সূর্য ডুবলে শনিবার কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাবে তাদের। উজ্জ্বল, লম্বা লেজের জোড়া ধূমকেতু। এক জনের নাম লিমন। এক জনের নাম সোয়ান। শত শত বছর পরে তারা পৃথিবীর কাছে আসছে। একই দিনে, ২১ অক্টোবর, অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার তারা পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে। এই ঘটনা বিরল বলেই মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। জোড়া ধূমকেতুর একটিকে দেখা যাবে খালি চোখেই। অন্যটি দেখতে হলে প্রয়োজন দূরবীন। তবে তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা উত্তর গোলার্ধেই আগামী কয়েক দিন আকাশের দিকে তাকালে দেখা যাবে এই জোড়া ধূমকেতুকে। সোয়ান পৃথিবীর কাছে আসছে ৬৫০ বছর পরে। ১,৩৫০ বছর আগে পৃথিবীর কাছে এসেছিল লিমন। সে সময় কি কারও চোখে পড়েছিল সেই দু’টি ধূমকেতু? এই প্রশ্নের জবাব আজ আর পাওয়া যাবে না। এত দীর্ঘ বছর পরে আবার পৃথিবীর কাছে আসছে লিমন এবং সোয়ান। তা-ও আবার একই দিনে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কাছে আসছে তারা। বিজ্ঞানীরা লিমনকে প্রথম দেখেন জানুয়ারি মাস নাগাদ। সোয়ান তাঁদের চোখে পড়ে সেপ্টেম্বরে। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মাত্র ৭৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে দেখা যাবে এই জোড়া ধূমকেতুকে। যেখানে সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার।
সন্দীপ জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় সোয়ান থাকবে আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রের উপরে স্কুটাম। সূর্য ডোবার সময়ে ৫০ ডিগ্রি উঁচুতে থাকবে সে। তার পরে ৪০ ডিগ্রি উঁচুতে থাকবে। আকাশ পরিষ্কার থাকার কারণে শনিবার সুন্দর দেখা যাবে তাকে। একটা দূরবীন চোখে দিলেই চলবে। ধূমকতেু যত পৃথিবীর দিগন্তের কাছে আসবে, টেলিস্কোপ দিয়ে দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে। অন্য দিকে, বুটিস কনস্টেলেশনের কাছে থাকবে লিমন। শনিবার সূর্য ডোবার সময়ে ১৫ ডিগ্রি উপরে থাকবে সেটি। ২১ তারিখ পৃথিবীর ১১ ডিগ্রি উপরে থাকবে। সূর্য ডুবলেই একে দেখতে হবে। তবে পৃথিবীর দিগন্তরেখার এতটাই কাছে রয়েছে লিমন, যে তাকে দেখতে পাওয়া সমস্যার। যদিও লিমনকে খালি চোখেই দেখা যাবে।
এই লিমন এবং সোয়ান দু’টিই আমাদের সৌরজগতের। কিন্তু পৃথিবী থেকে তারা এতটাই দূরে রয়েছে, যে তার কাছে আসছে শত শত বছর সময় লাগছে। এই দুই ধূমকেতুই উর্ট ক্লাউডের বাসিন্দা। প্লুটোর ওপারে সেই সেই উর্ট ক্লাউড। কোটি কোটি বছর আগে যখন সৌরজগৎ তৈরি হয়েছিল, তখন তা থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসে তৈরি হয় ধূমকেতু। মূলত বরফ এবং গ্যাস দিয়ে তৈরি। তার পরে সূর্যের চারপাশে যখন ঘোরে, তখন তার উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। তৈরি হয় লেজ।