Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
COVID-19

ভাইরাস বনাম ভাইরাস! জ্বরজ্বালা, সর্দি-কাশির ভাইরাস রুখতে পারে করোনা, দাবি গবেষণায়

ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে, ‘রাইনোভাইরাস’ রুখতে পারে দেহে করোনাভাইরাসের বৃদ্ধি।

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ১৩:৩১
Share: Save:

মানব দেহকোষে সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে জব্দ করতে পারে, অকেজো করে রাখতে পারে এমন একটি ভাইরাসের কথা জানা গেল। তার নাম ‘রাইনোভাইরাস’। এই ভাইরাসের জন্যই আমাদের সামান্য জ্বরজ্বালা, সর্দি,কাশি, গলা খুসখুস, গলাব্যথা হয়।

ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণা এই খবর দিয়েছে।

গবেষকরা দেখেছেন, এর ফলে আমাদের সামান্য জ্বরজ্বালা, সর্দি, কাশি, গলা খুসখুস, গলাব্যথা যত দিন থাকে তত দিন আমাদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

গবেষণা জানিয়েছে, একই সময়ে দু’টি ভাইরাস মানব দেহকোষে ঢুকলে প্রাথমিক ভাবে সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে এক রকম জব্দই করে রাখে রাইনোভাইরাস। খুব দ্রুত নিজেকে বহু করার কাজ শুরু করে দেয় রাইনোভাইরাস। আর তখন সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে সে বহু হয়ে ওঠার সুযোগটাই দেয় না। ফলে, মানব দেহকোষে ঢুকেও কিছু দিনের জন্য কার্যত নিষ্ক্রিয়ই হয়ে থাকতে বাধ্য হয় সার্স-কভ-২। সেই সময় যত রকমের দাপাদাপি সম্ভব সে সব চালিয়ে যায় রাইনোভাইরাসই।

এর আগে বিভিন্ন সংক্রমণের ঘটনায় দেখা গিয়েছে, এমন অনেক ভাইরাস রয়েছে, যারা একই সময়ে মানবশরীরে ঢুকে একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। সেই সব ভাইরাসই মানব দেহকোষে একই সঙ্গে বংশবৃদ্ধি করে, নিজেদের মতো করে। আলাদা আলাদা কৌশলে। তারা কেউ একে অপরের বংশবৃদ্ধিতে বাধা দেয় না। যেমন ‘অ্যাডিনোভাইরাস’। এরা মানব দেহকোষে অন্যান্য ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান করে।

কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও রাইনোভাইরাস এ ব্যাপারে খুবই ‘হিংসুটে’। তারা মানব দেহকোষে ঢুকলে অন্য কোনও হানাদার ভাইরাসকে বংশবৃদ্ধি করতে দেয় না।

রাইনোভাইরাসের ভূমিকা বুঝতে গবেষকরা কৃত্রিম ভাবে মানুষের একটি শ্বাসনালী বানিয়েছিলেন। তার মধ্যে একই সময়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন রাইনোভাইরাস ও সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে। তার পর দু’টি ভাইরাসই যাতে মানব দেহকোষে অবাধে বংশবৃদ্ধি করতে পারে তার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

গবেষকরা দেখেন, মানব দেহকোষে দু’টি ভাইরাস ঢোকানোর পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় শুধুই বংশবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে রাইনোভাইরাস। স‌েই সময় সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে সে বংশবৃদ্ধি ঘটাতেই দিচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর দেখা যায় বিপরীত ছবি। পরের ২৪ ঘণ্টায় বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে সার্স-কভ-২। কিন্তু তার পরেই সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে ঝাড়ে বংশে মানব দেহকোষ থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেয় রাইনোভাইরাস। ফলে, গোটা পর্বেই মানবশরীরের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটে রাইনোভাইরাসের জন্য। সেখানে কিছুই করার থাকে না সার্স-কভ-২ ভাইরাসের।

মূল গবেষক গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাবলো মুর্সিয়া বলেছেন, ‘‘আমাদের গবেষণা দেখাল রাইনোভাইরাস সংক্রমণের পর মানব দেহকোষের যে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তা সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে বংশবৃদ্ধি ঘটাতে দেয় না। ফলে সেই সময় করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনাও কমে যায়।’’

গবেষকরা অবশ্য এ-ও জানিয়েছেন, এই লড়াইটা অবশ্য সাময়িক। কারণ রাইনোভাইরাস মানবশরীরে খুব বেশি দিন সক্রিয় থাকতে পারে না। তাই আমাদের আমাদের সামান্য জ্বরজ্বালা, সর্দি,কাশি, গলা খুসখুস, গলাব্যথা বেশি দিন স্থায়ীও হয় না। তার পর কিন্তু সার্স-কভ-২ ভাইরাসের হানা জোরালো হয়ে ওঠে।

গবেষকদের মতে, এই বিষয়টিকে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে কাজে লাগানো যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE