Advertisement
E-Paper

পৃথিবীর মতোই তুমুল ধুলোঝড় হয় শনির চাঁদে, প্রাণের সম্ভাবনা জোরালো

‘নীল গ্রহ’ পৃথিবী আর ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের পর এই প্রথম এমন ধুলোঝড়ের হদিশ মিলল এই সৌরমণ্ডলের ‘বলয় গ্রহ’ শনির বৃহত্তম চাঁদ টাইটান-এও।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৪০
ভযঙ্কর ধুলোর ঝড় শনির চাঁদ টাইটান-এ। ছবি-নাসা।

ভযঙ্কর ধুলোর ঝড় শনির চাঁদ টাইটান-এ। ছবি-নাসা।

প্রাণের সম্ভাবনা আরও জোরালো হল শনির বৃহত্তম চাঁদ টাইটান-এ। হদিশ মিলল প্রাণ সৃষ্টির সহায়ক প্রচুর জৈব অণুর। টাইটানের বিষূবরেখা অঞ্চলে বয়ে চলেছে ভয়ঙ্কর ধুলোঝড়। আর ওই জৈব অণুগুলি ভেসে রয়েছে সেই ধুলো

‘নীল গ্রহ’ পৃথিবী আর ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের পর এই প্রথম এমন ধুলোঝড়ের হদিশ মিলল এই সৌরমণ্ডলের ‘বলয় গ্রহ’ শনির বৃহত্তম চাঁদ টাইটান-এও।

মৃত্যুর আগে নাসার পাঠানো ‘ক্যাসিনি’ মহাকাশযান যে ছবি পাঠিয়ে গিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ভয়ঙ্কর ধুলোঝড় বয়ে চলেছে শনিরা চাঁদ টাইটানের বিষূবরেখা অঞ্চলে।

মরা চাঁদ নয় টাইটান!

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এর ২৪ সেপ্টেম্বর সংখ্যায়। ক্যাসিনির পাঠানো ছবি জানাচ্ছে, শনির বৃহত্তম চাঁদের বায়ুমণ্ডল রয়েছে। আর তা মোটেই অচল, স্থবির নয়। মূল গবেষক ফ্রান্সের পারি দিদেরঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সেবাস্টিয়েন রড্রিগুয়েজ বলেছেন, ‘‘টাইটান মোটেই মরা চাঁদ নয়। তার বায়ুমণ্ডল, তার পিঠ (সারফেস)-এ রদবদল ঘটে চলেছে নিয়মিত ভাবে। অনেকটা, পৃথিবী ও মঙ্গলের মতোই তার ‘মাটি’। টাইটানে হাইড্রোকার্বনের জীবনচক্রটিও অনেকটাই পৃথিবী, মঙ্গলের মতো। এই সব আগেই জানা ছিল। এ বার জানা গেল, যেমন ধুলোঝড় হয় পৃথিবী, মঙ্গলে, টাইটানকে তেমনই ভয়ঙ্কর ধুলোঝড়ের ঝাপটা সইতে হয়। বিশেষ করে, তার বিষূবরেখা অঞ্চলে।’’

ধুলোর ঝড় টাইটান-এ। দেখুন নাসার ভিডিয়ো

আরও পড়ুন- প্রাণের খোঁজে শনির চাঁদে সাবমেরিন পাঠাচ্ছে নাসা, দেখুন ভিডিও​

আরও পড়ুন- মিথেনেরই সমুদ্রে ভাসছে শনির চাঁদ টাইটান! মিলল প্রমাণ​

পৃথিবীর সঙ্গে কোথায় মিল টাইটানের, কোথায় গরমিল?

আচার-আচরণের নিরিখে টাইটান এই সৌরমণ্ডলে আমাদের ‘নীল’ গ্রহের খুব কাছাকাছি। পৃথিবীর পর এত পুরু বায়ুমণ্ডল টাইটান ছাড়া এই সৌরমণ্ডলের আর কোনও গ্রহ, উপগ্রহে এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর সঙ্গে আরও একটা ব্যাপারে খুব মিল রয়েছে শনির এই বৃহত্তম চাঁদটির। তরল হাইড্রোকার্বনের সাগর, মহাসাগরগুলি রয়েছে টাইটানের পিঠেই। তাদের হদিশ পাওয়ার জন্য টাইটানের অন্দরে ঢোকার প্রয়োজন নেই।

পৃথিবীর সঙ্গে শুধু একটা ব্যাপারে মিল নেই টাইটানের। আমাদের সাগর, মহাসাগরগুলি ভরা তরল জলে। আর টাইটানের সাগর, মহাসাগরগুলি ভেসে যাচ্ছে তরল মিথেন ও ইথেনের মতো অথৈ হাইড্রোকার্বনে। তাপমাত্রা বাড়লে সেই মিথেন, ইথেনের মতো তরল হাইড্রোকার্বনগুলি বাষ্পীভূত হয়ে উঠে যায় টাইটানের বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে। সেখানে পৌঁছে সেগুলি মেঘের জন্ম দেয়। সেই মেঘ যথেষ্ট ভারী হয়ে উঠলে, তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে টাইটানের বুকে। আমরা যা দেখতে অভ্যস্ত, সেই জলের বৃষ্টি নয়। তা হাইড্রোকার্বনের বৃষ্টি। মিথেন, ইথেনের বৃষ্টি। টাপুরটুপুর নয়। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি।

২০০৩ থেকে ২০১৩: টাইটান-এ যে ভাবে ধুলোর ঝড় দেখেছিল ‘ক্যাসিনি’।

কেন তুমুল ঝড় হয় টাইটানের বিষূবরেখা অঞ্চলে?

আমাদের গ্রহে যেমন ঋতু আছে, শীতে ঠান্ডা পড়ে, গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমে কাহিল হতে হয়, বসন্তে মন উড়ু উড়ু, তেমনই বিভিন্ন ঋতুতে বদলে যায় টাইটানের বায়ুমণ্ডল, আবহাওয়া। সূর্য যখন টাইটানের বিষূবরেখা অঞ্চল দিয়ে যায়, তখন তার নিরক্ষীয় এলাকাগুলির আকাশে প্রচুর মেঘ জমে। মিথেনের মেঘ। ঝড় ওঠে। মিথেনের বৃষ্টির মতো সেটাও মিথেনের ঝড়। টাইটানের পাশ দিয়ে বার বার যেতে যেতে ক্যাসিনি সেই ঝড় দেখেছিল। আর তার অজস্র ছবি তুলে পাঠিয়েছিল নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরিতে।

২০০৯ সালে ক্যাসিনি যে ছবিগুলি পাঠিয়েছিল, তা বিশ্লেষণ করে গবেষকদের ধারণা হয়েছিল, ওই ঝড় সম্ভবত মিথেনেরই, জানিয়েছেন মূল গবেষক রড্রিগুয়েজ। কিন্তু পরে তাঁদের ভুল ভাঙে।

‘‘বুঝতে পারি ওই ঝড়টা আসলে ধুলোর ঝড়। আর সেই ধুলোটা উঠে আসছে টাইটানের পিঠের পাহাড় আর বালিয়াড়িগুলি থেকে’’, বলছেন রড্রিগুয়েজ। গবেষকরা সেই ধুলোয় প্রচুর পরিমাণে জৈব অণুরও হদিশ পেয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘সূর্যালোক পড়ে মিথেন অণু ভেঙেই ওই জৈব অণুগুলির জন্ম হয়েছে।’’

নিয়মিত রদবদল ঘটছে টাইটানের পাহাড়, বালিয়াড়িতে

এই ধুলোঝড় থেকেই গবেষকদের ধারণা আরও জোরালো হয়েছে, টাইটানের পিঠে পাহাড় ও বালিয়াড়িগুলির প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে নিয়মিত ভাবে।

পরিবর্তনই তো জীবনের সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ!

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা।

Titan Dust Storms Cassini spacecraft টাইটান ধুলোঝড়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy