Advertisement
E-Paper

মিশর তো নয়ই, চিলেও নয়! আরও প্রাচীন মমি আবিষ্কার ভিয়েতনাম ও চিনে, বদলে যেতে চলেছে ‘ইতিহাস’

এশিয়ায় আবিষ্কার হওয়া মমিগুলিই প্রমাণ করে নব্য প্রস্তর যুগ শুরুর আগে, যখন মানুষ শিকার করে খেত, তখন থেকেই দেহ সংরক্ষণের চল ছিল। নব্য প্রস্তর যুগ শুরু ৭০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে। ভিয়েতনামে আবিষ্কার হওয়া মমিটি আরও বেশি পুরনো।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:১০
মৃতদেহকে মমি করে রাখার এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন মিলল এশিয়ায়।

মৃতদেহকে মমি করে রাখার এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন মিলল এশিয়ায়। ছবি: সংগৃহীত।

মমি— কথাটি শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে প্রাচীন মিশরের কথা। হলিউডের বিভিন্ন সিনেমার দৌলতে মমির সঙ্গে মিশরের সম্পর্ক গেঁথে গিয়েছে মানুষের মনে। কিন্তু সবচেয়ে প্রাচীন মমির খোঁজ মিশরে তো নয়-ই, আফ্রিকা মহাদেশেও নয়, মিলেছিল দক্ষিণ আমেরিকার চিলেতে। এত দিন পর্যন্ত সেটিই ছিল মৃতদেহ সংরক্ষণের সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ। এ বার জানা গেল, মৃতদেহ সংরক্ষণের ইতিহাস আরও পুরনো। চিলের চেয়েও পুরনো মমি আবিষ্কার করলেন গবেষকেরা। তা-ও আবার এই এশিয়া মহাদেশেই।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় সবচেয়ে পুরনো যে মমিটি মিলেছে, তা প্রায় ৪৫০০ বছরের পুরনো। উত্তর চিলেতে মিলেছে প্রায় ৭০০০ বছরের পুরনো মমি। চিলের ওই মমিই প্রমাণ করে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন চিনচরো সভ্যতায় মৃতদেহ সংরক্ষণের চল ছিল। মৃতদেহ সংরক্ষণে সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ হিসাবে এটিকেই গণ্য করা হত। তবে সেই ইতিহাস ভেঙে দিচ্ছে চিন এবং ভিয়েতনামের সাম্প্রতিক আবিষ্কার। চিনে পাওয়া গিয়েছে ৯০০০ বছরেরও বেশি পুরনো মমি তৈরির নিদর্শন। ভিয়েতনামে যে নিদর্শন মিলেছে, তা আরও পুরনো। ভিয়েতনামের প্রায় ১৪০০০ বছরের পুরনো ওই মমিই এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া বিশ্বের প্রাচীনতম দেহ সংরক্ষণের নিদর্শন। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়াতেও মমি তৈরির উদাহরণ মিলেছে।

এই আবিষ্কারই প্রমাণ করে নব্য প্রস্তর যুগ শুরুর আগে, যখন মানুষ শিকার করে খেত, তখন থেকেই দেহ সংরক্ষণের চল ছিল। নব্য প্রস্তর যুগ শুরু ৭০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে। ভিয়েতনামে আবিষ্কার হওয়া মমিটি আরও বেশি পুরনো। এশিয়ায় এই নতুন আবিষ্কারগুলি পুরোপুরি মমি অবস্থায় উদ্ধার হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে মাটির নীচে চাপা থাকতে থাকতে অনেকটাই কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে সেগুলি। তবে কঙ্কালগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, সেগুলি মমি করেই রাখা হয়েছিল।

চিন, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার ১১টি স্থান থেকে মাটি খুঁড়ে এমন ৫৪টি কঙ্কাল উদ্ধার করে বিশ্লেষণ করেন গবেষকেরা। সবগুলি কঙ্কালেই একই ধরনের কিছু বিশেষত্ব। দেহগুলিকে হাঁটু ভাঁজ করে একটি বিশেষ ভঙ্গিমায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল। কিছুটা কুঁকড়ে থাকা অবস্থায়। আরও একটি বিশেষত্ব হল, কঙ্কালগুলির কোথাও কোথাও হাড়ের মধ্যে দাগ এবং পোড়া চিহ্ন দেখা গিয়েছে। প্রায় আট বছর ধরে এই গবেষণা চলেছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দেহ একবারে পুড়ে যাওয়ার ফলে এই পোড়া চিহ্নগুলি তৈরি হয়নি। বরং দীর্ঘ সময় ধরে কম তাপে দেহগুলিকে পোড়ানো হয়েছিল। যার জেরে এই পোড়া চিহ্নগুলি তৈরি হয়েছে হাড়ের মধ্যে। তা ছাড়া একবারে দেহ পুড়ে গেলে হাড়ের সর্বত্রই পোড়া দাগ থাকার কথা। এ ক্ষেত্রে তেমন নয়। হাড়গুলির কিছু কিছু অংশেই কেবল পোড়া চিহ্ন রয়েছে।

স্বাভাবিক উপায়ে মৃতদেহকে মমি করে রাখা বা সংরক্ষণের যে পদ্ধতিগুলি প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল, দেহকে তাপে পোহানো। এ ছাড়া ধোঁয়া, নুন, তুষার বা রাসায়নিক ব্যবহার করেও দেহ মমি করার চল ছিল। এর মাধ্যমে দেহের নরম কলা (টিস্যু)-গুলি থেকে জলীয় ভাব দূর করে দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য দেহে পচন ধরে না।

অস্ট্রেলিয়ার কিছু আদিবাসী জাতির মধ্যে তাপ এবং ধোঁয়ায় পোহানোর চল ছিল। পাপুয়া ও নিউ গিনিতে এখনও এই চল রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রাচীন ওই কঙ্কালগুলির সঙ্গে বর্তমান সময়ে তাপে পোহানো দেহ সংরক্ষণের অনেকটা মিল রয়েছে। প্রাচীন ওই কঙ্কালগুলিতে কনুই, খুলির সামনের অংশ এবং পায়ের দিকের অংশেই পোড়া দাগ রয়েছে। বস্তুত, মানবদেহের এই অংশগুলিতেই পেশির স্তর তুলনামূলক পাতলা। তবে গবেষণার প্রারম্ভিক পর্যায়ে পুরোটাই ছিল অনুমান সাপেক্ষ বিষয়।

এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য কঙ্কালগুলির এক্স-রে করা হয়। এ ছাড়া ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপিও করানো হয়। এক্স-রে করার পরে স্পষ্ট হয়, তাপের ফলে হাড়গুলির গড়নে কিছুটা বদল এসেছে। স্পেকট্রোস্কোপিতে দেখা যায়, ৮৪ শতাংশ হাড়ের নমুনাকেই দীর্ঘ ক্ষণ ধরে কম তাপে সেঁকা হয়েছিল। ওই তাপের কারণেই হাড়ের কিছু কিছু জায়গায় কালো হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন গবেষকেরা।

এই গবেষক দলের প্রধান অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক শিয়াও-চুন হাং। মিশর এবং চিলের মমির প্রসঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই নতুন আবিষ্কার মানুষের শবদেহ সংরক্ষণের ইতিহাসকে আরও কয়েক হাজার বছর অতীতে নিয়ে গেল।” সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’কে এক ইমেলে তিনি জানান, পরিবার এবং প্রিয়জনদের যে কোনও উপায়ে সবসময় নিজের কাছে রেখে দেওয়া মানুষের এক চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা। নতুন আবিষ্কারও সেই চিরন্তন আকাঙ্ক্ষাকেই প্রতিফলিত করে বলে জানান তিনি।

asia Mummy Mummified Vietnam China Indonesia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy