Advertisement
E-Paper

হাম্পটি ডাম্পটি! নতুন কণা আবিষ্কার সার্নের সুড়ঙ্গ-ল্যাবে

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের সাম্রাজ্যেও এ বার সেই ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’র দেখা মিলল। এই প্রথম। জেনিভার অদূরে, ‘সার্ন’-এর ভূগর্ভস্থ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের এলএইচসি-বি পয়েন্টে। আর চোখের পলক পড়তে না পড়তেই সেই ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’ও কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল! টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেল দু’টি আলোর কণা- ‘ফোটন’-এ। এক লহমারও লক্ষ কোটি ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যেই।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:০০
হাম্পটি ডাম্পটি।- ফাইল চিত্র।

হাম্পটি ডাম্পটি।- ফাইল চিত্র।

এই ‘খবর’টি সার্ন (CERN বা ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন অব নিউক্লিয়ার রিসার্চ)-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় গত ১ এপ্রিল। পরে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়— এটি একটি ‘এপ্রিল ফুল’ স্টোরি। সার্নের মতো কণা-পদার্থবিদ্যায় অগ্রণী গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘খবর’-এর সত্যতা নিয়ে আমাদের মনে কোনও রকম সন্দেহ আসেনি। এমনকী, অনেক সামনের সারির বিজ্ঞানীও এ ‘খবর’টিকে গুরুত্ব দিয়েই গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোঝা গেল, এটি সম্পূর্ণ ভুল, নিছক ‘মজা’ করতেই সার্ন তাদের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করেছিল। আমাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।

‘খবর’টি যা ছিল, নীচে তা অবিকল রেখে দেওয়া হল:

অবিকল ডিমের মতো দেখতে হাম্পটি ডাম্পটি পাঁচিল থেকে আচমকা পড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল! তার খেল খতম হয়েছিল বরাবরের মতো।

রাজার ঘোড়ারা বিস্তর চেষ্টা করেছিল। হাম্পটি ডাম্পটিকে জোড়া লাগাতে খুব কসরৎ করেছিল রাজার সেনারা। তবু টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া হাম্পটি ডাম্পটিকে আর জোড়া লাগানো যায়নি।

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের সাম্রাজ্যেও এ বার সেই ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’র দেখা মিলল। এই প্রথম। জেনিভার অদূরে, ‘সার্ন’-এর ভূগর্ভস্থ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের এলএইচসি-বি পয়েন্টে

‘সার্ন’-এর তরফে জানানো হয়েছে, ২০১২ সালে ‘ঈশ্বর কণা’ বা ‘হিগস্‌ বোসন’ আবিষ্কারের পর কণা-পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই আবিষ্কার যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ।

চোখের পলক পড়তে না পড়তেই ওই ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’ও কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল! টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেল দু’টি আলোর কণা- ‘ফোটন’-এ। এক সেকেন্ডের ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যেই।

পাঁচিল থেকে পড়ে যাচ্ছে ‘হাম্পটি ডাম্পটি’ (বাঁ দিকে) আর শিশুদের সেই ছড়া

বিজ্ঞানীরা সেই ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’র পোশাকি নাম দিয়েছেন- ‘এগেরনস্‌’। যার শরীর আদতে দু’টি গ্লুওন দিয়ে গড়া। যাদের ভর মোটামুটি ভাবে দু’টি প্রোটনের ভরের সমান। অঙ্কের হিসাবে যাদের ভর ১.৮ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট (জিইভি)/ আলোর গতিবেগের বর্গ।

গ্লুওন কী জিনিস?

প্রোটন, নিউট্রনের মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের শরীর গড়ে ওঠে যে ‘অস্থি-মজ্জা’ দিয়ে, তাদের বলে- কোয়ার্ক। মোট ৬ রকমের কোয়ার্ক রয়েছে। আর সেই কোয়ার্কগুলিকে জোরালো বাঁধনে বেঁধে রাখে যারা, তাদের নাম- গ্লুওন। দু’টি গ্লুওন যে বলের জন্ম দেয় তাকে বলে ‘পিওর ফোর্স’ বা ‘পবিত্র বল’।

আরও পড়ুন- ভারতেই কম্পিউটারের গতি বাড়ানো যাবে এ বার অন্তত ১০ গুণ​

আরও পড়ুন- অন্তরে জোড়া ভারী কোয়ার্ক, বিরলতম কণার হদিশ পেল সার্ন​

‘সার্ন’-এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের সেই এলএইচসি-বি পয়েন্ট, যেখানে ধরা দিল ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’। ছবি সৌজন্যে: সার্ন

আজ থেকে ৪০ বছর আগে এই ‘এগেরনস্‌’ কণাদের অস্তিত্বের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল তাত্ত্বিক কণা-পদার্থবিজ্ঞানে। কিন্তু খুবই ক্ষণস্থায়ী বলে কিছুতেই বাস্তবে ‘এগেরনস্‌’দের হদিশ পাওয়া যাচ্ছিল না।

কেন এই কণার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’?

সল্টলেকের ‘ভেরিয়েব্‌ল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার (ভিইসিসি)’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা, বিশিষ্ট কণাপদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বলছেন, লুইস ক্যারলের লেখা বই ‘থ্রু দ্য লুকিং-গ্লাস, অ্যান্ড হোয়াট অ্যালিস ফাউন্ড দেয়ার’-এ একটি চরিত্র ছিল এই হাম্পটি ডাম্পটি। যাকে নিয়ে শিশুদের ছড়াও রয়েছে। সেই হাম্পটি ডাম্পটির চেহারাটা একটু মোটাসোটা। এই ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’রাও প্রোটনের চেয়ে দ্বিগুণ ভারী। ফলে, তাদের চেহারাটাও মোটসোটাই ধরে নেওয়া যায়। তা ছাড়াও, শিশুদের ছড়ার সেই ‘হাম্পটি ডাম্পটি’, যাকে দেখতে অনেকটাই ছিল ডিমের মতো, তার আয়ু ছিল যথেষ্টই কম। পাঁচিল থেকে পড়ে গিয়ে সে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েচিল। হাজারো চেষ্টাতেও যাকে আর জোড়া লাগানো যায়নি। এই ‘হাম্পটি ডাম্পটি কণা’- ‘এগেরনস্‌’-ও খুবই ক্ষণস্থায়ী। তা চোখের পলক পড়তে না পড়তেই দু’টি ফোটন কণায় ভেঙে যায়। আর তাত্ত্বিক ভাবে সম্ভাবনা থাকলেও সেই ভেঙে যাওয়া দু’টি ফোটন কণা থেকে এই ‘এগেরনস্‌’দের আর ফিরিয়ে আনা যায় না।

তার মানে, যে ভাবে এক বার ডিম ভাঙলে তার টুকরোটাকরাগুলিকে জুড়ে বাস্তবে আর কিছুতেই গোটা ডিম বানিয়ে ফেলা যায় না, তেমনই ‘এগেরনস্‌’ ভেঙে যে দু’টি ফোটন কণার জন্ম হয়, তাদের জুড়ে আবার ‘এগেরনস্’ কণা বানানো অন্তত বাস্তবে অসম্ভবই।

এই আবিষ্কার আগামী দিনে কোন গবেষণায় কাজে লাগবে?

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ‘সার্ন’-এর এলএইচসি-বি পয়েন্টের প্রধান জিওভান্নি পাসালোভা ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘রাঁধার সময় তাপমাত্রা বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পদার্থের গুণগত ও রাসায়নিক যে সব পরিবর্তন হয়, একেবারে পারমাণবিক স্তরে তার ধাপগুলি বোঝার কাজটা এ বার অনেক সহজ হয়ে গেল।’’

CERN Humpty Dumpty Particle LHCb Eggerons এগেরনস্‌ হাম্পটি ডাম্পটি কণা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy