Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Scientist

ওষুধের পুরো রয়্যাল্টি ক্যানসার-গবেষণায় দান করলেন অসীমা 

বিজ্ঞানী ও সার্জন অসীমা নিজেও যুক্ত সেই গবেষণায়।

অসীমা মুখোপাধ্যায়

অসীমা মুখোপাধ্যায়

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

ক্যানসারের টিউমার ধ্বংসের ওষুধ আবিষ্কার করেছেন তিনি। ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেসের অনুমোদনও পেয়েছে তা। Rubraca (rucaparib) নামে সেই ওষুধের রয়্যাল্টি বাবদ নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া পুরো অর্থই কলকাতার গাইনোকোলজিক্যাল অঙ্কোলজি ট্রায়ালস অ্যান্ড ট্রানজিশনাল রিসার্চ গ্রুপে দান করেছেন অসীমা মুখোপাধ্যায়। ২০১৮-তে কয়েক জন গবেষক ও অন্যদের নিয়ে তিনিই এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর দানের সেই অঙ্ক কোটি টাকার বেশি। জরায়ুর ক্যানসার নিয়ে গবেষণার কাজে লাগানো হবে তা।

বিজ্ঞানী ও সার্জন অসীমা নিজেও যুক্ত সেই গবেষণায়। জানাচ্ছেন, অনুপ্রেরণা তাঁর বাবা প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। ব্রিটেনে সার্জন হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। চাইতেন, সমাজ ও গরিবের জন্য কিছু করতে। ১৯৯৮-এর ২৮ মে, ক্যানসারে মারা যান। অসীমা তখন সবে ডাক্তারির ছাত্রী। বললেন, “দেখেছি, ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে গিয়ে একটা পরিবার মানসিক-সামাজিক-আর্থিক ভাবে কী অসহায় হয়ে পড়ে। রোগটার ভাল চিকিৎসা দরকার। চাই আরও গবেষণা।”

মহিলাদের ক্যানসার মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ বিশ্বে। অসীমার কথায়, “এর ওষুধ নিয়ে কোথাওই যথেষ্ট গবেষণা হয়নি। ভারতে, বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকাদের জন্য কিছু করতে চাই। ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ এঁদের নাগালের বাইরে।” সামান্য পরিকাঠামো ও অর্থ নিয়েও ক্যানসার গবেষণায় যুক্ত থেকে বাবার স্বপ্নপূরণ করতে পারছেন— এ জন্য নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করেন অসীমা। তিনি ২৬ মে জরায়ু ক্যানসার নিয়ে শিকাগো সম্মেলনে ভারত ও সার্ক দেশগুলির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অসীমার কাছে যা ‘বিরাট সম্মান’।

বাবার মতো অসীমার জীবনও ছড়িয়ে রয়েছে দু’দেশে। জন্ম ব্রিটেনে। ছ’বছর বয়স থেকে কলকাতায়। পড়াশোনা সিঁথি রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ সারদা বিদ্যামন্দির ও বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে। ডাক্তারির পাঠ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও দিল্লির এমসে। ২০০৪-এ ফেরেন ব্রিটেনে। ক্যানসারের সার্জন ও গবেষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। পরের ১০ বছর কেটেছে লন্ডন স্কুল অব হাইজ়িন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, গেটসহ্যাডের নর্দার্ন গায়নেকোলজিক্যাল অঙ্কোলজি সেন্টারে। এখন ছ’মাস গেটসহ্যাডে সার্জন হিসেবে কাজ করেন। সঙ্গে নিউক্যাসলে চলে গবেষণা। বছরের বাকিটা তিনি কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ‘অনরারি কনসালট্যান্ট’। সেখানেই কয়েক জনকে নিয়ে গবেষণা-দল গড়েছেন। নাম ‘প্রোজেক্ট ওভারিয়ান ট্র্যান্সন্যাশনাল’ গ্রুপ। সংক্ষেপে প্রভাত। যা আসলে অসীমার বাবার নাম। পরিকাঠামো অপ্রতুল। মাসে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। গবেষকেরা নিজেদের অনুদানের অর্থ ঢালছেন। নিঃসন্দেহে অসীমার দান সেই গবেষণায় অক্সিজেন জোগাবে।

আরও পড়ুন: হিসেব আগে, না কথা আগে? করোনা মোকাবিলায় বিভক্ত বিজ্ঞান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scientist Cancer London
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE