Advertisement
E-Paper

আণবিক যন্ত্রের কারিগরদের হাতেই রসায়নের নোবেল

নোবেল কমিটির মতে, এক দিন জঁ পিয়ের সভাজ, ফ্রাসের স্টোডডার্ট এবং বার্নার্ড ফেরিঙ্গা-র কাজও একই ভাবে সমাদৃত হবে। এঁরা আণবিক স্তরে অণুকে সচল করে নানা কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। তৈরি করেছেন নানা আণবিক যন্ত্র। ২০১৬-এর রসায়নে নোবেল পুরস্কার হিসেবে সাত লক্ষ ১৮ হাজার ডলার তিন জনের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। সভাজ ফ্রান্সের নাগরিক। স্টোডডার্ট এবং ফেরিঙ্গা যথাক্রমে আমেরিকা এবং নেদারল্যান্ডের বাসিন্দা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ২০:০৭

কত ছোট যন্ত্র তৈরি করা যায়? এমনই এক প্রশ্ন দিয়ে ১৯৮৪-এর এক বক্তৃতা শুরু করেছিলেন প্রখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফেনম্যান। খালি পা। গোলাপি টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। ফেনম্যানকে এই বিচিত্র পোশাকে দেখলে অবাক হওয়ার কথা নয়। অবাক হতে হয় তার ক্ষুরধার মেধার সামনে। এই বক্তৃতায় তাঁর অতি পছন্দের ‘ন্যানো টেকনোলজি’ নিয়ে মেতেছিলেন। কী ভাবে আণবিক স্তরে যন্ত্র নির্মাণ করা সম্ভব তা নিয়ে নানা পথের কথা আমাদের জানিয়েছিলেন। ভাবিয়েছিলেন। বক্তৃতা শেষে স্বভাবসিদ্ধ টিপ্পনি কেটে বলেছিলেন আগামী ২৫-৩০ বছরের মধ্যেই এ বিষয়ে কিছু হবে। না, ফেনম্যান বৃথা আশা করেননি। তার প্রমাণ, এ বছরের রসায়নে নোবেল পুরস্কার। আণবিক যন্ত্রের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ বছরে যে পুরস্কার উঠল জঁ পিয়ের সভাজ, ফ্রাসের স্টোডডার্ট এবং বার্নার্ড ফেরিঙ্গা-এই তিন বিজ্ঞানীর হাতে।

১৮৩০-এর দশক। উইলিয়াম স্টুর্জেন, জোসেফ হেনরি, আনয়োস জেডলিক, মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ আর চুম্বক নিয়ে নানা কাজ করছিলেন সেই সময়। সেই কাজের সূত্রেই তৈরি হল প্রথম তড়িৎচালিত মোটর। প্রথমে এটিকে শুধু বিজ্ঞানের একটি পরীক্ষা বলেই দেখা হত। বোঝা যায়নি এর অনন্ত সম্ভাবনার কথা। প্রায় ১৮০ বছর পরে সেই মোটর দুনিয়াকেই পাল্টে গিয়েছে। ফ্যান থেকে ফ্রিজে— মোটরের বহুল ব্যবহার বুঝিয়ে দিয়েছে সেই আবিষ্কারের গুরুত্ব। নোবেল কমিটির মতে, এক দিন জঁ পিয়ের সভাজ, ফ্রাসের স্টোডডার্ট এবং বার্নার্ড ফেরিঙ্গা-র কাজও একই ভাবে সমাদৃত হবে। এঁরা আণবিক স্তরে অণুকে সচল করে নানা কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। তৈরি করেছেন নানা আণবিক যন্ত্র। ২০১৬-এর রসায়নে নোবেল পুরস্কার হিসেবে সাত লক্ষ ১৮ হাজার ডলার তিন জনের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। সভাজ ফ্রান্সের নাগরিক। স্টোডডার্ট এবং ফেরিঙ্গা যথাক্রমে আমেরিকা এবং নেদারল্যান্ডের বাসিন্দা।


রসায়নে নোবেলজয়ী ত্রয়ী: পিয়ের সভাজ, ফ্রাসের স্টোডডার্ট ও বার্নার্ড ফেরিঙ্গা

ফেনম্যান তো বলেই খালাস! পরমাণু ইলেকট্রন বিনিময় করে পরস্পর জুড়ে অণু তৈরি করে। কিন্তু আণবিক যন্ত্র তৈরি করতে গেলে এমন ভাবে অণুগুলি জুড়তে হবে যাতে তাদের পরমাণুগুলি বিক্রিয়া করতে না পারে। কাজ চলছিল। কিন্তু সে ভাবে সাফল্য আসেনি। কিন্তু বিজ্ঞানের জগতে অনেক কিছু আকস্মিক ঘটে যায়। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। নিজের গবেষকদল নিয়ে ফোটো-কেমিস্ট্রি সংক্রান্ত কাজ করছিলেন সভাজে। যেখানে সূর্যালোকের সহায়তায় নানা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয়। এমনই এক কাজের পরে তিনি লক্ষ্য করলেন যে পদার্থটি তৈরি হয়েছে সেখানে দু’টি অর্ধচন্দ্রাকৃতি আণবিক রিং একটি তামার আয়নের সঙ্গে আটকে আছে। ইউরেকা! গবেষণার পথই পাল্টে ফেললেন সাভেজ। একটি তামার আয়নের মাধ্যমে দু’টি অণুর পূর্ণ রিং জুড়ে আণবিক শৃঙ্খল বা ‘চেন’ তৈরি করলেন। এগিয়ে চলল গবেষণার কাজ। নম্বইয়ের দশকে একটি রিংকে আর একটির সাপেক্ষে সচলও করে ফেললেন সভাজের দল।

স্টোডডার্ট বড় হয়েছেন খামার বাড়িতে। কম্পিউটার, টিভি ছিল না সেই খামার বাড়িতে। স্টোডডার্ট-এর সময় কাটত জিগ্‌স পাজ্‌ল নিয়ে। যে খেলায় আকারের দিকে নজর রাখতে হয়। নতুন নতুন আণবিক আকার তৈরির ইচ্ছায় রসায়নে স্টোডডার্টের আকর্ষণ। হতে চেয়ে ছিলেন আণবিক ভাস্কর। ১৯৯১-এ স্টোডডার্টের নেতৃত্বে গবেষকরা একটি আণবিক রিংকে একটি আণবিক দণ্ডের সঙ্গে জুড়ে দিলেন। শুধু তাই নয়, অক্ষটি বা দণ্ডটি ধরে রিংটিকে ওঠা-নামা করাতেও সক্ষম হলেন স্টোডডার্ট। এর পরে ১৯৯৪-এ একটা আস্ত লিফট বানিয়ে ফেলল স্টোডডার্টের দল। যা কী না অক্ষ ধরে ০.৭ ন্যানোমিটার ওঠা-নামা করতে পারে। বসে ছিলে না সভাঝের দলও। ২০০০-এ আণবিক পেশি তৈরি করে ফেললেন। যা কি না চেনা পেশির মতোই সঙ্কুচিত-প্রসারিত হতে পারে। এমনকী, আণবিক কম্পিউটার চিপও বানিয়ে ফেললেন। সিকিলন চিপের থেকে যা অনেক অনেক সূক্ষ্ম।

আর আণবিক মোটর তৈরির কাজটা করলেন ফেরিঙ্গা। ১৯৯৯-এ আণবিক মোটরকে এক দিকে ঘোরার পন্থা আবিষ্কার করে ফেললেন ফেরিঙ্গা। কিন্তু ঘূর্ণনের শক্তি তেমন ছিল না। ক্রমেই মোটরের শক্তি বাড়াতে থাকলেন ফেরিঙ্গা। ২০১১-এ এই মোটরের ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে বেড়ে দাঁড়াল ১ কোটি ২০ লক্ষ ঘূর্ণন। এই রকম চারটি মোটরকে জুড়ে ২০১৪-এ একটি ন্যানো গাড়িই তৈরি করে ফেললেন ফেরিঙ্গা। এই ভাবেই এই তিন বিজ্ঞানীর হাত ধরে ন্যানো-প্রযুক্তির অনন্ত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল।

কবরে শুয়ে বুঝি মুচকি হাসছেন ফেনম্যান!

আরও পড়ুন- বস্তুর আজব চালের ব্যাখ্যা তিন দশক আগেই

Chemistry Nobel Prize Winners Chemistry Nobel Award, 2016 Chemistry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy