Advertisement
E-Paper

২০০ কোটি বছরের জল আবিষ্কার! মিলতে পারে আদিম প্রাণ?

যার অন্য নাম ‘জীবন’, পৃথিবীতে সেই জল কি এসেছিল অনেক অনেক দিন আগেই? পৃথিবীর জন্মের ২০০ কি ২৫০ কোটি বছর পরেই কি জলস্রোতে ভেসে গিয়েছিল আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহ? আর সেই জলস্রোতের কলরোল কি ‘শোনা গিয়েছিল’ ভূপৃষ্ঠের আরও অনেক নীচে? পৃথিবীর ‘অন্তর-অন্দরে’র আরও কাছাকাছি?

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ১২:০০

এই প্রথম ‘আদিমতম’ জলের হদিশ মিলল পৃথিবীতে! পৃথিবীর জন্মের ২০০ কি ২৫০ কোটি বছর পরেই যে-স্রোতে ভেসে গিয়েছিল আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহ, হদিশ মিলল সেই জলের। একটি বদ্ধ এলাকায়।কানাডার একটি খনিতে। সেই জলস্রোতের কলরোল ‘শোনা গিয়েছিল’ ভূপৃষ্ঠের অনেক অনেক নীচে। ভূগর্ভস্থ জলের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি-প্রকৌশল যতটা গভীরতা পর্যন্ত খনন-কাজ চালাতে পেরেছে এখনও পর্যন্ত, তার অনেক গুণ বেশি গভীরতায় হদিশ মিলল এই ‘আদিমতম’ জলের। ভূপৃষ্ঠ থেকে তিন কিলোমিটার গভীরতায়। পৃথিবীর ‘অন্তর-অন্দরে’র (ম্যান্টল) অনেক বেশি কাছাকাছি।

তেমনটাই দাবি করেছেন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদরা। তাঁরা হদিশ পেয়েছেন এই পৃথিবীতে প্রায় ২০০ কোটি বছর আগেকার ‘জলস্রোতে’র। যা এখনও খরস্রোতা! প্রতি মিনিটে কয়েকশো’ লিটার জল বয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্দরে, একটি নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে। অনেকটা বদ্ধ জলাশয়ের মতো। ভূগর্ভস্থ জলের জন্য গোটা পৃথিবীতে যতটা গভীর পর্যন্ত খনন করা সম্ভব হয়েছে, তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ গভীরে আজও বয়ে চলেছে সেই ‘আদিমতম জলস্রোত’। গবেষকদের দাবি, এটাই পৃথিবীর আপাতত ‘আদিমতম জলস্রোত’। আপাতত, গভীরতমও। তবে ওই ‘জলস্তরে’র নীচে যে আগামী দিনে আরও কোনও খরস্রোতা ‘জলস্রোতে’র হদিশ মিলবে না, বা সেই ‘জলস্তর’ সময়ের নিরিখে হবে না ‘আদিমতর’, সেটা কিন্তু সুনিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি ভূতত্ত্ববিদরা। তবে তাঁদের বিশ্বাস, এই ‘জলস্রোতে’ এখনও টিঁকে রয়েছে আদিমতম অণুজীব বা একেবারে অন্য ধরনের জীব! যে ধরনের জীবের ‘পরিচয়’ আমরা এখনও পাইনি। যাদের সম্পর্কে আমরা এখনও তেমন কিছু জানতে পারিনি।


আড়াই কোটি বছর আগেকার ‘জলস্রোতে’র পথ, পৃথিবীর অন্দরের কাছাকাছি

কতটা নীচে রয়েছে পৃথিবীর ওই ‘আদিমতম জলস্তর’?

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অনলাইন জার্নাল ‘ফিজিক্স ডট ওআরজি’-তে প্রকাশিত তাঁদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, ভূপৃষ্ঠে আমাদের পায়ের নীচ থেকে তিন কিলোমিটারেরও বেশি গভীরে রয়েছে পৃথিবীর ওই ‘আদিমতম জলস্তর’। যা কম করে ২০০ কোটি বছর আগে থেকেই বইছে খরস্রোতা হয়ে।

কত জোরে সেই জল বয়ে চলেছে পৃথিবীর অতটা গভীরে?


পৃথিবীর কোথায় কোথায় বইছে সেই আদিমতম জলস্রোত

গবেষকদের দাবি, মিনিটে অন্তত কয়েকশো’ লিটার বেগে সেই ‘জলস্রোত’ এখনও বয়ে চলেছে ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার গভীরে। একটি নির্দিষ্ট এলাকায়। সেই ‘জলস্রোত’ রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলের স্বাভাবিক ‘ওয়াটার টেবিল’-এর অনেক অনেক নীচে। ভূস্তরে ‘ওয়াটার টেবিল’-এর নীচে রয়েছে পাথর আর ধাতু বা ধাতব পদার্থের পুরু স্তর। তারও অনেকটা নীচে রয়েছে ‘আদিমতম জলস্রোতে’র সেই স্তর। গত কয়েকশো’ কোটি বছরে এই ‘জলস্রোতে’র হদিশ পায়নি মানুষ। দেখা মেলেনি বলে তার ওপর সভ্যতার ‘হাত’ও পড়েনি। এর আগে, ২০১৩ সালে সন্ধান মিলেছিল একটি ‘আদিমতর জলস্রোতে’র। খননের সময় একটি কয়লাখনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল সেই ‘আদিমতর জলস্তরে’র হদিশ। সেই জলে মিশে থাকা বিভিন্ন গ্যাসের (ডিজলভ্‌ড গ্যাস) রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে জানা গিয়েছিল, ভূপৃষ্ঠের প্রায় আড়াই কিলোমিটার নীচে রয়েছে সেই ‘আদিমতর জলস্তর’। অন্তত ১৫০ কোটি বছর আগেকার। কিন্তু এ বার গবেষকরা তার চেয়েও বেশি গভীর ও আদিমতর ‘জলস্তরে’র সন্ধান পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

কানাডার খনিতে কী ভাবে মিলল সেই জলস্রোতের হদিশ? দেখুন ভিডিও

ওই গভীরতম ও আদিমতম জলস্তরে কোন রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকার প্রমাণ মিলেছে?


কানাডার যে খনি এলাকায় মিলেছে আদিমতম জলের হদিশ

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, ওই জলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গিয়েছে সালফেট ও সালফাইড লবণ। আর সেটা সম্ভব হয়েছে ওই জল্রে স্রোত ভূগর্ভের অতটা নীচে, আশপাশের পাথুরে এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়ায়। বয়ে যাওয়ার সময় আশপাশের পাথর থেকে সালফার লবণ টেনে মিশিয়ে নিয়েছে ওই জলস্রোত। ফলে, ওই আদিমতম জলস্রোতে আরও আদিম প্রাণের টিঁকে থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। যে প্রাণের হদিশ আমরা হয়তো এখনও পাইনি। ভূগর্ভে অতটা গভীরতায় সেই প্রাণ হয়তো পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণের মতো একই ভাবে তৈরি হয়নি। হয়তো সেই প্রাণ-সৃষ্টির রসায়নটা এই বাসযোগ্য গ্রহের অন্যান্য প্রাণের মতো ছিল না। এখনও নেই।

একটু ইতিহাস...

বহু দিন আগেই অবশ্য বিভিন্ন তত্ত্বে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে জল এসেছিল আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহটির জন্মের পর পরই। ৪৫৪ কোটি বছর আগে জন্ম হয়েছিল পৃথিবীর। আর মোটামুটি ৪০০ কোটি বছর আগেই জলস্রোত বইতে শুরু করেছিল পৃথিবীর অন্তরে-অন্দরে।আর প্রাণের আদি রূপ (কোষ ছাড়া) বিকশিত হতে শুরু করেছিল ৩৮০ কোটি থেকে ৩৫০ কোটি বছর আগে। তার পর জন্ম হয়েছিল ‘প্রোক্যারিওটে’র। যে জীবের কোষে কোনও নিউক্লিয়াস ছিল না। সেই সময়টা ছিল আজ থেকে ২০০ কোটি বছর আগে। আর ১৮০ কোটি বছর আগে এসেছিল ‘ইউক্যারিওট’রা। যাদের কোষে নিউক্লিয়াস ছিল। আর সেই সময় তারা বংশবৃদ্ধি করত কোষ বিভাজনের মধ্যে। মানে, একটা কোষ ভেঙে দু’টো, দু’টো কোষ ভেঙে চারটে, এই ভাবেই বংশবৃদ্ধি করত ‘ইউক্যারিওট’রা। তার পর যাকে বলে ‘প্রজনন’ (দুই কোষের মিলনের ফলে জন্ম জাতকের), সেই ভিন্ন্ দু’টি কোষের মিলনের ফলে ‘ইউক্যারিওট’দের বংশবৃদ্ধি শুরু হয় আজ থেকে ৯০ কোটি বছর আগে।


প্রোক্যারিওট কোষের ত্রিমাত্রিক ছবি


ইউক্যারিওট কোষের ত্রিমাত্রিক ছবি

এই আবিষ্কার কি ভিন গ্রহেও অণুজীব বা অন্য ধরনের জীবের ‘অস্তিত্বে’র দাবিকে জোরালো করে?

কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলের মতো কয়েকটি ভিন গ্রহ বা ‘সেরেসে’র মতো গ্রহাণু, যেখানে সারফেসের (পিঠ) অনেক নীচ দিয়ে এখনও বয়ে চলেছে জলস্রোত বা ‘ওয়াটার আইস’, সেখানেও সেই স্রোতে, একেবারে অন্য রকম পরিবেশে অণুজীব বা অন্য ধরনের জীব যে বেঁচে-বর্তে থাকতে পারে প্রচণ্ড গভীরতায়, এই আবিষ্কার সেই সম্ভাবনার ভিতকেই জোরালো করে তুলল।

Oldest Water Flow on Earth World’s oldest water found Water flow on Earth since 2 billion years ago
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy