Advertisement
E-Paper

বিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রপাতের হদিস! মেঘে মেঘে ৮২৯ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিল একটিই বিদ্যুৎঝলক

বিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রবিদ্যুকের ঝলকের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি গবেষণার মাধ্যমে তার দৈর্ঘ্য এবং স্থায়ীত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। কী ভাবে মেঘের গর্ভে ওই বজ্রের জন্ম হল?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৯

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

টেক্সাসের ডালাস থেকে মিসৌরির কানসাস। দূরত্ব ৮২৯ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছিল একটিমাত্র বিদ্যুৎ-ঝলক। সেটিই বিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রপাত, গবেষণা করে নিশ্চিত হলেন বিজ্ঞানীরা। কী ভাবে মেঘের গর্ভে ওই বজ্রের জন্ম হল, কী ভাবে তা একবারে এতটা পথ পাড়ি দিল, তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। মেঘের গর্ভে বজ্রঝলকের উৎপত্তি নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীদের মতে, একটিমাত্র বিদ্যুতের ঝলককে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আগে কখনও দেখা যায়নি।

কবে কোথায়

২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে প্রবল ঝড় উঠেছিল। সেই সময়েই পৃথিবীর দীর্ঘতম বজ্রপাতটি ঘটে। বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই বুলেটিন অফ দ্য আমেরিকান মেটেরোলজিক্যাল সোসাইটি (বিএএমএস) নামক পত্রিকায় এই বজ্রপাতের ব্যাখ্যা দিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে একে ‘মেগাফ্ল্যাশ’ বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকেরা। আমেরিকার দক্ষিণের টেক্সাস প্রদেশের ডালাস শহরের উপর বজ্রঝলকের উৎপত্তি ঘটেছিল। তা মেঘের মধ্যে দিয়ে বয়ে দিয়েছে মিসৌরি প্রদেশের কানসাস শহর পর্যন্ত। এই ৮২৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ৭.৩৯ সেকেন্ড। অর্থাৎ, টানা প্রায় সাড়ে সাত সেকেন্ড ধরে আকাশে ছিল ওই বিদ্যুতের ঝলক।

‘মেগাফ্ল্যাশ’ কী

অস্বাভাবিক লম্বা বজ্রঝলককে ‘মেগাফ্ল্যাশ’ বলা হয়ে থাকে। এগুলি অত্যন্ত বিরল। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রতি এক হাজার বজ্রপাতের মধ্যে একটি মাত্র ‘মেগাফ্ল্যাশ’ হয়ে উঠতে পারে। আটলান্টার পদার্থবিদ মাইকেল পিটারসনের মতে, ‘‘এগুলি যেমন দীর্ঘ, তেমন জটিল এই বজ্রবিদ্যুতের বিন্যাস। ‘মেগাফ্ল্যাশ’ শুধু মেঘ থেকে মেঘেই নয়, মেঘ থেকে ভূমিতেও শক্তি সঞ্চারিত করে। সাধারণ বজ্রবিদ্যুৎ ভূমিতে আঘাত করে কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের জন্য। ‘মেগাফ্ল্যাশ’-এর দাপটের মেয়াদ অন্তত ১০০ মিলিসেকেন্ড।’’ এতে উঁচু গাছের প্রভূত ক্ষতি হয়। এমনকি, দাবানলও ঘটে এর ফলে।

‘মেগাফ্ল্যাশ’ নজির

এর আগে বিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রবিদ্যুতের নজিরও হয়েছিল আমেরিকায়। ২০২০ সালে মিসিসিপি, লুইসিয়ানা এবং টেক্সাস হয়ে মোট ৭৬৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিল একটি বজ্রঝলক। এত দিন তাকেই বিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রবিদ্যুৎ বলে মনে করা হত। কিন্তু সম্প্রতি ২০১৭ সালের বজ্রপাতটিকে ওই তকমা দেওয়া হয়েছে। তার আগের নজির ছিল দক্ষিণ আমেরিকায়। ব্রাজ়িল এবং আর্জেন্টিনার বেশ কিছু অংশে ২০১৮ সালে একটি বজ্রবিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়েছিল। মেয়াদ ছিল টানা ১৭ সেকেন্ড, দৈর্ঘ্য ছিল ৭০৯ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্যে বড় না হলেও দীর্ঘস্থায়ী বজ্রপাতের পৃথক নজির রয়েছে। ২০২০ সালে উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার আকাশে একটি বজ্রপাত ঘটেছিল, যা ১৭.১ সেকেন্ড স্থায়ী হয়।

কী ভাবে সৃষ্টি

পিটারসন জানিয়েছেন, বজ্রগর্ভ মেঘে প্রচুর বৃষ্টি এবং তুষারকণা একত্রিত হয়। সেগুলি ক্রমে উপরের দিকে উঠতে থাকে। এই প্রত্যেক কণায় বিদ্যুৎ থাকে। তারা যখন একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখন সেই বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এবং বজ্রবিদ্যুৎ গড়ে ওঠে। কণাগুলি কতটা উপরে উঠতে পারে, তার নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ কিলোমিটারের বেশি উপরে তা ওঠে না। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ারের সীমা পর্যন্তই পৌঁছোতে পারে মেঘের জলকণা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই কণাগুলি যখন আর উপরে উঠতে পারে না, তখনই বজ্রপাত ঘটে। পিটারসন বলেছেন, ‘‘বিদ্যুৎযুক্ত জলকণার প্রকাণ্ড এবং আনুভূমিক এক-একটি স্তর তৈরি হয় আকাশে। মেগাফ্ল্যাশের প্রধান উপকরণ লুকিয়ে সেই স্তরেই।’’

মেগাফ্ল্যাশ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন, মানছেন বিজ্ঞানীরা। কী ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘের মধ্যে এই বিশাল, দীর্ঘস্থায়ী বজ্রপাতের সম্ভাবনা ঘনিয়ে উঠতে থাকে, কী ভাবে সাধারণ বজ্রপাতের সঙ্গে তার ফারাক তৈরি হয়, তা নিয়ে এখনও অনেক কিছুই অজানা। সে সমস্ত দিক নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। পিটারসন বলেন, ‘‘মেগাফ্ল্যাশের এক-একটি ঝলক একসঙ্গে প্রচুর সংখ্যক মানুষের ক্ষতি করতে সক্ষম। এগুলিই সবচেয়ে প্রভাবশালী বজ্রপাত বলে স্বীকৃত। এগুলি সম্বন্ধে আরও তথ্য জানতে পারলে, এর গঠন এবং উৎপত্তির আরও খুঁটিনাটি পেলে তা আমাদের পক্ষে মঙ্গল। কারণ, সাধারণ মানুষ ও জীবজগতকে সুরক্ষিত রাখতে এই ধরনের বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পাওয়া জরুরি।’’

Lightening Thunderstorm Thunder strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy