Advertisement
E-Paper

সূর্যের বুকে বিন্দু হয়ে পরশু বুধের হামাগুড়ি

সূর্যের মুখে যেন ছোট্ট একটা তিল! তবে স্থির নয়। একটু একটু করে সরে যাচ্ছে! আগামী সোমবার, ৯ মে বিকেলে অস্তাচলগামী সূর্যের দিকে টেলিস্কোপ তাক করলে এমনটাই দেখা যাবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সূর্যের মুখে কালো তিলের মতো গজিয়ে ওঠা বস্তুটি আদতে সৌরজগতের খুদে সদস্য। বুধগ্রহ।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০৩:৪৬
পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল থেকে এমনই দেখাবে বুধের সরণ। তবে স্থানভেদে এই গতিপথ পাল্টে যেতে পারে।

পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল থেকে এমনই দেখাবে বুধের সরণ। তবে স্থানভেদে এই গতিপথ পাল্টে যেতে পারে।

সূর্যের মুখে যেন ছোট্ট একটা তিল! তবে স্থির নয়। একটু একটু করে সরে যাচ্ছে!

আগামী সোমবার, ৯ মে বিকেলে অস্তাচলগামী সূর্যের দিকে টেলিস্কোপ তাক করলে এমনটাই দেখা যাবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সূর্যের মুখে কালো তিলের মতো গজিয়ে ওঠা বস্তুটি আদতে সৌরজগতের খুদে সদস্য। বুধগ্রহ। আর এই মহাজাগতিক কাণ্ডটির নাম সূর্যের উপরে বুধের সরণ। যা কিনা শেষ বার হয়েছিল ২০০৬-এর ৬ নভেম্বরে। ভারতে শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চলই দৃশ্যটির সাক্ষী থাকতে পেরেছিল। তা-ও সে বার সরণের শেষটুকু দেখেই আশ মেটাতে হয় উৎসাহীদের।

এ বার অবশ্য বঙ্গবাসীর খেদ মিটছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশন্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলেছেন, রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় বুধের সরণ চোখে পড়বে। পরশু ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে ৪১ মিনিটে সূর্যের বাইরের অংশ স্পর্শ করবে বুধ। তার মিনিট কয়েক পর থেকে প্রত্যক্ষ করা যাবে বিরল ওই মহাজাগতিক ঘটনা। কত ক্ষণ?

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কলকাতায় দেখা যাবে ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট ধরে। শিলিগুড়িতে বুধের সূর্য-সরণের স্থায়িত্ব হবে ১ ঘণ্টা ৩২ মিনিট, মুর্শিদাবাদে ১ ঘণ্টা ২৯ মিনিট আর কোচবিহারে ১ ঘণ্টা ২৮ মিনিট।

দেশের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে সূর্য অস্ত যায় দেরিতে। তাই সেখানকার লোকজন বুধের সরণ দেখবেন প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা ধরে। সূর্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে বুধের সময় লাগবে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা। পুরো সরণ-পর্বের সাক্ষী থাকবে উত্তর আমেরিকার পূর্ব প্রান্ত, লাতিন আমেরিকার উত্তরাংশ উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আটলান্টিক।

সৌরজগতের অবস্থান মোতাবেক পৃথিবী রয়েছে তিন নম্বর কক্ষে। তার আগে বুধ ও শুক্র। তাই শুধু বুধ নয়, সূর্যের উপর দিয়ে শুক্রের সরণও পৃথিবী থেকে দেখা যায়। বুধের সরণ ঘটে প্রতি একশো বছরে ১৩-১৪ বার। শুক্রেরটা আরও বিরল। ক্রমান্বয়ে তা ঘটে ৮ বছর, ১০৫ বছর, ৮ বছর ও ১২১ বছর অন্তর। শেষ বার হয়েছে ২০১২-য়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসেবে আবার হবে ২১১৭-য়।

অর্থাৎ ২০১২-র জুনে যাঁরা শুক্রের সরণ চাক্ষুষ করেছিলেন, জীবদ্দশায় তাঁরা আর তা দেখতে পাবেন না। অন্য দিকে সোমবারের পরে ভারতে বসে বুধের সরণ দেখতে হলে ২০৩২ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, ২০১৯-এর ১১ নভেম্বর বুধগ্রহ ফের সূর্যের উপর দিয়ে ‘হাঁটবে’ বটে, তবে ভারত থেকে দেখা যাবে না।

সূর্যের উপর দিয়ে গ্রহের এমন সরণের অর্থ কী?

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: সূর্যগ্রহণের নেপথ্যে যে জ্যামিতিক কারণ, সরণের ক্ষেত্রেও তা-ই। অর্থাৎ, সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে একটি সরলরেখা বরাবর কোনও গ্রহ বা উপগ্রহের উপস্থিতি। কিন্তু গ্রহণে তো সূর্য যেন ঢাকা পড়ে যায়! এখানে তেমন হয় না কেন?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব তুলনায় কম। ফলে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝামাঝি চাঁদ এলে জ্যামিতিক কারণেই সূর্যকে চাঁদের আড়ালে চলে যেতে হয়। আবার পৃথিবী থেকে বুধ ও শুক্রের দূরত্ব অনেক বেশি। তাই এক সরলরেখায় এলে তাদের দেখায় সূর্যের বুকে কালো বিন্দুর মতো।

এ হেন দৃশ্য দেখতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি— বিকেলের সূর্যের দিকেও খালি চোখে তাকানো উচিত নয়। তাতে চোখের ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়। ওই দৃশ্য দেখতে হলে টেলিস্কোপে সোলার ফিল্টার লাগিয়ে দেখা যেতে পারে। তার চেয়েও ভাল, টেলিস্কোপের সাহায্যে সাদা পর্দায় প্রতিবিম্ব তৈরি করা। এ ছাড়া অ্যালুমিনাইজড মাইলার, কালো পলিমার কিংবা ১৪ নম্বর শেডের ওয়েল্ডিং গ্লাস দিয়ে দেখার উপায় রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy