মহাকাশে এই প্রথম নতুন একটি গ্রহ খুঁজে পেল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। নতুন গ্রহটির ছবি ধরা পড়েছে টেলিস্কোপের ক্যামেরায়। গ্রহটি পৃথিবী থেকে ১১০ আলোকবর্ষ দূরে অন্য এক নক্ষত্রপুঞ্জে রয়েছে। তার বয়স পৃথিবী বা সৌরজগতের চেয়ে অনেকটা কম। তবে এই নতুন গ্রহ আকারে সৌরজগতের শনিগ্রহের সমান। নতুন গ্রহটিকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। আবিষ্কারের সঙ্গে নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে নাসার বিশেষ টেলিস্কোপটিও। এর আগে নক্ষত্র থেকে এত দূরের কোনও গ্রহের অস্তিত্ব সরাসরি ছবিতে ধরা যায়নি।
আলো এক বছরে যত দূরত্ব অতিক্রম করে (সাড়ে ন’লক্ষ কোটি কিলোমিটার), তাকে বলা হয় এক আলোকবর্ষ। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবী থেকে ১১০ আলোকবর্ষ দূরে অ্যান্টলিয়া নক্ষত্রপুঞ্জে নতুন গ্রহের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনি। নতুন গ্রহটি আকারে তার সমান। তবে এর বয়স খুব বেশি নয়। বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, আনুমানিক ৬০ লক্ষ বছর আগে এই গ্রহের জন্ম। পৃথিবী এবং সৌরজগতের জন্ম অন্তত সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে।
আরও পড়ুন:
যে নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে নতুন আবিষ্কৃত গ্রহ, তা সূর্যের চেয়ে বেশ খানিকটা ছোট। টিডব্লিউএ৭ নামের ওই নক্ষত্রের সঙ্গে নতুন গ্রহের দূরত্ব পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যেকার দূরত্বের ৫২ গুণ বেশি। সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুনও সূর্যের থেকে এত দূরে নেই। নেপচুন এবং সূর্যের দূরত্ব পৃথিবী-সূর্যের দূরত্বের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি।
১৯৯০-এর দশক থেকে এখনও পর্যন্ত মহাকাশে সৌরজগতের বাইরে প্রায় ৫,৯০০টি নতুন গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত আবিষ্কারের অধিকাংশই হয়েছে পরোক্ষ পদ্ধতিতে। প্রত্যক্ষ ভাবে ছবি তুলে নতুন গ্রহের অস্তিত্বের প্রমাণ দেখাতে পারেননি অনেকেই। দূরের গ্রহ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হল ‘ট্রানজ়িট মেথড’। কোনও নক্ষত্রের সামনে দিয়ে গ্রহ পাক খাওয়ার সময়ে তার ছায়ায় নক্ষত্রের আলো সামান্য কমে আসে। সেই আলো থেকে গ্রহের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা। একে ‘ট্রানজ়িট মেথড’ বলা হয়। সরাসরি ছবি তুলে গ্রহের অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়ার মতো ঘটনা দুই শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে হয়েছে, যা করে দেখাল নাসার জেমস ওয়েব।
পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড় হলেও এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত গ্রহের আবিষ্কারে সরাসরি ছবির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তাদের বিচারে জেমস ওয়েবের এই নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটি বেশ ছোট। এই পদ্ধতিতে শেষ আবিষ্কৃত গ্রহটির তুলনায় এই নতুন গ্রহের আকার ১০ গুণ কম। তা সত্ত্বেও এর নিখুঁত ছবি তুলতে পেরেছে জেমস ওয়েব। নাসার টেলিস্কোপের সংবেদনশীলতা এবং দক্ষতা তাই এখন চর্চার কেন্দ্রে। নতুন গ্রহের ছবি তোলার জন্য জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটিতে ফ্রান্স প্রযোজিত করোনাগ্রাফ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এটি বিশেষ পদ্ধতিতে যে কোনও নক্ষত্রের আলো আটকে দিতে সাহায্য করে। তার ফলে নক্ষত্রটির সামনে থাকা গ্রহগুলিকে দেখতে পাওয়া যায়।
নতুন এই গ্রহের পরিবেশ, আবহাওয়া সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞানীরা তেমন কোনও তথ্য পাননি। তবে যেহেতু গ্রহটি এখনও নতুন, মনে করা হচ্ছে, এখনও চারপাশ থেকে উপাদান সংগ্রহ করে এই গ্রহ নিজের ভর আরও বৃদ্ধি করছে। পৃথিবীর মতো এই গ্রহ পাথুরে নয়, এটি মূলত গ্যাসীয় গ্রহ। ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই গ্রহ সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।