কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা দেবীপ্রসাদ দুয়ারি (ইনসেটে)।
• চাঁদের সঙ্গে ‘ম্যাক্রো’ আর ‘মাইক্রো’ শব্দটা জুড়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। নানা চেহারার চাঁদ দেখতে আমরা অভ্যস্ত। বাঁকা চাঁদ, আঁকা চাঁদ, কাস্তে চাঁদ, টুকরো চাঁদ। নানা পুর্ণিমার নানা রকমের চাঁদ। পূর্ণগ্রাস ও খণ্ডগ্রাসের চাঁদ। ব্লাড মুন, ব্লু মুন, ব্লু-ব্লাড মুন। আরও কত রকমের চাঁদ, তার ইয়ত্তা নেই। চাঁদ নিয়ে যেমন শেষ নেই কাহিনীর, কাব্যের, তেমনই বিশ্বের নানা প্রান্তে চাঁদের ওপর নির্ভরশীল চাষবাসের মরশুমও। এ বার পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের চাঁদের ‘চরিত্র’ কী? তা কোন গোত্রে পড়ে?
দেবীপ্রসাদ দুয়ারি: শুক্রবার আমরা যে চাঁদকে দেখব, গোত্রে তা ‘মাইক্রো-মুন’। মানে, আমরা সাধারণত যে চেহারার চাঁদ দেখি, তার চেয়ে বেশ কিছুটা ছোট। তাই এই ধরনের চাঁদকে বলা হয় ‘মাইক্রো-মুন’। ছোট চাঁদ। আর তা চেহারায় বড় দেখালে তাকে বলি ‘ম্যাক্রো-মুন’।
• কেন চেহারায় ছোট-বড় হয় পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ?
দেবীপ্রসাদ দুয়ারি: চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। এক বার পাক খেতে সময় নেয় গড়ে প্রায় সাড়ে ২৭ দিন। এই সাড়ে ২৭ দিনে চাঁদ তার কক্ষপথে এক বার পৃথিবীর নিকটতম বিন্দুতে (পেরিজি বা অনুভূ) থাকে। পেরিজিতে থাকলে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব হয় প্রায় ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার কিলোমিটার। আর যখন পৃথিবী থেকে দূরতম বিন্দুতে (অ্যাপোজি বা অপভূ) থাকে চাঁদ, তখন আমাদের থেকে তার দূরত্ব হয় প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার কিলোমিটার। আগামী ২৭ জুলাই চাঁদ থাকবে সেই অ্যাপোজিতেই। বা, তার কক্ষপথের দূরতম বিন্দুতে। তাই চাঁদকে ছোট দেখাবে। চাঁদ হয়ে যাবে ‘মাইক্রো-মুন’।
• আবার কবে দেখা যাবে এতটা সময় ধরে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ?
দেবীপ্রসাদ দুয়ারি: আজ থেকে ঠিক ১০৫ বছর পর। ২১২৩ সালের ১৯ জুন। নাসার তথ্য অনুযায়ী, সেই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে ১ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ৬ সেকেন্ড ধরে। তার মানে, এ বারের চেয়ে সেই পূর্ণগ্রাসের সময় আরও ৩ মিনিট ৬ সেকেন্ড বেশি হবে। এর আগে, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই এক ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ধরে চলেছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তার ১১ বছর পর, ২০১১ সালের ১৫ জুন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে। এ বার সব ‘রেকর্ড’ ভেঙে চন্দ্রগ্রহণ হবে ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটের। ভারতে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই একটি চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে, তবে তা আংশিক। ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি হবে আরও একটি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তবে তা ভারত থেকে দেখা যাবে না।
আরও পড়ুন- চাঁদ কেন হয়ে যাবে ব্লাড মুন? কেন এত উজ্জ্বল হবে মঙ্গল?
আরও পড়ুন- শুক্রবার চার ঘণ্টার চন্দ্রগ্রহণ, কোথা থেকে কেমন দেখতে পাবেন, জেনে নিন
• কেন চাঁদের গতি কমে যাবে ওই সময়?
দেবীপ্রসাদ দুয়ারি: ওই অবস্থানে থাকার সময় চাঁদের গতিবেগ কমে হবে। কেপলারের সূত্র অনুযায়ী, চাঁদ যতই তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবী থেকে সরে যায় দূরে, ততই তার গতিবেগ কমে যায়। আর পৃথিবীর কাছে এলে বেড়ে যায় তার গতিবেগ।
• কেন শতাব্দীর দীর্ঘতম এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ?
দেবীপ্রসাদ দুয়ারি: এই গ্রহণে চাঁদ পৃথিবীর ছায়া-কোণের প্রায় কেন্দ্রস্থল দিয়ে অতিক্রম করবে। তার মানে, কম গতিবেগে তার কক্ষপথে থাকা চাঁদ তার গ্রহ পৃথিবীর ছায়া-কোণের প্রায় দীর্ঘতম পথ অতিক্রম করবে। আর ওই সময় চাঁদের গতিবেগ কম থাকবে বলে পৃথিবীর ছায়া-কোণের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে বেশি সময় লাগবে চাঁদের। তাই এটি হবে শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ।
আরও পড়ুন- পৃথিবীতে এক দিন আর কোনও গ্রহণই হবে না!
• আবার কবে পৃথিবীর এত কাছে আসবে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গল?
দেবীপ্রসাদ দুয়ারি: সেটা হবে ২২৮৭-র ২৮ অগস্ট এবং ২৭২৯ সালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy