Advertisement
E-Paper

শুধু বুদ্ধিই নয়, মানসিক রোগও আমরা পেয়েছি আদিমানবের থেকে! বলছে জিন নিয়ে নতুন গবেষণা

আধুনিক মানুষের মধ্যে পাওয়া ৩৩ হাজার ভিন্ন ভিন্ন জিনের আদিম উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন গবেষকেরা। তাতে দেখা যায়, ওই জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে গত ৩০ লক্ষ বছর থেকে চার হাজার বছরের মধ্যে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৮
আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগেও ছিল মানসিক সমস্যা!

আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগেও ছিল মানসিক সমস্যা! —প্রতীকী চিত্র।

শুধু বুদ্ধিই নয়, মানসিক সমস্যাও জিনগত ভাবে আদিম পূর্বপুরুষদের থেকেই পেয়েছে মানুষ। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানব মস্তিষ্কের বিবর্তন হয়েছে। বদল এসেছে জিনের ধারাতেও। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে প্রায় ৪,৭৫,০০০ বছর আগে। ওই প্রাচীন কালে আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-এর অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

আধুনিক মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় আফ্রিকা মহাদেশের মরোক্কোয়। সেখানে যে জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছে, সেটির আনুমানিক বয়স প্রায় তিন লক্ষ বছর। তারও আগে আধুনিক মানুষের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা জানা যায়নি। ধরে নেওয়া হয়, ওই সময় থেকেই আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয় পৃথিবীতে। তার আগে (প্রায় সাত থেকে দুই লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত) পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াতেন প্রাচীন মানব প্রজাতি হোমো হাইজেলবার্গেনসিসেরা। যদিও তাঁদের থেকেই সরাসরি আধুনিক মানুষের বিবর্তন হয়েছে বলে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ ফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগে থেকেই মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত জিনের অস্তিত্ব ছিল।

মানুষের সবচেয়ে কাছের পূর্বপুরুষ কারা, তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে প্রচলিত মতগুলি অনুসারে, মানুষের জীবিত পূর্বপুরুষদের মধ্যে রয়েছে শিম্পাঞ্জি এবং বোনোবো বানর (সাধারণ শিম্পাঞ্জির চেয়ে এদের শারীরিক গড়ন কিছুটা আলাদা)। এই দুই প্রাণীর সঙ্গেই মানুষের জিনের অনেকাংশে (প্রায় ৯৮ শতাংশ) মিল রয়েছে। আনুমানিক প্রায় ৫০ লক্ষ বছর আগে শিম্পাঞ্জি এবং বোনোবো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষের বিবর্তন শুরু হয়। ওই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের আকার প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আদিম মানুষের জীবাশ্ম থেকে তাঁদের মস্তিষ্কের আকার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু ওই সময়ে তাঁদের মগজের কী কী করার ক্ষমতা ছিল, তা নিয়ে খুব বেশি তথ্য জীবাশ্ম দিতে পারে না। এই সংক্রান্ত তথ্যের জন্য প্রয়োজন হয় মানবদেহের জিন সংক্রান্ত গবেষণা। সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মানুষের জিনের ধারার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি, মস্তিষ্কের আকার, উচ্চতায় বদল এসেছে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার সঙ্গেও জিনগত ধারার যোগ মিলেছে।

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের ‘সেন্টার ফর নিউরোজেনোমিক্স অ্যান্ড কগনিটিভ রিসার্চ’-এর গবেষক ইলান লিবেডিনস্কি এই দু’টি ক্ষেত্রকে নিয়ে একসঙ্গে গবেষণা চালান। তাতে লিবেডিনস্কি এবং তাঁর সহকর্মীরা দেখেন, মানুষের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগে। তার পর পরই এমন কিছু জিনেরও আবির্ভাব হয়, যেগুলির সঙ্গে বর্তমানে মানসিক সমস্যার যোগ রয়েছে। লিবেডিনস্কি জানান, মস্তিষ্ক এবং জিনের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি এবং মানসিক রোগ উভয়ই মানুষের মধ্যে এসেছে বলে গবেষণায় আভাস মিলেছে।

এই তথ্যগুলির জন্য আধুনিক মানুষের মধ্যে পাওয়া ৩৩ হাজার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জিনের আদিম উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন গবেষকেরা। তাতে দেখা যায়, ওই জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে গত ৩০ লক্ষ বছর থেকে চার হাজার বছরের মধ্যে। তুলনামূলক নতুন জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে গত ৬০ হাজার বছরের মধ্যে। বস্তুত, ওই সময়েই হোমো সেপিয়েন্সরা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বেরিয়ে অন্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েন বলে ধরে নেওয়া হয়।

কোন জিনগুলি কোন সময়ে আবির্ভূত হয়েছে, তারও একটি ‘টাইমলাইন’ তৈরি করেছেন গবেষকেরা। যেমন, হজম সংক্রান্ত ব্যাধিগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত জিনের আবির্ভাব হয়েছিল প্রায় আট লক্ষ বছর আগে। বর্তমানে ক্যানসারের সঙ্গে যে জিনোম সংক্রান্ত বিষয় জড়িত, সেটির আবির্ভাব হয় আনুমানিক ৫,৯০,০০০ বছর আগে। মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির এই সময়ে কোনও অস্তিস্ত দেখা যায়নি।

এর পরে আবির্ভূত হয় মানুষের উন্নত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি। যেমন, কোনও নতুন পরিস্থিতিতে সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করার বুদ্ধির সঙ্গে যে জিনগুলি জড়িত— তা বিবর্তিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগে। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির পর পরই আবির্ভাব হয়েছে মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি। প্রায় ৪,৭৫,০০০ বছর আগে এই সংক্রান্ত জিনগুলির আবির্ভাব হয়। আরও অনেক পরে, গত ৫০ হাজার বছর ধরে ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি বিকশিত হয়েছে। তারও পরে মদের প্রতি আসক্তি এবং বিষণ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি দেখা যায় মানবদেহে।

Genes Evaluation Human Genome
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy