শুধু শুভাংশু শুক্ল নন। ভারতের ভান্ডারে এমন আরও অনেক রত্ন রয়েছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। লক্ষ্য ২০৪০। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর মতো ভারতের নিজস্ব মহাকাশ কেন্দ্র তৈরি হবে পৃথিবীর কক্ষপথে। চাঁদে পা রাখবেন ভারতীয় নভশ্চরেরা। কলকাতায় এবিপি গোষ্ঠী আয়োজিত ‘অ্যাডমিশনট্রি ডট ইন কনভারসেশনস ২০২৫’-এ এমনই বার্তা দিলেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক রাধিকা বজাজ। তাঁর কথায় বারবারই ঘুরে ফিরে আসে শুভাংশুর কথা। সে প্রসঙ্গে ইসরো চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সবাই যা জানে না, সে রকম একটা কাহিনি বলি।’’ এ বছর ২৫ জুন নাসা, স্পেসএক্স ও ইসরোর মিলিত উদ্যোগে অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনে মহাকাশ পাড়ি দিয়েছিলেন শুভাংশুরা। নারায়ণন জানান, ঠিক হয়েছিল ১১ জুন রকেট উৎক্ষেপণ হবে। অভিযানের দু’দিন আগে জানানো হয়, যানে ‘সামান্য লিকেজ’ হচ্ছে। নারায়ণন জানান, তাঁর অভিজ্ঞতায় এই ঘটনা ‘সামান্য’ হতে পারে না। কোথায় লিকেজ হচ্ছে, তা-ও ধরা পড়ছিল না। মহাকাশযাত্রীদের প্রাণের ঝুঁকি নেওয়া হবে না জানিয়ে ইসরো ততক্ষণাৎ ১১ জুনের অভিযান বাতিল করে দেয়। কিন্তু আমেরিকার দিক থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছিল না। ১০ দিন তারিখ সন্ধ্যায় তারা জানায়, জ্বালানি ট্যাঙ্কে লিকেজ ধরা পড়েছে। অভিযান সম্ভব নয়। নারায়ণন বলেন, ‘‘আমরা ওদের হেসে বলি, এটাই আমরা ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে বলছিলাম।’’ ইসরো চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা অসাধারণ। ইসরো কারও থেকে পিছিয়ে নেই।’’
ইসরোর ভবিষ্যৎ-অভিযান নিয়ে উচ্ছ্বসিত নারায়ণন। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর ৮টি অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে অন্তত দু’টি মানব-অভিযান। আমাদের লক্ষ্য মহাকাশে নিজেদের ‘স্পেস স্টেশন’ তৈরি। ২০৪০-এর মধ্যে এই কাজ করে দেখানো আমাদের লক্ষ্য।’’ ইসরো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এক সময় ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন প্রযুক্তি নিয়ে ভারতের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন আমাদের এ রকম তিনটি ভিন্ন ইঞ্জিন রয়েছে। বিশ্বে মাত্র ছ’টি দেশে এই প্রযুক্তি রয়েছে। ইঞ্জিনের পরীক্ষা থেকে উৎক্ষেপণ পর্যন্ত পৌঁছতে আমাদের মাত্র ২৮ মাস লেগেছিল। কারও ১৮ বছর লেগেছে। এবং সব শেষে আমাদের ৩৪ দিন লেগেছে পরীক্ষা করতে। বাকিদের সেখানে ৫-৬ মাস লেগে গিয়েছিল।’’ নারায়ণন বার বার বলেন, ‘‘আমি গর্বিত ভারতীয়।’’
আলোচনাসভায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি স্কুলের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা। প্রশ্ন ওঠে, ইসরোয় কাজের সুযোগ পেতে হলে কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা প্রয়োজন। নারায়ণন বলেন, ‘‘নভশ্চর হতে গেলে শরীরস্বাস্থ্য ভাল হতে হবে। মানসিক জোর থাকতে হবে। যদি নভশ্চর হওয়ার বাসনা থাকে, তা হলে ছোট থেকেই মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়া ভাল।’’
তাঁর নিজের অবশ্য ছোটবেলায় খুব স্পষ্ট ধারণা ছিল না বড় হয়ে কী হবেন। তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রামে সাধারণ পরিবারে জন্ম নারায়ণনের। বলেন, ‘‘তখন শুধু জানতাম সবেতে প্রথম হতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় ছিল না।’’ বলেন, ‘‘আমাদের দেশে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ খ্রিস্টান... আমি কিন্তু এক জায়গাতেই ঈশ্বরের দর্শন পেতাম, আমার সব শিক্ষকের মুখে।’’ প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘হয়তো আপনারাও নিজেদের মূল্য জানেন না, ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু জানে।’’
হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাঘর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)