এ যেন চূড়ান্ত অভিনয়ের আগে ‘ড্রেস রিহার্সাল’!
প্রায় ১০ মাসের যাত্রা শেষে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে লাল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছনোর কথা ভারতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ মঙ্গলযানের। ওই শেষ ধাপটি অভিযানের সব থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানীরা। কারণ, লাল গ্রহের কক্ষপথে ঠিক মতো মঙ্গলযানকে স্থাপন করতে না পারলে পুরো অভিযানটাই ব্যর্থ হবে। তাই এই চূড়ান্ত পরীক্ষার সাত দিন আগেই মহড়া শুরু হবে বেঙ্গালুরুতে ইসরোর টেলিমেট্রি ট্র্যাকিং অ্যান্ড কম্যান্ড নেটওয়ার্ক (ইসট্র্যাক) দফতরে।
ইসরো সূত্রের খবর, মঙ্গলযানের চূড়ান্ত অভিযানে ২৫০ ইঞ্জিনিয়ারের একটি দল তৈরি করা হয়েছে। আগামী ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযানের শেষ ধাপের মহড়ায় নামবেন তাঁরা। ২১ সেপ্টেম্বর লাল গ্রহের কক্ষপথে স্থাপন হওয়ার নির্দেশ ভরে দেওয়া হবে মঙ্গলযানের মগজে।
ঠিক কী ভাবে লাল গ্রহের কক্ষপথে মঙ্গলযানকে স্থাপন করা হবে?
ইসরোর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে মঙ্গলযানের চূড়ান্ত অভিযান শুরু হবে। শেষ পর্যায়ে কক্ষপথে ঢোকার ঠিক আগে মঙ্গলযানের মুখ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এখন মঙ্গলযানের যে দিকটি লাল গ্রহের দিকে আছে, সেটি চলে যাবে পৃথিবীর দিকে। তার পর সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মঙ্গলযানের ইঞ্জিন চালু হবে। ফলে সেটি পৃথিবীর দিকে ছোটার চেষ্টা করবে। “কিন্তু ছুটে আসবে না। উল্টে মঙ্গলের কক্ষপথে ঠিক মতো বসে পড়বে।” মন্তব্য এক ভারতীয় মহাকাশবিজ্ঞানীর।
কিন্তু কী ভাবে? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, লাল গ্রহের দিকে যেতেই মঙ্গলযানকে নিজের দিকে টানতে শুরু করবে সে। ফলে উল্টো দিকে না ছুটলে সটান লাল গ্রহের মাটিতে আছড়ে পড়বে যানটি। তাই লাল গ্রহের টানের পাল্টা টান দিতেই ওই ইঞ্জিন চালু করা হবে। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে এই অভিযান চলবে। ইসরো জানিয়েছে, সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে অভিযানের চূড়ান্ত ফল জানা যাবে।
গত ৫ নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করেছিল মঙ্গলযান। তার পরের ২৫ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে ক্রমাগত পাক খাইয়ে ক্রমশ পৃথিবী থেকে দূরে সরানো হয়েছিল তাকে। তার পর ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বরের সন্ধিক্ষণে এক লাফে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে লাল গ্রহের দিকে রওনা দিয়েছিল মঙ্গলযান। সেই শুরু। তার পর থেকে টানা লাল গ্রহের দিকে ছুটে চলেছে সে।
উৎক্ষেপণের পরেই অবশ্য ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, এই অভিযানে প্রধানত দু’টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাঁদের সামনে। প্রথমটি পৃথিবীর টান কাটিয়ে পাকাপাকি ভাবে মঙ্গলের দিকে রওনা এবং লাল গ্রহের কক্ষপথে নিপুণ ভাবে মঙ্গলযানকে স্থাপন করা। প্রথম বাধাটি নির্বিঘ্নেই উতরে গিয়েছিল। এ বার চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে তারা। এ নিয়ে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
ইসরো সূত্রের খবর, মঙ্গলযানকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য যে দলটি গঠন করা হয়েছে, তার মাথায় রয়েছেন স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের অধিকর্তা এ এস কিরণকুমার। গত ৪ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে প্রথম কর্মসূচি ঠিক করেছেন তিনি। এখন প্রতি ক্ষণে ক্ষণে মঙ্গলযানের গতিবিধি হিসেব করা হচ্ছে। প্রয়োজন পড়লে ১৪ সেপ্টেম্বর তার গতিপথে সামান্য অদলবদল করা হতে পারে। তার পর থেকেই চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য প্রস্ততি শুরু হবে। ইসরো সূত্রের খবর, লম্বা এই যাত্রাপথের শেষ পনেরো দিনের প্রতিটি ক্ষণই তাই উদ্বেগে কাটছে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের।
ঘড়ির কাঁটা ধরে ওই এক ঘণ্টার জন্যই এখন কোমর বাঁধছে ইসরো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy