Advertisement
E-Paper

কৃত্রিম রক্তই এ বার বাঁচিয়ে দেবে প্রাণ?

এ বার কি কৃত্রিম রক্তই বাঁচিয়ে দিতে পারবে আমাদের প্রাণ? এক বোতল রক্তের জন্য আমাদের মাথা কুটে মরার দিন কি তবে সত্যি-সত্যিই শেষ হতে চলেছে? ঠিক যেমনটি চাইছি, ব্লাড ব্যাঙ্কে সেই গ্রুপের রক্তের ঘাটতি থাকলেও কি আর ভাবনায় তেমন করে মাথার চুল ছিঁড়তে হবে না?

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ১৫:১১
কৃত্রিম রক্তকোষ।

কৃত্রিম রক্তকোষ।

এ বার কি কৃত্রিম রক্তই বাঁচিয়ে দিতে পারবে আমাদের প্রাণ? এক বোতল রক্তের জন্য আমাদের মাথা কুটে মরার দিন কি তবে সত্যি-সত্যিই শেষ হতে চলেছে? ঠিক যেমনটি চাইছি, ব্লাড ব্যাঙ্কে সেই গ্রুপের রক্তের ঘাটতি থাকলেও কি আর ভাবনায় তেমন করে মাথার চুল ছিঁড়তে হবে না?

স্বাভাবিক রক্তকোষের সুস্থতার ঘাটতিটুকু কি এ বার গবেষণাগারে বানানো রক্তকোষ দিয়েই আমরা পুষিয়ে নিতে পারব? মানে, একেবারে অনেক দিন ধরে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো রক্তকোষও হয়তো এ বার আমরা বানিয়ে ফেলতে পারব ল্যাবরেটরিতে।

এ কথাটা কেন এতটা জোর দিয়ে বলতে পারছি, জানেন? গবেষণাগারে ‘হাতেগরম’ কৃত্রিম রক্তকোষ বানানোর ‘রাস্তাঘাটগুলো’ আমাদের অল্প-বিস্তর জানা থাকলেও, মানুষের হাতে বানানো সেই রক্তকোষগুলিকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা বা সেগুলিকে দিয়ে একেবারে স্বাভাবিক রক্তকোষের মতো কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি এখনও পর্যন্ত।

কেন সম্ভব হয় না, তার কারণটা তন্নতন্ন করে খুঁজেও এত দিন জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এ বার তার আদত কারণটা জানা গিয়েছে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের।

কী সেই কারণ, যার জন্য কৃত্রিম রক্তকোষ দিয়েও স্বাভাবিকের মতোই কাজটা চালিয়ে নেওয়া যাবে, আর তা চালিয়ে নেওয়া যাবে অনেক দিন ধরে?


রক্তের স্টেম সেল থেকে কৃত্রিম রক্তকোষ তৈরির ধাপগুলি

সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, খোলা আকাশের নীচে রোদে-জলে পড়ে থাকা গাড়িতে যেমন মরচে ধরে, ঠিক তেমন ভাবেই মরচে পড়ে আমাদের শরীরের স্টেম সেলে। বায়ুমণ্ডলের (পড়ুন, বাতাস) অক্সিজেনই আদতে ‘পচন’ (পড়ুন, মরচে) ধরিয়ে দেয় আমাদের শরীরের স্টেম সেলে। যে পদ্ধতিতে সেটা হয়, তাকে বলে ‘জারণ’ বা অক্সিডেশন। গবেষকরা অবাক হয়ে দেখেছেন, শুধু খোলা আকাশের নীচে রোদে-জলে গাড়ি ফেলে রাখলেই যে তাতে মরচে পড়ে, তা নয়; মাতৃগর্ভে যখন ভ্রুণ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে, বড় হয়ে উঠছে, তখনও অত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার এমব্রায়োনিক স্যাকে মরচে পড়ে ওই অক্সিজেনেরই ‘কারসাজি’তে। আর সেটাও কিন্তু ওই ‘জারণ’ বা অক্সিডেশনই। আর মরচে পড়া কোনও জিনিস যেমন অকেজো, অচল বা পঙ্গু হয়ে যায় ধীরে ধীরে, ঠিক তেমনই মরচে ধরার ফলে স্টেম সেলগুলির কাজকর্মও বন্ধ হয়ে যায় এক সময়। সেগুলি অচল, অকেজো হয়ে পড়ে। ‘রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পেসিস ইমপেয়ার দ্য ফাংশন অফ সিডি-৯০ হেমাটোপোয়েটিক প্রোজেনিটরস্‌ জেনারেটেড ফ্রম হিউম্যান প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেলস্‌’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি অক্টোবরে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘স্টেম সেলস্‌’-এ। লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিলস্‌-জারনে উড্‌সের নেতৃত্বে ওই গবেষকদলে রয়েছেন অনাবাসী ভারতীয় স্টেম সেল গবেষক শোভিত সাক্সেনা।


লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শোভিত সাক্সেনা

গবেষকরা কাজটা করেছিলেন কী ভাবে?

কী ভাবে তৈরি হয় কৃত্রিম রক্তকোষ? দেখুন ভিডিও।

অনাবাসী ভারতীয় স্টেম সেল গবেষক শোভিত সাক্সেনা স্টকহোম থেকে পাঠানো ই-মেলে বলেছেন, ‘‘লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কাজটা করেছেন প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল নিয়ে। কী ভাবে, তার ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে বরং বুঝে নেওয়া যাক, প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল বলতে আদতে কী বোঝায়? প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল আদতে সেই ধরনের স্টেম সেল, যার থেকে শরীরের যে কোনও ধরনের কোষ চটজলদি বানিয়ে ফেলা যায়। তা সে রক্তকোষই হোক বা পাকস্থলী বা কিডনির কোষ। এই ধরনের প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল বানানো যায় দু’ভাবে। হয় ভ্রুণের থেকে কোষ নিয়ে। যাকে বলে, ‘এমব্রায়োনিক স্টেম সেল’ বা, ‘ইএস’। না হলে বয়স্ক মানুষের শরীরের কোষ নিয়ে। এগুলিকে বলা হয়, ‘ইনডিউস্‌ড প্লুরিপোটেন্ট সেল’ বা ‘আইপিএস’। গবেষকরা ওই প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল থেকেই কৃত্রিম ভাবে নতুন রক্ত বানানোর জন্য গবেষণাগারে কাজটা করেছিলেন বিশেষ ধরনের একটি কালচার সিস্টেম নিয়ে। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের সময় যার প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি, গবেষকদের আশা ছিল, সেই রক্তকোষ বা রক্তের স্টেম সেল ওই কালচার সিস্টেম থেকেই তাঁরা বানাতে পারবেন, ভবিষ্যতে। এই ধরনের প্রচেষ্টা খুব নতুন কিছু নয়। আগেও হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষণাগারে। এখনও হচ্ছে। তাতে কৃত্রিম রক্তকোষ বানানো সম্ভব হয়েছে বহু গবেষণাগারেই। কিন্তু গবেশকরা দেখেছেন, সেই কৃত্রিম রক্তকোষকে দিয়ে স্বাভাবিক রক্তকোষের কাজগুলিকে ঠিকঠাক ভাবে করানো যায় না। যদি বা তা অল্প সময়ের জন্য সম্ভব হয়ও, একটানা বেশি দিনের জন্য তা কখনওই করানো যায় না। গবেষণাগারে কৃত্রিম রক্তকোষ বানানো হলে সেগুলি স্বাভাবিক রক্তকোষের মতো দেখতে হলে হবে কি, সেগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক রক্তকোষের মতো বেড়ে ওঠে না, ছড়িয়েও পড়ে না।’’


লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন

মূল গবেষক নীলস্‌-জারনে উড্‌স তাঁদের গবেষণাপত্রে লিখেছেন, কেন স্বাভাবিক রক্তকোষের মতো কৃত্রিম রক্তকোষগুলি বেড়ে ওঠে না বা ছড়িয়ে পড়ে না, তারই কারণ খুঁজতে নেমেছিলাম আমরা। লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, কৃত্রিম রক্তকোষগুলিতে একটি বিশেষ ধরনের এমন প্রচুর অণু বা মলিকিউল থাকে, যেগুলি ওই কৃত্রিম রক্তকোষে ‘জারণ’ বা অক্সিডেশন ঘটায়। আর সেই ‘জারণ’টা হয় প্রচুর পরিমাণে আর অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। আর সেই ‘জারণ’ ওই কৃত্রিম কোষগুলির খুব ক্ষতি করে দেয়। সেগুলিকে নষ্ট করে দেয়। এতটাই যে, ওই কৃত্রিম কোষগুলি আর কালচার সিস্টেমে বেড়ে উঠতে পারে না। ছড়িয়ে পড়া তো দূরের কথাই। ‘জারণ’টাকে কমিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, কৃত্রিম রক্তকোষগুলির বৃদ্ধির হার বেড়ে যাচ্ছে অন্তত ২০ গুণ। সেখান থেকেই আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, কী কারণে কৃত্রিম রক্তকোষ বা রক্তের স্টেম সেলে মরচে পড়ে বা কী ভাবে সেই মরচে পড়ার গতিটাকে কমিয়ে কৃত্রিম রক্তকোষগুলির বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলা যায়।’’

ছবি ও ভিডিও সৌজন্যে: লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন

আরও পড়ুন- ডেঙ্গির টিকা থেকে এ বার ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর জিকা?

Now It may Be easier to produce artificial blood cells Rust Grows on Stem Cells Pluripotent Stem Cells
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy