Advertisement
E-Paper

সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা দ্বিতীয় দ্রুততম গ্রহাণুর খোঁজ মিলল এত দিন পরে! কক্ষপথে পাক খায় মাত্র ১২৮ দিনে

সূর্যকে খুব কাছ থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাত্র ১২৮ দিনে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ‘২০২৫ এসসি৭৯’। কিন্তু সূর্যের আলোর ঝলকানির কারণে এত দিন জানাই যায়নি এই গ্রহাণুর অস্তিত্বের কথা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০০
সূর্যকে খুব কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহাণুর খোঁজ পেলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।

সূর্যকে খুব কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহাণুর খোঁজ পেলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। —প্রতীকী চিত্র।

এত দিন ধরে ‘লুকিয়ে’ ছিল সূর্যের আড়ালে। পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্যেই এটি সূর্যের চার দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সূর্যের চোখ ধাঁধানো আলোয় এত দিন ঠাহর করা যায়নি এই পাথরের পিণ্ডটিকে। অবশেষে মহাকাশবিজ্ঞানীদের কাছে ধরা দিল এত দিন ধরে ‘লুকিয়ে’ থাকা গ্রহাণুটি।

মহাকাশবিজ্ঞানীরা সদ্য খুঁজে পাওয়া এই গ্রহাণুটির নাম রেখেছেন ‘২০২৫ এসসি৭৯’। ব্যাস প্রায় ৭০০ মিটার। সূর্যের চার দিকে এক বার পাক খেতে এটি সময় নেয় মাত্র ১২৮ দিন। আমাদের সৌরমণ্ডলে এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গ্রহাণুগুলির মধ্যে এটির কক্ষপথই দ্বিতীয় দ্রুততম। এর আগে ২০২১ সালে একটি গ্রহাণুর খোঁজ মিলেছিল, যেটি ১১৩ দিনে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পরে আরও একটি গ্রহাণুর খোঁজ মেলে, সেটিও ১১৩ দিনেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ‘২০২৫ এসসি৭৯’ সূর্যকে এক বার প্রদক্ষিণ করতে তাদের চেয়ে ১৫ দিন বেশি সময় নেয়।

আমেরিকার ‘কার্নিজ সায়েন্স’-এর মহাকাশবিজ্ঞানী স্কট এস শেপার্ড এই গ্রহাণুটি প্রথম আবিষ্কার করেন। এটি একটি ‘আটিরা’ গ্রহাণু (পৃথিবীর কক্ষপথের ভিতরেই যে গ্রহাণুগুলি ঘুরে বেড়ায় সেগুলিকে আটিরা গ্রহাণু বলা হয়)। এই নিয়ে ৩৯টি ‘আটিরা’ গ্রহাণুর খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যকে খুব কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করছে নতুন খুঁজে পাওয়া এই গ্রহাণুটি। পৃথিবী তো বটেই, আরও নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে শুক্রের কক্ষপথের ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে ‘২০২৫ এসসি৭৯’। ১২৮ দিনের কক্ষপথে এটি বুধের কক্ষপথের ভিতরেও প্রবেশ করে যায় কখনও কখনও।

নতুন খুঁজে পাওয়া এই গ্রহাণুটির কথা গত সপ্তাহেই প্রকাশ্যে এনেছে ‘কার্নিজ সায়েন্স’। তারা জানাচ্ছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর শেপার্ড প্রথম এই গ্রহাণুটিকে লক্ষ করেন। সূর্যকে খুব কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করছে এটি। ফলে সৌরছটার ঝলকানির জন্য এটি এত দিন দেখা যায়নি।

সৌরছটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা গ্রহাণুগুলি পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। কারণ, এগুলি থেকে যে স্বল্প পরিমাণ আলো প্রতিফলিত হয়, তা সূর্যের আলোর আড়ালে ঢেকে যায়। এগুলি চিহ্নিত না-হওয়ার ফলে এদের কক্ষপথও বোঝা যায় না। কোনও গ্রহাণুর কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথকে অতিক্রম করে যাচ্ছে কি না, তা-ও বোঝার উপায় থাকে না। ফলে সেগুলির সঙ্গে পৃথিবীর ঠোকাঠুকি লাগতে পারে কি না, তা-ও অজানা থেকে যায়। এমন ‘লুকিয়ে থাকা’ গ্রহাণুগুলিরই খোঁজ চালাচ্ছেন শেপার্ড এবং তাঁর গবেষক দল।

তাঁদের এই কাজে অর্থসাহায্য করেছে নাসাও। ‘ডার্ক এনার্জি ক্যামেরা’ এবং আমেরিকার ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’-এর বিভিন্ন টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পৃথিবীর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, এমন গ্রহাণুগুলির খোঁজ চালাচ্ছে তারা। ওই খোঁজ চালানোর সময়েই ধরা পড়ে ‘২০২৫ এসসি৭৯’। ‘কার্নিজ সায়েন্স’-এরর ম্যাগেনাল টেলিস্কোপ এবং ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’ জেমিনি টেলিস্কোপ— উভয়ের দৃষ্টিতেই এই নতুন গ্রহাণুটি ধরা পড়েছে।

মহাকাশবিজ্ঞানী শেপার্ডের কথায়, “যে গ্রহাণুগুলি সবচেয়ে বিপজ্জনক, সেগুলিই শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি কঠিন।” কেন, সেই ব্যাখ্যাও দেন তিনি। শেপার্ড জানান, গ্রহাণু-গবেষণা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ সাধারণত রাতের আকাশেই করা হয়। কারণ রাতের অন্ধকারে এগুলিকে শনাক্ত করা সবচেয়ে সহজ হয়। কিন্তু যে গ্রহাণুগুলি সূর্যের খুব কাছাকাছি ‘লুকিয়ে’ থাকে, সেগুলিকে কেবলমাত্র গোধূলির সময়েই দেখা যেতে পারে। সেই কারণেই এই গ্রহাণুটির বিষয়ে এত দিন জানতে পারেননি মহাকাশবিজ্ঞানীরা।

এখন অবশ্য এই গ্রহাণুটি সূর্যের পিছন দিকে চলে গিয়েছে। তাই আপাতত বেশ কয়েক মাস টেলিস্কোপে আর দেখা যাবে না গ্রহাণুটিকে। তবে সূর্যের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলে, ফের দেখা যাবে এটিকে। সূর্যকে কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করার সময়ে গ্রহাণুটিতে কোনও পরিবর্তন দেখা যায় কি না, সে বিষয়ে আরও বিশদ গবেষণা করতে চাইছেন শেপার্ড এবং তাঁর দল।

Space Asteroid Solar System
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy