জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই ধ্বংস হয়ে যায় কাজ়াকস্তানের জনবসতি। ছবি: আইস্টক।
মধ্য এশিয়ার ইতিহাস, মোঙ্গলদের ইতিহাস, চেঙ্গিজ খানের ইতিহাসকে আবার নতুন করে লেখার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ কাজ়াকস্তান, উজ়বেকিস্তান, কিরগিজ়স্তানের প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংসের পিছনে মোঙ্গল অধিপতি চেঙ্গিজ খানের ভূমিকা ছিল বলেই এত দিন ইতিহাস বলে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা অন্য কথা বলছে। ইংল্যান্ডের লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, চেঙ্গিজের আক্রমণ নয়, বরং জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলেই ধ্বংস হয়ে যায় এই এলাকার জনবসতি, সভ্যতা। এর ফলে চেঙ্গিজের ইতিহাস আবার নতুন করে লিখতে হবে বলেও অনেকের ধারণা। হয়তো তাতে বদলে যেতে পারে এই শাসকের বিধ্বংসী ভাবমূর্তিও।
মধ্য এশিয়ার আমুদরিয়া এবং সিরদরিয়া নদীর পলি গঠিত ভূমিতে এই জনবসতি গড়ে উঠেছিল। ত্রয়োদশ শতকে এই এলাকার জনবসতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পিছনে মোঙ্গল অধিপতি চেঙ্গিজ খানের ভূমিকার কথাই বলে ইতিহাস। মনে করা হত, চেঙ্গিজের আক্রমণের ফলে এখান থেকে মানুষ পালিয়ে যায় এবং ব্যাপক লুঠতরাজের ফলে সব কিছু ভেঙে পড়ে। কিন্তু সেই তত্ত্বকেই নাকচ করে দিচ্ছে বর্তমান গবেষণা। দেখা গিয়েছে, ত্রয়োদশ শতক নাগাদ এই এলাকায় জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়। ফলে সব নদী শুকিয়ে যায়। সেই কারণেই বাসিন্দারা এলাকা পরিত্যাগ করে।
নদী-ইতিহাস বিশেষজ্ঞ মার্ক ম্যাকলিনের মতে, ‘‘সপ্তম এবং অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আক্রমণ এই সভ্যতা খুব সহজেই সামলেছিল। আক্রমণ বন্ধ হওয়ার পরে যারা পালিয়ে গিয়েছিল, তারা আবার এই এলাকায় ফিরে আসে। কারণ তখন এলাকাটি খুবই উর্বর ছিল। কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দীর পরে তা আর হয়নি।’’
এই গবেষণাপত্র বলছে, মধ্য এশিয়ার এই এলাকার সেচব্যবস্থা থেকেই অনুমান করা যায়, ব্যাপক খরার কারণে গোটা এলাকা শুকিয়ে গিয়েছিল। চাষের জমিতে কোনও ভাবেই জল পৌঁছনো সম্ভব হত না। তাই শেষ পর্যন্ত মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।
ব্যাপক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বার বার মানবসভ্যতার যাত্রাপথে বদল এসেছে। যার অনেকগুলোই এখনও অজানা। অনেকগুলোর দায়ই এ ভাবে বহিঃশত্রুর আক্রমণ বা অন্যান্য মানবিক কার্যকলাপের উপর চাপানো হয়েছে। আগামী দিনে পরিবেশ সংক্রান্ত গবেষণার কাজ এগলে ইতিহাসের এমন অনেক না জানা অধ্যায়ের উপর আলোকপাত হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy