Advertisement
E-Paper

উপগ্রহ ‘ছিনতাই’! মহাকাশযুদ্ধকে নতুন মাত্রা দিল রাশিয়া, ভবিষ্যৎ রণক্ষেত্রের আভাস দিলেন পুতিন?

রুপোলি পর্দায় প্রথম ‘স্টার ওয়ার্স’ এসেছিল ১৯৭৭ সালে। সে সময় মহাকাশে যুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল নিছক কল্পবিজ্ঞান! আর এখন আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের গণ্ডি পেরিয়ে শত্রুর উপগ্রহ ধ্বংসের প্রযুক্তি রপ্ত করে ফেলেছে ভারতও।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৩

—প্রতীকী চিত্র।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ৯ মে যখন মস্কোর রেড স্কোয়্যারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন, ক্রেমলিনের হ্যাকার বাহিনী তখন ব্যস্ত ছিল এক গোপন অপারেশনে। শত্রু দেশ ইউক্রেনকে টেলিভিশন পরিষেবা প্রদানকারী একটি উপগ্রহকে তার কক্ষপথেই ছিনতাই (হাইজ্যাক) করে ফেলেছিল তারা। মহাকাশ যুদ্ধবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই ঘটনাকে এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলে মনে করছেন ‘স্পেস ওয়ার’ বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

জলে, স্থলে, আকাশে যুদ্ধ হয়ে চলেছে অনেক বছর ধরেই। কিন্তু কার্যত মহাকাশে এখনও কোনও যুদ্ধ হয়নি। তবে গত কয়েক দশক ধরেই চলছে তার উদ্যোগ। আর সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে এক প্রবল প্রতিযোগিতা— মহাকাশে যুদ্ধ বাধলে তার জন্য কে কতটা প্রস্তুত থাকতে পারে। যদিও এর নেপথ্যের ভাবনাটা প্রায় অর্ধশতাব্দীর পুরনো! রুপোলি পর্দায় প্রথম ‘স্টার ওয়ার্স’ এসেছিল ১৯৭৭ সালে। সে সময় মহাকাশে যুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল নিছক কল্পবিজ্ঞান! আর তা আটকে ছিল শুধু বইয়ের পাতাতেই। ছবির পরিচালক এবং নির্মাতা জর্জ লুকাস সেই বাঁধাধরা ছকটাকেই ভেঙে দিয়েছিলেন।

সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকার যে ঝুঁকি নিয়েছিল লুকাসফিল্ম, তা বিশ্ব জুড়ে নতুন উন্মাদনা তৈরি করেছিল। ‘ভবিষ্যতের যুদ্ধ’ নিয়ে এক কোটি ডলারে বানানো ছবি বক্স অফিসে ব্যবসা করেছিল প্রায় ৭৮ কোটি ডলারের! ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যখন এউ সিরিজ়ের সর্বশেষ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল, তখন বিশ্বের প্রতিটি শক্তিশালী দেশই মহাকাশ প্রতিরক্ষার পরিকাঠামো নির্মাণে ব্যস্ত। আর এখন? আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের গণ্ডি পেরিয়ে শত্রুর উপগ্রহ ধ্বংসের প্রযুক্তি রপ্ত করে ফেলেছে ভারতও।

এ বার রাশিয়া হাতেকলমে করে দেখাল উপগ্রহ ছিনতাই! ইউক্রেনের দর্শকেরা তাঁদের টিভিতে দেখতে পেলেন মস্কোর বিজয় দিবসের কর্মসূচি! ক্ষেপণাস্ত্র, গোলা বা আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার না করে শত্রুশিবিরে কী ভাবে মনস্তাত্ত্বিক আঘাত হানা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন পুতিন। বেশ কিছু সময়ের জন্য বিভ্রান্ত করে দিলেন ইউক্রেনের আমজনতা, এমনকি সেনাকেও। তথ্য বলছে, ১২ হাজারেরও বেশি সক্রিয় উপগ্রহ এখন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে। কেবল আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সম্প্রচার বা যোগাযোগের ক্ষেত্রেই নয়, সামরিক অভিযান, জিপিএসের মতো নেভিগেশন সিস্টেম, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাশিয়া দেখিয়ে দিল, নতুন যুগের মহাকাশযুদ্ধে উপগ্রহ ছিনতাইয়ের ঘটনা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে স্থবির করে দিতে পারে শত্রুশিবিরের জনজীবন। স্তব্ধ করে দিতে পারে বাণিজ্য।

এমন আশঙ্কার আঁচ অবশ্য এক দশক আগেই পেয়েছিল আমেরিকা। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু করেছিল পেন্টাগন। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের গোড়ায় মার্কিন উপগ্রহগুলিকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী। খবরে প্রকাশ, ওই বাহিনী একটি মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান পরিচালনা করে। যা গোপন সামরিক মিশন এবং মহাকাশ প্রতিরক্ষা গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এক্স-৩৭বি নামে পরিচিত এই যানটি কক্ষপথে এক বছরেরও বেশি সময় কাটানোর পর সম্প্রতি পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। পাশাপাশি, নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক সিয়ান ডাফি সম্প্রতি চাঁদে একটি ছোট পরমাণু চুল্লি বসানোর পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিন এবং রাশিয়া চাঁদে পরমাণুকেন্দ্র বসানোর ঘোষণা করার পরেই ওই বার্তা এসেছে ওয়াশিংটনের তরফে। চাঁদে বিপুল পরিমাণ হিলিয়াম ৩ রয়েছে। পরমাণু বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, ওই হিলিয়াম ৩ বিপুল পরিমাণে শক্তি উৎপাদনের জন্য পরমাণু সংযুক্তিকরণে (ফিউশন) ব্যবহার করা যেতে পারে। পরমাণু যুদ্ধের পরবর্তী মহড়া কি তবে মহাকাশে হবে?

Space War Russia Vladimir Putin Anti Satellite Missile Satellite Defence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy