Advertisement
E-Paper

আদিম মানুষের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুম্বন করেছিল অন্য এক প্রজাতির নিকট আত্মীয়েরা! জোরালো দাবি বিজ্ঞানীদের

আধুনিক মানুষের আমলে চুম্বনের আবির্ভাব হয়নি। এর আবির্ভাব হয়েছে আরও অনেক আগে। আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হওয়ার লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল চুম্বন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬
আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের অনেক আগেই চুম্বনের আবির্ভাব হয়েছে। দাবি গবেষকদের।

আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের অনেক আগেই চুম্বনের আবির্ভাব হয়েছে। দাবি গবেষকদের। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

আজ থেকে প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে ওরা। ওদের বিলুপ্তির নেপথ্যে যে সম্ভাব্য কারণগুলিকে দায়ী করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল আদিমানবদের সঙ্গে এদের শারীরিক মিলন। কথা হচ্ছে, আদিমানবের নিকটাত্মীয় নিয়ানডারথালদের নিয়ে। ‘হোমো’ গণের এই প্রজাতির সঙ্গে যে আদিমানবদের শারীরিক মিলন হয়েছিল, তা আগেই জানা গিয়েছে। তবে তারা কি চুম্বনও করত? সেই ধোঁয়াশা কাটল সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-এর আবির্ভাব হয়েছে আজ থেকে প্রায় তিন লক্ষ বছর আগে। কিন্তু চুম্বনের আবির্ভাব হয়েছে তারও বহু আগে। এমনটাই দাবি গবেষকদের। তাঁদের মতে, চুম্বনের আবির্ভাব হয়েছে আজ থেকে প্রায় ২ কোটি ১৫ লক্ষ বছর থেকে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ বছর আগে। ‘গ্রেট এপ’দের কোনও পূর্বপুরুষের মধ্যেই প্রথম এই চুম্বন হয়েছিল। এই ‘গ্রেট এপ’দের মধ্যে গরিলা, শিম্পাঞ্জিদের মতো পড়ে ‘হোমো’ গণও। বর্তমানে ‘হোমো’ গণের একটিই প্রজাতি টিকে রয়েছে পৃথিবীতে— আধুনিক মানুষ। ওই একই গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়ানডারথালদের মধ্যেও সম্ভবত চুম্বনের প্রচলন ছিল। আদিমানবদের সঙ্গে তাদের শুধু শারীরিক মিলনই হয়নি, হয়েছে চুম্বনও।

নিয়ানডারথালেরা কেন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, আদিমানবদের সঙ্গে শারীরিক মিলনের ফলে নিয়ানডারথালদের জিনগত ধারা ধীরে ধীরে আধুনিক মানুষের মধ্যে মিশে যায়। যদিও এটিই তাদের বিলুপ্তির কারণ কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে বসবাসকারী আধুনিক মানুষের ডিএনএ-তে এখনও নিয়ানডারথালের জিনের ধারা পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্ট, নিয়ানডারথালদের সঙ্গে আদিমানুষদের শারীরিক মিলন হয়েছিল। তবে চুম্বনও সেই মিলনের অংশ ছিল কি না, তা নিয়ে এত দিন বিশেষ গবেষণা হয়নি। এ বার সে বিষয়ে আলোকপাত করলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকেরা। সম্প্রতি তাঁদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘ইভোলিউশন অ্যান্ড হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে।

মানুষ ছাড়াও অনেক প্রাণী রয়েছে, যারা চুম্বনের মতো আচরণ করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তা দেখতে চুম্বনের মতো হলেও, বাস্তবে চুম্বনের সঙ্গে তার দূরদূরান্তেও কোনও মিল নেই। কখনও আক্রমণাত্মক উদ্দেশে, আবার কখনও খাবার ভাগ করার ক্ষেত্রে চুম্বনের মতো মুখভঙ্গি করতে দেখা যায় কিছু প্রাণীকে। যেমন ‘কিসিং গৌরামি’ নামে এক প্রজাতির মাছ অনেক সময় নিজেদের প্রজাতির অন্য মাছের উদ্দেশে চুম্বনের মতো মুখভঙ্গি করে। কিন্তু তা আদৌ চুম্বন নয়। সেটি একটি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমা।

ফলে এই গবেষণার ক্ষেত্রে কোনটিকে ‘চুম্বন’ বলা হবে, তার একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা তৈরি করার প্রয়োজন হয় গবেষকদের। তাঁরা স্থির করেন, গবেষণার জন্য সেগুলিকেই ‘চুম্বন’ বলে গণ্য করা হবে, যেখানে দু’টি প্রাণীর ঠোঁটে ঠোঁটে স্পর্শ হচ্ছে। তবে তা আক্রমণাত্মক নয় এবং তাদের মধ্যে খাবার দেওয়া-নেওয়াও হচ্ছে না। এই ধরনের মুখে-মুখে স্পর্শকেই ‘চুম্বন’ বলে সংজ্ঞায়িত করেন গবেষকেরা।

এই গবেষণার জন্য তাঁরা বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে চুম্বনের উৎস খোঁজার চেষ্টা করেন। ‘বাইসিয়ান মডেল’ (সংখ্যাতত্ত্বের একটি মডেল) ব্যবহার করা হয় এই গবেষণায়। ফলাফল যতটা সম্ভব নির্ভুল করার জন্য তাঁরা এক কোটি বার এই মডেলটি ব্যবহার করেন। তাতে দেখা যায়, মানুষের পাশাপাশি গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বনোবো (বানরের এক প্রজাতি), মেরু ভল্লুক, নেকড়ে, এমনকি অ্যালবাট্রস পাখির মধ্যেও চুম্বনের মতো আচরণ রয়েছে। গবেষক দলের প্রধান মাটিল্ডা ব্রিন্ডেলের কথায়, “মানুষ, শিম্পাঞ্জি, বনোবো সকলেই চুম্বন করে। আমাদের মনে হচ্ছে, প্রায় ২ কোটি ১৫ লক্ষ বছর আগে ‘গ্রেট এপ’দের মধ্যে চুম্বনের আবির্ভাব হয়েছিল।”

ব্রিন্ডেলদের লক্ষ্য ছিল আদিমানবের চুম্বনের ইতিহাস খুঁজে বার করা। তাঁরা গবেষণালব্ধ ফল থেকে চুম্বনের একটি ‘ফ্যামিলি ট্রি’ তৈরি করেন। তাতে নিয়ানডারথালেরা যে জায়গায় রয়েছে, তা থেকে গবেষকদের ধারণা, আদিমানবের এই নিকট আত্মীয়েরা সম্ভবত চুম্বনও করত। সেই চুম্বন শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব প্রজাতির মধ্যে সীমিত না-ও থাকতে পারে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। ব্রিন্ডেলের কথায়, “মানুষ চুম্বন করত। আমরা এখন দেখছি, নিয়ানডারথালেরাও খুব সম্ভবত চুম্বন করত। যা ইঙ্গিত করে দু’টি প্রজাতি সম্ভবত পরস্পরকে চুম্বন করেছিল।”

তাই তাঁরা মূলত ‘গ্রেট এপ’-দের নিয়েই এই গবেষণা চালান। এর জন্য তাঁরা নিয়ানডারথালদের ডিএনএ নিয়ে পুরনো একটি গবেষণাপত্রের সাহায্য নেন। তাতে দেখা যায়, নিয়ানডারথালেদের শরীরের একটি জীবাণু আধুনিক মানুষের শরীরেও রয়েছে। মানুষের লালায় ওই ব্যাকটেরিয়াটি পাওয়া যায়। এর থেকে গবেষকদের অনুমান, লালার মাধ্যমেই নিয়ানডারথাল এবং আদিমানবের মধ্যে ওই ব্যাকটেরিয়াটি বিনিময় হয়েছিল। ব্রিন্ডেলের কথায়, “দু’টি প্রজাতি (নিয়ানডারথাল এবং আদিমানব) লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পরস্পরের মধ্যে লালা বিনিময় করেছে।” গবেষকদের ধারণা, চুম্বনের ফলেই এই দুই প্রজাতির মধ্যে লালা বিনিময় হয়েছে। এই ধারণা থেকেই তাঁরা আরও জোরালো ভাবে দাবি করছেন, সম্ভবত এই দুই প্রজাতির মধ্যে চুম্বন হয়েছিল।

চুম্বনের আবির্ভাব কবে হয়েছিল তা জানা গেলেও, কেন হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত খুঁজে পাননি গবেষকেরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকদলের আশা, তাঁদের গবেষণা থেকে এর কারণ খোঁজার জন্য নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে।

Neanderthal Evolution Apes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy