষ। এমনটাই দাবি করা হল সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়।

বিবর্তনের ধারায় আধুনিক মানুষের সব আত্মীয়েরাই আজ বিলুপ্ত। শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বোনোবো, ওরাংওটাং ও মানুষ নিয়ে গঠিত পরিবারের নাম ‘গ্রেট এপ’। মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও, বহুল প্রচলিত ধারণা হল, মানুষের সবচেয়ে কাছের আত্মীয় শিম্পাঞ্জিরা বা গরিলারাই। সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি, সেই শিম্পাঞ্জিরা যে হারে প্রতিদিন পচা ফল খেত, তাতে সামান্য অ্যালকোহল তাদের শরীরে যেতই। আদিম মানুষদের ওই খাদ্যাভাসই আজকের আধুনিক মানুষকে মদ হজম করতে শিখিয়েছে। জিন এতটাই বিবর্তিত হয়েছে যে, সেই সময়ের তুলনায় মানুষ এখন অন্তত ৪০ গুণ বেশি অ্যালকোহল হজম করতে পারে!

আমেরিকার ডর্টমাউথ কলেজ এবং স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাঁদের গবেষণার ফল ‘বায়োসায়েন্স’ নামে একটি জার্নালে প্রকাশ করেছেন। শিম্পাঞ্জিদের এই গাছের নীচে পড়ে থাকা গেঁজে যাওয়া ফল কুড়িয়ে খাওয়ার প্রবণতাকে বোঝাতে একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন তাঁরা। তা হল— ‘স্ক্রাম্পিং’। শব্দটির উৎপত্তি জার্মান শব্দ ‘স্ক্রিমপেন’, যার অর্থ অতিরিক্ত পেকে যাওয়া বা পচা ফল। এখন ব্রিটেনে ‘স্ক্রাম্পি’ বলতে এক ধরনের আপেলের সুরাকে বোঝায়, যার মধ্যে ৬-৯ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে।

গবেষকদের মত, শিম্পাঞ্জি বা গরিলাদের ফল খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অধ্যয়ন হয়েছে। কিন্তু ফল গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া বা মাটি থেকে কুড়িয়ে খাওয়া নিয়ে আলাদা করে কোনও চর্চা হয়নি। ফলে কেন শিম্পাঞ্জিরা ফল কুড়িয়ে খেত, তার কারণ স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু ২০১৫ সালে জিনের বিবর্তন সংক্রান্ত একটি গবেষণার পরেই আদিম মানুষের সুরাপানের অভ্যাস আলোচনার পরিধির মধ্যে এসে পড়ে। বিষয়টি যাতে স্রেফ খাদ্যাভাসের আলোচনায় আটকে না থাকে, সেই কারণেই এই প্রবণতার নাম ‘স্ক্রাম্পিং’ রেখেছেন গবেষকেরা।

২০১৫ সালের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আফ্রিকান এপদের শরীরে অ্যালকোহল হজমের উৎসেচক ছিল। তার থেকেই গবেষকেরা এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছেন যে, তারা নিয়মিত মাটি থেকে ফল কুড়িয়ে খেত। তার কারণ, যে হেতু তারা আকারে বড় হত, তাদের পক্ষে বাঁদরদের মতো গাছে চড়া সম্ভব ছিল না। শিম্পাঞ্জিরাও দিনে অন্তত পাঁচ কেজি ফল খেত। এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ডর্টমাউথ কলেজের অধ্যাপক ন্যাথানিয়েল ডমিনি বলছেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, এত ফল খাওয়ায় শিম্পাঞ্জিদের শরীরে সামান্য হলেও অ্যালকোহল যেত। অতএব, মদ বানানো শেখার আগেই আমরা অ্যালকোহল হজম করতে শিখে গিয়েছি!’’

বন্ধুদের সঙ্গে বা পার্টিতে গিয়ে মদ খাওয়ার যে প্রবণতা আধুনিক মানুষের মধ্যে দেখা যায়, তার উৎপত্তির কারণও শিম্পাঞ্জি বা গরিলারা কি না, তা-ও ভাবাচ্ছে গবেষকদের। সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক ক্যাথরিন হোবায়টার বলেন, ‘‘এখন দেখতে হবে, শিম্পাঞ্জি বা গরিলাদের মধ্যেই একসঙ্গে বসে ফল খাওয়ার চল ছিল কি না। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে, এই প্রবণতাও আধুনিক মানুষ তাদের থেকেই পেয়েছে।’’

Alcohol Apes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy