Advertisement
E-Paper

রোবটের ‘গর্ভে’ সন্তানধারণ কি আদৌ সম্ভব? কোথায় কী ভাবে কাজ করে কৃত্রিম মাতৃজঠর?

চিনের এক বিজ্ঞানী সম্প্রতি দাবি করেছিলেন, তিনি এমন এক রোবট বানাচ্ছেন, যা মাতৃগর্ভের মতো সন্তানধারণ করতে সক্ষম। এই দাবি ভুয়ো। কিন্তু এর নেপথ্যে যে প্রযুক্তির কথা বলা হয়েছে, তা কি বাস্তবসম্মত?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৩

ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

সন্তানধারণের জন্য নাকি আর রক্তমাংসের ‘মা’ লাগবে না। রোবটই গর্ভে সন্তানধারণ করতে পারবে। রোবটের জঠরে তৈরি হবে ভ্রূণ! সম্প্রতি চিনের এক বিজ্ঞানীর এমন দাবি ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা আদৌ সত্য নয়। ঝ্যাং কিফেং নামের ওই বিজ্ঞানী চিনের গুয়াংঝৌয়ের ‘কাইওয়া টেকনোলজি’ নামের যে সংস্থার সিইও হিসাবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন, যাচাই করে দেখা গিয়েছে, তেমন কোনও সংস্থার অস্তিত্ব নেই। ঝ্যাং দাবি করেছিলেন, তিনি সিঙ্গাপুরের নান্যং টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় (এনটিইউ) থেকে পিএইচডি করেছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লাইভ সায়েন্সের তরফে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ এমন কোনও গবেষণার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। ঝ্যাং নামের কেউ ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি-ও করেননি। ফলে ‘প্রেগন্যান্সি রোবট’ বা সন্তানধারণে সক্ষম কোনও রোবটের অস্তিত্ব নেই বলেই দাবি ওই সংবাদমাধ্যমের।

‘প্রেগন্যান্সি রোবট’-এর যুক্তি

চিনের বিজ্ঞানী ‘প্রেগন্যান্সি রোবট’-এর কথা ব্যাখ্যা করে জানিয়েছিলেন, রোবটের ‘পেটে’ কৃত্রিম মাতৃজঠর প্রবেশ করাতে হবে। তার পর মানুষ এবং রোবটের পারস্পরিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভ্রূণটি তার ভিতরে বড় হতে থাকবে। ঝ্যাংয়ের কথায়, ‘‘কেউ বিয়ে করতে চান না, কিন্তু সঙ্গিনী চান। কেউ আবার গর্ভধারণ করতে চান না, কিন্তু সন্তান চান। কত ধরনের মানুষ আছেন! প্রেগন্যান্সি রোবট তাঁদের কাজে লাগবে।’’ ২০২৬ সালের মধ্যে এই রোবট তৈরি করে দিতে পারবেন, দাবি করেছিলেন ঝ্যাং। এতে খরচ হবে এক লক্ষ চিনা ইউয়ান। ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে ১২ লক্ষ টাকার কিছু বেশি।

‘প্রেগন্যান্সি রোবট’-এর প্রযুক্তি

ঝ্যাং যে প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘প্রেগন্যান্সি রোবট’ তৈরির দাবি করেছিলেন, তা কি আদৌ বাস্তবসম্মত? ভবিষ্যতে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি বাস্তবে এমন কোনও রোবট তৈরি করা সম্ভব? আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্ভে ক্লিম্যান বলেছেন, ‘‘এটা কি আমাদের চেষ্টা করা উচিত? আমি বলব, একেবারেই নয়। আমার মনে হয়, এই ভাবনাটা আমাদের আকৃষ্ট করছে। কারণ, আসল গর্ভাবস্থার সৌন্দর্য এবং অলৌকিকতা সম্পর্কে এতে আলোকপাত করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এটা করা যায় না।’’

কৃত্রিম মাতৃজঠর

‘প্রেগন্যান্সি রোবট’ না থাকলেও কৃত্রিম মাতৃজঠর তৈরির কাজ কিন্তু শুরু করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ফিলাডেলফিয়ার ‘চিলড্রেন্‌’স হস্‌পিটাল’ (সিএইচওপি)-এর বিজ্ঞানীরা জঠরের মতো একটি যন্ত্র তৈরি করছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে এক্সটেন্ড (এক্সট্রা— উটেরিন এনভায়রনমেন্ট ফর নিউবর্ন ডেভেলপমেন্ট)। মূলত নির্ধারিত সময়ের আগে যে সমস্ত শিশুর জন্ম হয় (প্রিম্যাচিওর বেবি), তাদের কথা ভেবে এই যন্ত্র তৈরির উদ্যোগ। মাতৃগর্ভে পর্যাপ্ত সময় না থেকেই ভূমিষ্ঠ হয় ওই সব শিশু। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ২৩ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যেও সন্তান প্রসব করে ফেলেন মা। এই শিশুদের জীবনের ঝুঁকি অনেক। জন্মের পর তাদের যাতে মাতৃজঠরের মতো পরিবেশে রাখা যায়, তার উপযোগী যন্ত্র তৈরির চেষ্টায় আছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। এখনও পর্যন্ত এই যন্ত্র ভেড়ার উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। মানুষের সন্তানকে এতে রাখা হয়নি।

কৃত্রিম মাতৃজঠরে থাকে গবেষণাগারে তৈরি অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ভর্তি একটি ব্যাগ। শিশুর পক্ষে পুষ্টিকর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও ব্যাগে ভরা থাকে। যন্ত্রের ভিতরে থাকাকালীন বাইরের তাপমাত্রা, চাপ এবং আলোর পরিবর্তন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে শিশু, ঠিক মাতৃজঠরের মতো। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই যন্ত্রে প্রিম্যাচিওর শিশুদের মৃত্যুহার কমেছে। তবে এখনও ফুসফুস ও স্নায়ুর রোগের প্রবণতা কমানো যায়নি। যন্ত্রটি নিয়ে কাজ চলছে।

China Pregnancy Robotics Robot Technology
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy