Advertisement
E-Paper

লক্ষ বছরে এক বার ঘটে, আদিম ব্ল্যাক হোলের বিনাশ দর্শন শীঘ্রই! হকিংয়ের তত্ত্ব প্রমাণের অপেক্ষায়

সত্তরের দশকে হকিং অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন, আলো-সহ ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুই শুষে নেয় বলে যে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরকে আমরা ‘কৃষ্ণকলি’ কালো বলে জানতাম, তা ততটাও কালো নয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২৮

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

হাতের সামনে যা পায়, সবই গিলে খায় তারা। এমনকি আলোও! সেই টান ফাঁকি দেওয়ার উপায় কারও নেই। সর্ব ক্ষণ খিদের জ্বালায় ছটফট করা তেমনই এক ‘রাক্ষুসে’ ব্ল্যাক হোলের বিনাশ ঘটতে চলেছে আগামী ১০ বছরের মধ্যে, যা দেখার জন্য মুখিয়ে গোটা বিজ্ঞানীমহল।

সাধারণত নক্ষত্র বা তারার ‘মৃত্যু’ ঘটে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম হয় ব্রহ্মাণ্ডে। অন্তত তেমনটাই ধারণা বিজ্ঞানীদের। তবে কৃষ্ণগহ্বরের জন্মের নেপথ্যে আরও কারণ থাকতে পারে। বহু বছর আগে প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং জানিয়েছিলেন, মহাবিস্ফোরণ বা ‘বিগ ব্যাং’ ঘটে মহাবিশ্বের জন্মের ঠিক পরে পরেই বহু কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম হয়েছিল। সেগুলিকে হকিং ‘আদিম কৃষ্ণগহ্বর’ (প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল) নাম দিয়েছিলেন। ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর ধারণা, সে রকমই এক আদিম কৃষ্ণগহ্বরের বিনাশ ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে ৯০ শতাংশ নিশ্চিত তাঁরা।

যদিও এই আদিম কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব আজও প্রমাণিত হয়নি। হকিংয়ের এই ধারণা এখনও তত্ত্ব হয়েই রয়ে গিয়েছে। তবে এই মহাজাগতিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটে এবং তা যদি বিজ্ঞানীরা স্বচক্ষে দেখতে পান, তা হলে আদিম কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, প্রমাণিত হবে হকিংয়ের ‘বিকিরণ তত্ত্ব’ও!

জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার ধ্রুপদী তত্ত্ব বলে, ব্ল্যাক হোলের চেহারা বলতে বোঝায় খাবারের সেই থালা, যার কানাটার নাম ‘ইভেন্ট হরাইজ়ন’। সেই চৌহদ্দির মধ্যে একবার গিয়ে পড়লে আর রেহাই নেই। তখন কেবলই পতন! অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে আশপাশের গ্যাসের মেঘ, নক্ষত্রদের গিলে খায় সে। বেরিয়ে আসতে পারে না এমনকি আলোও। স্থান-কালও দুমড়ে মিলিয়ে যায় সেখানে!

কিন্তু সত্তরের দশকে হকিং অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন, আলো-সহ ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুই শুষে নেয় বলে যে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরকে আমরা ‘কৃষ্ণকলি’ কালো বলে জানতাম, তা ততটাও কালো নয়। কৃষ্ণগহ্বর থেকেও আলোর বিচ্ছুরণ, বিকিরণ হয়। তা যতই অল্প হোক।

এই তত্ত্বের সূত্র ধরেই কৃষ্ণগহ্বরের বিনাশের কথা বলেছিলেন হকিং। তাঁর তত্ত্ব বলে, এক জোড়া ফোটন কণা ‘ইভেন্ট হরাই়জ়নে’ এসে পৌঁছোলে একটা ফোটন কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরে ঢুকে যায়। অন্য ফোটনটা ‘ইভেন্ট হরাইজ়ন’ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে। সেই জন্যই কৃষ্ণগহ্বর থেকে অল্প বিকিরণ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই বিকিরণই এক সময় সাড়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে কৃষ্ণগহ্বরের। কারণ, এই বিকিরণের ফলেই কৃষ্ণগহ্বর ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাবে। তার পর এক দিন উধাও হয়ে যাবে বেমালুম!

কৃষ্ণগহ্বর বিনাশের শেষ মুহূর্তে প্রকাণ্ড এক বিস্ফোরণের কথাও বলেছিলেন হকিং। ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বিজ্ঞানীদের ধারণা, তাঁরা সেই শেষ মুহূর্তের বিস্ফোরণের দৃশ্যই দেখতে পাবেন। কারণ, তা টেলিস্কোপে ধরা পড়বে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই মহাজাগতিক ঘটনা ঘটলে ব্রহ্মাণ্ডের বহু রহস্যের সমাধান হবে। বহু অজানা, অচেনা পদার্থ বা ভূতুড়ে কণার সন্ধান পাবেন তাঁরা।

যদিও হকিংয়ের বিকিরণ তত্ত্ব কখনওই মানতে পারেননি বিজ্ঞানীমহলের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, হকিংয়ের এই তত্ত্ব ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্‌স’-এর নীতি ভঙ্গ করছে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব বলছে, এই ব্রহ্মাণ্ডে তথ্যের (ইনফরমেশন) কোনও বিনাশ হয় না। তা শক্তির (এনার্জি) মতোই। তা-ই যদি হয়, তা হলে যে ফোটন কণাটা ‘ইভেন্ট হরাইজ়ন’-এ এসে কৃষ্ণগহ্বরের টানে তার ভিতরে ঢুকে যায়, তার সঙ্গে কিছুটা তথ্যও তো ঢুকে যাবে ব্ল্যাক হোলে। হারিয়ে যাবে চির দিনের জন্য।

যদিও এই ধাঁধার জবাব হকিং নিজেই দিয়েছিলেন পরে। তিনি জানিয়েছিলেন, যে ফোটন কণাটি কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরে ঢুকে গিয়ে হারিয়ে গেল বরাবরের মতো, সেই কণাটি তার বয়ে নিয়ে আসা তথ্য দিয়ে যায় সেই ফোটন কণাকে, যে কৃষ্ণগহ্বরের ‘খিদে’র হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। বিকিরিত হওয়া আলোর কণা ফোটন ও গ্র্যাভিটন দিয়ে কৃষ্ণগহ্বরের ‘ইভেন্ট হরাইজ়নের’ বাইরে নরম চুলের গোলার মতো কিছু তৈরি হয়। ওই নরম কেশরাশিতেই ধরা থাকে কৃষ্ণগহ্বরের যাবতীয় তথ্যের খানিকটা। হকিংয়ের এই তত্ত্ব বাস্তবে প্রমাণিত হয় কি না, এখন তারই অপেক্ষা।

Stephen Hawking Radiation black hole Physicist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy