Advertisement
E-Paper

আলোর গতিবেগ বদলায়? ডিসেম্বরে কঠিন পরীক্ষার মুখে আইনস্টাইন!

যে আলোয় ভূবন-ভরা, সেই আলোই কি এ বার ‘অন্ধকারে’ ঢেকে দিতে পারে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মুখ? আর ক’টা দিন পরেই বড় ‘পরীক্ষা’য় বসতে চলেছেন আইনস্টাইন। তাঁর মেপে দেওয়া দৃশ্যমান আলোর (ভিজিব্‌ল লাইট) গতিবেগ সত্যি-সত্যিই একটি নির্দিষ্ট মানের নাকি তা বাড়া-কমা করে, এ বার তা একেবারে হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখা হবে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ১৫:৩৪

যে আলোয় ভূবন-ভরা, সেই আলোই কি এ বার ‘অন্ধকারে’ ঢেকে দিতে পারে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মুখ?

আর ক’টা দিন পরেই বড় ‘পরীক্ষা’য় বসতে চলেছেন আইনস্টাইন। তাঁর মেপে দেওয়া দৃশ্যমান আলোর (ভিজিব্‌ল লাইট) গতিবেগ সত্যি-সত্যিই একটি নির্দিষ্ট মানের নাকি তা বাড়া-কমা করে, এ বার তা একেবারে হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখা হবে। তাতে কি পাশ করবেন আইনস্টাইন শেষ পর্যন্ত, এই নিয়েই এখন বিশ্বজুড়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। ১০০ বছর পর সবে একটি পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন আইনস্টাইন, গত ফেব্রুয়ারিতে। যখন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে বলা মহাকর্ষীয় তরঙ্গের (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) ধাক্কাটা সত্যি-সত্যিই অনুভব করা সম্ভব হয়েছিল লাইগো ডিটেক্টরে। এ বার আলোর পরীক্ষায় বসতে চলেছেন আইনস্টাইন! ১০০ বছর আগে তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদেই একেবারে অঙ্ক কষে আইনস্টাইন বলে দিয়েছিলেন, দৃশ্যমান আলোর গতিবেগ সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। আর এটা কোনও ভাবেই বদলায় না। তার কোনও বাড়া-কমা হয় না। এই আলোর চেয়ে বেশি গতিবেগে এই ব্রহ্মাণ্ডে আর কোনও কিছুই ছুটতে পারে না।


আলোয় ভূবন ভরা...



এই সেই গবেণাপত্র

লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের পদার্থবিদ অধ্যাপক জোও মাগুএইজো ও কানাডার পেরিমিটার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিয়ায়েশ আফশোর্দির দাবি, ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পরপরই আলো নাকি আরও অনেক বেশি জোরে ছুটতো। কিন্তু ধীরে ধীরে তার পায়ে অদৃশ্য কেউ বেড়ি পরিয়ে দেয়। ফলে, কমে আসে আলোর গতি। নেমে আসে এখনকার চেনা, জানা গতিতে। অঙ্ক কষে‌-টষে যে গতিবেগের মানটা জানিয়েছিলেন প্রথম আইনস্টাইনই। দাবিটা যে একেবারেই আনকোরা, নতুন, তা কিন্তু নয়। গত শতাব্দীর ’৯০-এর দশকের শেষাশেষিই এই দাবিটা করেছিলেন একদল পদার্থবিদ। তখন তা নিয়ে কিছুটা হাসাহাসিও হয়েছিল। কিন্তু তার পর জল অনেক দূর গড়িয়েছে। এই তত্ত্বটি আরও আরও বেশি করে গাণিতিক ভিত্তি পেয়েছে। তারই পরিণতিতে মাগুএইজো ও আফশোর্দির গবেষণাপত্রটি (‘ক্রিটিক্যাল জিওমেট্রি অফ আ থার্মাল বিগ ব্যাং’) এই নভেম্বরের গোড়ার দিকে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ ডি’-তে।


অধ্যাপক জোও মাগুএইজো

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে কানাডা থেকে ই-মেলে পেরিমিটার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অন্যতম গবেষক (কো-অথর) আফশোর্দি লিখেছেন, ‘‘কেন এই ব্রহ্মাণ্ডে একের পর এক গ্যালাক্সি তৈরি হল বিগ ব্যাংয়ের পর আর তা কী ভাবে হল, আমরা তার কারণ খুঁজে চলেছি। তাতে দেখেছি, বিগ ব্যাংয়ের পর যে বিপুল পরিমাণ কণা ছড়িয়ে পড়েছিল, তার ঘনত্বের বাড়া-কমার জন্যই গ্যালাক্সিগুলি তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন চেহারায়, বিভিন্ন প্রান্তে। এটাকেই আমরা বলছি, ব্রহ্মাণ্ডের ‘ফ্লাকচ্যুয়েশন্‌স’। বাড়া-কমা। ওঠা-নামা। ব্রহ্মাণ্ডের ‘প্রথম আলো’, যাকে বলে ‘কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড’ (সিএমবি), তার মধ্যেই ওই ‘ফ্লাকচ্যুয়েশন্‌সে’র ‘ছাপ’গুলি ধরা রয়েছে। মানে, তন্নতন্ন খুঁজলে ওই সিএমবি-র মধ্যে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পর বিপুল পরিমাণে কণাগুলি কোথায়, কী ভাবে, কতটা, কী হারে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার ‘জল-ছাপ’ পাওয়া যায়, পাওয়া যাবে। এটাকে আমরা বলি ‘স্পেকট্রাল ইনডেক্স’। আমরা সেই ‘স্পেকট্রাল ইনডেক্স’ পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পর আলো অনেক অনেক বেশি জোরে না ছুটলে ওই ‘ফ্লাকচ্যুয়েশন্‌স’ তৈরি হতো না। তৈরি হতো না এই ব্রহ্মাণ্ডের ‘ভাঁজ-খাঁজ’গুলিও (ক্লিভেজ)! এটাও বুঝেছি, শুধুই আলো ওই সময় অনেক বেশি জোরে ছুটতো না, ব্রহ্মাণ্ডের নানা প্রান্তে আলো তখন ছুটতো বিভিন্ন গতিবেগে।


আলোয় ভূবন ভরা...মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি


আলোয় ভূবন ভরা...অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি

মানে, আইনস্টাইন যা বলেছিলেন, জন্মাবধি আলোর গতিবেগে কোনও নড়চড় হয়নি, তা মেনে নেওয়াটা আমাদের পক্ষে অসুবিধার হচ্ছে। কারণ, আমরা রীতিমতো অঙ্ক কষে দেখেছি, আলোর গতিবেগের বাড়া-কমার পরিমাণটাও খুব সূক্ষ্ণ। ০.৯৬৪৭৮। আগামী ডিসেম্বরে এই তত্ত্বের একটা হাতকলমে পরীক্ষা হওয়ার কথা।’

অধ্যাপক নিয়ায়েশ আফশোর্দি

গবেষণাপত্রে মূল গবেষক লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের পদার্থবিদ অধ্যাপক জো-ও মাগুএইজো লিখেছেন, ‘‘আমরা ’৯০-এর দশকের শেষের দিকেই এই কথাটা বলেছিলাম। এখন ওই তত্ত্বটাকেই আমরা আরও সাবালক করে তুলেছি। এখন এটা পরীক্ষা করে দেখা যায়। আলোর গতিবেগের ফারাকটা কতটা হয়েছে, আমরা অঙ্ক কষে সেটাও বলে দিতে পেরেছি। পরীক্ষায় তা যদি প্রমাণিত হয়, তা হলে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের সংশোধন করতেই হবে। বুঝতে হবে, এখন আমরা যেমন জানি, এই ব্রহ্মাণ্ড ঠিক তেমন ভাবে সব দিকে সমান ভাবে প্রসারিত হচ্ছে না। তা কোথাও কম হারে বাড়ছে, কোথাও বেশি হারে, দ্রুততর গতিতে।’’

আরও পড়ুন- এখনও জল, বরফ মঙ্গলে, খোঁজ মিলল এই প্রথম

Theory that challenges Einstein's physics could soon be put to the test Theory challenging Einstein Speed Of Light Varies
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy